somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্রমিকদের এই আন্দোলন এর শেষ কথায়?

০১ লা মে, ২০১৩ বিকাল ৪:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শ্রমিকদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত কোরে জোর কোরে তাদের থেকে শ্রম আদায় করার ইতিহাস মানব সভ্যতায় বহুল আলোচিত, অতি-প্রাচীন একটি বিষয়বস্তু। শ্রমিকদের বঞ্চিত হওয়া, অতঃপর অধিকার আদায়ের জন্য বিক্ষুব্ধ হওয়া, অসন্তোষ সৃষ্টি এবং দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন, কিছু প্রাণক্ষয়, মালিকের পক্ষ থেকে কিছু দাবি পূরণের আশ্বাসলাভ, অতঃপর আবার প্রতারিত ও বঞ্চিত হওয়া– এই চক্রে আবর্তিত হোচ্ছে শ্রমিক সমাজ। স্বার্থকেন্দ্রীক সমাজব্যবস্থায় এ চক্র থেকে মুক্তির কোন পথ নেই। সঙ্গতভাবেই যে প্রশ্নটি এসে যায়– এইভাবে সভা, সেমিনার, লাল হেডব্যান্ড বেঁধে রার্লী, গলা বিদীর্ণকারী শ্লোগান, টক শো, গণসঙ্গীতের আসর, সরকারী ছুটি ইত্যাদি আড়ম্বর, আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে দিবস পালন কোরে শত শত বছরে শ্রমিকদের কতটা অধিকার আদায় হোয়েছে, সমাজে তাদের সম্মান কতটুকু বেড়েছে? এইসব আনুষ্ঠানিকতা কোরে শ্রমিকের মুক্তি আসে নি, আরও হাজার বছর এভাবে এসব কোরে গেলেও আসার কোন যৌক্তিক কারণ নেই। তাহোলে এই বঞ্চনা কি শ্রমিকের নিয়তি? এর কি কোন শেষ নেই?


অতীতকালে এই শ্রমিকদেরকে বলা হোত দাস, গোলাম। এখন দাসের বদলে শ্রমিক, কর্মী এবং এমন আরও সুন্দর সুন্দর সুশীল শব্দ ব্যবহার করা হয়, কিন্তু সুন্দর শব্দের অন্তরালে এখনও সেই ক্রীতদাসের নিপিড়ীত প্রতিমূর্তি ভেসে ওঠে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এই নির্যাতিত অবহেলিত শ্রমজীবি মানুষগুলি, তখনই সমাজের শোষক শ্রেণীর যাঁতাকলের নিষ্পেষণ থেকে মুক্তি পেয়েছে যখন আল্লাহর কোন নবী-রসুলের দ্বারা ঐ সমাজে আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা কায়েম হোয়েছে। উদাহরণ হিসাবে ফেরাউনের শাসনাধীন বনী ইসরাঈলের কথা বলা যায়। ফেরাউন বনী ইসরাইল গোত্রের লোকদেরকে চরম অবমাননাকর কঠোর পরিশ্রমের কার্য্যে নিযুক্ত কোরেছিল। সেই কাজ আদায়ের জন্য তারা বনী ইসরাইলের লোকদের উপরে জঘন্যতম নির্যাতন ও উৎপীড়ন চালাতো (সূরা এব্রাহীম)। বাইবেলের পাতায় পাতায় সেই নির্যাতনের বিবরণ উল্লেখিত আছে। তাদেরকে ফেরাউনের দাসত্ব থেকে উদ্ধার কোরতেই আল্লাহ পাঠিয়েছিলেন মুসাকে (আ:)। মানবজাতির স্রষ্টা আল্লাহ। কিসে মানুষ অন্যায় অবিচার শোষণ থেকে বেঁচে একটি শান্তিময় প্রগতিশীল সমাজে বাস কোরতে পারবে তা সবচেয়ে ভালো কে জানবেন? তিনি বোলছেন, যিনি সৃষ্টি কোরেছেন তিনি কি জানেন না? তিনি সুক্ষ্মতম বিষয়ও জানেন (কোর’আন, সূরা মুল্ক ১৪)। এই কথার কোন জবাব আছে কি? কি ব্যবস্থা, নিয়ম-কানুন সমাজে প্রতিষ্ঠা কোরলে মানুষ ‘মানুষ’ হিসাবে তার পূর্ণ অধিকার ভোগ কোরতে পারবে, বঞ্চিত হবে না এটা সবচেয়ে ভালো জানেন স্রষ্টা আল্লাহ। সেই ব্যবস্থা তিনি যুগে যুগে তার নবী রসুলগণের মাধ্যমে মানবজাতির কাছে প্রেরণ কোরেছেন যার ধারাবাহিকতায় শেষ জীবনব্যবস্থা হিসাবে এসেছে মহানবী (দ:) এর উপরে নাজেলকৃত এসলামের সর্বশেষ সংস্করণটি। সেই জীবনব্যবস্থা কায়েমের ফলে তদানীন্তন অর্ধ-পৃথিবীতে অতুলনীয় শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হোয়েছিল। যে শান্তি কেমন ছিল?

শেষ নবী মোহাম্মদের (দ:) মাধ্যমে যে শেষ জীবন বিধান স্রষ্টা প্রেরণ কোরেছিলেন তা মানবজাতির একাংশ গ্রহণ ও সমষ্টিগত জীবনে কার্য্যকরী করার ফলে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি অংশ অর্থাৎ নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে কী ফল হোয়েছিল তা ইতিহাস। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পূর্ণ নিরাপত্তা যাকে বলে তা প্রতিষ্ঠিত হোয়েছিল। একজন যুবতী মেয়ে একা শত শত মাইল পথ একা ভ্রমণ কোরত, তার মনে কোন প্রকার ক্ষতির আশঙ্কাও জাগ্রত হোত না। মানুষ রাতে শোওয়ার সময় ঘরের দরজা বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব কোরত না, রাস্তায় ধনসম্পদ হারিয়ে ফেললেও তা পরে যেয়ে যথাস্থানে পাওয়া যেত, চুরি, ডাকাতি, হত্যা, রাহাজানী প্রায় নির্মূল হোয়ে গিয়েছিল, আদালতে মাসের পর মাস কোন অপরাধ সংক্রান্ত মামলা আসতো না। আর অর্থনৈতিক দিক থেকে প্রতিটি মানুষ স্বচ্ছল হোয়ে গিয়েছিল। এই স্বচ্ছলতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, মানুষ যাকাত ও সদকা দেওয়ার জন্য টাকা পয়সা নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতো কিন্তু সেই টাকা গ্রহণ করার মত লোক পাওয়া যেত না। শহরে নগরে লোক না পেয়ে মানুষ মরুভূমির অভ্যন্তরে যাকাত দেওয়ার জন্য ঘুরে বেড়াতো। এটি ইতিহাস। মানবরচিত কোন জীবনব্যবস্থাই এর একটি ভগ্নাংশও মানবজাতিকে উপহার দিতে পারে নাই। এই অকল্পনীয় শান্তিময় অবস্থা কিভাবে সৃষ্টি হোয়েছিল?

এর একমাত্র কারণ, মানুষ মানব রচিত সকল ব্যবস্থা, বিধান প্রত্যাখ্যান কোরে তার স্রষ্টার দেওয়া জীবনব্যবস্থা গ্রহণ ও জাতীয় ও ব্যক্তিগত জীবনে সামগ্রিকভাবে প্রয়োগ কোরেছিল অর্থাৎ ‘লা- এলাহা এল্লাল্লাহ, আল্লাহ ছাড়া আর কারও বিধান গ্রহণ কোরি না’ এই মূলমন্ত্রের ভিত্তিতে জীবন পরিচালনা কোরেছিল। সেই জীবন ব্যবস্থাকে পরিত্যাগ কোরে যত রকম উপায়েই চেষ্টা প্রচেষ্টা করা হোক মানবসমাজে শান্তি, সঙ্গতি ও শৃঙ্খলা আসবে না, শ্রমখাতেও আসবে না। কারণ, ভুল চিকিৎসা। অর্থাৎ যে অসুখের জন্য যে ঔষধ তা প্রয়োগ না কোরে রোগীকে সান্ত্বনাসূচক অন্য ঔষধ প্রয়োগ করা হোচ্ছে। রোগীও আরোগ্যের আশায় সেই ঔষধই সেবন কোরে যাচ্ছে। আসলে রোগ সারানো ডাক্তারের উদ্দেশ্য নয়, উদ্দেশ্য নিজের স্বার্থকে সমুন্নত রাখা। এটা রোগী বুঝতে পারছে না। বুঝতে পারছে না যে, তারা একটি হীন চক্রান্তের শিকার।

বিশ্বের শাসনের আসনে ইহুদী খ্রীস্টান ‘সভ্যতা’-রূপী যে দানব দাজ্জাল বসে আছে সে চায় অধিকাংশ মানুষ যেন নিজেদের জীবনধারণের জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রোজগার কোরতে বাধ্য হয়। দু’মুঠো অন্ন, মাথা গোঁজার ঠাঁই আর কিছু মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য যদি তাকে উদয়াস্ত রক্ত পানি কোরে পরিশ্রম কোরতে হয়, এর পিছনে তার মানুষের সমস্ত সময়, শ্রম, মেধা, যোগ্যতা খরচ কোরে ব্যস্ত থাকতে হয় তাহোলে সে তার এই দাসত্বের জীবন থেকে মুক্তির চিন্তাও কোরতে পারবে না, কোনদিনই ঐ শোষকদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হোতে পারবে না। ওসব চিন্তা কোরতে গেলেই তাকে না খেয়ে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হবে। এইভাবে দাজ্জাল পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষকে পাকস্থলী কেন্দ্রীক কোরে ফেলেছে। এতে কোরে তার কর্তৃত্ব ও শাসন বিরাট ঝুঁকি থেকে মুক্ত হোয়ে গেছে। সে যে ব্যবস্থা (System) কোরে রেখেছে এতে একদিকে কিছু পূঁজিপতি মানুষের বিরাট সম্পদের পাহাড় জমে উঠবে, সেই পাহাড়ে বোসে তারা অকল্পনীয় ভোগ বিলাসে মত্ত থাকবে, অপরদিকে সেই গুটিকয় মানুষের ভোগ বিলাসের অর্থ যোগান দিতে গিয়ে কোটি কোটি বনী আদম তাদের ন্যূনতম অধিকার থেকেও বঞ্চিত হোয়ে প্রায় পশু পর্যায়ের জীবন যাপন কোরতে বাধ্য হবে।

পাশাপাশি দাজ্জাল শ্রমিকদের বোলছে ইউনিয়ন করো, আন্দোলন করো, অপরদিকে মালিককে বোলছে দ্রব্যের উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করো। মালিকরা যদি শ্রমিক ইউনিয়নের চাপ, অসহোযোগ আন্দোলন, লক-আউট ইত্যাদির কারণে তাদের কিছু দাবি দাওয়া মেনে নেয় বা মজুরি বৃদ্ধি করে ওদিকে দাজ্জালের অনুগত সরকারগুলি তাদের যাতায়াতভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দেয় এবং ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়। ফলে শ্রমিকের মজুরি দু’ টাকা বাড়লে ব্যয় বাড়ে দশ টাকা। এভাবেই আবর্তিত হয় শোষণের চক্র।

আজ বিশ্ব শ্রমিক দিবস। বিশ্বের বহু মোসলেম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশেও আজ ছুটি। ইহুদী খ্রিস্টান সভ্যতার প্রতিটি পদক্ষেপ অনুকরণে আজ মোসলেম জাতিটির কোন জুড়ি নেই। আল্লাহর রসুল ভবিষ্যদ্বাণী কোরে গেছেন, তোমরা (ভবিষ্যতে) তোমাদের পূর্ববর্ত্তীদের অনুসরণ, অনুকরণ কোরবে, এমন কি তারা যদি সরীসৃপের গর্ত্তে প্রবেশ করে তবে তোমরাও তাই কোরবে। তাঁকে প্রশ্ন করা হোল- হে আল্লাহর রসুল- (যাদের অনুসরণ করা হবে) তারা কি ইহুদী ও খৃষ্টান? তিনি জবাব দিলেন- আর কারা? (হাদীস- আবু সাঈদ (রাঃ) থেকে- বোখারী, মোসলেম, মেশকাত।)। আরেক হাদীসে আল্লাহর রসুল বোলেছেনÑ নিশ্চয়ই এমন সময় আসছে যখন বনি এসরাঈলীদের এমন পদে পদে অনুকরণ করা হবে যে তাদের কেউ যদি তার মায়ের সঙ্গে প্রকাশ্যে ব্যভিচার করে তবে আমার উম্মাহর মধ্য হোতেও কেউ তাই কোরবে (হাদীস- আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) থেকে- বোখারী, মোসলেম, মেশকাত)। বাস্তবেও তাই। এই মোসলেম নামক জনসংখ্যাটি আজ আত্মপরিচয় ভুলে, ইতিহাস, ঐতিহ্য, নিজেদের নবীর শিক্ষা সর্বস্ব বিকিয়ে দিয়ে তারা পশ্চিমা সভ্যতার নিখুঁত অনুকরণে ব্যস্ত। তারা একবার চেয়ে দেখছে না যে তাদের সকল অধিকার, সমৃদ্ধি, উন্নতি তাদের হাতেই রোয়েছে, সেটা হোচ্ছে দীনুল হক, সত্য-জীবনব্যবস্থা।

শ্রমিকদের ব্যাপারে রসুলাল্লাহর হুকুম হোচ্ছে, শ্রমিকের ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার আগেই তার মজুরি দিয়ে দাও (হাদীস- আব্দাল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে তিরমিযী)। এটা রসুলাল্লাহর কেবল উপদেশবাণী নয়, এটা ছিল উম্মাহর প্রতি তাঁর হুকুম, নির্দেশ যা উম্মাহ কিভাবে বাস্তবায়ন কোরেছে তা ইতিহাস। রসুলাল্লাহ বোলেছেন, ‘তোমাদের গোলাম তোমাদের ভাই। তারা বাধ্য হোয়ে তোমাদের অধীন হোয়েছে। তাই যার ভাই তার নিজের অধীন তার উচিৎ, সে নিজে যা খায় তা-ই তাকে খেতে দেয়, নিজে যা পরে তা-ই তাকে পোরতে দেয় এবং সাধ্যের বাইরে তার কাছ থেকে কোন কাজ আদায় না করে।’ প্রত্যেক মোসলেম তাই তার অধীনস্থ দাসকে (কাজের লোক, শ্রমিক) নিজের ভাই জ্ঞান কোরতেন, অথচ আজ ‘মালিক শ্রমিক ভাই ভাই’ এমন অসাঞ্জস্যপূর্ণ কথা ভুলেও কেউ উচ্চারণ করে না।

দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রা:) তাই নিজে যেরুযালেমের পথে দীর্ঘ মরুযাত্রায় অর্দ্ধেক পথ নিজে উটে আরোহণ কোরেছেন, বাকি অর্দ্ধেক পথ নিজের দাসকে উটে আরোহণ কোরিয়ে নিজে উটের রশি টেনে নিয়ে গেছেন। সত্যদীন প্রতিষ্ঠিত থাকার ফলে খলিফার সঙ্গে কোন দেহরক্ষী বাহিনীরও প্রয়োজন পড়ে নি। এমন একটি অবস্থা কি আজ কল্পনা করা যায়? তবে মনে রাখতে হবে, এসলাম শ্রমিকের অধিকার যেমন ঘোষণা কোরেছে, সঙ্গে মালিকের স্বার্থের বিষয়টিরও গুরুত্ব দিয়েছে। এর মাধ্যমে মালিক-শ্রমিকের মধ্যে মূলত ন্যায়সংগত ও ভ্রাতৃপ্রতীম আচরণ ও হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তোলার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। একদিকে শ্রমিকের মজুরি পরিশোধের পাশাপাশি তার সার্বিক দেখভালের দায়িত্ব মালিকপক্ষ গ্রহণ কোরলে, অন্যদিকে মালিকের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিজের মনে করে তার অর্পিত দায়িত্ব পালন করলে শুধু মালিক-শ্রমিকরাই সুখী হবে না; তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জাতি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধিশালী হবে। হোয়েছিলও তাই।

সত্যদীন পৃথিবীর যে অংশে প্রতিষ্ঠিত হবে, সেখানে কেবল মানুষই তার অধিকার পাবে তাই নয়, সেখানে প্রতিটি প্রাণীর অধিকার নিশ্চিত হবে। আল্লাহর রসুল বোলেছেন, ‘হে মানুষ! বাকহীন পশুর সাথেও রহম করো। যখন তোমরা এদেরকে সফরে নিয়ে যাও তখন তাদের উপর সাধ্যাতীত বোঝা চাপিয়ে দিও না। তাদের সাথে ইনসাফ করো এবং ইনসাফ করার অর্থ হোচ্ছে, যে পরিমাণ বোঝা তারা বহন কোরতে পারে তার চেয়ে বেশী চাপিয়ে তাদেরকে কষ্ট দিও না।’ যেখানে পশুদেরকে দিয়েও সাধ্যের অতিরিক্ত কাজ আদায় করা নিষেধ সেখানে মানুষকে দিয়ে তা করানোর তো প্রশ্নই আসে না। অথচ আমরা দেখি শিল্প কারখানাগুলিতে অতি অল্প বেতনে শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়। শ্রমিকরা যেন চাকুরী কোরতে বাধ্য থাকে সেজন্য তাদের মাসের পর মাস বেতন ও ওভারটাইমের টাকা বকেয়া রেখে দেয়। ঘাম তো বহু আগেই শুকিয়ে গেছে, এবার না খেয়ে রক্ত মাংস শুকিয়ে হাড্ডিসার হোয়ে যায়।

যে জীবনব্যবস্থা কায়েমের ফলে মানুষ টাকা পয়সা, খাদ্য নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতো কিন্তু নেওয়ার লোক ছিল না, সেই জীবনব্যবস্থার উত্তরাধিকারীরা আজ পশ্চিমা সভ্যতার জীবন-ব্যবস্থা গ্রহণ কোরে হীনতার, দরিদ্রতার এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে মাসের পর মাস রক্ত পানি কোরে শ্রম দিয়ে অতঃপর নাম মাত্র বেতন (ন্যায্য মূল্যের তো প্রশ্নই আসে না) আদায়ের জন্য রাস্তায় বিক্ষোভ করে, পুলিসের গুলি খেয়ে জীবন দিতে হয়। তারপরও বাঁচার কোন উপায় নেই। আগুনে পুড়ে, ইট-পাথরের নিচে চাপা পড়ে মরতে হয় শ’য়ে শ’য়ে। কী নির্মমতা, কী নিষ্ঠুরতা! এর থেকে দুঃখজনক পরিণতি আর কি হোতে পারে?

সুতরাং আমাদের কথা হোচ্ছে, শুধু শ্রমিক নয় কেবল, যে কোন অধিকার আদায়ের জন্য বিক্ষোভ, দাঙ্গা, হরতাল ইত্যাদি কোরে কস্মিনকালেও কোন লাভ হবে না। কার কাছে আপনারা অধিকার চাইবেন, বিশ্বপ্রতারক ইহুদী খ্রিস্টান ‘সভ্যতা’ দাজ্জালের অনুসারীদের কাছে? দাজ্জাল তো বহু আগেই পৃথিবীর সকল শ্রেণীর মানুষের অধিকার হরণ কোরে নিয়েছে এবং তাদেরকে প্রতারণামূলক মোহনীয় মতবাদের জালে আটকে পদানত গোলাম বানিয়ে রেখেছে। একদল মানুষ শ্রমিক ইউনিয়ন কোরে ন্যায্য পাওনা আদায়ের জন্য চাই চাই কোরে মিছিল কোরছে, ভাঙচুর কোরছে, হরতাল কোরছে। আরেকদল তাদেরকে প্রতিহত কোরতে বুভুক্ষ হাড্ডিসার দুর্বল মানুষগুলিকে রাজপথে পিটিয়ে রক্তাক্ত ও পদদলিত করা হোচ্ছে। এটা বর্তমান পৃথিবীতে দৈনন্দিন ঘটনা।

আমরা মানবজাতিকে আহ্বান কোরছি, আসুন, আমরা আমাদের সকলের যিনি স্রষ্টা, আমাদের সকলের যিনি মালিক, তাঁকে আমাদের জীবনের একমাত্র এলাহ, হুকুমদাতা, সার্বভৌমত্বের মালিক হিসাবে মেনে নেই। আল্লাহ তাঁর দেওয়া জীবনব্যবস্থায় প্রত্যেকের প্রাপ্য অধিকার দিয়ে রেখেছেন। আল্লাহকে আমাদের প্রভু হিসাবে মেনে নিলে কেবল শ্রমিকদের অধিকারই প্রতিষ্ঠিত হবে না, মালিকেরও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, সবাই সবার অধিকার ফিরে পাবেন। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। আল্লাহ পবিত্র কোর’আনের বহু আয়াতে এতিমদের প্রতি মমতা প্রদর্শন কোরতে, তাদের সম্পদ ভোগ না কোরতে আদেশ কোরেছেন। আল্লাহর রসুলও এতিমদের প্রতি অত্যন্ত স্বহৃদয় ছিলেন, এতিম শিশুদেরকে তিনি মাথায় হাত বুলিয়ে আদর কোরতেন, যেহেতু তিনি নিজেও শৈশব থেকে এতিম ছিলেন। এই উম্মাহর এতিমদের জন্য রসুলাল্লাহ কি পারতেন না এতিমখানা নামে একটি পৃথক দাতব্য প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি কোরতে? পারতেন, একটা নয়, এমন বহু প্রতিষ্ঠান তিনি সৃষ্টি কোরতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেন নি। কারণ তিনি জানতেন আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ভিত্তিক জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা কোরতে পারলেই কেবল এতিম নয়, শ্রমিক নয়, সকল মানুষের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হবে, নিশ্চিত হবে। সমস্ত মানবজাতির জীবনে ন্যায়, সুবিচার, সাম্য, উন্নতি, প্রগতির একমাত্র সূত্র আল্লাহর তওহীদ অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্ব। আল্লাহর এই সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য হেযবুত তওহীদের সদস্যরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় আত্মনিয়োগ কোরেছেন এবং যামানার এমাম, হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর পক্ষ থেকে মানবজাতির প্রতিও আহ্বান জানাচ্ছেন আল্লাহর সত্যদীন দুনিয়াতে প্রতিষ্ঠা কোরে মানবজাতির মহাশত্র“ দাজ্জাল অর্থাৎ ইহুদী খ্রিস্টান ‘সভ্যতা’র কবল থেকে মানবজাতিকে মুক্ত কোরে অনিন্দ্য শান্তিময় একটি পৃথিবী গড়ে তুলতে।

লেখক: আমীর, হেযবুত তওহীদ, যোগাযোগ: ০১৬৭০১৭৪৬৪৩, ০১৭১১০০৫০২৫ http://www.hezbuttawheed.com

মুল লেখাঃ আল্লাহর সত্যদীনই পারবে সকলের অধিকার ফিরিয়ে দিতে- হেযবুত তওহীদ
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×