somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“ এখানে কেউ আছেন .....কথা বলেন .... কেউ আছেন এখানে ...???”

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাইরে বোধয় রাত এখন। এখানে কবরের অন্ধকার।চারদিকে লাশের পচা-বোটকা একটা গন্ধ। দম নেওয়াই দুষ্কর। মাঝে মাঝে দম বন্ধ করে রাখছি। মনে হচ্ছে, বেশি দম নিলে বাতাস ফুরিয়ে যাবে। বিল্ডিংটা যখন প্রথম ধসে পড়ে,আমি মনে হয়, কয়েক দিনের জন্য অজ্ঞান ছিলাম। যখন জ্ঞান ফিরলো দেখলাম আমার বাম পা খানা একটা পিলারের নিচে বিচ্ছিরি রকম ভাবে আটকে আছে। মাথাটা সম্ভবত ফেটেছে।ঘাম-রক্ত আর ধুলায় মেশানো কোন এক নোনতা তরল পদার্থ গাল বেয়ে নেমে ঠোঁটের কোনায় ঝুলছে। জমে শক্ত হয়ে গেছে। তবে, সবচে আশ্চর্যের বিষয় মাথায়একটা চাপা ব্যাথা ছাড়া আর কিছুই অনুভব করছি না।

মনে হয়, তিন চার দিন যাবৎ আটকে আছি এখানে। দিনের বেলা হালকা একটা আলোর রেখা আসে। তখন সেই ঝাপসা আলোতে চারপাশ কিছুটা দেখা যায় । আলেয়া অনেকক্ষণ চিৎকার করেছে- আল্লাহকে ডেকেছে-গারমেন্টসের মালিক গুলোকে গালাগাল করেছে। অনেকক্ষণ যাবৎ চুপ। এখন বোধয় আর বেঁচে নেই। আহা ! মেয়েটা বড্ড ভালো ছিলো। পাশপাশি মেশিনে কাজ করতাম আমরা। কত্ত কথা যে বলতে পারতো মেয়েটা- শুধু হাসতো। আর এখনচুপ। একদম চুপ । বড্ড ক্লান্ত লাগছিল আমার । কখন যে অচেতনহয়ে গেছিলাম বুঝতেই পারি নি। এত নিচে আটকেআছি কেউ যে বাঁচাবে তার আশাও নেই।

কোথায় যেন একটা মেশিনের শব্দ হচ্ছে।আমার হাতা-শেলাই করার মেশিনটাই কি ? আরে ধুর কি ফালতু ভাবছি। খুব ক্ষীণ একটা শব্দ কানে ভেসে আসছে । মনে হচ্ছে বহু দূর থেকে ভেসে আসছে –
“ এখানে কেউ আছেন .....কথা বলেন .... কেউ আছেন এখানে ...???”

ওই তো কেউ হয়তো এলো। আমাকে বাঁচাতে আসছে কেউ ! ইচ্ছে করছে সাত আসমানকাঁপিয়ে চেঁচিয়ে উঠি-
“আমি আছি !! আমি বেঁচে আছি !! আমাকে বাঁচান ভাই !! আমাকেবাঁচান !! আমাকে আপনার বাঁচাতেই হবে। আমি ছাড়া আমার পরিবারের যে, আর কেউ নেই।”

কিন্তু কি আশ্চর্য আমারগলা দিয়ে একটা শব্দও বের হচ্ছে না !! আমি কি করবো ? আমাকে যে বাঁচতেই হবে !! আমি না বাঁচলে আমার ছোট্ট বাবু টার কি হবে ? রুনার কি ভালো বিয়ে হবে ? আমার অন্ধ মায়ের কি হবে ?


নিজেকে বার বার এসব প্রশ্ন করতে করতে জরি আবারও মূর্ছা গেলো।


হঠাৎ তার মুখে একটাটর্চের আলো পড়লো। কেউ একজন চেঁচিয়ে উঠলো এখানে একজন বেঁচে আছে !! কেউ অক্সিজেন আনো !! একটু ফাস্ট এইড !!!


শেষ কথাঃ বাস্তবে যে জরি রানা প্লাজার ভাঙ্গা পিলারের নিচে গত তিনদিন অন্ধকারের মধ্যে পড়ে ছিল- সে বেঁচেনেই। কিন্তু, আমার জরি বেঁচে আছে । আমার জরিকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়েছে। কারণ,আমি ট্রাজিডি লিখতে বসি নি। আমার জরিকে বাঁচিয়েরাখতে হয়েছে- কারণ, একটা দুধের বাচ্চার মুখে দুধের বাট তুলে দেওয়ার মা কে আমি মেরে ফেলতে পারি না। আমার জরিকে বাঁচিয়ে রাখতেহয়েছে- কারণ, জরি মরে গেলে- বস্তিতে বেড়ে ওঠা রুনাকে, উপর-তলার নষ্ট মহলের ভুখাকুকুর গুলো থেকে আগলে রাখার কেউ থাকতো না। আমি জরিকে মেরে ফেলতে পারি নি কারণ –জরি মরে গেলে, দারিদ্র আর বয়সের ভারে নুয়ে পড়া কোন এক বৃদ্ধাকে জীবনের কাছে আবারও পরাজিত হতে হতো। আমি পারিনি- জরির সাথে সাথে একটা গোটা পরিবার কেমেরে ফেলতে; একটা গোটা সমাজকে মেরেফেলতে।

তুমি যেখানেই থাকো ভালো থাকো, জরি।
আমার শুধু এটুকুই সান্তনা মারা যাওয়ার আগে রানাপ্লাজার কাঁচের চুরি পড়া জরি নামের মেয়েটা বুঝতে পেরেছিল যে তার চারপাশের পৃথিবীটাতে এখনও কিছু মানুষ বেঁচে আছে। কেউ একজন চাইছিলো সে বেঁচে থাকুক। তার জন্যই ডাকছিল - “ এখানে কেউ আছেন .....কথা বলেন .... কেউ আছেন এখানে ...???”
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×