somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুভ্র ভালবাসা

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




মন খুব খারাপ । পুরনো জায়গা ছেড়ে নতুন কোন জায়গায় চলে আসাটা খুব ই কষ্টের । কত স্মৃতি রয়েছে সেইসব জায়গায় । কত চেনা জানা মানুষ , রাস্তা ঘাট , খেলার মাঠ , আমার কৈশোর । নতুন কোথাও মানিয়ে নিতে খুব সমস্যা হয় । মনের কষ্টের কথা বাদ দিলেও মানিয়ে নেওয়ার কথা যখন আসে তখন অস্বস্তি হয় । আমাকে এখন থেকে এখানেই থাকতে হবে ।নিজেদের বাসা । কত স্বপ্ন ছিল নিজেদের একটা ঘর হবে , আমরা সবাই থাকবো । সব সঞ্চয় দিয়ে আম্মা বাসাটা করেছেন । কিন্তু তবুও পিছুটানে পড়ে কষ্টটা থেকেই যাচ্ছে ।
এলাকার নাম শান্তিবাগ । চেনা বলতে এই এলাকায় দুই গলি পরে আমার খালাত বোনের বাসা । এই একটা বাসার লোকজন ই শুধু আমি চিনি । আমার এই বোনকে আমি আপু ডাকি আর তার হাসবেন্ড কে ডাকি আঙ্কেল । অনেকেই জিজ্ঞেস করে এমনটা ডাকার কারন কি । আসলে আমার চাচা আর আমার খালাত বোনের বিয়ে হওয়াতে সম্বোধনের এই জটিলতা । আমিও আর সম্বোধন পালটাই নি । ফলস্বরূপ আমার ভাগ্নে এখন আমার আম্মাকে ডাকে নানু আর আমার বাবাকে ডাকে কাকা । ক্ষেত্র বিশেষে আমাকেও ভাই ডাকে ।
আমার কোন আপন ভাই বোন নেই আর বাবা মা দুজন ই কর্মজীবী হওয়াতে ছোটবেলা থেকেই একা । ঘরে কখনো আড্ডা তেমন দেওয়া হয় না । একা থাকার ই অভ্যাস ছিল সারা জীবন । কিন্তু পড়ালেখার সুবাদে ঢাকা থাকা হয় । মানুষে ঘেরা থাকি । তাই বাসায় গেলে একা থাকতে ভাল লাগে না । আড্ডা দিতে ইচ্ছে হয় । কাছের বন্ধু বান্ধব সবাই শহরের বাইরে থাকে - সবাই ছাত্র জীবন নিয়ে ব্যাস্ত । তাই বন্ধে বাড়ি গেলেও কাউকে পাওয়া যায় না । আড্ডা দিতে ইচ্ছে হলে চলে যাই বোনের বাসাতে ।
আমার চাচা ( সেই আঙ্কেল ) খুব ই গল্পবাজ এবং রসিক মানুষ । তাঁর সাথে আড্ডা দেওয়ার মজাই আলাদা । বাংলার প্রফেসর । তাঁর আবার শখ হল কবুতর পালা । এক বিকেলে গেলাম তাঁর বাসার ছাদে । দেখি কবুতর গুলোকে খাওয়াচ্ছেন ।

- সুনাম , কেমন আছো ?
- জি, ভালো আছি আঙ্কেল ।
- ঢাকা থেকে কবে আসলে ?
- এই তো , গতকাল সকালে । ... ... কি খাওয়াচ্ছেন কুবতর গুলোকে ???
- ধান , গম - দুইটাই ।
- ও ! তা কবুতর আছে কয় টা ?
- ১২, ১৩ টার মত ।
আঙ্কেল বললেন - বস , তোমার আপুকে চা দিতে বলি । আঙ্কেল চা এর কথা বলে আসলেন ।
- বুঝলা সুনাম ,কবুতর পালতে গিয়ে অনেক কিছুই পর্যবেক্ষণ করলাম । কবুতরের আচরণ অন্যসব পাখির মত না ।
- আচরণ কেমন ???
- এই যে কবুতর গুলাকে দেখছ , এরা কিন্তু সহজে জোড়া বাধে না । এক খাচায় একটা পায়রা আর একটা পায়রি প্রায় এক মাস রাখতে হয় । এই একমাসে যদি মনের মিল না হয় তাহলে যতই চেষ্টা করো লাভ নাই - জোড়া হবে না । তা তুমি যত মাস ই একসাথে রাখ । তখন অন্য জোড়া দিয়ে চেষ্টা করতে হয় ।
- বলেন কি ?? কবুতরের আবার মনের মিলন !!
- হুম , এমনই হয় । জোড়ার কবুতর সবসময় একসাথে থাকে । জোড় ভাঙ্গে না । তা দেওয়ার সময় পায়রা পায়রী পালা ক্রমে ডিমে তা দেয় । ডিম ফুটে যখন বাচ্চা হয় তার দেখ ভালের দায়িত্ব পড়ে পায়রাটার উপর । দুজনে মিলে বাচ্চা বড় করে ।
-বাহ ! দারুণ তো । আচ্ছা , জোড়ের কোন কবুতর মারা গেলে কি হয় ???
- কবুতর তখন অদ্ভুত আচরণ করে । একবার হল কি এক সন্ধ্যায় সব কবুতর ঘরে ফিরল কিন্তু একটা কবুতর ফিরল না । একটা পায়রা গায়েব । অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও দেখলাম আর আসে না । ওই জোড়ার পায়রি টা পরদিন থেকে আর আগের মত খায় না , আকাশে ওড়ে না । সেই পায়রাটা আর এল না । হয়তো কেউ আটকে রেখেছে বা খেয়ে ফেলেছে। কিছুদিন পর আমি বাজার থেকে আরেকটা পায়রা কিনে আনলাম । ওই পায়রিটার সাথে এক খাঁচায় রাখলাম । ২২ দিনের মাথায় জোড়া মিললো । পায়রিটা তার নতুন পায়রার সাথে আবার সংসার শুরু করলো । আবার আগের মত হয়ে গেল ।
- যাক , পায়রিটার তাহলে একটা গতি হল ।

ততক্ষনে আপু চা পাঠিয়ে দিয়েছে । চা খেতে খেতে আঙ্কেল আবার বলা শুরু করলেন - হুম সব ই ঠিক ঠাক কিন্তু কয়েক দিন পর ই সেই হারিয়ে যাওয়া পায়রাটা আবার ফিরে আসলো ।
- বলেন কি ? তারপর কি হল ?
- আমার খুব ই অবাক লাগলো । ভাবতে পারি নি পায়রাটা আর কখনো ফিরে আসবে । ফিরে আসার পর ঘটল আরেক ঘটনা । সেই পায়রিটা তার পুরনো পায়রার কাছে আর আসে না । নতুন পায়রাকে নিয়েই থাকে । এই জিনিশটা আমি বুঝতে পারলাম বেশ কয়েকদিন পরে যখন দেখলাম পুরনো পায়রাটা ঘরে না ঢুকে দরজার বাইরে দাড়িয়ে থাকে ।
- মানে কি ???
- মানে হল হারিয়ে যাওয়া পায়রাটা সব সময় একা থাকে আর সন্ধ্যা শেষে যখন ঘরে ফেরে ওই ভাবেই দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকে । ঘরে ঢোকে না । আর মাঝে মাঝেই বাক বাকুম ডাকতে থাকে ।
- এখনও কি ওই পায়রাটা ওভাবেই থাকে ??? আমি জিজ্ঞেস করলাম । আপনি আর পায়রাটার জোড়া বাধার জন্য চেষ্টা করেন নাই ??
- অনেক চেষ্টা করেছি । আর জোড়া হয় নি । মনে হয় কখনো হবে না । প্রকৃতির খেলা বোঝা দায় ।

কথা বলতে বলতে সন্ধ্যা হয়ে আসলো । আজান দিচ্ছে । দেখলাম সব কবুতর ঘরে ফিরছে । সেই পায়রাটাও ফিরল । তার কোন ঘর নেই । সারা রাত সে সঙ্গিনীর দুয়ারের সামনে দাড়িয়ে থাকবে । পায়রাটার কথা ভেবে খুব খারাপ লাগলো । নিজের অজান্তেই বুকের বাম পাশে চেপে রাখা অবুঝ কষ্ট গুলো তাদের অস্তিত্ত জানান দিয়ে গেল । মনে পড়ে গেল আমি এখনও ওকে খুব ভালবাসি ।

হায়রে , ভালবাসার আবেদন বুঝি সব জগতেই এক - কি পাখি কি মানুষে !!! শুধু আমরা বুঝি না :(
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×