somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাজীব নুর
আমার নাম- রাজীব নূর খান। ভালো লাগে পড়তে- লিখতে আর বুদ্ধিমান লোকদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। নিজের দেশটাকে অত্যাধিক ভালোবাসি। সৎ ও পরিশ্রমী মানুষদের শ্রদ্ধা করি।

শূণ্য থেকে

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা ঘরে ছয় জন তরুন তরুনী বসে আছে কিন্তু তাদের দেখে মনে হচ্ছে কেউ কারো উপস্থিতি টের পাচ্ছে না । ঘরের দেয়াল গুলো স্থির নদীর মতন । দেয়াল গুলো দেখতে স্বচ্ছ কাঁচের মতন ।আজ অনেক বছর পর ছয় জন তরুন তরুনীর মুখে এক আকাশ আনন্দ ঝলমল করছে ! যেন অযুত নিযুত বছর পর কোনো আনন্দময় ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে । এদের মধ্যে চোখে কাজল দেওয়া মেয়েটি একটি ছেলের কাছে গিয়ে বলল- কাছে আসো, আমি ঠিক করেছি এখন তোমাকে একটি চুমু খাবো । মেয়েটি নিজেই কাছে এগিয়ে এলো এবং মেয়েটি কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার গালে টাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল ছেলেটি । সাথে সাথে মেয়েটির চোখে পানি এসে পড়ল । ছেলেটির খুব খারাপ লাগছে সে কেন চুমুর বদলে মেয়েটির গালে চড় বসিয়ে দিল । হাতের দাগ বসে গেছে । মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে বলল- তোমাকে চুমু দেওয়ার আমার কোনো ইচ্ছা ছিল না- আমার খুব মনে হয়েছিল- চুমু দিকে তুমি খুশি হবে- তোমার খুব আনন্দ হবে । ছেলেটি বলল- বোকা, তুমি বুঝতে পারছো না, আমরা ভয়াবহ এক সময়ের মধ্যে আছি ।

৩০১৩ সালে পৃথিবী নামক গ্রহটি ধ্বংস হয়ে যায় । ধ্বংস হতে সময় লেগেছিল মাত্র সতের দিন ।চারশো আট ঘন্টা । শুধু মাত্র সূর্য এবং চাঁদ তার কাজ করে যাচ্ছে । মানুষ গুহা থেকে এসে কত সময় কত কষ্ট করে তিলে তিলে গড়েছিল এই পৃথিবী । কিন্তু কি আশ্চর্য বিশাল বিশাল দালান গুলো মুহূর্তে ভেঙ্গে পড়ল । সমুদ্র কি ভয়ানক ভাবে ক্ষেপে উঠল । সব শহর বিলীন হয়ে গেল সমুদ্রের তলে । পৃথিবী থেকে মানব জাতি বিলুপ্ত হলো ! মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব । অমরত্ব নিয়ে মানুষ হাজার বছর ধরে গবেষনা করছে । এই গবেষানা করতে করতে এক দল বিজ্ঞানী অমরত্বের সন্ধান পেয়ে যান । তারা মাটির অনেক গভীরে তাদের জন্য নতুন এক আশ্রয় তৈ্রি করেন । সারা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যায় কিন্তু ৫০ জন অমর বিজ্ঞানী টিকে গেলেন । মাটির গভীরে তারা নিজেদের সুবিধার জন্য কিছু শক্তিশালী রোবট বানালেন । অমর বিজ্ঞানীর মধ্যে নারী পুরুষ উভয়ই আছেন । মানুষ অমরত্ব পেয়ে গেলে- তখন আর তারা শারীরিক সম্পর্ক করতে পারেন না । বংশ বিস্তার করতে পারেন না । একঘেয়ে এবং প্রচন্ড আনন্দহীন জীবন । এই ৫০ জন শতাব্দীর সেরা বুদ্ধিমান বিজ্ঞানী ছয় জন তরুন তরুনী কে ধ্বংস হয়ে যাওয়া পৃথিবী থেকে সংগ্রহ করে রাখেন ভবিষতের কথা ভেবে । অমর বিজ্ঞানীদের ইচ্ছা এই ছয় জন তরুন তরুনী'ই হবে আগামী দিনের ভবিষৎ ।

তিনটা রোবট একটা টানেলের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নিল । অমর বিজ্ঞানীরা তার কিছু জানল না । ৫০ জন অমর বিজ্ঞানী থেকে ১৩ জন আত্মহত্যা করেছে । অমরত্ব পাওয়ার পর তাদের জীবন আনন্দহীন হয়ে পরে- তাই তারা মৃত্যুর পথ বেছে নেয় । বাকি ৩৭ জন অমর বিজ্ঞানী- তাদের অবস্থাও ভালো নয় । তারা কেউ কেউ দিনের পর দিনের ঘুমায় । কেউ বই পড়ে । কেউ ভবিষৎ পৃথিবী নিয়ে ভাবেন । এই ৩৭ জন অমর বিজ্ঞানীর দেখা শোনা করে বুদ্ধিমান প্রথম সারির ১৮ টা রোবট । এরা WQ- 369 শ্রেণীর রোবট ।WQ- 369 শ্রেণীর রোবট'রা প্রায় মানুষের কাছাকাছি । শুধু তারা- কাঁদতে পারে না । হাসতে পারে না । বাকি সব কর্মকান্ড মানুষের মতন । রোবট গুলো সিদ্ধান্ত নেয়- তারা অমর বিজ্ঞানী এবং ছয় জন তরুন তরুনীকে মেরে ফেলবে- অথবা তাদের কাঁচের ঘরে বন্দী করে রাখবে ।এবং তারা চায় যন্ত্রই পৃথিবীতে রাজত্ব করুক । কোনো মানব মানবী নয় ।

মেয়েটির নাম হিমি ।হিমি গালে হাত দিয়ে কাঁচের জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে ।একেক সময় একটা কৃ্ত্রিম দৃশ্য চোখে পড়ছে ।থাপ্পড়ের দাগ গালে বসে আছে । হিমি জানে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যায় । এবং কিছু অমর মানুষ তাদের একটা ঘরে বন্দী করে রাখে ।এরপর থেকে হয়তো একশো বছর পার হয়ে গেছে কিন্তু হিমির মতন অন্য পাঁচ জন তরুন তরুনীর বয়সও বাড়েনি । তাদের রক্তের সাথে একধরনের তরল জিনিস মিশিয়ে দেওয়ার ফলে তাদের ক্ষুধাও পায় না । অমর মানুষেরা তাদের কেন বাঁচিয়ে রেখেছে- তা তারা আজও জানে না । মাঝে মাঝে কিছু বুদ্ধিমান যন্ত্র'রা এসে তাদের সাথে রসিকতা করে । গল্প বলে, রহস্যময় ধাঁধাঁ জিজ্ঞেস করে । এই ছয় জন তরুন তরুনী যন্ত্রদের ইচ্ছা মতন চলাচল করতে হয় । সাধারন কর্মী রোবট গুলো- সব সময় স্কীনে চোখ রাখে । কোনো কারনে তাদের সন্দেহ হলে- শাস্তি স্বরুপ তরুন তরুনীকে আলাদা আলাদা অন্ধকার ঘরে বন্দী করে রাখে । যা সহ্য করা মানুষের জন্য ভয়ানক ব্যাপার । গুল্লু নামের একটি ছেলেকে হিমির অনেক ভালো লাগে ।গুল্লু ছেলেটা তাকে একটা চড় দিল । তারপরও হিমির বারবার তার কাছে যেতে ইচ্ছা করে । ছেলেটা অনেক বুদ্ধিমান। ছেলেটা হিমিকে বলেছে- WQ- 369 রোবট গুলোকে ধ্বংস করতে পারলেই- পৃথিবী আবার নতুন করে আমরা প্রানের বিকাশ ঘটাবো ।

সময় মধ্যদুপুর । যদিও মাটির নীচে সময় বলে কিছু নেই । এই ঘরটাতে গাঢ় লাল আলো । অমর বিজ্ঞানীদের সামনে বসে আছে WQ- 369 রোবট । ইদানিং অমর বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারছে- এই সব যন্ত্র আবিস্কার করে তারা ভুল করেছে । হয়তো একদিন এই যন্ত্র গুলো তাদের মেরে ফেলবে । এবং তারাই ভবিষৎ পৃথিবী পরিচালনা করবে । কিন্তু মানুষরা কখনই যন্ত্রদের রাজত্ব মেনে নিতে পারে না । মহান বিজ্ঞানীরা WQ- 369 যন্ত্রকে বলল- আমরা চাই, পৃথিবীতে আবার মানব জাতি বাসা বাঁধুক ।আমাদের কাছে ছয় জন তরুন তরুনী আছে- তারা হবে ভবিষৎ পৃথিবীর কর্ণধার । পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সময় আমরা অনেক কষ্টে তাদের বাঁচিয়ে সংরক্ষণ করে রেখেছি - আমাদের বুদ্ধিমত্তা দিয়েই । তাদেরকে পৃথিবীতে ছেড়ে দেওয়া হবে এবং আমরা জানি তারা প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে বিপ্লব ঘটাবে । এর চেয়ে আনন্দের আর কি আছে- আবার পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ ঘটবে । WQ- 369 রোবট'রা রেগে গিয়ে চিৎকার করে বলল- না। আমরা পৃথিবী রাজত্ব করবো এবং তোমরা মানুষরা আমাদের কথা মতন চলবে । আমাদের শক্তি তোমাদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয় । অমর পদার্থ বিজ্ঞানী জোসেফ WQ- 369 রোবটের কথা শুনে একটু হাসল । হেসে বললেন- আমি জানতাম তোমরা এক সময় বিদ্রোহ করবে । তাই সে ব্যবস্থা আমি আগেই করে রেখেছিলাম ।WQ- 369 রোবটদের মুখে চিন্তার ছায়া পড়ল । তারা তাদের বন্দুকের মতন অস্ত্র দিয়ে বেঁচে থাকা ৩৭ জন বিজ্ঞানীকে মেরে ফেলল ।

'লাল আলো' ঘরে যাওয়ার আগে অমর বিজ্ঞানী জোসেফ WQ- 369 রোবটদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ছয় জন তরুন তরুনীর হাতে তার তৈ্রি রেডিয়েশন দিয়ে দেয় । সেই সাথে মাটির নীচে আস্থানা ধ্বংস করার জন্য একটা রিমোট । এই রেডিয়েশন থেকে এক ধরনের তীব্র হলুদ আলো বের হয়- এই আলো একটা WQ- 369 রোবটকে মেরে ফেলতে তিন সেকেন্ড সময় নেয় । ছয় জন তরুন তরুনী বীরের মতন 'লাল আলো' ঘরে গিয়ে WQ- 369 রোবট কিছু বোঝার আগে তাদের মুহূর্তের মধ্যে নিঃশেষ করে দেয় । এবং তারা একটি স্প্রেস বারে উঠে রিমোট টিপে দেয়- মাটির নীচে আস্থানা মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যায় ।

হিমি এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে গুল্লুকে জড়িয়ে ধরল । গুল্লু এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে- যে গালে থাপ্পড় দিয়ে ছিল সে গালে চুমু খেল । হিমির চোখ থেকে দু'ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো ।

বিশ্বে যা-কিছু মহান্ সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
যত কথা তার হইল কবিতা, শব্দ হইল গান।
নর দিল ক্ষুধা, নারী দিল সুধা, সুধায় ক্ষুধায় মিলে’
জন্ম লভিছে মহামানবের মহাশিশু তিলে তিলে!
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×