somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র :-*:-*

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুরুর কথাঃ

ভার্সিটির ৩য় বর্ষে পড়ার সময় একটা কোর্স ছিল “History of Economic Thought”। বলে রাখা ভালো যে, মেধা পরিমাপক যন্ত্রে যদি ১ থেকে ১০ এর স্কেল থাকে (সর্বনিম্ন ১ সর্বোচ্চ ১০), তাহলে আমি টেনেটুনে ৩ পাব। পরীক্ষায় পাস করার জন্য যতটুকু দরকার, আমি ঠিক ততটুকুই পড়ি। সেইটুকু পড়তেও মোটামুটি জিহ্বা হাঁটু পর্যন্ত নেমে যায়!!:D তো সেই সময় কোর্সটা সম্পর্কে ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও সম্পূর্ন বই পড়ে দেখা হয়নি। কোর্স টিচার এই কোর্স এর জন্য V. Lokanathan এর বই সিলেক্ট করে দিয়েছিলেন। ঠিক করে রেখেছিলাম যে, সময় পেলে পুরো বইটা একবার পড়ে দেখব। অর্থনীতির কটমটে গ্রাফ বর্ননা, লকলকে মডেল বর্ননার চেয়ে এর প্রাচীন ইতিহাস খারাপ হওয়ার কথা না।

যাই হোক, দীর্ঘ ১ বছর ৭মাস পর, যখন অনার্স শেষ করে, মাস্টার্স এর ক্লাস অর্ধেক করে (বাকি অর্ধেক রেখে দেয়া হয়েছে অনার্সের রেজাল্ট প্রকাশ না হওয়ার কারনে), আর যখন কিছু করার নেই, তখন আবার লোকনাথান_র বইয়ের কথা মনে পড়ে গেল। নিয়ে বসলাম। প্রচন্ড মেধাবী(!) হওয়ার কারনে এবং দীর্ঘদিন বই নামক বস্তুটার সাথে দেখাসাক্ষাৎ না হওয়ার কারনে প্রথম কয়েক পৃষ্ঠা পড়েই ক্ষান্ত দিলাম। তবে এর মধ্যেই চমৎকার একটা টপিক্স পেলাম। ভাবলাম আপনাদের সাথে শেয়ার করি।

টপিক্স হচ্ছে মহান দার্শনিক প্লেটোর “আদর্শ রাষ্ট্র” (Ideal State)। প্রাচীন গ্রিসের অন্যতম সেরা চিন্তাবিদ ছিলেন এই প্লেটো। প্লেটো অর্থনীতির বিভিন্ন দিক আলোচনা করেছেন তার “The Republic” এবং “Laws” বইয়ে। আমার কোর্সের বইয়ের লেখক লোকনাথান, মূলত ওই দুই বই থেকেই প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের (Ideal State) বর্ননা দিয়েছেন।



প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র (Ideal State) কি?:

প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র হচ্ছে একধরনের “শহুরে রাষ্ট্র” (City State)। এখানে একটি নির্ধারিত সংখ্যক জনসংখ্যা থাকবে। প্লেটোর হিসাবে জনসংখ্যা হতে হবে ৫০৪০ সদস্যের। কেন ৫০৪০? কারন প্লেটোর হিসেবে এই সংখ্যক জনসংখ্যা প্রশাসনিক কাজ করার জন্য সুবিধাজনক। এই সংখ্যাটি (৫০৪০) কে ১ থকে ১০ পর্যন্ত সকল সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যায়!! প্লেটোর মতে, যেহেতু জনসংখ্যা স্থির থাকবে, সেহেতু দেশের মানুষের সহায়-সম্পত্তি_ও স্থির থাকবে, বাড়বে না বা কমবে না। সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রন করা হবে। (কেউ কি কমিউনিজমের গন্ধ পাচ্ছেন?)


কারা এই “আদর্শ রাষ্ট্র” শাসন করবে?

প্লেটোর “আদর্শ রাষ্ট্রে” ২ ধরনের মানুষ থাকবে। একদল হচ্ছে শাসক, অপরদল শাসিত (সোজা বাংলায় জনগণ!)। শাসক শ্রেনীকে আবার তিনি ২ ভাগে বিভক্ত করেছেন, ১) অভিভাবক(Guardians) বা তত্ত্বাবধায়ক ২) সাহায্যকারী (Auxiliaries)

প্লেটো বিশ্বাস করতেন যে, সমাজের উঁচুশ্রেনী (Elite) বা শ্রেষ্ঠ অংশেরই শুধু অধিকার রয়েছে দেশ পরিচালনা করার। যারা দেশ শাসন করবে তাদেরকে একদম ছোটবেলা থেকেই সমাজ থেকে আলাদা করে ফেলা হবে। তাদেরকে অতি সাবধানতার সাথে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দেয়া হবে। তারা যে শুধু ফিলসফি বিষয়ে পড়াশোনা করবে তা না, তাদের যুদ্ধবিদ্যাতেও পারদর্শী হতে হবে। দেশের প্রয়োজনে যেন তারা অস্ত্র হাতে নিয়ে লড়াই করতে পারেন। এই শিক্ষার্থীদের বয়স যখন ৩০ বছর হবে, তখন তাদের একটি পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। যারা সফলভাবে পাশ করতে পারবে, তারা হবে আধ্যাত্মিক বা দার্শনিক রাজা (Philosopher King)। অথবা বলা যায়, এরাই হবে ভবিষ্যত শাসক। আর যারা এই পরীক্ষায় পাস করতে পারবে না, তারা হবে শাসকদের সাহায্যকারী। এরা যোদ্ধাও হতে পারবে, আবার বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজে শাসকদের সাহায্য করতে পারবে। কিন্তু এরা কোন ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।

শাসকদের যাপিত জীবনঃ

আসুন এইবার দেখি প্লেটো এই শাসক শ্রেনীর জন্য কি ধরনের জীবন বিধান রেখে গেছেন! প্লেটোর বর্ননা অনুযায়ী, এই শাসক শ্রেনীকে (তত্ত্বাবধায়ক এবং সাহায্যকারী দুই শ্রেনীকেই) একটা সাম্যবাদী জীবন (Communistic Life) মেনে চলতে হবে। তাদের (শাসকদের) নিজেদের প্রয়োজনের চেয়ে “এক ছটাক” পরিমান সম্পত্তি বেশি থাকতে পারবে না। তারা তাদের নিজেদের জন্য জমি, বাড়ি বা অন্যান্য দামী সামগ্রী কিনতে পারবে না। আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন, এ আর এমন কি? নিজের জন্য না কিনুক, তার পরিবারের সদস্যদের জন্য দামী দামী জিনিস কিনলেই তো হয়?(যেমনটা আমরা এখনকার অনেক নেতাদের ক্ষেত্রে দেখি) কিন্তু না...... প্লেটো যে আমার আপনার থেকে সবসময় ২ পা সামনে চিন্তা করেন!! তাই তিনি ঠিক করে দিলেন যে, এই শাসকদের কোন পরিবার থাকতে পারবে না। সোজা বাংলায়, এরা “বিবাহ” করতে পারবে না!! তবে প্লেটো অনেক দয়ালু, তাই তিনি এই শাসকদের বিভিন্ন চাহিদার(;)) কথা মাথায় রেখে বললেন যে, এরা চাইলে নারীদের সঙ্গ পেতে পারে। কিন্তু বিবাহ? অসম্ভব।

শাসক শ্রেনীর সদস্যরা একসাথে থাকবে, খাবার ভাগাভাগি করে খাবে- ঠিক যেমন সৈন্যরা করে থাকে। এতে তাদের মধ্যে বোঝাপড়া ভালো হবে।

এইবার আমার কিছু কথা শুনেনঃ

প্লেটোর এই চিন্তাভাবনা খুব একটা বাস্তবিক তা হয়ত না। যেমন জনসংখ্যার ব্যাপারটা। জনসংখ্যা কেমনে ৫০৪০ তে স্থির থাকবে? এর বেশী জন্মালে কি হবে? মেরে ফেলবে? (লেখক উত্তর দেয় নাই)
তবে প্লেটোর সব ভাবনা-চিন্তা পড়ে তাকে ভাল-মন্দ কিছু বলার আগে দয়া করে সে সময়ের সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি। যেমন, প্লেটো অভিজাত বংশীয়দের (Elite Class) শাসন করার অধিকারের কথা বলেছেন। কারন সে সময় এথেন্সে (প্রাচীন গ্রিসের রাজধানী) অভিজাতদের শাসন ব্যাবস্থাই চালু ছিল। প্লেটো নিজেও ছিলেন একজন অভিজাত বংশীয়। দাসপ্রথা তখন গ্রিসের অতি পরিচিত বিষয়। বেশীরভাগ "ছুটা" কাজ কর্ম দাসরাই সম্পাদন করত। তাই প্লেটোর মনে এই ভাবনা আসা অমূলক ছিল না যে রাষ্ট্র পরিচালনার কাজ উঁচু বংশীয়রাই করবে।

সব কিছু শেয়ার (খাবার, থাকার জায়গা, এমনকি নারীও!) করার ব্যাপারটা একটু কেমন যেন:-*। তবে এটা জেনে রাখা ভালো যে, অনেক ইতিহাসবিদের ধারণা প্লেটো পুরোপুরি একজন “কমিউনিস্ট” ঘরনার চিন্তা-ভাবনাবিদ।

প্লেটোর সব চিন্তা ভাবনা যে অদ্ভুত লেগেছে, তা-না। যেমন, তার শাসক শ্রেনীর জন্য শিক্ষার ব্যাবস্থা আমার মনে হয় বর্তমান যুগে একটু ঘষে-মেজে চমৎকার ভাবে কাজ করানো যাবে। শিক্ষিত, প্রশিক্ষিত শাসক তো সব দেশের জন্যই সম্পদ। আবার প্লেটো শাসকদের ব্যক্তিগত “সম্পত্তি” অর্জনে নিষেধ করেছেন। আমাদের দেশে অনেক দিন থেকে মন্ত্রী, এমপি দের ক্ষমতা পাবার পূর্বের সহায় সম্পত্তি এবং ক্ষমতার পরের ৫ বছরের সম্পত্তির হিসাব দেয়ার জন্য নাগরিক সমাজ অনেকদিন থেকে বলে আসছে, নেতারা যদি সত্যিকারের একটা হিসাব নিয়মিত জনগনকে দিতেন-তা হলে কি ভালোই না হত!!(প্লেটোর মতো আমি অন্যান্য বিষয়ে খুব বড় আশা করতে চাই না)

সবশেষেঃ

২ দিন ধরে অনেক লিখলাম, আর সম্ভব না আমার পক্ষে। তারপরও লেখা মন মতো লিখতে পারলাম না।/:) আমার লেখা সাজানোর ক্ষমতা খুবই খারাপ। আগের কথা পরে, পরের কথা আগে চলে আসে। আর ইংরেজীতে প্রবল মেধাবী (!) হওয়ার কারনে অনেক কিছুর তর্জমা হয়তো একেবারে “ছেড়াবেড়া” হয়েছে। তাই আগেই সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।


১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×