somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি বোধহয় একেই বলে : ১৯৭৪-৭৫ যেন ২০১১-১২ তে ফিরে এসেছে

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ১১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭২ সনের জানুয়ারী মাস। পৃথিবী দেখল সাহসী, জয়ী ত্যাগী এক নেতা বঙ্গবন্ধুর বন্দীত্ব দশা থেকে জয়ী বেশে নিজ জনতার মাঝে ফিরে আসা আর নতুন করে জন্ম নেয়া একটি দেশ বাংলাদেশ আর একটি জাতি বাংগালী।বাংগালীর অবিসংবদিত নেতা বঙ্গবন্ধু নির্বাচিত হলেন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এবং পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী রুপে। প্রতিটি বাঙ্গালী মনে তখর বঙ্গবন্ধু নামে শুধুমাত্র একজন নেতাই বিদ্যমান।

১৯৭৪ সন, দেশ এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। একমাঝে দেখা দিলো র্দুঃভিক্ষ। শুধুমাত্র অব্যবস্থাপনার কারণে খাবার না পেয়ে মারা গেল লক্ষ লক্ষ মানুষ। বঙ্গবন্ধু নিজেকে অসহায় অনুভব করতে লাগলেন। যাকে যা দায়িত্ব দিচ্ছেন সবাই বেঈমানী করছে। ইচ্ছেমত লুটপাট আর চুরি করে দেশের পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে তুলছে। এর মাঝে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি আন ইঙ্গ মার্কিন চক্রান্ততো তো চলছেই। যে জনতা তার প্রতি পুরোপুরি অনুগত ছিলো তাদের মাঝ থেকেই জন্ম নিয়েছে জাসদ নামের বিরোধী গ্রুপ যারা তার সরকারের বিরুদ্ধ গোপন আন্দোলন গড়ে তুলছে। বঙ্গবন্ধু বড় অসহায় বোধ করছেন।
মানুষকে বিশ্বাস করার সহজাত প্রবৃত্তি আর মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়ার যে উদ্দীপণা তাকে জয়ী করেছিল তা দিয়ে তিনি দেশকে সঠিকভাবে চালাতে পারছেন না। বড় বেশী অসহায় লাগছে বঙ্গবন্ধুর আজ নিজেকে।

আগেও তিনি জয়ী হয়েছেন মানুষের জন্য তাই এবারও তিনি জয়ী হবেন দৃঢ় বিশ্বাস তার। আর তাই নিজের দল আর আশেপাশে যারা আছে তাদের উপর ভরসা করাই উত্তম বলে সিদ্ধান্ত নিলেন। আর সিদ্ধান্ত নিলেন যত কিছুই হোক নিজের দলের কর্মীদের সবসময় সার্পোট করে যাবেন এই সিদ্ধান্ত নিলেন।

১‌৯৭৫ সাল, বঙ্গবন্ধু আরো বেশী ত্যাক্ত বিরক্ত দেশের মানুষের উপর। উনি প্রতিদিন ওনার আশেপাশের বুদ্ধিজীবী, নেতা কর্মী আর সংবাদ মাধ্যমে দেখছেন দেশের পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে। কৃষকদের জন্য সার, বীজের বরাদ্দ বাড়ছে, নতুন নতুন কলকারখানার স্থাপনা বাড়ছে, নেতানেত্রীদের অবস্থা ভাল হচ্ছে, বিদ্রোহ কঠোর হাতে দমন করা হচ্ছে। আর দেশের প্রকৃত উন্নতি হচ্ছে বলেই ইঙ্গ মার্কিন সংবাদ সংস্থা সবসময় প্র্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে তার সরকারের উপরে। তার দলের বিরুদ্ধে, তার কর্মীদের বিরুদ্ধে যা কিছু বলা হচ্ছে সবই চক্রান্ত। তার এই কর্মীরাই তার অবর্তমানে দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে। এরা কি কোন অপরাধ করতে পারে? এই প্রোপাগান্ডা বন্ধ করা দরকার আর তাই সিদ্ধান্ত নিলেন ৪টি বাদে সব পত্রিকা নিষিদ্ধ করার। আর তিনি অনুভব করলেন, নিজের অবস্থান আর দলকে আরো শক্ত অবস্থানকে শক্ত করা দরকার। আর তাই গড়ে তুললেন বাকশাল। “বাংলাদেশের উন্নয়ন কেবল মাত্র আমার দ্বারাই সম্ভব” মনে মনে ভাবলেন বঙ্গবন্ধু। শুধুমাত্র আমার নেতৃত্বই পারবে সোনার বাংলা গড়ে তুলতে। তাই সবাই আসতে হবে আমার অধীনে আর সব অনাগত নেতৃত্বকে রুখে দিতে হবে।

১৫ই আগষ্ট, ১৯৭৫ সব শেষ; বঙ্গবন্ধু নিহত হলেন এক সুগভীর চক্রান্তে। এতকাল যারা তাকে সঙ্গ দিয়েছেন, তার কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন সবাই আখের গুছিয়ে, বর্ণ পরিবর্তন করে বেমালুম ভুলে গেলেন নেতা বঙ্গবন্ধুকে। শুধু একজন মনে রাখলেন বঙ্গবন্ধুকে, সে একজন ছিলেন শেখ হাসিনা।

২০০৯ সাল, নতুন সংসদে নতুন নির্বাচিত শেখ হাসিনার সরকার, ক্ষমতায় এসেছেন বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে। ২০০৮ সালের অন্তবর্তীকালীন সরকারের স্মৃতিকে মনে রেখে শেখ হাসিনা নিয়ে এসেছেন এক ঝাঁক নতুন নেতৃত্ব। আজ পরম তৃপ্ত শেখ হাসিনা। এইসব নতুন মুখকে তিনি সুযোগ দিয়েছেন যা তারা নিজ যোগ্যতায় কোন দিনও পেতো না, এরা তাকে কখনো প্রতিদ্বন্দীতার মুখে ফেলবে না এটা তার দৃঢ় বিশ্বাস। আওয়ামী লীগ যে শেখ পরিবার ছাড়া অস্তত্বহীন তা হাসিনা ভাল করেই জানেন আর তাই নিজের ছেলে জয়কে গড়ে তুলছেন যাতে সে ভবিষ্যত নেতৃত্ব হাতে নিতে পারে। নতুন এই মন্ত্রীদের যাতে ভালভাবে চালাতে পারেন তাই তিনি নিয়োগ দিয়েছেন নতুন উপদেষ্টাদের।

২০১০ সাল, চমৎকার সময় কাটছে। দেশে সবই শেখ হাসিনার কথায় চলছে। জনগণ কেউ কোন কথা বলছে না। বিরোধী দল কোন কথা বললে আওয়াজ তুললেই তার মন্ত্রী আর দলের সদস্যরা কথা আর মারের চোটে সোজা করে দিচ্ছেন। আমার এই ক্ষমতা একছত্র, আমিই বাংলাদেশের উন্নতির জন্য একমাত্র যোগ্য নেতা। কেউ যদি দেশকে এগিয়ে দিতে পারে তবে সে আমি, মনে মনে ভাবলেন শেখ হাসিনা। আমার দলের সদস্যদের রক্ষার দায়িত্বতো আমার। ছোট্ট ছোট্ট ভুল এরা করবেই, সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে। যত খারাপই তারা করুক দলকে দলের কর্মী আর নেতাদের জন্য সবকিছু করতে হবে। আমার দলই দেশের জনগণ আমার এই দল দেশের উন্নতির জন্যই সবকিছু করছে, তাই দলকে সবসময় সর্মথন দিয়ে যাবো। আর যা লেখা হচ্ছে যা বলা হচ্ছে তা সব জামায়াতী, বিএনপির চক্রান্ত।

২০১১ সাল, শেখ হাসিনা অসাধারণ সময় কাটাচ্ছেন। একছত্র নেত্রী তিনি। বাংলাদেশের উন্নতির রুপকার তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেছেন দেশের ভবিষ্যত কখনো এতো ভালো ছিলো না। তিনি নিজে দেখেছেন আলোচনা করেছেন তার উপদেষ্টাদের সাথে এইভাবে দেশ এগিয়ে চললে ২০২১ সালে দেশে কোন দারিদ্র্র থাকবে না। সোনার বাংলা গড়তে আর কি চাই। দরবেশের সাথে কাল কথা হলো। শেয়ার বাজারের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করাতে দরবেশ বললো শেয়ার বাজার থেকে যে টাকা সরানো হয়েছে সে টাকা দিয়ে দরবেশ ও তার দল নতুন বিনিয়োগ করবে নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। আর যারা সাধারণ বিনিয়োগকারী তারা তো লাভ পেলে নিজের জন্য ব্যয় করতো। যদি সামান্য নিয়ম ভাঙায় সবার ভাল হয় তাতে কি এমন ক্ষতি? “বিশ্বব্যাংক নামের দুই নম্বুরী সংস্থাটা আমার প্রিয় মন্ত্রী আবুলের নামে চক্রান্ত করছে মার্কিন আর ইউনুস নামের হারামীটার সাথে মিলে। কত্ত বড় কথা! সব চক্রান্ত!-ভাবলেন হাসিনা” আবুল যা করেছে আমার কথাতেই করেছে, ব্র্রীজটা কত টাকার ব্যাপার, সামান্য এদিক ওদিক কি সে হিসেবে কিছু? নাহ! বিশ্বব্যাংকের (আর ইউনুসের কথা) কোনভাবেই মানা যাবে না। ব্রীজের টাকা দরকার হলে আমি জোগাড় করবো লাগলে ৫০ বছর লাগুক!

২০১২! আহ! খালি চক্রান্ত চারিদিকে! সংবাদপত্র, টিভি সবগুলোতে আমার সরকারের বিরুদ্ধে খালি চক্রান্ত। কোথায় আমার দলের লোকদের ত্যাগের কথা বলবে আমার দলের লোকদের কষ্টের কথা বলবে তা না খালি আমার লোকদের কুটনাম গেয়ে চলে। এইবার যুদ্ধঅপরাধীদের বিচার করবো আর ঝুলিয়ে ছাড়বো। নেক্সট ইলেকশনে আমাকে ঠেকাবে এমন কেই কি আছে, ভাবলেন শেখ হাসিনা।

২০১২, ১০ ডিসেম্বর, সংবাদপত্র্রে প্রধান শিরোনাম! “ছাত্রলীগের হাতে বিশ্বজিত নামের নিরীহ পথচারী নিহত। কনফার্ম বিএনপি আর জামাত শিবিরের চক্রান্ত ভাবলেন শেখ হাসিনা। আমার দলের ছেলেরা এটা করতেই পারে না। আর করলেও বিশ্বজিত ছেলেটা বিএনপি জামাত শিবিরের কমী ছিলো। এটা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায়না, এই চক্রান্ত রুখতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ১১:৪৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×