somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হায় গনতন্ত্র!

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হায় গনতন্ত্র!


কী মর্মান্তিক মৃত্যু! কী করুণ! হৃদয়বিদারক। সহিংস রাজনীতির নৃশংস শিকার বিশ্বজিৎ দাস বার বার প্রাণভিক্ষার আকুতি জানিয়ে বলেছিলেন, আমি রাজনীতি করি না। আমার টেইলার্স দোকানে কাস্টমারের অর্ডার দিতে যাচ্ছি। আমি রাজনীতি করি না। আমাকে আর মেরো না; আর মেরো না। তার কান্না, আকুতি-মিনতি কোনো কিছুই স্পর্শ করেনি ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের হৃদয়। চাপাতি ও রামদা দিয়ে তারা চারদিক থেকে ২৪ বছরের তরুণ বিশ্বজিৎকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে খুন করেছে। দুজন দুই হাত টেনে ধরে, কেউ ধরে শার্টের কলার। কেউ কেউ কোপাতে থাকে, কেউবা রড দিয়ে পেটাতে থাকে। পরণে সাদা-কালো চেক শার্ট, ভেতরের লালকালো গেঞ্জি রক্তে ভিজে লাল হয়ে যায়। এক পর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়া বিশ্বজিতের শরীরের রক্তে রাস্তায় সে াত বইতে থাকে। তবু দানবরা নিরীহ যুবকটির ওপর বর্বরোচিত হামলা বন্ধ করেনি। বিশ্বজিতের দেহ নীরব-নিথর হয়ে পড়লে কোনো নড়াচড়া না দেখে তারা চলে যায়। রিপন নামের এক ব্যক্তি রিকশায় করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা দেন। তার লাশ মর্গে পাঠানো হয়। এদিকে শরীয়তপুরের গ্রামের বাড়িতে এ সংবাদ শুনে মায়ের বিলাপ-আর্তনাদে বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। এবার কাজের চাপে পূজাতে বাড়ি যায়নি বিশ্বজিৎ। সকাল ৯টা। পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের ঋষিকেশ দাস লেনের বাসা থেকে বেরিয়ে শাঁখারীবাজারে নিজের টেইলার্সের দোকানে যাচ্ছিলেন বিশ্বজিৎ দাস (২৪)। বের হওয়ার সময় বড়ভাই উত্তম কুমার দাসকে বলে গিয়েছিলেন 'একজন কাস্টমার অর্ডারের পোশাক নিতে দোকানে এসেছেন, দোকান খুলে কাপড়গুলো দিয়েই বাসায় ফিরে আসব।' কিন্তু বিশ্বজিতের আর বাসায় ফেরা হয়নি। এমনকি দোকানেও পেঁৗছাতে পারেননি তিনি। তার আগেই পথের মাঝে নিরীহ এই যুবকের প্রাণ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। জামায়াত-শিবিরের কর্মী সন্দেহে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে তরতাজা বিশ্বজিৎকে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জামায়াত-শিবিরের কর্মী সন্দেহ করে ছাত্রলীগের রোষানলে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন তিনি। বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে পথচারী বিশ্বজিৎকে ধাওয়া করে চারদিক থেকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের কয়েকজন অস্ত্রধারী ক্যাডার। নিহতের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের ভবেশ্বরে। বিশ্বজিতের করুণ মৃত্যুর খবর জানাজানি হলে গ্রামের বাড়িতে পড়ে যায় শোকের মাতম। লাশটি পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে রাখা হলে সেখানেও স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কান্নার রোল পড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধ কর্মসূচির সমর্থনে গতকাল সকাল সোয়া ৯টায় ঢাকা জজকোর্ট এলাকায় বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীরা একটি মিছিল নিয়ে ভিক্টোরিয়া পার্কের উত্তর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ সেখানে একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কবি নজরুল সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিপরীত দিক থেকে একটি মিছিল নিয়ে আইনজীবীদের ধাওয়া করেন। হেঁটে চলা বিশ্বজিৎ তখন দুই মিছিলের মাঝখানে পড়েন। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দৌড়ে পাশের একটি ডেন্টাল ক্লিনিকে আশ্রয় নেন তিনি। তখন ছাত্রলীগের মিছিল থেকে বেশ কয়েকজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকে বিশ্বজিৎকে। প্রাণ বাঁচানোর হাজারও আকুতি করছিলেন তিনি। নিজেকে পথচারী এবং দোকানি বলেও হামলাকারীদের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

মিটফোর্ড হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. আবু তানভীর সিদ্দিক জানান, প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে ১০ মিনিটের মাথায় বিশ্বজিৎ মারা যান। শরীরে একাধিক জখমের চিহ্নসহ তার ডান হাতের বাহুতে গভীর কাটা জখম ছিল।

নিহতের বড় ভাই উত্তম কুমার দাস (আকাশ) জানান, ৫৩ নম্বর ঋষিকেশ দাস লেনের বাসায় তার স্ত্রী ও ছোট ভাই বিশ্বজিৎকে নিয়ে ভাড়ায় থাকেন। এ বাসার নিচে উত্তমের টেইলার্সের দোকান এবং ২৫৩, শাঁখারীবাজারে আমন্ত্রণ টেইলার্স নামে পৃথক দোকান চালায় বিশ্বজিৎ। গতকাল সকালে একজন কাস্টমার পোশাক নিতে বিশ্বজিৎকে ফোন করে তার দোকানে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু দোকানে পেঁৗছানোর আগেই পথে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা কেবল সন্দেহ করে তার ভাইকে নৃশংসভাবে মেরে ফেলেছে বলে অভিযোগ করেন উত্তম কুমার। তিনি এবং তার ভাই নিহত বিশ্বজিৎ কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেন তিনি। সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, বিএনপি-জামায়াত পন্থি আইনজীবী এবং ছাত্রলীগের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় কোনো পক্ষের হাতে বিশ্বজিতের নির্মম মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্তসাপেক্ষে জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে। শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানান, মা তোমাকে ছাড়া ঢাকায় থাকতে আমার কষ্ট হয়। কিছু দিন পরই তোমাকে ঢাকায় নিয়ে আসব। আমার বুকের ধন বিশ্বজিৎ আর কখনো আমায় ঢাকায় যেতে বলবে না। আমার ছেলেরা কোনো রাজনীতি করে না। তার পরও কেন নিষ্ঠুর রাজনীতির বলি হতে হলো তাকে। বিলাপ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন ঢাকায় অবরোধের সময় নিহত বিশ্বজিৎ দাসের মা কল্পনা দাস। মায়ের দেওয়া ঢাকায় পাঠানো একটি পিঠা খেয়ে চিরতরে বিদায় নিলেন বিশ্বজিৎ। মায়ের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে এলাকা, কান্নার মাঝে ভেসে উঠে মিছিলে আমার ছেলেকে খাইল। ঢাকার শাঁখারীবাজারের আমন্ত্রণ টেইলার্স নামে একটি দর্জি দোকানের মালিক বিশ্বজিৎ দাস ছয় বছর ধরে বাবা-মাকে ছেড়ে ঢাকায় থাকে। বড় ভাই উত্তম দাসের হাত ধরে তার ঢাকায় যাত্রা। বসবাস করতেন লক্ষ্মীবাজারের ঋষিকেশ দাস রোডে। গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মশুরা গ্রামে। বিশ্বজিতের বোন চন্দনা বলেন, পূজার সময় কাজের চাপ থাকায় ভাই বাড়িতে আসতে পারেনি। পূজার পর এসে দুই দিন ছিল। আগামী সপ্তাহে মায়ের হাতের পিঠা-পায়েস খাওয়ার জন্য বাড়ি আসার কথা ছিল। ভাই আর কখনো মায়ের হাতের পিঠা-পায়েস খেতে আসবে না। আমরা সাধারণ মানুষ। আমাদের ছোট ছোট স্বপ্নগুলো কেন রাজনীতির নিষ্ঠুরতার কাছে হেরে যাবে। বিশ্বজিতের বাবা অলন্ত দাস বিলাপ করতে করতে বলছিলেন, অর্থাভাবে ছেলেকে পড়ালেখা করাতে পারিনি। শিশু বয়স থেকেই তাকে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আমরা সুখেই ছিলাম। আমাদের সে সুখ দুঃস্বপ্ন হয়ে গেল।
http://www.bg.com.bd/EWPD/
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১২:১৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×