বাসার সিলিং ফ্যান টা অনেক দিন পরিস্কার করা হয়না। ভেজা এক টুকরো কাপড় নিয়ে মার বারান্দা্য় বসার মোড়ার উপর দাড়িয়ে শুরু করলো রেজা।।অনেক ময়লার আস্তর পরেছে।পরিস্কার করতে করতে হঠাৎ তার মনে হলো এই যে সিলিং ফ্যান এ ঝুলে মানুষ আত্মহত্যা করে....সিলিং ফ্যান টা কি করে মানুষটার ভার নেয়???? খুব যে শক্ত গোড়া তা ও কিন্তু না।উত্তর চিন্তা করলো কিছুক্ষণ.....।নাহ....বুঝলোনা সে। আর চিন্তা না বাড়ি্য়ে তারাতারি শেষ করলো পরিস্কার করা।আজ রেজার ক্লাস নেই।মা জানেনা।তাই ক্লাসের নাম নিয়ে বের হবে। নিশির সাথে আজ ঘুরবে কিছুক্ষণ। নিশি কে রেজা ডাকে মরফিন বলে।নিশি থেকে নেশা।নেশা থেকে মরফিন। ও যেনো একটা মরণ নেশার মতো রেজার কাছে।খেলে ও মরবে....না খেলে ও।
তারাতারি গোসল করে নিয়ে মরফিন কে রিং দিলো একটা। মেয়েটা কোথায় এখন জানা দরকার।টি এস সি তে ই থাকার কথা।আজ তার আবৃ্ত্তির ক্লাস ছিলো বলে ই জানে রেজা। নাহ...ধরলোনা...।ক্লাস এ বিজি মনে হয়। বের হবে এমন সময় মনে হলো টাকা তো বেশী নাই।থাক..মরফিন এম্নি তে ই কিছু খেতে চায়না। এত অনিহা মেয়েটার খাবার এর প্রতি।শুধু এক টু ঘুরতে পারলেই হল।রেজা কে যতটুকু পাশে পাওয়া যায়।
রিক্সা নিয়ে যেতে যেতে রেজা ভাবতে লাগল নিশি কে নিয়ে।কত দিন ই বা হল তাদের????তিন মাস এর কিছু বেশি।পরিচয় অবশ্য অনেক দিন এর।জ়ীবন এর এ নতুন দিক টা আগে কখন দেখে নি রেজা।বন্ধু রা অনেক ই প্রেম করত।রেজার যে মন চাইত না তা নয়।কিন্তু আগ বাড়িয়ে কিছু করতে ইচ্ছা করত না।কে জানে, নিশি যদি এগিয়ে না আসত, তবে ভালবাসার এ অধ্যায় টা হয়ত অচেনা ই থাকত রেজার কাছে।নিশি অনেক চাপা স্বভাব এর।বুক ফাটে ত মুখ ফোটেনা টাইপ এর।নিশি এসে বদলে দিয়েছে অনেক কিছু ওর জীবনে। বাউন্ডুলে রেজা আজ কতই না
ভদ্র।বড্ড ভালবাসে সে মেয়ে টা কে।
টি এস সি তে গিয়ে নিশি কে পেল না রেজা। আজ নাকি ও আসে ই নি।গেল কই মেয়েটা????ফোন দিল আরেক টা।নাহ, ধরে না।বাসার দিকে যাবে নাকি একবার?আগে ত কখন ই যায়নি।কি বলবে গিয়ে????আ্পনাদের হবু জামাই????নাকি নিশির বন্ধু???এটাই ভাল হবে।যাওয়া কি উচিত হবে???হয়ত ঘুমাচ্ছে। যেই ঘুম কাতুরে। তার দ্বারা স্বম্ভব এটা।
অনেক চিন্তা করে আরেকটা রিক্সা নিয়ে রওনা দিল ওর বাসার দিকে। বেশি দূরে না ওর বাসা। ইস্কাটনে।মাঝখানে অবশ্য রিক্সা ছেড়ে দিতে হবে।ওভার ব্রীজ পার হয়ে আবার রিক্সা।ইস্কাটনের রাস্তায় এসে আর রিক্সা নিল না রেজা। হেটে ই যাবে বাকি পথ।সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে।নাহ,খাওয়া যাবেনা।নিশির টের পেয়ে যাবে।দেখা করে এসে তারপর মনের সুখে টান দেয়া যাবে ২ টা।
নিশির বাসার কাছাকাছি আসতে পাশ দিয়ে এম্বুলেন্স ছুটে গেল এক টা।হলি ফ্যামিলির দিকে যাচ্ছে। আহা,কার প্রিয় মানুষ টা যে যাচ্ছে ওটা তে।জীবন টা অনেক বেশী অনিশ্চিত আজকাল।কে কখন মরে যায় ঠিক নেই। রেজার ছোট খালু, চার বছর পর দেশে আসলো। ছয় দিনের মাথায় মারা গেল স্ট্রোক করে।
ঐ তো নিশি দের বাসা।ষোল তলা বিল্ডিং এর বারো তালায় থাকে ওরা। কোন ফ্ল্যাট তা অবশ্য যানেনা। খুজে নেয়া যাবে।আরেক টা ফোন দিল ওর মোবাইল এ।আজগুবি। মেয়ে টা করে কি???একবার ও ফোন ধরলনা। হঠাৎ এক অজানা আশঙ্কা মনের মাঝে উকি দিল রেজার। কিছু হয়নি তো নিশির???ওর কিছু হলে আমি শেষ, মনে মনে ভাবল রেজা। সকাল এর সিলিং ফ্যান এর কথা মনে পরে গেল। তবে কি ওটা কোন নিশানা ছিল সৃষ্টিকর্তার??? হাটার গতি বেড়ে গেল রেজার। নাহ......খারাপ কিছু হতে পারেনা নিশির....... কখনো না.......নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও না।
নিচের দারোয়ান কে জিগ্গেষ করলো নিশি দের বাসা কোন টা। 12 D. দারোয়ান তো মনে হল কিছু যানেনা। লিফট এসে থামল ১২ তলায়। লিফট থেকে বের হয়ে বামের ফ্ল্যাট টাই নিশি দের। ভয়ে ভয়ে বেল চাপল রেজা।বেল চেপে ই মনে হল আসলে তার আসা উচিত হয়নি। কিন্তু এখন ফিরে যাওয়ার উপা্য় নেই কোনো।
অনন্ত কাল পেরি্য়ে যাবার পর দরজা খুললো এক ভদ্রলোক।
সালাম দিলো রেজা।
লোকটা মনে হয় তার মত ই কাউ কে আশা করছিলো।
"নাম কি??"
"জ্বি, রেজা"
"রেজালা???খাসির না গরুর"
কি বিপদ???? "জ্বি না, শুধু রেজা"
"কার কাছে আসছো??"
"জ্বি, নিশির কাছে"
"নিশি নাই"
"জ্বি??"
"তুমি কি হও নিশির??"
কি বলবে রেজা। জীবনে ও তো এই ধরনের ফাঁপরে পরে নাই।তবে মনে হচ্ছে নিশি ভাল আছে।মনে সাহস চলে আসলো রেজার।
"কিছু হইনা, তবে হতে চাই"
"মানে????"এ যেন সাক্ষাৎ রাবণ।" কি হতে চাও???"
হে কনকর্ড টাওয়ার....।দ্বিধা হও......।আর পিছু ফেরা যায়না। The bullet is already fired........
"নিশির জামাই হতে চাই........"
বেকুব এর মতো লোকটা কিছুক্ষণ চেয়ে থাকলো। জীবনে ও মনে হয় আশা করে নাই কেউ এই টাইপ এর কথা বলতে পারে।
"ভিতরে আসো"
"থ্যাংকস"
ড্রয়িং রুম টা সুন্দর।একটু পর এক গাট্টি লোক জন আসলো।
বেকুব লোকটা ( েয কিনা নিশির মামা ), রেজা কে দেখিয়ে সবাইকে বললো " এই সে গাধা, যার জন্য আমার ভাগ্নি এত ভালো প্রস্তাব ফিরিয়ে দিসে।যার জন্য নিশি জীবনের সবচেয়ে বড় বাজী ধরেছে। আজ যদি এই গাধা টা বেকুব এর মতো বাসা্য় এসে না পড়ত, আমার ভাগ্নির জীবন টা কি ভাবে নষ্ট হতো ধারণা করা যায়???"
এবার নিশি আসলো....ঘুমায়নি....চোখ মুখ ফোলা।
এবার সব পরিস্কার হলো রেজার কাছে। গত রাতে মামা আসছিলো একটা
প্রস্তাব নিয়ে। নিশি রাজী হয়নি। সে রেজার কথা বলে দিলো সবার কাছে।অনেক বকা ঝকা হলো। কিন্তু নিশির এক কথা। শেষে সমাধান দিল নিশি ই। সে আর রেজা কে ফোন দিবেনা, যোগাযোগ করবেনা। যদি রেজা কালকের মাঝে নিশি দের বাসায় হাজির না হয়, তাহলে নিশি মামার ঐ প্রস্তাব এ রাজী হবে।
কি ভয়ংকর???
নিশি কাছে এসে দাড়ালো।
"আমি জানতাম তুমি আসবে, তবু একটু সন্দেহ ছিলো।না আসলে বাকি জীবন আমার জেল খানায় কাটাতে হত তোমাকে খুনের দায়ে।ভাগ্গিস আসছো।এবার তোমার সারা জীবন আমার জেল খানায় কাটাতে হবে"