মার দেখা পাননি সুরুজ, মৃতদেহও আসেনি
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
ভাই আমাকে বাঁচান, আমাকে উদ্ধার করুন—এই রকম অনেক আকুতি-মিনতি করেও সুরুজ ফেরেননি, চলে গেছেন না ফেরার দেশে। ধ্বংসস্তূপের নিচে একই সঙ্গে আটকে পড়া বন্ধু শাহাদত আগেই চলে গিয়েছিলেন। সুরুজের গন্তব্য তারই কাছে।
মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি সুরুজের মৃতদেহ। সুরুজের জন্য আহাজারি করছেন তার মা ভাইসহ সাভারে আসা স্বজনরা। গত শুক্রবার রাতে সুরুজ ধসে পড়া ভবনের নিচেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
শুক্রবার বিকেলে খাবার খাওয়ানোর সময় সুরুজ তার ভাই সুজনকে বলেছিল, “ভাই তুমি আমাকে ফেলে যেয়ো না। আমার খুব ভয় করছে।” উদ্ধারকর্মীদের কাছে ভাইকে বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভাইয়ের কাছ থেকে চলে আসেন সহোদর সুজন।
বুধবার ভবন ধসের ঘটনায় সুরুজের কোমরের নিচের অংশ চাপা পড়েছিল ভবনের নিচে। বাকি অংশটুকু ভালো ছিল। এ অবস্থায় সুরুজ যাকে কাছে পেতো তার পায়ে জড়িয়ে ধরতো “ভাই আমাকে বাঁচান। আমি বাঁচতে চাই। আমি আমার মায়ের কাছে যেতে চাই।”
কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস ভবন ধসে পড়ার তৃতীয় দিন রাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন সুরুজ। তবে এখনো পড়ে রয়েছেন চাপা পড়া অবস্থায়। উদ্ধার করা হয়নি তার মৃতদেহ।
ভবন ধসের সপ্তম দিন মঙ্গলবার দুপুরে সুরুজের বড় ভাই সুজন বাংলানিউজকে জানান, “পা কেটে উদ্ধার করতে বলেছিল আমার ভাই সুরুজ। একবার মাকে দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু নিয়তি আমার ভাইয়ের শেষ ইচ্ছাটুকু পূরণ করতে দেয়নি।”
সুজন আরো জানান, ভবন ধসে পড়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই সুরুজ ফোন দিয়ে জীবিত থাকার কথা জানায়। তাকে বাঁচানোর জন্য উদ্ধারকর্মীদের কাছে আকুতি জানায়। তিনদিন জীবিত ছিল সুরুজ।
তাকে শুকনো খাবার ও পানি দিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে এসেছিল সুজন। ভাইকে উদ্ধারের জন্য উদ্ধারকর্মীদের হাতে-পায়ে ধরেছিলেন সুজন। কিন্তু শেষে না ফেরার দেশেই চলে গেলেন সুরুজ। মাকে দেখার সাধও পূরণ হয়নি তার।
পূর্ব দিকে যেখানে সুরুজ আটকে ছিল আর আশপাশে বেশ কয়েকটি লাশ ছিল। লাশ বেয়ে মাকে নিয়ে যেতে অজানা আশংকা কাজ করেছিল সুজনের মধ্যে। তাই মাকে নিতে সাহস পাননি। সুজন ও তার মায়ের আশা ছিল জীবিত ঘরে ফিরবে সুরুজ, মাকে দেখবে প্রাণভরে।
দুর্ঘটনার সপ্তম দিন ভাইয়ের লাশ পেতে মায়ের সঙ্গে আহাজারি করছেন সুজন। চোখের সামনে ছোট ভাইয়ের মৃত্যূ কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি। চোখের জল শুকিয়ে গেছে, এখন বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। ছেলের মৃত্যুতে গর্ভধারিণী মা জোসনা বেগমও গড়াগড়ি খাচ্ছেন ধসে পড়া ভবনের সামনে।
উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া ল্যাব এইড হাসপাতালের চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানিয়েছিলেন, ৪৮ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে তার প্রিয় বন্ধু শাহাদতের মৃত্যুতে চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না গেলে শাহাদতের পথেই গন্তব্য হতে পারে সুরুজের।
তিনি আরো জানিয়েছিলেন, বিম কেটে অথবা তার কোমর থেকে কেটে ফেলে তাকে উদ্ধার করা যাবে।
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার ধর্মকূল গ্রামের মৃত হোসেন আলীর ছেলে সুজনও সাভারে আরেকটি গার্মেন্টে কাজ করেন।
দুর্ঘটনার সপ্তম দিন মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টা পর্যন্ত সরকারি হিসেবে রানা প্লাজা থেকে ৩৯৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫২ জনের লাশ স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপ থেকে মানুষ (জীবিত-মৃত) উদ্ধারের সংখ্যা দুই ৮১৮ জন।
সুরুজের পরিবারের সদস্যদের মতো আরো অসংখ্য মানুষ ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে ছবি বুকে জড়িয়ে কান্নাকাটি করছেন। এদের অনেককেই মূর্ছা যেতে দেখা গেছে।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'
আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন
আকুতি
দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন
ক- এর নুডুলস
অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।
ক
একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন
কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???
কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???
আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু
২-১ : আলিফ-লাম-মীম
আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন