… “ মাহফুজ, দেখতো কোনটা তোমার পছন্দ? যেটা তোমার ভালো লাগে সেটাই আমরা নিব।”
- “ না , ভাইয়া । তোমার যেটা ভালো লাগে সেটাই নাও।”
… “ সে কি কথা! তোমার জিনিস আমার পছন্দমতো কিভাবে নেব?”
- “ আব্বুও বাজারে এসে বলে… “যেটা খুশি নাও” , তারপর আবার নিজেই একটা পছন্দ করে কিনে দেয়। আমি যেটা চাই সেটা দেয় না।”
আমার ছোট ভাই মাহফুজ; দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ওর এই সহজ স্বাভাবিক কথাতে ও যে আমাকে কতটা সচেতন করে দিল তা হয়ত ও নিজেই জানে না।
সত্যিই তো, ছোট বেলায় যখন আব্বুর সাথে বাজারে গিয়েছি তখন যা দেখে ভালো লেগেছে, যা কিনে সন্তুষ্ট হতে চেয়েছে আমার সহজ মন; তা কি তখন আব্বু বুঝতে পেরেছিল। বাবা তো সবসময় ভালো-মন্দ বিচার বিবেচনা করে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট জিনিসটিই আমাকে কিনে দিতে চায়। অথচ আমার ভালোলাগা আর পছন্দের মধ্যেই যে আমার তৃপ্তি এই সহজ জিনিসটিতো বুঝতে পারে নি।
আমাদের পছন্দের মুল্য না দিয়ে তারা তাদের বিচার-বিবেচনা আর অভিজ্ঞতা দিয়ে আমাদের জন্য উপযুক্ত জিনিসটিই কিনে নিয়ে আসেন। কিন্তু তারপরও আমাদের আকাঙ্ক্ষা অপুর্ন থেকে যায়। বাবা বুঝতে পারে না যে আমি এত দামি আর ভালো জিনিস চাই না, তার চেয়ে ঐ অল্পদামী ভংগুর খেলনাটাই যে আমার ভালো লাগে; আমি যে ওটাই চাই।
শিশু মনের এই চাহিদা, এই ভালোলাগা-মন্দলাগার কথা হয়ত আমার বাবার কাছে আজো অজানা কিন্তু আমি তো এ ব্যাপারে সচেতন । তাই মাহফুজকে বাজারে নিয়ে কখনো আমার পছন্দ তার উপর চাপিয়ে দেই না। কখনো বলিনা এইটা তোমাকে নিতেই হবে এইটা ভালো।
এমনকি কোন চিপস কিনতে হলেও ওর কাছে শুনি-“ভাইয়া বলো , তুমি কোন চিপস খাবে ?”… ও হয়ত বলে – ক্রিস্পি কার্ল অথবা রিং চিপস। … আমি কিন্তু জোর করে অনেক দামি একটা চিপস কিনে দেই না বরং সেটাই নেই যেটা ও ভালোবাসে। আমি কখনো ওকে বলিনা না এইটা না ঐটা নাও … ঐটা খেতে খুব মজা লাগে আমি খেয়ে দেখেছি।
কারণ, আমার ছোট ভাইয়ের ভালোলাগা আমার সাথে মিলতে হতে হবে এমন তো কোন কথা নেই। আমার কাছে যা অমৃত ; ওর কাছে তো সেটা বিষও মনে হতে পারে।
ভাইয়া, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তুমি এখনো অনেক ছোট কিন্তু তারপরো আমি যেন তোমার ভালোলাগার মুল্য দেই। দামী দামী খেলনা ফেলে তোমার ঐ ছোট ছোট চুম্বক আর ব্যাটারী নিয়ে খেলা দেখে আমি যেন বিরক্ত না হই। তোমার অনবরত রঙ পেন্সিল হাতে নিয়ে কার্টুন আঁকা আমাকে যেন অস্থিরতা না এনে দেয়। তোমার ভালোলাগা, তোমার স্বাদ, তোমার রুচি আমি যেন অর্থমূল্যে কিনতে না যাই।
আমরা সবাই যেন বুঝতে শিখি – অর্থমূল্যে সব পাওয়া যায় না।
কড়ি দিয়ে সব কেনা যায় না !
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৬