somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিরাপত্তার উদ্যোগে আপত্তি ছিল ওয়ালমার্টের (hypocrisy of walmart)

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের পোশাক তৈরি কারখানাগুলোর বৈদ্যুতিক ও অগ্নি নিরাপত্তা বাড়ানোর একটি উদ্যোগে বিরোধিতা করেছিল ওয়ালমার্ট। অথচ বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই রিটেইলার কোম্পানিরই পোশাক তৈরির কাজ চলছিল আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনসে, যেখানে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয় শতাধিক শ্রমিক।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমস বুধবার এক প্রতিবেদনে বলেছে, তাদের হাতে আসা নথি অনুযায়ী ওয়ালমার্টকে পোশাক সরবরাহকারী তিনটি মার্কিন কোম্পানি তাজরীন ফ্যাশনসকে দিয়ে কাজ করাচ্ছিল।

আর ২০১১ সালের এপ্রিলে ঢাকায় অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে পত্রিকাটি লিখেছে, বাংলাদেশি পোশাকের বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে কারখানার বৈদ্যুতিক ও অগ্নি নিরাপত্তার জন্য বাড়তি অর্থ আদায়ের প্রস্তাবে ওয়ালমার্টের প্রতিনিধি আপত্তি জানিয়েছিলেন।

বাংলাদেশের পোশাক কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ওই বৈঠকে অংশ নেয়া দুই কর্মকর্তা নিউ ইয়র্ক টাইসমকে জানিয়েছেন, তৈরি পোশাক কারাখানার বৈদ্যুতিক ও অগ্নিকা-ের ঝুঁকি কমাতে ‘গ্লোবাল রিটেইলারদের’ কাছ থেকে বেশি অর্থ আদায়ের একটি উদ্যোগ থামাতে মূল ভূমিকা রাখেন ওয়ালমার্টের প্রতিনিধি।

আর্মস্টারডামভিত্তিক ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইনের আন্তর্জাতিক সমন্বয়কারী ইনেকে জেলডেনরাস্ট বলেন, বৈঠকে ওয়ালমার্টই ওই উদ্যোগের সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা করে।

ওই সভায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রিটেইলার, বাংলাদেশের কারখানা মালিক, সরকারি কর্মকর্তা ও এনজিও প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

কার্যবিবরণী অনুযায়ী, ওয়ালমার্টের এথিকাল সোর্সিং ডিরেক্টর শ্রীদেবী কালাভাকোলানু বৈঠকে বলেন, বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে চার হাজার পোশাক কারখানার বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা ও অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে ‘বিশাল ও ব্যয়বহুল’।

“এই বিনিয়োগ করা ব্র্যান্ডগুলোর জন্য আর্থিকভাবে বাস্তবসম্মত হবে না।”

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ওয়ালমার্টের মুখপাত্র কেভিন গার্ডনার নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, বাংলাদেশে ওই ওয়ালমার্ট কর্মকর্তার এ মন্তব্য ‘অপ্রাসঙ্গিক’।

ওয়ালমার্ট বাংলাদেশ সরকার, কারখানা ও সরবরাহকারীদের সঙ্গে অগ্নি নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে বলেও দাবি করেন মুখপাত্র।

জেলডেনরাস্ট বলেন, “অগ্নি নিরাপত্তাকে কারখানাগুলোর জন্য একটি বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে বৈঠকে সবাই এ বিষয়ে কাজ করার এখনই উত্তম সময় হিসেবে একমত হলেও ওয়ালমার্ট এর বিরোধিতা করে। এতে এ উদ্যোগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।”

ওই বৈঠকে ওয়াশিংটনভিত্তিক কারখানা পর্যবেক্ষণ গ্রুপ ওয়ার্কার রাইটস কনসর্টিয়ামের নির্বাহী পরিচালক স্কট নোভাও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ওয়ালমার্ট ও অন্যান্য রিটেইলাররা বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি করতে যা ব্যয় করে তার তুলনায় কারখানারগুলোর অগ্নি নিরাপত্তা বাড়ানোর খরচ সামান্যই।

ওয়ালমার্টের পোশাক তৈরি হতো তাজরীনে

নিউ ইয়র্ক টাইমস বলেছে, বাংলাদেশের কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের মাধ্যমে তাদের হাতে তাজরীন ফ্যাশনসের কিছু নথিপত্র এসেছে, যাতে দেখা যায়, ওই কারখানা থেকে প্রায়ই ওয়ালমার্টের জন্য পোশাক বানিয়ে নিতেন সরবরাহকারীরা।

গত সেপ্টেম্বরের একটি উৎপাদন প্রতিবেদন অনুযায়ী, কারখানার ১৪টি প্রোডাকশান লাইনের মধ্যে ৫টিই নিয়োজিত ছিল কেবল ওয়ালমার্টের পোশাক বানানোর জন্য।

গত ২৪ নভেম্বর রাতে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তুবা গ্রুপের তাজরীন ফ্যাশনস ভবনে অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ১১১ জন শ্রমিকের মৃত্যুর পর যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে বাংলাদেশের পোশাক কারখানায় কাজের পরিবেশ ও শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন ওঠে।

তখন ওয়ালমার্ট এক বিবৃতিতে জানায়, তাজরীনে অগ্নিকাণ্ড ও তাদের সঙ্গে কাজের সম্পর্ক নিয়ে তারা ‘বিব্রত’।

‘একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান’ ওয়ালমার্টের অনুমোদন ছাড়াই তাজরীন ফ্যাশনসকে পোশাক তৈরির কাজ দেয় (সাবকনট্রাক্ট) বলে দাবি করা হয় ওই বিবৃতিতে।

এ কারণে ওই সরবরাহকারীর সঙ্গে চুক্তি বাতিলের কথাও জানায় ওয়ালমার্ট, যদিও সেই প্রতিষ্ঠানের নাম তারা বিবৃতিতে উল্লেখ করেনি।

নিউ ইয়র্ক টাইমস তাজরীন কারখানা থেকে পাওয়া নথিপত্র ওয়ালমার্টকে দেখানোর পর মুখপাত্র গার্ডনার এক ই-মেইলে বলেন, “আমরা তাজরীন ফ্যাশনসের অনুমোদন কয়েক মাস আগেই তুলে নিয়েছিলাম।”
নথিপত্রের ছবিতে দেখা যায় ওয়ালমার্টের জন্য তাজরীন থেকে শার্ট, শর্টস আর পাজামা তৈরি করাচ্ছিল সরবরাহকারী তিন মার্কিন প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডিরেক্ট গ্রুপ, সাকসেস অ্যাপারেলস ও টপসন ডাউনস।

জুলাইয়ের এক নথি থেকে দেখা যায় ওয়ালমার্টের ফেডেড গ্লোরি ব্র্যান্ডের শর্টস তৈরির জন্য সাকসেস অ্যাপারেলস তাজরীনকে কাজ দেয়। আগুন লাগার পর কারখানার ভেতর থেকে তোলা ছবিতে এক জোড়া ফেডেড গ্লোরি শর্টসেরও নকশাও দেখা যায়।

সাকসেস অ্যাপারেলস প্রায়ই বাংলাদেশি পোশাক তৈরি প্রতিষ্ঠান সিমকোকে দিয়ে কাজ করাতো বলেও একটি নথিতে তথ্য পাওয়া যায়। সিমকো বাংলাদেশের হাত ঘুরেই ওয়ালমার্টের পোশাক বানানোর কাজ পায় তাজরীন।

ফলে তাজরীনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না বলে ওয়ালমার্ট যে দাবি করছে - তা সঠিক নয় বলে মনে করেন স্কট নোভা।

“ওয়ালমার্টকে না জানিয়ে তাজরীনকে কাজ দেয়া হয়েছিল বলে যে দাবি করা হচ্ছে তা ঠিক নয়। ওই কারখানা থেকে বেশ ক’টি মার্কিন সরবহরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্টের জন্য পোশাক বানিয়ে নিচ্ছিল। গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য বিখ্যাত ওয়ালমার্ট এ ব্যাপারটি জানতো না, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়।”

বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা নোভাই এ নথিগুলো নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেন।

আগুনে পুড়ে যাওয়া কারখানা থেকে পাওয়া আরও নথির ছবি থেকে দেখা যায়, সিয়ার্স ও ডিজনির জন্যও কারখানাটিতে পোশাক বানানো হচ্ছিল। ওয়ালমার্টের মতো এ দুটো কোম্পানিও দাবি করেছে, তাদের না জানিয়ে এবং অনুমোদন না নিয়ে সরবরাহকারীরা তাজরীনকে কাজ দিয়েছে।

গার্ডনার জানান, নিরীক্ষকরা ওয়ালমার্টের হয়ে আগে তাজরীন ফ্যাশনসে নিরীক্ষা চালিয়েছে। ২০১১ সালের মে মাসে নিরীক্ষকরা তাজরিন ফ্যাশনসকে ‘অরেঞ্জ’ শ্রেণিভুক্ত করে প্রতিবেদনও দিয়েছিলেন।

কর্মস্থলের পরিবেশ সবচেয়ে খারাপ হলে ওই প্রতিষ্ঠান ‘রেড বা লাল’ শ্রেণিতে পড়ে এবং দুই বছরে তিন বারের নিরীক্ষায় কোনো প্রতিষ্ঠান ‘অরেঞ্জ’ রেটিং পেলেও ওই প্রতিষ্ঠানকে ‘রেড’ রেটিং দিয়ে তাদের কাছ থেকে আমদানি বন্ধ করে দেয় ওয়ালমার্ট।

২০১১ সালের আগস্টে রেটিংয়ে কারখানাটি ‘ইয়েলো’ বা ‘মাঝারি মানের’ রেটিং পায়।

লিংক







সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১০:০৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×