somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই এর নেশা-৩

০২ রা জুন, ২০১৩ রাত ১১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বই এর নেশা-২

ইস যদি স্মৃতিতে সব পুঙ্খানুপুঙ্খ লেখা থাকতো!! ইচ্ছে করছে যা যা বই পড়েছি সব কটার নাম, কাহিনি আর লেখককে নিয়ে লিখি। স্কুলে মাঝে মাঝে ব্যাগ চেক করতো, কারণ আমরা যারা ব্যাকবেঞ্চার ছিলাম, হরদম পড়ার বইয়ের ভেতরে লুকিয়ে গল্পের বই পড়তাম। সেভেন কি এইটে শুরু হলো হুমায়ুন ক্রেইজ। হাল্কা পাতলা জাফর ইকবাল। দীপু নাম্বার টু। প্রেমের গল্প, প্রতিদিনের সংলাপ, চোখের পানি ফেলা ইত্যাদি কত সাবলীল ভাবে হুমায়ুনের বইয়ের পাতায় লেখা থাকতো, প্রথম পাতা থেকে শেষ পাতায় যেতে যেন মূহুর্তও সময় লাগতো না। তখন টিভিতে চলছে এইসব দিনরাত্রি, এরপরে দেখালো বহুব্রীহি। লেখক নাট্যকার হিসেবে তাঁর জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে। আর বাংলায় সায়েন্স ফিকশন মানেই জাফর ইকবাল। হুমায়ুন আহমেদ এই দিক দিয়ে নাম্বার টু।

ভারতীয় লেখকদের মধ্যে আমি হয়ে গেলাম চরম শীর্ষেন্দু ফ্যান। দূরবীন, মানবজমিন, পার্থিব, যাওপাখি আর সেই সাথে ছোট ছোট উপন্যাসগুলোর মধ্যে গতি, ক্ষয়, চুরি, বিকেলের মৃত্যুর মত বইগুলো খুবই বিচিত্রধর্মী আর ধরে রাখার মত ছিলো। এরইমাঝে রুদ্র-ঋজুদার বনবিবির বনে, আর রুআহা ধরিয়ে দিলো জঙ্গল ঘুরে আসার নেশা। বুদ্ধদেবের সাথে নাইরোবি আর কই কই যেন ঘুরে বেড়াতে লাগলাম কখনও তিতির কখনও রুদ্র হয়ে। সেই সাথে সবিনয় নিবেদন, ভোরের আগে, সন্ধের পরে কিংবা বাবলি পড়ে প্রেমের আবেগের একেকরকম চেহারা চিনতে লাগলাম। বন্ধুদের সাথে খুব তর্ক হতো (এখনও হয়) কে বেশি ভালো লেখে, সুনীল না শীর্ষেন্দু। আমি মোটামুটি মেজরিটির উল্টোস্রোতে গিয়ে শীর্ষেন্দু-ভক্ত হয়ে রইলাম এখনও পর্যন্ত! এরপর ভালো লাগতো সমরেশ আর তারপর বুদ্ধদেব গুহ, তারপরেই সুনীল। মোটামুটি এই চার লেখকের চারটে বই সামনে দিলে আমি এই সিকোয়েন্সেই পড়তাম। আমার স্মৃতি তেমন প্রখর নয়, তাই সন্তু-কাকাবাবুরগুলো ছাড়া সুনীলের পড়া আর কোনও বইয়ের নাম মনে পড়ছেনা। শুনেছি সেইসময়, প্রথম আলো আর পূর্বপশ্চিমের কথা, এখনও পড়া হয়ে ওঠেনি উপন্যাসগুলো। তবে হ্যাঁ, নদীর ওপার নামের একটা বই খুব দাগ কাটে আমার মনে সেসময়ে, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা। এই উপনাসের থীমটা এখনও আমার মাথায় ঘুরে, আমি অনেক খুঁজেছি বইটা আবার পড়ার জন্যে কিন্তু পেলামনা। আর কোনও একটা উপন্যাসে পড়েছিলাম নীলু নামের একটা ছেলে বারবার হারিয়ে যেতে চায় দিকশূণ্যপুরে। সেই থেকে মনে হতো আমাদের এই রুটিনমাফিক জীবনের দায়বদ্ধতা থেকে বের হয়ে আসার যে দুর্বার আকূলতা সেটা উনি এই বইগুলোর মধ্য দিয়ে বেশ ভালো ফুটিয়ে তুলেছিলেন।

সমরেশ মজুমদারের উত্তরাধিকার, কালবেলা আর কালপুরুষ চোখের সামনে খুলে দিলো নতুন একটা পটভূমি। নকশাল, বিপ্লবী, আবার জীবনসংগ্রাম এইসবকিছু একসাথে দেখতে পেলাম অনিমেষ, অর্ক, মাধুরী আর মাধবীলতার জীবন থেকে। অন্যদিকে দীপাবলীর মত বলিষ্ঠ একজন নারীচরিত্রকে নিয়ে যেন বাস্তবতা চিনতে লাগলাম। সমরেশ যেন গর্ভধারিনী উপন্যাসের ভেতর দিয়ে আমাকে বুঝিয়ে দিলো মানুষের পারিপার্শ্বিকতার ব্যবধান ছেদ করে নিজস্বতাকে মূল্য দিতে।

ততদিনে তালা-লাগানো আলমিরা আমার জন্যে খুলে গিয়েছে! বের হয়েছে চোখের সামনে আম্মুর কালেকশনে থাকা নীহাররঞ্জন, আশাপূর্ণা, আশুতোষের ভান্ডার!! সাসপেন্সে ভরপুর কিরিটি রায়কে চিনলাম নীহাররঞ্জনের লেখনী থেকে। আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের প্রেমের উপন্যাসের দূর্দান্ত ফ্যান হয়ে গেলাম। বলাকার মন, ডাকতে জানলে, অপরিচিতের মুখ আরও অনেক উপন্যাস পড়েছি, বলতে গেলে আম্মুর কাছে আশুতোষের সব বইই ছিলো তখন। একটা গল্প খুব ভালো লেগেছিলো, এক সার্কাসের চরিত্রকে নিয়ে, যাকে মালিকের মেয়ে উপেক্ষা করেছিলো দেখতে ভালো নয় বলে, পরে মরীচিকা ঘুরে এসে সেই লোকের হাতেই তার প্রেম বাঁধা পড়লো। যেভাবে মানুষের বাহ্যিক চেহারা ও জীবনের মানের চাইতে ভেতরকার অনুভূতি ও মনুষ্যত্ত্বকে প্রাধান্য দিয়ে আশুতোষ তাঁর উপন্যাসের কাহিনী-বিন্যাস করতেন, মনে হতো যেন এই কাহিনী আমাদেরই আশেপাশের কারও জীবনে ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত।

আশাপূর্ণার অগ্নিপরীক্ষা পড়লেই আমার বুক মুচড়ে উঠতো। মনের ভেতরে অবিরাম স্ববিরোধী আবেগের ঠেলাঠেলিতে যেন আমারই দমবন্ধ হয়ে যেতো। প্রথম প্রতিশ্রুতি, সূবর্ণলতা আর বকুলকথা পড়েই মনে হতো এমনই দৃঢ়চিত্তে বাস্তবতাকে অনুকুলে এনে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দেওয়া উচিৎ আলোর দিশা। আব্বুর কালেকশনের বেশ কিছু বিপ্লবী বই ছিলো সেই আলমারিতে। আমার তখন সেসব বই ভালো লাগতোনা মোটেও। প্রেমের গল্প কিংবা রহস্য-ভৌতিক উপন্যাসে গড়াগড়ি খেয়েই বেশ কেটে যাচ্ছিলো দিন।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১৩ রাত ১১:৫৫
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×