somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Filmmaking Language: দৃশ্য, শট, গন্তব্য ও পরিণতি

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ৯:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লালটিপ দেখতে বসছিলাম। লালটিপ একটি পুরোনো মুভি (নতুন মুভি যেভাবে বের হচ্ছে!!); আমার ভাগ্যের ফের, আমাকে ট্রেইলার দেখে আলোচনা করতে হয় :( মুভি দেখি যখন এটার কথা সবাই ভুলে যায় তখন। :( ট্রেইলার দেখতে দেখতে এতো পাকা হইয়া গেছি যে ট্রেইলার দেখেই অনেক কিছু বলে দিতে পারি। আর অন্যান্য দেশের মুভি সম্পর্কে না বলতে পারলেও বাংলাদেশের মুভিগুলোর ট্রেইলার দেখে বলা যায়। খুব সম্ভব বাংলাদেশ এক মাত্র দেশে যেখানে মুভির ট্রেইলার হয় ৫ মিনিট! :| যাহোক, লালটিপের কথা বলছিলাম।

লাল্টিপ নিয়ে বেশ অনেক রিভিউ, মারামারি-কাটাকাটি-গালাগালি হয়েছে। বেশ কিছুতে আমাকে অংশগ্রহন করতে দেখা গিয়েছে। সহব্লগার দূর্যোধন এর এপিক রিভিউ আমার চলচ্চিত্র দর্শন -লালটিপ তো ফেসবুকেই শেয়ার হয়েছিলো এক হাজারের উপর। স্বপন আহমেদের লালটিপ রুপ নিয়েছিলো দূর্যোধনের লালটিপ এ... :P আজকে কিছুটা দেখে আমি আপনাদের সিনেমা সংক্রান্ত কিছু কথা বলবো - একটু খেয়াল করে শুনুন।

অন্যান্য সব কিছু বাদ দিলেও একটা সিনেমায় প্রধান হয়ে দাঁড়াবে - গল্পের পথ ও গতি। অর্থাৎ, গল্প কিভাবে এগুচ্ছে, চরিত্ররা কোথা থেকে কোথায় যাচ্ছে, তাদের মাঝে ডায়ালগ ও অ্যাকশন (মুভমেন্ট) এর লেংথ কি বেশী না কম, গল্পের বর্ননা কি স্লো না ফাস্ট ইত্যাদী ইত্যাদী। এখন আসুন আরেকটু ভাঙ্গি।

-- সাধারনত যে কোন গল্পে বেশ কিছু ভাগ থাকে। সিনেমায় এই ভাগগুলো হলো সিকোয়েন্স। কিছু সিকোয়েন্সে একটার সাথে আরেকটার সম্পর্ক থাকে; কিছু সিকোয়েন্স সম্পূর্ন আলাদা হয়। একজন ফিল্মমেকারের উচিত শুরুতেই প্রতিটি সিকোয়নেস অর্থবহ করা; অথবা বলা ভালো - অর্থবহ সিকোয়েন্স গল্পে রাখা। এরপর কানেক্টেড সিকোয়েন্সগুলোর সাথে কানেকশন তৈরী করা। ধরুন, লালটিপের শুরুতে ধাপাধাপ বেশ কিছু সিকোয়েন্স দিয়ে চরিত্রগুলোর পজিশন এবং সিচুয়েশন সম্পর্কে ধারনা দেয়া হলো - এটা এক অর্থে ভালো - কিন্তু এটা ভালো লাগেনি কারন সিকোয়েন্সগুলো একটা আরেকটার সাথে কানেক্টেড ছিলোনা। দর্শক বিরক্ত হয়েছে এই ভেবে - কইত্তে আইলো এইটা! আগের অমুকের কি হইলো! এর সাথে আগেরটার সম্পর্ক কি! - ইত্যাদী প্রশ্ন নিয়ে ভাবতে হয়েছে বলে। এসব প্রশ্ন কেউ জোরে জোরে ভাবেনা - এগুলো সাবকনসাশ মাইন্ড খেলে থাকে; আর তাই এসবের কারনে শুরুতেই দর্শক বিরক্ত হয়ে গিয়েছে। আরেকটা ছোট্ট ব্যাপার হলো - গন্তব্য। ছোট্ট হলেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিটা সিকোয়েন্সে সেই সিকোয়েন্সের এবং তার চরিত্রদের গন্তব্য ডিক্লেয়ার করে দিতে হয়। এমন না যে এটা 'MUST DO' - অনেকেই এটা মানেন না; কিন্তু সেক্ষেত্রে তারা ভিন্নভাবে উপস্থাপনা করেন। উদাহরনঃ লালটিপের শুরুতে ইমন ও ফ্রেঞ্চ মেয়েটা কথা বলতে থাকে - মেয়েটা ইমনকে অফার করে তাকে কোথাও নিয়ে বেরিয়ে আসতে। এখানে খেয়াল করলে দেখবেন - ইমন রাজী হওয়ার সাথে সাথে দুজনকে দেখা যায় কোন একটা রেস্টুরেন্টে। কিন্তু সেই যে তারা এক জায়গায় ছিলো - সেখান থেকে তারা কি করলো, কোথায় গেলো, কিভাবে গেলো - এর কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়না। এটা লক্ষ্যনীয় যে, তাদের দুজনের সেই সিকোয়েন্সের পরিনতি যে দেখানোই লাগবে এমন নয়; না দেখালেও চলে। কিন্তু আপনি যখন এরক্কম কাজ বারবার করবেন তখন সেটা বাজে দেখাবে এবং বিরক্তির সৃষ্টি করবে। মনে রাখা উচিত - সিনেমা শুধুই কিছু সিকোয়েন্সের সমষ্ঠি নয়; এমনকি এটা সুন্দর সুন্দর কিছু দৃশ্যের সমষ্ঠিও নয়; একটা সিকোয়েন্সের সাথে আরেকটা কো-রিলেশন থাকতে হবে।

আসুন, আরো একটু ভেঙ্গে দেখি। প্রতিটা সিকোয়েন্স হয়ে থাকে বেশ কিছু শট এর সমন্বয়ে সৃষ্টি। এখানেও ক্যারেক্টারদের কানেকশন, তাদের ডিরেকশন, ডায়ালগ অথবা পজ (pause) এর টাইম লেংথ, চরিত্রদের নিজেদের রিলেশন, আশে পাশের দৃশ্য খেয়াল রাখতে হয়। ধরুন দুজন কথা বলছে - আপনি এতো দ্রুত শট পরিবর্তন করতে থাকলেন যে দর্শক চরিত্রদের চোখ দেখতে পারলোনা, দেখতে পারলেও বুঝতে পারলোনা। Once again, দর্শক বিরক্ত হবে। 'চরিত্রের চোখ শুট করো' নামে ফিল্মমেকিং এ একটা ফ্রেজ আছে। আপনারা খেয়াল করে দেখবেন, একটা সিকোয়েন্সে অনেকগুলো ভিন্ন ধরনের শট থাকে (উদাহরনঃ ক্লোজ, মিড, ওয়াইড, লং, বার্ডস আই)... কিন্তু আপনি এটা খেয়াল করেন না যে কেনো এক শটের পর আরেক শট আসে। এটা খেয়াল করে অর্থাৎ এটা ঠিক করে ডিরেক্টর। কারন সে গল্প কোন অ্যাঙ্গেল থেকে দেখাতে চায়, সেটা সেই ঠিক করে। কিন্তু এটা খুব কমন দুটো শট পাশাপাশি বসালেই হবেনা, একটার সাথে আরেকটার রিলেশন থাকতে হবে; খেয়াল রাখতে হবে যে দর্শকদের চোখে যেনো ধাক্কা না লাগে। উদাহরনঃ আপনি প্রথম শট নিলেন লং, এরপরের শট নিলেম ক্লোজ; লং শটে দেখলাম বিশাল মাঠে একজন দাঁড়িয়ে আছে আর আশেপাশের অনেককিছু এবং এর পরের শটে দেখলাম সেই দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার শুধু মুখমন্ডল। খেয়াল করে দেখুন - এই যায়গায় দর্শক একটা ধাক্কা খাবে। তাই সাধারনত লং আর ক্লোজ শটের মাঝে একটা মিডিয়াম শট রাখা হয়। এটা যে হতেই হবে এমন না; কিন্তু আপনাকে এটা মাথায় রাখতে হবে। আর তাই আমি বলি - শুট করার আগেই আপনাকে আপনার ফিল্ম মনের পর্দায় নিখুঁতভাবে দেখা শিখতে হবে।

সিনেমা বানানো সোজা; ভালো সিনেমা বানানো কঠিন - বেশ কঠিন।



মাহদী হাসান
ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্মমেকার
সিনেমা পিপলস
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:৫৩
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×