somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একাত্তর

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মতি নামের একজন যুবক ছিলেন বরিশাল শহরে আমানতগঞ্জ এলাকায় যিনি কিনা দেশের কথা বলতেন। শেখ সাহেবের ভক্ত যুবক ৭০ এর নির্বাচনে নৌকার কথা বলতেন। তখনকার অধিকাংশ পরিবারের মত আমার নানার বাড়ির সবাইও রাজনীতি বলতে পাকিস্তানি শোষণ ই বুঝতেন। এবং দূরে থাকতেন। কিন্তু পরিবাব্রের ছোট ছেলে মতি বলতেন এবার শেখ সাহেব আসবেন। যাঁর কথা বলছি তিনি সম্পর্কে আমার নানা হন।
ডিসেম্বর যেমন সবার কাছে অনেক আনন্দ নিয়ে আসে, মুক্তির আনন্দ। আমার পরিবারের কাছেও তেমন হতে পারত। হ্যা আমাদের কাছেও খুব আনন্দের দিন ১৬ ডিসেম্বর। আম্মুর মুখে শোনা যে পাকিস্তানীরা আসলে বা অপারেশন চললে তাদের বাসার সামনে একটা গুপ্তরুমের মত তৈরি করা হয়েছিলো মাটির নিচে তাতে তাদের বাসার সব বাচ্চা আর মেয়েদের ঢুকিয়ে উপর থেকে লোহার ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখা হত। এরকম একটা জীবন থেকে মুক্তির আনন্দ কিরকম তীব্র হতে পারে অনুভব করা টা কঠিন নয়।
কিন্তু ডিসেম্বর আসলেই আমি জানি কেন আমার সেজো নানু তজবিহ গোণেন। তিনি চিতকার করে কাঁদেন আর বলেন মতির লাশ তো আমরা দেখি নাই, আমার ভাই কি মরে গেছে সত্যি? আমার নানাভাই যতদিন বেঁচে ছিলেন চেষ্টা চালিয়ে গেছেন তার আদরের ছোট ভাই কই আছে খোঁজার।
৭১ এ সবার মত যুদ্ধে যায় মতি নানা। ট্রেনিং ছাড়া যুদ্ধে নামেন। দু'মাস পর ধরা পড়ায় বরিশাল জেলে নিয়ে আসা হয় তাঁকে। সেই জেল ভেঙ্গে পালান তিনি। চলে যান যশোর। যশোর থেকে শেষ চিঠি লেখেন আমার নানাকে। ভারতের ট্রেনিং নিয়ে যশোরে যুদ্ধে ছিলেন তিনি।
নানা ভাই পরবর্তীতে বিভিন্ন সূত্র থেকে খবর পেয়ে খুঁজতে খুঁজতে শেষে পৌঁছান যশোরের এক গ্রামে। সেখান থেকে তাকে আলাউদ্দিন মাঝি বলে একজনের বাসায় নিয়ে যাওয়া হলে তিনি জানান যে ঐ গ্রামের উপর দিয়ে যখন মতি নানা সহ একদল মুক্তিযোদ্ধা ১৭/১৮ ই ডিসেম্বর পার হচ্ছিলেন তখন সেখানকার চেয়ারম্যান তাঁদেরকে দুপুরে ভাত খাওয়ার দাওয়াত দেন। দাওয়াত কবুল করেন মুক্তিযোদ্ধারা। দুপুরে তাদের বাড়ির দাওয়ায় পাটি বিছিয়ে ভাত দেওয়া হয়, তারা ভাতের সামনে বসলে, একদল রাজাকার এসে তাদেরকে দাঁড় করিয়ে ভাতের প্লেটের সামনে গুলি করে মারে। ৫/৬ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন ঐ দলে।
আলাউদ্দিন মাঝি মতি নানার পুরনো একটি ছবি দেখে তাকে চিনতে পারেন যে, তিনি ওই দলের মাঝে ছিলেন। তাদেরকে যখন কবর/মাটি চাপা দেয়া হয় তখন আলাউদ্দিন মাঝি সেখানে ছিলেন।
আমার নানা মারা গেছেন, মতি নানার সব ভাই এখন মৃত, বোনদের মাঝে দুইজন বেঁচে আছেন, সেজো নানুর অপেন হার্ট সার্জারি হইছে, তিনি কবে চলে যাবেন জানি না, এই দুই বোন কি মৃত্যুর আগে তাদের ভাইয়ের খুনীদের বিচার দেখে যেতে পারবেন?
বাংলাদেশের প্রতি পাঁচ পরিবারের এক পরিবারে এরকম কোন না কোন ঘটনা আছে, তারপরও আর কতদিন বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক দল বলবে যে দেশে কোন যুদ্ধপরাধী নেই? এরকম একটা কথা শোনায যেকনো মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য অপমানজনক! অবশ্য বলেই বা কি, এমনো ত না যে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলোকে আমরা খুব সম্মান দিয়ে মাথায় উঠায় রাখছি!
যে দেশে ৭১ এর পর ৪১টা ১৪ ডিসেম্বর চলে গেছে, তবুও জহির রায়হান, শহীদুল্লাহ কায়সারের মত মানুষদের মৃত্যুর বিচার হয়নি সে দেশে মান সম্মান, অপমান এসব কথা বলাও খুব ঠুনকো শুনায়!
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৩৬
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×