somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘যুদ্ধাপরাধী বিচার বানচালের চেষ্টা, ঢালা হচ্ছে কোটি কোটি টাকা’

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার লক্ষ্যে দেশের মৌলবাদী শক্তি মরণ-কামড় হেনেছে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম ও বিদেশে অবস্থানরত আন্তর্জাতিক অপরাধ বিশেষজ্ঞ আহমেদ জিয়াউদ্দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত চলমান বিচারের বিষয়ে কথোপকথন স্কাইপির মাধ্যমে হ্যাকিং ও পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়েছে। আইন-কানুনের কোনরূপ তোয়াক্কা না করে দেশের একটি দৈনিক এ কথোপকথন প্রকাশ করেছে। দেশবাসীর মনে সব সময়ই একটি গভীর শঙ্কা ছিল যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ল-ভ- করতে তাদের পেয়ারের দোসর ও মৌলবাদী মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ অনুসারীরা সুযোগ বুঝে সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে তাদের ঘৃণ্য প্রয়াস চালাবেই। এরই মধ্যে চক্রটি তাদের রাজনৈতিক মিত্রদের সঙ্গে এককাট্টা হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি আদায়ের আড়ালে নিজেদের প্রধান লক্ষ্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নস্যাৎ করার অপচেষ্টায় রত। প্রায় পুরো বছর ধরেই বিক্ষোভ, ঘেরাও, হরতাল ও অবরোধের মতো বিভিন্ন কর্মসূচী পালনে মেতে রয়েছে। তাদের লক্ষ্য অর্জনে ক্ষমতাসীন সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করে একেবারে অস্থিতিশীল করে তোলার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। বছর চারেক ধরে জনকণ্ঠসহ দু’একটি জাতীয় দৈনিকে গোটা দশেক লেখার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে স্বার্থান্বেষী মহল সাধ্যমতো তাদের সব অপতৎপরতা চালাবে বলে আমি সুস্পষ্টভাবে সংশ্লিষ্ট মহলকে খুব সাবধান থাকার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। যুদ্ধাপরাধীদের দোসরদের অপচেষ্টা রোধে সরকারের তৎপরতার ফলে বিচার কাজ পুরোপুরি ঠেকাতে না পারলেও তারা যে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর অন্তরের দাবি বাস্তবায়নে বিঘœ সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালাতে পারে সে বিষয়েও বিভিন্ন পত্রিকা তাদের প্রতিবেদন ও কয়েকজন লেখক তাঁদের লেখায় যথেষ্ট ইঙ্গিত প্রদান করেছিলেন। স্বাধীনতার সপক্ষের সরকারের কাছে নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সুষ্ঠুভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন তাদের জন্য যেমন পবিত্র ও ঐতিহাসিক দায়িত্ব তেমনি দেশের আপামর জনগণ, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের সদস্যদের কাছে এটি একটি স্বর্গীয় প্রত্যাশা পূরণ। ইপ্সিত লক্ষ্য হাসিলে মৌলবাদী চক্রটি তাই মরণ কামড় হানার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি এই চক্রটি তাদের নীল-নকশা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই বিচার কার্যক্রম পুরোপুরি বানচাল না করতে পারলেও বিঘœ সৃষ্টি করে দেশে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার নির্লজ্জ ও সংঘবদ্ধ প্রয়াস চালিয়েছে। বিপুল টাকার শক্তিতে মহাশক্তিমান চক্রটি অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে প্রণীত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ব্যতীত তাদের আর কোন বিকল্প নেই। অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত তাদের শীর্ষ নেতাদের বাঁচানো ছাড়া তাদের আর কোন উপায় নেই। নিজেদের গা বাঁচানোর জন্য তারা হিংস্র ব্যাঘ্রের মতো ক্ষেপে গিয়েছে।
দৈনিক আমার দেশে প্রকাশিত বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলাপ করে বিচারপতি নিজামুল হক কোন অপরাধ করেছেন বলে মনে হয় না। বরং যারা স্কাইপি হ্যাক করে তাদের কথা প্রকাশ করেছেন বা ছেপেছেন তারাই শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। বিচারপতি নিজামুল হকের আলাপের উদ্দেশ্যটি ছিল সৎ, স্বচ্ছ ও মহৎ। বিচারের রায় সুন্দরভাবে প্রদানের জন্যই তিনি আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে আলাপ করেছিলেন। তিনি সরকারের কোন মন্ত্রী বা সরকারী দলের কোন প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করলে বিষয়টি দোষের হওয়ার সম্ভাবনার কথা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যেত না। তিনি একজন আইন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তাঁর কাছ থেকে সুপরামর্শ পাওয়ার জন্যই। বিচারপতি নিজামুল হক আসলেই ভাল মানুষ বলে তিনি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে গত ১১ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেছেন। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে গঠিত হয় তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তিনি মহানুভব বলেই নিঃশব্দে দায়িত্ব ছেড়ে চলে গেলেন। কারণ, তিনি বিচার প্রক্রিয়াকে মোটেই প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাননি। বিচারপতি নিজামুল হক পদত্যাগ করার সাথে সাথেই স্বার্থান্বেষী মহল এখন আবার বিচার কার্যকম নতুন করে শুরুর দাবি তুলেছেন। অথচ, কথাটি সবাই জানেন যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ্যাক্টের ধারা ৬ অনুযায়ী মামলা যে অবস্থায় আছে সে অবস্থাতেই চলবে। আইনটিতে উল্লেখ আছে কেউ বদলি, পদত্যাগ অথবা মৃত্যুবরণ করলেও মামলা চলমান থাকবে। নতুন করে মামলা করতে হবে বলে যারা দাবি করছেন তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে আইনের পরিপন্থী কথা বলছেন। ৪২৮ দিন পর গত ৬ ডিসেম্বর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের আদেশে বলা হয়েছে যে কোন দিন রায় ঘোষণা হবে। আরও দু’একটি মামলা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তাই জামায়াত-শিবির এবং বেগম জিয়ার নেতৃত্বে তাদের মহান দোসর বিএনপির মাথা খারাপ হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে যেভাবেই হোক যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় তারা এখনও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এদেশের সর্বস্তরের মানুষের একটি সার্বজনীন দাবি। নতুন প্রজন্মের সদস্যরা বিশেষভাবে ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। তারা শুধু তাদের প্রিয় মাতৃভূমির মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার পাকিস্তানীদের এদেশীয় দোসরদের ঘৃণ্য কার্যকলাপের কথা আত্মীয়-স্বজনদের কাছে শুনে বা পত্র-পত্রিকায় পড়ে ঐ হায়েনাদের ভয়াবহ ও বীভৎস কর্মকা- সম্পর্কে যা জেনেছে বা শুনেছে তাতেই ওরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে। গত নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থীদের পক্ষে বিপুলভাবে ভোট দিয়ে তাদের বিজয়ী করে। কিন্তু একাত্তরের এ নৃশংস কর্মকা-ে জড়িত ঘাতকদের বিচার বানচাল করতে এখন স্বার্থান্বেষী মহল মরিয়া হয়ে উঠেছে। লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে জামায়াতে ইসলামীর দোসর বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান ইতোমধ্যেই সুস্পষ্ট করেছে। জনসমক্ষে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে তাঁর নগ্ন বক্তব্য একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের বিরোধীদের উৎফুল করে তোলে। তবে এদেশের মানুষের বদনসিব যিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ওপারে মেজর স্বামীর ডাকে সাড়া দিয়ে সীমান্তের ওপারে না গিয়ে ঢাকা সেনানিবাসে আয়েশী জীবনযাপন করাই শ্রেয় মনে করেছিলেন তিনি প্রায়ই এখন আরেকটি যুদ্ধ করার কথা বলছেন। এমনকি তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা মানায় না বলার মতো দুঃসাহস দেখাচ্ছেন। ২০১১ সালের ২৭ নবেম্বর খুলনায় এক জনসভায় তিনি দাবি করেছিলেন, ‘যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি এবং আরেকটি যুদ্ধ করে দেশবিরোধীদের ক্ষমতাচ্যুত করে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করব। তিনি তাঁর বক্তৃতায় যুদ্ধাপরাধের দায়ে কারাবন্দী এবং বিচারাধীন বিএনপি-জামায়াত নেতাদের মুক্তিও দাবি করেন। জনসভায় উচ্চারিত ভাষায় স্পষ্ট মনে হচ্ছে, তিনি যুদ্ধ করেছেন! কিন্তু তিনি কবে, কোথায় যুদ্ধ করলেন? তিনি স্বামীর ডাকে ওপারে যাননি। ফিরে আসার পর জিয়াউর রহমান যে তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন সে কথাও সবার জানা। তাঁদের মধ্যে সমঝোতার বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকার কথাও সবাই জানেন।
এটা সবারই জানা রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াত প্রচুর টাকার মালিক। বিদেশে অবস্থানরত তাদের সুহৃদদেরও আছে বিপুল টাকা। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, স্টিভেন কে কিউসি ও টবি ক্যাডম্যান এবং জামায়াতের আইনি খরচ চালাতে লন্ডন থেকে প্রায় পাঁচ মিলিয়ন পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় আনুমানিক প্রায় ৬৫ কোটি টাকা) সংগ্রহ করা হয়েছে। অঢেল টাকার বিনিময়ে বিদেশে বসবাসরত জামায়াতের সাচ্চা বন্ধুরা টেলিভিশন, পত্রিকা, টক-শো এবং জার্নালে বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের পক্ষে এবং বাংলাদেশে সরকার ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের বিরুদ্ধে বক্তব্য আদায় করে।
‘যুদ্ধাপরাধী বিচার বানচালের চেষ্টা, ঢালা হচ্ছে কোটি কোটি টাকা’ শিরোনামে গত ২০১১ সালের ২৮ নবেম্বর এবং ‘কথা বলছে ২৫ মিলিয়ন ডলার, আমেরিকান লবিস্ট ফার্ম ও জামায়াত নেতার মধ্যে চুক্তি’ শিরোনামে একই বছরের ২ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদন দু’টি এদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষের মধ্যে দারুণ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। একদিকে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করা হলেও বেগম জিয়ার গুণধর পুত্রদ্বয়কে নির্ঘাত কারাবাস থেকে রক্ষা করার প্রাণান্ত প্রয়াসও বটে। অর্থ নামক অমোঘ ও অব্যর্থ অস্ত্রটি ব্যবহার করে ইতোমধ্যেই তারা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দু’টি পত্রিকায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠাতে সমর্থ হয়েছে। অর্থের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পশ্চিমা আইনজীবী নামের কিছু ধান্ধাবাজ আমাদের বিশ্বমানের আন্তর্জাতিক বিচার ট্রাইব্যুনাল নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। ঘৃণ্য কূটকৌশলে পারদর্শী এই লোকগুলো তাদের অপতৎপরতার মাধ্যমে একই সঙ্গে দেশের ভেতরে ও বাইরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পর্কে ধূম্রজাল সৃষ্টির খেলায় মেতে উঠেছেন। তারা শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক মিডিয়ার দ্বারস্থ হয়েছে। দ্য ইকোনমিস্ট ও দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের মতো পত্রিকাকে প্রভাবিত করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পর্কে অত্যন্ত নেতিবাচক তথ্য প্রচারে তারা সফল হয়েছে। ভাবতে খুবই অবাক লাগে এক প্রতিবেদনে নিউইয়র্ক টাইমসের মতো পত্রিকা লিখেছিল, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের আগুন চরিতার্থ করতে জামায়াতে ইসলামীর পাঁচজন শীর্ষ নেতাকে মৃত্যুদ- প্রদানের পাঁয়তারা চলছে। পত্রিকাটিতে এ কথাও প্রকাশিত হয়েছে যে, ৪০ বছরের অপরাধের তদন্ত একতরফাভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। দ্য ইকোনমিস্ট পত্রিকায় লেখা হয়েছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে বাংলাদেশের বড় ইসলামিক দলটির শীর্ষ নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা চলছে। টাকার বিনিময়ে নিজেরা সাংবাদিকতার নীতিমালা ধর্ষণ করে এসব পত্রিকা আবার সাংবাদিকদের নৈতিকতা ও সাংবাদিকতার নীতিমালা সমুন্নত রাখার ছবক দেয়ার দুঃসাহস দেখায়। ধিক! এসব পত্রিকার নীতি ও নৈতিকতাবোধের অবক্ষয়ের। পকেটে টাকা নিয়ে তারা যে কত নিচে নেমে নিজেদেরকে নিকৃষ্ট কাজে নিয়োজিত করতে পারে তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী মানবতার শত্রুদের পক্ষে সংবাদ প্রকাশ। তাদের ঘৃণ্য মানসিকতাকে শুধু করুণাই করা যায়।
এই পত্রিকায় গত ২০১১ সালের ২ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনটিও বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। ক্যাডিসি এ্যান্ড এ্যাসোসিয়েটস নামে এক আমেরিকান লবিস্ট ফার্মের সঙ্গে এক বছরেরও বেশি সময় আগে ২০১০ সালের ৬ অক্টোবর জামায়াতের চুক্তি হয়। জামায়াতের প্রভাবশালী নেতা মীর কাসেম আলী চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ক্যাসিডি এ্যান্ড এ্যাসোসিয়েটস ২৫ মিলিয়ন ডলারের (১৮২ কোটি টাকা) বিনিময়ে ছয় মাস কাজ করবে। কাজের প্রয়োজন হলে পরবর্তী ছয় মাসের জন্যও একই পরিমাণ টাকা দিতে হবে। চুক্তি স্বাক্ষরের পরই এক ব্রিটিশ আইনজীবী বাংলাদেশে এসেছিল। তবে ২০১১ সালের ৫ আগস্ট জামায়াতের আইনজীবী বলে পরিচয় দানকারী টবি ক্যাডম্যানকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকেই ফিরে যেতে হয়। আগে তিনি জামায়াতের অতিথি হয়ে দু’বার বাংলাদেশ আসেন এবং দু’টি সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। স্টিভেন কে কিউসি নামে ক্যাডম্যানের একজন সঙ্গীও আছেন। তাদের মূল কাজ হলো জামায়াতের হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে এসব লোককে ভিসা দেয়ার সময় অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। সাদা চামড়ার এ লোকগুলো টাকা পেলে সবকিছুই করতে পারে। এই চক্রটি ১৯৭৩ সালের আইন আন্তর্জাতিক মানের নয় বলেও অপপ্রচার চালাচ্ছে। ১৯৭৩ সালের ২০ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন পাস করা হয়। জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর দালাল আইন বাতিল করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুধু বন্ধই করেননি, তিনি মৌলবাদীদের জন্য এদেশে ধর্মীয় রাজনীতির পথও নিষ্কণ্টক করে দিয়েছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের দেশীয় আইনে বা ট্রাইব্যুনালে বিচারের বিষয়টি বহুদিন থেকেই আন্তর্জাতিক বিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে। ১৯৪৩ সালে সোভিয়েট ইউনিয়ন তার নিজস্ব আইনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বহুদেশ তাদের নিজস্ব আইন অনুযায়ী দেশীয় ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেÑযা আন্তর্জাতিক বিশ্বে প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি। ১৯৪৫ সালের ২০ নবেম্বর ন্যুরেমবার্গে শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক সামরিক ট্রাইব্যুনাল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য শুরু করে এক বছরের কম সময়ের মধ্যে ১৯৪৬ সালের ১ অক্টোবর শেষ করে ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করে। রায় ঘোষণার দু’সপ্তাহের মধ্যেই মৃত্যুদ প্রাপ্ত ১২ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকর করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের এই ভূখ-টি হয়ে উঠেছিল দখলদার পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের যুদ্ধাপরাধের উর্বর ক্ষেত্র। সে সময়ের দেশী-বিদেশী পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ তার সাক্ষ্য বহন করে। চরম মানবতাবিরোধী সেসব অপরাধের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিল তাদেরকেই আজ বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। অথচ তা নিয়ে স্বার্থান্বেষী মহল প্রশ্ন তুলছে। হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মতো অপরাধোরে সঙ্গে যারা সরাসরি জড়িত তাদের বিচার মানবতাবিরোধী কাজ! অনেকেই মনে করেন যুদ্ধাপরাধীদের আজ যারা সমর্থন দিচ্ছে তাদেরও একই অপরাধের দায়ে বিচার হওয়া উচিত।বিচার বানচালে চলছে অঢেল টাকার খেলা। মানবতাবিরোধীদের রক্ষার্থে মৌলবাদী ও তাদের দোসররা আরও কোন অঘটন ঘটিয়ে বসে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়। তাই বিচারকাজ দ্রুত শেষ করার দাবিতে এখন সব মহল সমভাবে সোচ্চার।

৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×