somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহানবী (সা: ) সর্ম্পকে প্রচলিত ভুল ধারনা

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার অনেক আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে বহুল প্রচিলিত কিছু ভুল ধারণা রয়েছে যেমন: মুহাম্মদ (সা: ) আমাদের মত মাটির মানুষ ছিলেন না বরং তিনি ছিলেন নুরের তৈরী, তিনি (সা: ) মারা যাননি বরং তিনি (সা: ) জীবিত এবং নবী (সা: ) গায়েবের খবর জীবিত অবস্থায়ও রাখতেন এবং এখনো রাখেন (নায়ুজুবিল্লাহ)। যদি কেউ এই আকিদা (বিশ্বাস) রাখে তবে তার ঈমান নিয়ে সংশয়ের অবকাশ রয়েছে। যদিও তাদের (ছোটবেলা থেকে আমি নিজেও এই বিশ্বাস নিয়েই বড় হয়েছিলাম) এই আকিদা গড়ে উঠার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছেন আমাদের দেশের বেশকিছু হুজুর ও তথাকথিত ওলামায়ে কেরাম যারা কোরান হাদিস বাদ দিয়ে মানুষরচিত গ্রন্থের রেফারেন্স দিয়ে দিনের পর দিন মুসলিমদের বিভ্রান্ত করে চলছেন।

মহানবী (সা: ) যে মৃত্যুবরণ করেছেন এই বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই কারণ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরানে এরশাদ করেছেন:

"ভূপৃষ্টের সবকিছুই ধ্বংসশীল" (আর-রহমান:২৬)

"প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে" (আল-আম্বিয়া:৩৫)

"(হে মুহাম্মদ) আপনার পূর্বেও কোন মানুষকে আমি অনন্ত জীবন দান করিনি, সুতারং আপনার মৃত্যু হলে তারা কি চিরন্ঞ্জীব হবে?" (আল-আম্বিয়া:৩৪)

(হে মুহাম্মদ) নিশ্চয় তোমারও মৃত্যু হবে এবং তাদেরও মৃত্যু হবে" (আয-জুমার:৩০)

"আর মুহাম্মদ একজন রসূল বৈ তো নয়! তাঁর পূর্বেও বহু রসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন। তাহলে তিনি যদি মৃত্যুবরন করেন অথবা নিহত হন, তবে কি তোমরা পশ্চাদপসরণ করবে? বস্তুত কেউ যদি পশ্চাদপসরণ করে, হবে তাতে আল্লাহর কিছুই ক্ষতি-বৃদ্ধি হবে না। আর যারা কৃতজ্ঞ, আল্লাহ তাদের সওয়াব দান করবেন" (আল-ইমরান:১৪৪)

প্রিয় নবী (সা: ) এর প্রতি অতিরিক্ত ভালবাসা দেখাতে গিয়ে অনেকেই এই আকিদা রাখেন যে তিনি (সা: ) গায়েবের খবর রাখতেন (এবং এখনো রাখেন) এবং তিনি হাজির-নাজির (মানে তিনি সব জায়গায় হাজির হতে পারেন এবং সবকিছু দেখেন)। আর এই আকিদায় ভর করে অনেক বিদাতি হুজুর মিলাদের মাঝে উঠে দাড়ান এই বিশ্বাস নিয়ে যে নবী (সা: ) আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছেন যা প্রকারন্তরে আমাদেরকে শিরকের দিকেই নিয়ে যাচ্ছে কারণ উপরের আয়াতগুলো এটাই প্রমান করে যে মুহাম্মদ (সা: ) জীবিত নেই এবং এই মহাবিশ্বে শুধুমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিনই চিরঞ্জীব এবং শুধুমাত্র তিনিই সবকিছু সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন। অতএব, মুহাম্মদ (সা: ) কে হাজির-নাজির মেনে আমরা নিজেদের অজান্তেই শিরক এ লিপ্ত রয়েছি। আল্লাহ বলেন: "অনেক মানুষ আল্লাহ এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে" (ইউসুফ:১০৬)

আর মহানবী (সা: ) কখনই আসমান ও জমীনে কোথায় কখন কিভাবে কি হচ্ছে সেই সকল গায়েবের খবর জানতেন না বরং আল্লাহপাক তাঁকে যখন যতটুকু জানাতে চাইতেন তিনি ঠিক ততটুকুই জানতেন, এর বেশি নয়। তিনি (সা: ) যদি গায়েব জানতেন তাহলে তায়েফে গিয়ে রক্তাক্ত হতে হত না, তিনি (সা: ) যদি গায়েব জানতেন তবে ১০০শ জনের মত হাফেজে কুরআনকে (রা: ) মুনাফেকদের কথায় কোরানের শিক্ষা দানের জন্য তাদের গোত্রের নিকট প্রেরন করতেন না যাদেরকে ইহুদিরা ধোকা দিয়ে নিয়ে হত্যা করেছিল, তিনি (সা: ) গায়েব জানলে উহুদের ময়দানে তার (সা: ) দন্ত-মুবারক শহীদও হত না। তিনি (সা: ) ছিলেন মানবজাতির প্রতি আল্লাহ এর রহমত সরূপ, একজন বার্তাবাহক, তিনি (সা: ) ছিলেন আবুদ (বান্দা) আর আল্লাহ তার মাবুদ। অতএব, নবী (সা: ) গায়েব জানতেন, এই কথা বলে আমরা প্রকৃতপক্ষে তাঁকে(সা: ) মাবুদের (আল্লাহ) স্থানে বসাচ্ছি যা শিরকেরই নামান্তর। পবিত্র কোরানে আল্লাহ এরশাদ করেছেন:

"আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ বা অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ চান। আর আমি যদি গায়েবের কথা জেনে নিতে পারতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতে পারতাম, ফলে আমার কোনো অমঙ্গল কখনও হতে পারত না। আমি তো শুধুমাত্র একজন ভীতি প্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা ঈমানদারদের জন্য।" (আল-আরাফ:১৮৮)

"বলুন, আল্লাহ ছাড়া নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে কেউ গায়েবের খবর জানে না এবং জানে না যে তারা কখন পুনরুজ্জীবিত হবে।"(আল-নামল:৬৫)

আবার অনেকে নবী (সা: ) কে অতিরিক্তি মর্যাদা দিতে গিয়ে এই আকিদা রাখেন যে তিনি (সা: ) মাটির তৈরী নন বরং নূরের তৈরী। কিন্তু তারা ভুলে যান যে মাটির তৈরী আদম (আ: ) কে সন্মানিত করার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিন নূরের তৈরী ফেরেশতাদেরকে সিজদা করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাহলে মাটির তৈরী হলে সন্মান বেশি না নূরের তৈরী হলে? তারা বিশ্বাস করেন যে রাসূল(সা: ) আমাদের মত রক্ত-মাংশের মানুষ নন। অথচ, রাসূল(সা: ) নিজেই বলছেন যে তিনি আমাদেরই মত মানুষ ছিলেন (অবশ্যই সন্মানের দিক থেকে নয়):

"আমি তোমাদেরই মতই একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভুলে যাও আমিও তেমনি ভুলে যাই। আমি ভুল করলে তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দিও" (সহীহ বুখারী, কিতাবুস সালাহ্)

আল্লাহ কুরআনে বলেছেন:
"হে রাসূল! আপনি বলুন, আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ..." (আল-কাহফ:১১০)

তাছাড়া, হযরত আয়েশা (রা: ) এর নিম্মোক্ত হাদীসটি দ্বারা এও প্রমানিত হয় যে নবী (সা: ) ও আমাদের মত রোগ-শোক ও যাদু দ্বারা আক্রান্ত হতেন:

“Allah’s Apostle was affected by magic, so much that he used to think that he had done something which in fact, he did not do, and he invoked his Lord for a remedy” (Narrated by Aisha: Book of Invocations: Saheh Bukhari)

ভেবে খুব অবাক লাগে- কুরআন-হাদিস দ্বারা যেখানে স্পষ্টভাবে প্রমানিত যে রাসূল(সা: ) গায়েবের কথা জানতেন না, সেখানে আমাদের দেশের তথাকথিত পীরগন গায়েবের জ্ঞান রাখেন বলে মিথ্যা দাবী করে দিনের পর দিন মুসলিমদের সাথে পীর-মুরিদের ব্যবসা করে যাচ্ছে আর তাদের স্বপ্নে পাওয়া দ্বীনের নিচে চাপা পরে যাচ্ছে রাসূল(সা: ) এর রেখে যাওয়া প্রকৃত ইসলাম। বানোয়াট আর শরীয়ত বর্হিভূত শতশত তরীকার মাঝে আমরা ভুলতে বসেছি রাসূল(সা: ) এর বিদায় হজ্জের ভাষণ "আমি তোমাদের জন্য দু'টো জিনিস রেখে যাচ্ছি: কোরান আর আমার সুন্নাহ (হাদিস), যতদিন তোমরা তা আকড়ে থাকবে, ততদিন তোমরা কেউ পথভ্রষ্ট হবে না।" অথচ কি আশ্চর্য, আমরা মুসলিমরা আজ কুরআন আর হাদিস ছাড়া যেন সব কিছুকেই আকড়ে ধরছি (মানুষ রচিত গ্রন্থ এবং পীরদের দেখানো তরিকা আর বিদাতি ওলামায়ে কেরামদের নসিহত)। আর এগুলো করছি নাজাত লাভের আশায়, বেহেশত লাভের আশায় কিন্তু নিজেরা একটু কষ্ট করলেই জানতে পারতাম যে কোরআন-হাদীসে নাজাতের পথ কত স্পষ্ট করা আছে। হায় মুসলিম, আমাদের কি হয়েছে যে একটা ভালো কাপড় কেনার জন্য এক দোকান থেকে অন্য দোকান এক মার্কেট থেকে আরেক মার্কেটে ঘুড়ে বেড়াতে পারি, দিনের পর দিন ধৈর্য ধারন করতে পারি, কিন্তু সঠিক ইসলামকে জানার জন্য নিজেরা কোরআন আর হাদিসের বই খুলে দেখার মত সময় আমাদের নেই!! এখনো খুব বেশি দেরী হয়ে যায়নি এইসব পীর আর বিদাতি হুজুরদের ছেড়ে কুরআন-হাদিস এর ছায়াতলে এসে নিজের ঈমানকে মজবুত করার। আল্লাহ যেন আমাদেরকে ভালো-মন্দ বোঝার তৌফিক দান করেন এবং আমাদের ঈমানকে মজবুত করেন, আমিন...
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:৫০
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×