পাসপোর্ট অফিস দর্শন এবং দর্শণ
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
পাসপোর্ট অফিস এখন এক অদ্ভুদ জায়গা।
হাজার হাজার মানুষ! এলাহী কান্ড ! এতো এতো মানুষকে সেবা দেয়া আসলেই একটা বাহবা দেয়ার মতো কাজ।
মানুষ কেন দেশের বাইরে চলে যেতে চায় সেটা এখানে আসলেই স্পষ্ট বোঝা যায়! যারা আসেন তাদের বেশিরভাগই ২০ থেকে ৩০ বছরের তরুন। আর এই তরুনদের বেশিরভাগই গার্মেন্টশ্রমিক বা গ্রামে টোটো কোম্পানির ম্যনেজার।
এখনকার পাসপোর্ট অফিসে মুড়ি মিছরি একদর। আধা-সামরিক শাসনে থাকার কারনেই হয়তোবা এই দশা। যত উচ্চবংশীয়ই হোক না কেন, মোটামুটি দুইবার ওখানে লাইনে দাঁড়াতেই হবে। (ব্যতিক্রম আছে) তাও আবার ছোটলোকদের সাথে। বাংলাদেশের সমাজকাঠামোর সাথে এটা একেবারেই সামন্জস্যপূর্ন না। প্রথম শ্রেনী-দ্বিতীয় শ্রেনী এভাবে ভাগ করা না দেখলে আসলে আমার মতো সহজ-সরল মানুষ মানসিক চাপে পরে। মধ্যম শ্রেনীর মানুষ অতিউচ্চবংশীয়দের দেখলে একটু হকচকিয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। তবে এটা সত্য, আমার মতো লোকাল গরুদের জন্য হৃষ্টপুষ্ট ফ্রিজিয়ান জাতের COW দেখার এটাই হয়তো একমাত্র সুযোগ !!
উচ্চজাতেদের মধ্যে অনেকের আবার ছোটলোক দেখলে চুলকানি বেড়ে যায়। এসব দেখে বিষাদ নেমে আসে এই ভেবে যে একেবারে নিচুজাতেরও একটা জগৎ আছে। সেই জগতে আমিও কিছুক্ষনের জন্য উচ্চজাত হয়ে যাই।
ফৌজের জওয়ানরা দেখলাম হাড়ভাঙা খাটুনি দিচ্ছে। ৫টা বাজার পরও তারা কাজ করছে। প্রশংসার দাবিদার। পরিদর্শনে এসে মেজর সাহেব কাজ বন্ধ করতে বললেন। একপর্যায়ে লাইট অফ করে দিলেন যাতে কেউ কাজ করতে না পারে। এক তীব্র হুংকার দিয়ে জওয়ানরা পাবলিক সরিয়ে দিলো। এর পরে শুরু হলো দরবার। তাদের নেতা (মেজর সাহেব নন, তাদেরই একজন ওয়ারেন্ট অফিসার) দেখলাম একজনকে বালি দিয়ে ধরলো। তার অপরাধ চেইন অব কমান্ড মেনে না চলা। শৃঙ্খলা ভঙ্গ। তার প্রতি দলনেতার উক্তি গুলো ছিলো নিম্নরূপ, বাঘের গর্জনে -
"পাসপোর্ট অফিসে আইসা তুমি সিভিলিয়ান হইছো...ফা***ত....তুমি ফৌজ না সিভিলিয়ান...ট্রেনিংএ তুমি কি শিখছো...গ্রামে থাকতেও তুমি বেয়াদপ ছিলা..এখানেও সিনিয়রদের সম্মান দিতে শিখো নাই..ফৌজ থেকে বাইর হইয়া তুমি এখন সিভিলিয়ান হইছো.."
এই পর্যায়ে চোখ ঘুরিয়ে আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা আমাদের কয়েকজনকে একনজর দেখে নিলো। আর শান্টিং খাওয়া ছেলেটা গম্ভীর মুখে এটেনশন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। ছেলেটার চেহারা দেখলে আসলেই মনে হয় বেয়াদপ। মারনাস্ত্র ব্যবহারকারীদের অহং সবার আগে বন্দী করতে হয়। তা নাহলে মারনাস্ত্র একদিন নেতার দিকেই তাক করে বসবে।
আতংকের বিষয় হচ্ছে এই ইন্টারনেট, মোবাইলের যুগে মিডিয়া হইলো সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান। এর জোর এখন সবচেয়ে বেশি। জোর যার মুল্লুক তার এটাই পৃথিবীর শেষ কথা। এই মিডিয়ার সামরিক শাসনে মানুষকে প্রভাবিত করা আসলেই মুশকিল। যুগের হাওয়ার সাথে সাথে মানুষকে বন্দী করার কৌশল যদি না পাল্টানো যায় তাহলে কিভাবে হবে?
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু
খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!
নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ড্রেনেই পাওয়া যাচ্ছে সংসারের তাবৎ জিনিস
ঢাকার ড্রেইনে বা খালে কী পাওয়া যায়? এবার ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (উত্তর) একটি অভুতপূর্ব প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। তাতে ঢাকাবাসীদের রুচিবোধ অথবা পরিচ্ছন্নতাবোধ বড় বিষয় ছিল না। বড় বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন
মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?
শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন
নিউ ইয়র্কের পথে.... ১
আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন