somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

/:) ডিপ্রেশন বা ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা একটি ভয়াবহ মানসিক রোগ ।বিষন্নতা একটি বৈশ্বিক মানসিক রোগ । বাংলাদেশেও এই রোগ দ্রুতই বিস্তার লাভ করছে /:)

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিষন্নতা বা ডিপ্রেশন যা মন খারাপের চেয়েও একটু বিশেষ কিছু । দিন দিন সারা বিশ্বে এই সমস্যা বাড়ছে । বাংলাদেশেও এই রোগ বর্তমানে বেড়েই চলছে । আসুন জেনে নিই এই ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা কি এবং কেন এবং কীভাবে হয় ।

১.
নানা কারণে মন খারাপ হতেই পারে। দুঃখবোধ একটি মৌলিক আবেগ। সুস্থ মানুষের জীবনে দুঃখবোধ হওয়া এবং মন খারাপ থাকা স্বাভাবিক ঘটনা। সাধারণ কথ্য ভাষায় অনেক সময় অতি স্বাভাবিক মন খারাপকে আমরা বিষণ্নতা বলে থাকি। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞানে ‘বিষণ্নতা’ বা ‘ডিপ্রেশন’ বলতে যা বোঝায়, তা সাধারণ মন খারাপের চেয়ে কিছু বেশি। বিষণ্নতার ক্ষেত্রে কোনো কোনো সময় কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। শরীর ও মনের ভেতর থেকে এই ‘এন্ডোজেনাস’ বিষণ্নতার উৎপত্তি। আবার কখনো বিভিন্ন ব্যক্তিগত বা সামাজিক কারণে সৃষ্ট দুঃখবোধ যদি অযৌক্তিকভাবে বেশি তীব্র ও দীর্ঘ সময় বিরাজমান থাকে, তখন তাকে বলে ‘রিঅ্যাকটিভ’ বিষণ্নতা।
বিষণ্নতার তীব্রতা এবং ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনযাপনের মান কমে যাওয়ার ওপর ভিত্তি করে একে গুরুতর, মাঝারি ও মৃদু—এই তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। অনেক সময় বিষণ্নতার মূল লক্ষণ হিসেবে বদ মেজাজ, বিরক্তি বা অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যায়। গুরুতর বিষণ্নতা থেকে আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।
২.
বিষণ্নতা একটি আবেগজনিত মানসিক সমস্যা। দুঃখবোধের মতো সাধারণ আবেগ যখন অযৌক্তিক, তীব্র ও দীর্ঘ সময়ব্যাপী কোনো ব্যক্তিকে ঘিরে থেকে তার স্বাভাবিক জীবনযাপন, কর্মতৎপরতা ও পারস্পরিক সম্পর্ককে বাধাগ্রস্ত করে, তখন সেটাকে বলা হয় বিষণ্নতা। এতে মস্তিষ্কের ‘সেরোটনিন’ জাতীয় রাসায়নিক পদার্থের গুণগত ও পরিমাণগত তারতম্য ঘটে। যে কেউ যেকোনো সময় এতে আক্রান্ত হতে পারে। ধর্ম-বর্ণ, আর্থসামাজিক অবস্থান যা-ই হোক না কেন, কেউই বিষণ্নতার ঝুঁকিমুক্ত নয়। তবে পুরুষদের তুলনায় নারীদের বিষণ্নতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীর কোনো দেশে (জাপান) শতকরা ৩ জন আবার কোনো দেশে (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) শতকরা ১৭ জন মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে শতকরা ৪ দশমিক ৬ শতাংশ নারী-পুরুষের বিষণ্নতা রয়েছে। যেকোনো বয়সে এমনকি শিশুদের মধ্যেও এটি দেখা দিতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সে বিষণ্নতার লক্ষণ প্রথমবারের মতো দেখা যায়। এ ছাড়া ১৫ থেকে ১৮ বছর ও ৬০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে এর ঝুঁকি কিছুটা বেশি। ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, শ্বাসকষ্ট, ক্যানসার, স্ট্রোক, হূদেরাগ, মৃগীসহ দীর্ঘমেয়াদি রোগে যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের বিষণ্নতা হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। বেকারত্ব, দারিদ্র্য, একাকিত্ব, পারিবারিক ও সম্পর্কের সমস্যা, গর্ভকালীন ও প্রসবপরবর্তী সময়, বিবাহবিচ্ছেদ, প্রবাসজীবন, অভিবাসন, মাদকসেবন ইত্যাদি কারণেও এটি হতে পারে।
৩.
বিষণ্নতার সাধারণ লক্ষণ হচ্ছে: কমপক্ষে দুই সপ্তাহজুড়ে দিনের বেশির ভাগ সময় মন খারাপ থাকা, কোনো কিছু করতে ভালো না লাগা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, হঠাৎ রেগে যাওয়া, আগে যেসব কাজ বা বিনোদন করতে ভালো লাগত এখন সেগুলো ভালো না লাগা, মনোযোগ কমে যাওয়া, ক্লান্তি বোধ করা, ঘুমের সমস্যা (যেমন—খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যাওয় বা ঘুম না হওয়া অথবা বেশি ঘুম হওয়া), রুচির সমস্যা (যেমন—খেতে ইচ্ছে না করা, খিদে না থাকা বা বেশি বেশি খাওয়া), যৌনস্পৃহা কমে যাওয়া, মনোযোগ কমে যাওয়া, সাধারণ বিষয় ভুলে যাওয়া, সব সময় মৃত্যুর চিন্তা করা, নিজেকে অপরাধী ভাবা, আত্মহত্যার চিন্তা ও চেষ্টা করা ইত্যাদি। এ ছাড়া কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না—এমন কিছু শারীরিক সমস্যা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়; বিশেষত নারী রোগীদের মধ্যে, যেমন—মাথাব্যথা, মাথায় অস্বস্তি, মাথা-শরীর-হাত-পা জ্বালা করা, গলার কাছে কিছু আটকে থাকা, শরীরব্যথা, ঘাড়ব্যথা, গিঁটে গিঁটে ব্যথা, বুক জ্বালা, বুকব্যথা, নিঃশ্বাসে কষ্ট ইত্যাদি। কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এসব শারীরিক সমস্যার কারণ পাওয়া যায় না। নিজেকে খুব ছোট ও অপাঙেক্তয় মনে হতে পারে, উৎসাহ-উদ্দীপনা কমে যায়, সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার প্রবণতা কমে যায় এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আচরণের অস্বাভাবিকতাও দেখা দিতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, এসব লক্ষণের সব কটি একসঙ্গে একজনের মধ্যে সব সময় থাকবে না আবার কয়েকটি লক্ষণ থাকলেই ধরে নেওয়া যাবে না যে কারও মধ্যে বিষণ্নতা সৃষ্টি হয়েছে। এটি নির্ণয়ের জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা মানসিক স্বাস্থ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে।
৪.
বিষণ্নতার বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসা রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, রাতারাতি বিষণ্নতামুক্ত হওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য ধৈর্য ধরতে হবে। মনোরোগ চিকিৎসককে সময় দিতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিষণ্নতার চিকিৎসায় বিষণ্নতারোধী ওষুধ ও সাইকোথেরাপি (ধারণা ও আচরণের পরিবর্তনের চিকিৎসা)—দুই-ই প্রয়োজন পড়ে। কেবল ওষুধ প্রয়োগে এটি পুরোপুরি দূর হয় না। এ জন্য চিকিৎসক যদি একটু সময় নিয়ে রোগীকে সাইকোথেরাপি দেন, তবে নিরাময় দ্রুত হয়। চিকিৎসকের যদি সময়ের সংকট থাকে, তবে তিনি মনোবিজ্ঞানীর কাছে সাইকোথেরাপির জন্য পাঠাতে পারেন। আবার অনেক রোগী, রোগীর স্বজন ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বাদে অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরও বিষণ্নতার চিকিৎসা নিয়ে ভুল ধারণা রয়েছে। তাঁরা মনে করেন, ওষুধ বাদে কেবল সাইকোথেরাপি দিয়ে বিষণ্নতা দূর করা সম্ভব। অথচ গবেষণায় দেখা গেছে, এর চিকিৎসায় ওষুধ ও সাইকোথেরাপি উভয়ই দিলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। কেবল ওষুধ দিলে মাঝারি ফল পাওয়া যায় আর শুধু সাইকোথেরাপি গুরুতর বিষণ্নতায় তেমন কোনো ফল দিতে পারে না। তাই বিষণ্নতার পরিপূর্ণ চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ‘বায়ো-সাইকো-সোশ্যাল’ মডেলধর্মী চিকিৎসা। অর্থাৎ, রোগীকে ওষুধ খাওয়াতে হবে, সাইকোথেরাপি দিতে হবে আর পারিবারিক ও সামাজিক সহায়তা দিতে হবে।
৫.
নগরায়ণ, শিল্পায়ন, নৈতিকতা ও দর্শনের পরিবর্তন, সহিংসতা, অভিবাসন, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে বিশ্বব্যাপী বিষণ্নতার হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ কারণে বিশ্বব্যাপী এটি একটি বড় সংকট হিসেবে দেখা দিচ্ছে। সারা বিশ্বে ৩৫ কোটি মানুষ এই মুহূর্তে বিষণ্নতায় ভুগছে। সম্প্রতি ১৭টি রাষ্ট্রে পরিচালিত এক আন্তর্জাতিক জরিপে দেখা গেছে, প্রতি ২০ জন মানুষের মধ্যে একজন বিষণ্নতায় ভুগছে। বর্তমানে বিশ্বে রোগের বোঝা বা ‘ডিজিজ বার্ডেন’ হিসেবে বিষণ্নতার স্থান তৃতীয় আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০৩০ সালে বিষণ্নতা সব ধরনের রোগের ওপর থেকে প্রথম স্থান দখল করে নেবে! এর কারণে একদিকে কর্মবিমুখতা সৃষ্টি হচ্ছে, কমে যাচ্ছে উৎপাদনশীলতা; আরেক দিকে বিষণ্নতায় ভোগা বহুসংখ্যক রোগীর চিকিৎসায় ব্যয় করা হচ্ছে বিপুল অর্থ। বিষণ্নতার কারণে বাড়ছে মাদকাসক্তির হার। একদিকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় অপ্রতুল বরাদ্দের কারণে এই সেবা বাংলাদেশে প্রয়োজন অনুযায়ী বিকশিত হতে পারেনি, আবার আরেক দিকে মানসিক স্বাস্থ্যে কর্মরত জনবল অবিশ্বাস্য রকম কম।
১৬ কোটি মানুষের জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আছেন ২০০ জনেরও কম। অর্থাৎ, প্রতি আট লাখ মানুষের জন্য মাত্র একজন!
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×