somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিজয় দিবস ও কিছু স্মৃতিচারন

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্বাধীনতা যুদ্ধ করিনি, তেমনি চোখেও দেখতে পারিনি, কিন্তু আমি এবং আমার মতো অনেকেই এই স্বাধীন দেশের নাগরিক। সত্যি কথা কি দেশ যে স্বাধীন কেনই বা স্বাধীন, স্বাধীন হয়ে আমার কি লাভ তা আমি অনুভব করতে পারি না। জীবনে একবারই স্বাধীন দেশের নাগরিকের প্রয়োজনীয়তাবোধ করেছি।

অনেক ভেবে দেখলাম স্বাধীনতার মর্ম আমি যেমন বুঝিনা, তেমনি আমাদের এই প্রজন্মে আমার মতো অনেকেই তা অনুভব করতে পারে না। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়- আমি কোনদিন পরাধীন দেশের নাগরিক ছিলাম না, পরাধীন দেশের নাগরিকের দুঃখ কষ্ট আমাকে ভোগ করতে হয়নি, এই দিক থেকে একজন মুক্তিযোদ্ধা স্বাধীনতার মর্ম যতটা অনুভব করতে পারে আমি বা আমরা ততটা পারি না। একারনেই হয়তো কৈশরের বাবা মায়ের নিয়ন্ত্রনের বেড়ি ভেঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে নিজেই নিজের অভিবাবক হয়ে প্রবেশ করলাম, সেদিনের স্বাধীনতা অনুভবটা যতটা স্বতস্ফুর্ত উপভোগ্য, দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে তার অনুভবটা ততটা অগভীর, বিজয় দিবস আসলে যতটা আবেগ কাজ করে লাল সবুজে রাঙ্গানো টি শার্ট পরে আড্ডা দিতে ততটা মনে দৃঢ়তা পাই না বিজয় দিবসকে সামনে রেখে দেশ গড়ার শপথ নিতে।

আগেই বলেছি আমি স্বাধীনতার মর্ম একদিনই বুঝেছি,সেদিনের বাধ ভাঙ্গা উল্লাস, আনন্দই আমার বেদনাহত জীবনের পুজি যা নিয়ে আমি দেশ প্রেমে আজো বেচে আছি। পিলখানা হত্যাকান্ডের মতো নৃশংস ঘটনার কিছুদিন পরেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের শিক্ষাসফরে গেলাম ভারত ও নেপালে। লালমনির হাটের বুড়িমারী চেকপোস্ট দিয়ে আমরা ভারতে ঢুকবো, বাঙলাদেশের চেকপোস্ট ক্রস করে যেই নো ম্যানস লান্ডে পা দিলাম হঠাৎ মনের মধ্যে স্বতস্ফুর্ত একটা অবর্ননীয় অনুভূতি জেগে উঠলো, কেন জানি পিছন ফিরে তাকালাম নিজ দেশের দিকে, ক্ষনিকের জন্য এক ধরনের ফাকাফাকা নিসঙ্গতা ঝাপটে ধরলো। একটু পরেই যখন মোটা মোচওয়ালা ভারতীয় চেক পোস্টের লোকেরা আমার পাসপোর্ট চাইলো ব্যাগ তল্লাসি শুরু করলো বিশ্বাস করুন দেশের স্বাধীনতার অনুভবটা সেদিনই আমি কঠিন ভাবে আত্মস্থ করেছি। যখন দার্জিলিং ঢোকার পথে কিছুক্ষন পরপর ভারতীয় সেনাবাহীনি গাড়ি থামিয়ে বারবার জিজ্ঞেস করছিলো খুবই বিরক্ত হচ্ছিলাম, যখনই শুনলো বাংলাদেশি টর্চ লাইট মেরে বলে বসলো পিলখানার হত্যাকারী কেউ আছে কিনা, ঝাপটা মেরে মাথাটা গরম হয়ে উঠলো, নিজেকে শান্ত রেখে নিজ দেশটার জন্য এতো মায়া ভালোবাসা জেগে উঠলো প্রকাশ করতে পারবো না। সারা ট্যুরে পরাধীনতার ছায়া নিয়ে কাটিয়েছি, বিশ্বাস করুন প্রায় একমাস পর বাংলাদেশের ঢোকার পথে নো ম্যানস ল্যান্ডের বিশাল রাস্তাটা আমি অনেকটা দৌড়ে পার হয়েছি,সেকি উচ্ছাস, সেকি আনন্দ পরাধীনতার বেড়ি খুলে ফেলার,সেকি প্রানবন্ত আবেগ সারাক্ষন নিজ দেশের ভাষায় কথা বলার। সেকি চোখ ঝাপসা হয়ে আসা উজ্জ্বল মুখ। স্বাধীনতা এতো যে উপভোগ্য, এতো যে কাঙ্খিত, এতো যে আনন্দের দেশের বাইরে না গেলে বুঝা যাবে না।

১৬ ডিসেম্বর সবসময়ই আমার জন্য আনন্দের, মনে পড়ে ছোট বেলায় বিজয় দিবসের আগের দিন স্কুল একটু আগেই ছুটি হয়ে যেতো তারপর শুরু হতো প্যারেডের রির্য়াসেল, ক্লাসের প্রথম দিকের ছাত্র হওয়ার কারনে প্যারেডে থাকতেই হতো, আমার অনেক ভালো লাগতো প্যারেডে অংশ নিতে, সবচেয়ে ভালো লাগতো তালে তালে প্যারেড করে সালাম প্রদর্শন করা,দল নেতা যখন উচ্চস্বরে বলতো সালাম প্রদর্শন করবে-সালাম-তখনকার সময়টা এতোটা আবেগযুক্ত ভাষায় বুঝানো যাবে না- মুখে কোন কথা নেই বুকটান করে জাতীয় পতাকে সালাম দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি, আহ কি দারুন প্রানবন্ত স্মৃতি... প্যারেডের পর শুরু হতো ডিসপ্লে স্কুল স্কুল সেকি প্রতিযোগীতা, প্রথমে প্রাইমারী, তারপর হাই স্কুল এরপর কলেজের ছাত্ররা ডিসপ্লে করতো। বেশিরভাগ সময়ই গার্লস স্কুলের মেয়েরা গানের সাথে নৃত্য করতো- একসাগর আর রক্তের বিনিময়ে বাঙলার স্বাধীনতা আনলো যারা আমরা তোমাদের ভুলবো না, হাতে তারার মাঝে লাল আলপনা একে কি সুন্দর দৃশ্য তৈরী করতো। আমরা বয়েজ স্কুলের ছেলেরা নাটিকা পরিবেশন করতাম সবচেয়ে মজা হতো যুদ্ধের শেষে রাজাকারদের ধোলাই এই অভিনয়ের সুযোগে বন্ধু রাসেলকে অনেকদিন মেরেছি। কতো আনন্দ ছিলো সেই দিন গুলিতে আহ আবার যদি ফিরে পেতাম...

ডিসপ্লে শেষ হলেই দৌড়ে চলে যেতাম সিনেমা হলে, এই দিনেই আমাদের জন্য মর্নিশো ছিলো ফ্রি, আমার জীবনের হলে গিয়ে সিনেমা দেখার শুরু এই দিনেই, সেকি অদ্ভুত আনন্দ পেয়েছিলাম বড় পর্দায় জীবনের প্রথম সিনেমা দেখে, নিজেকে অনেক বড়ো মনে হয়েছিলো, অবর্ননীয় মুক্তির স্বাধ, কি আকুল অপেক্ষার শেষ হতো এই দিনে।

আমার প্রেম ভালোবাসার জীবনের শুরুটা এই ডিসেম্বর মাসেই। আমাদের যুগলবন্ধী হওয়াটা একটু ভিন্নরকমের, খুব মনে পড়ে ১৪ ডিসেম্বর আমরা ঘুরে বেড়াতাম বধ্যভুমি থেকে বধ্যভুমি, প্রথমে সাভারের স্মৃতি সৌধ, তারপর মিরপুর বুদ্ধিজীবি স্মৃতিসৌধ,মিরপুরের মুসলিমবাজার, জল্লাদখানা বধ্যভুমি, পরন্ত বিকেলটা কাটাতাম রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধতে। যতটা প্রেমের অনুভুতি আমাদের কাছে নিয়ে এসেছে তার থেকে বেশি দেশপ্রেমের সম্পর্ক আমারদের কাছে নিয়ে এসেছে।

একবারের বিজয় দিবসের স্মৃতি খুব মনে পড়ছে- আমরা সাভারের স্মৃতিসৌধ গেলাম,সৌধের ফুলবেদির সামনে দাড়িয়ে দুজনে একসাথে হাত ধরে দেশপ্রেমের শপথ পাঠ করি, একটু আবেগী হয়ে ছেলের নাম ‘স্বাধীন’ মেয়ের নাম ‘জয়িতা’ রেখে দেই।

প্রতিবছরের বিজয় দিবসে এই পুরনো স্মৃতি আর অনুভুতি আমার চিন্তার স্বাধীনতাকে পরিপক্ব করে, সারা বছরের দেশ প্রেমের ঝিমুনি তাড়িয়ে দেয়,আমাকে করে দেশের জন্য নিবেদিত প্রান।

আজকাল এসে হতাশ হয়ে পড়ি দেশের অবস্থা ভেবে এবং দেখে। জীবনের ২৬টি বিজয় দিবস পার করে মেজর জলিলের অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা বাক্যটাকে খুবই সঠিক ও বাস্তবসম্মত মনে হয়।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×