somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উন্মাদ

০১ লা মে, ২০১৩ দুপুর ১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হঠাৎ করেই শহরে কোত্থেকে যেন এক পাগল এসে ঢুুকল। আমি আমাদের বাড়ির ছাদের উপর থেকে তাকিয়ে দেখি মেইন রোডের মাঝখানের সড়ক দ্বীপে এক পাগল। লম্ব-চওড়া। নিগ্রোদের মত গায়ের রং। মাথায় বাউলদের মত লম্বা কুচকুচে কালো ঝাকড়া চুল। মুখে লম্বা গোফ-দাড়ি। গায়ে একটা সুতা পর্যন্ত নেই। এমন বিশাল দেহী কোনো সুস্থ মানুষও আমি সামনাসামনি কখনও দেখিনি। পাগলটি সড়ক দ্বীপের মধ্যে জমা বালি দুই হাতে তুলে নিয়ে রাস্তার দুইপাশে চলাচল করা বাস, ট্যাক্সি, রিক্্রার ভিতরে ছুড়ে মারছে। এই ধরনের পাগলদের সরানো যাদের দায়িত্ব তাদের খবর নেই। কেউ যে গিয়ে কিছু বলবে, এমন পালোয়ানের মত পাগলের সমানে যাওয়ার মত সাহসীও কেউ নেই। পাগলটি অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরো এলাকা গরম করে ফেলল।
পরিস্থিতি দেখার জন্য সন্ধ্যার দিকে ছাদে এসে দেখি কারা যেন আমাদের বাড়ির সামনেই ডাস্টবিনের পাশে একটা ট্রান্সফর্মার পিলারের সাথে পাগলটিকে দড়ি দিয়ে বেধে রেখেছে। পরদিন ভোরে হাটাহাটি করে বাড়িতে ঢোকার সময় দেখি বেধে রাখা পাগলটির সামনে দুই মার্কেটের দুই দারোয়ান দাড়িয়ে কথা বলছে। একজন বলছে, ‘পাগলটার লাইগ্যা খুবই মায়া লাগতাছে। কালকার থেইকা না খাওয়া অবস্থায় এমনে বাইন্ধা রাখছে।’
আরেক দারোয়ান বলছে,‘ এই কাম ভুলেও করিস না তরে খাইয়া লাইব একদম।‘
তাদের কথা শুনতেই শুনতেই আমি ছাদে গিয়ে নীচে তাকিয়ে দেখি, যে দারোয়ান বাঁধন না খোলার উপদেশ দিয়েছে সে রাস্তা পার হয়ে তার মার্কেটের দিকে চলে যাচ্ছে। আর বাকি জন কী মনে করে পাগলের বাধনটা খুলে দিতেই পাগলটি ঝাড়া দিয়ে উঠে তার গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে নীচ থেকে দারোয়ানের থুতনি বরাবর দরাম করে একটা ঘুষি মারল। সাথে সাথে দারোয়ান চোখ উল্টে চিৎ হয়ে পড়ে গেল।
এর মধ্যে আশে পাশের মানুষ এসে দারোয়ানকে যখন ধরাধরি করে নিয়ে যাচ্ছে তখন আমি দেখলাম পাগলটি প্রেসিডেন্ট রোডের ভিতর দিয়ে চলে গেল। এর পর পাগলটিকে আর কখনো দেখিনি।
আমার ফুফু পাগলদের খুব ভয় পায়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে, দেখেছি পাগলদের রাগ তার উপরই প্রথমে পড়ে। একবার ঘরের ভিতর সবাই বসে রয়েছি। তখন একতলার ঘরে থাকি। দরজা খোলা। হঠাৎ এক পাগল, হাতে লাঠি নিয়ে, কিছু বোঝার আগেই ঘরের ভিতরে ঢুুকে বড় বড় চোখ করে এদিক সেদিক তাকিয়ে সবাইকে বাদ দিয়ে ফুফুকে ধাক্কা দিয়ে খাট থেকে ফেলে দিল। আমি তাকিয়ে দেখি আমার পাশে বসে থাকা আমার দুই বোন মুহূর্তের মধ্যে উধাও। তখন আমি ছোট, আমিও বাথরুমের দিকে লুকানোর জন্য দৌড় দিলাম। এর মধ্যে কে যেন পাগলটাকে বাইরে নিয়ে বের করে দিয়ে আসল।
আরেকদিন আমার ছোট আপা আর ফুফু গিয়েছে কেনাকাটা করতে। দুজনে সায়াম প্লাজার সামনের ফুটপাত দিয়ে হেটে যাচ্ছিল। ভিড়ের মধ্যে হঠাৎ এত মানুষ থাকতে একটা পাগল এসে ফুফুর মাথার উপর ঘুষি মেরে চলে গেল। অবাক কান্ড!
আগে যখন ঘোরাঘুরি করার স্বভাব ছিল তখন বিভিন্ন রকম পাগল চোখে পড়ত। পৌর পাঠাগারে এক শিক্ষিত পাগল দেখেছি। সে মোটা একটা বই নিয়ে হাত দিয়ে দ্রুত পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছে আর ‘শিরিন,শিরিন’ বলছে। নিশ্চয়ই শিরিন নামের কোনো মেয়ের জন্য সে পাগল হয়েছে। আমি ভাবলাম মেয়েটার না জানি কী বিব্রতকর অবস্থা।
এক জন ছিল ছাপড়া দোকান গুলোতে কলসি দিয়ে পানি দিত। স্বাস্থবান, খেটে খাওয়া মানুষ। শুধু যদি কেউ গিয়ে একবার তাকে বলতে পারত ‘শাবানার জামাই’ তাহলেই শেষ। সাথে সাথে মাথার কলসি পানি সহ আছড়ে ফেলে তাকে ধাওয়া করত। আরেকজন ছিল উত্তর চাষাঢ়ার মোড়ে, এক মহিলা। এমনিতে স্বাভাবিক কিন্তু তাকে কেউ ‘খিচুড়ি রানছস’ বললেই দিগি¦বিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে গালিগালাজ শুরু করত। আশে পাশে তো ফাজিল লোকজনের অভাব নেই। তারাও আসতে যেতে এদের যন্ত্রণা দিত। কেউ রিক্্রা দিয়ে যাচ্ছে, বলল,‘কি খিচুড়ি রানছস?’ কিংবা কোন ফাজিল ছেলে ‘এ্যাই, শাবানার জামাই’ বলে দৌড় দিল।
এই কথাগুলোতে তাদের অতীতের নিশ্চয়ই এমন কোন ঘটনার কথা মনে পড়ে যায় যে তখন তারা আর তাদের মাথা ঠিক রাখতে পারে না। তারা ভয়ংকর মানসিক রোগে আক্রান্ত। আমাদের উচিত তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। যে কোন কারণেই হোক মানুষের মন-মানসিকতা এখন এতটাই নিষ্ঠুর হয়ে পড়েছে যে সেই সহানুভূতিটুকু কারও নেই। সবাই নিষ্ঠুর খেলায় মত্ত।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৭:৫৯
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×