somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একালের বিটিভি

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকালের প্রথম আলো পত্রিকায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের উপর একটা প্রতিবেদন দেখে ব্লগে কিছু লেখার ইচ্ছে হল। আসলে এজীবনে দু'বার দু'টি কাজে বিটিভি ঘুরে এসে যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তার একটি শেয়ার করার ইচ্ছেটাই এখানে প্রবল হয়েছে।

অনেক আগ্রহ নিয়ে প্রায় বছর খানেক পূর্বে দ্বিতীয় বারের মত বিটিভি ভবনে গিয়েছিলাম। মনের ভেতর উচ্ছ্বাস আর কৌতূহলের কমতি ছিলনা। কারণ সংগে রয়েছে অনভিজ্ঞ হাতে লেখা কিন্তু আবেগ নিংড়ানো কিছু গান। গীতি ক্যাবের প্রথাসিদ্ধ নিয়মে লেখাগুলো গান হয়ে ওঠার যোগ্যতা অর্জন করেছিল কিনা, তা বোধগম্য হবার আগেই আশায় গুরে-বালি।

এটা বলা নিষ্প্রয়োজন যে বিটিভি ভবনে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা আছে। তাই আত্মীয়তার সূত্রে একজন কর্মকর্তার ইস্যুকৃত পাশই আমাকে প্রবেশাধিকার এনে দেয়। সেই আত্মীয় কর্মকর্তার নির্দেশিত নিয়মেই আমি ২৮টি গান হস্তান্তর করি কোনও সংগীত পরিচালক দ্বারা প্রাক মূল্যায়নের পর তা নির্ধারিত কর্মকর্তার মাধ্যমে গীতিকার হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য জমা করতে। গানগুলো হস্তান্তরের পর আত্মীয় কর্মকর্তা যা বললেন, তা ছিল অনেকটা এইরকম, ‘আজ থেকে আপনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের একজন তালিকাভুক্ত গীতিকার হয়ে গেলেন। কিন্তু আপনাকে একটি টাকা খরচ করতে হবে।‘ আমি কিছুটা বিস্ময় আবার রসিকতা মনে করে হেসে দিয়ে বললাম, গীতিকার হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য মাত্র এক টাকা ফি? উঁনি আমার ভুল শোধরাতে বললেন, ‘একটি টাকা বলতে একটাকা নয়। এই অংকটা হচ্ছে পাঁচ হাজারটি টাকা। কারণ যেই কর্মকর্তা এই তালিকাভুক্তির কাজটি করেন, তিনি এই ‘একটি’ টাকা নেন।‘

এবার আমি বিস্মিত নই বরং আহত হলাম। কারণ আমি আশা করেছিলাম, যেই টেলিভিশন ভবনের সংগীত বিভাগ সহ অন্যান্য বিভাগে আমার নিকট আত্মীয়দের মধ্যে কম করে হলেও জনা তিনেক পদস্থ কর্মকর্তা আছেন, সেখানে গীতিকাব্যের মান বিচারে আমার গানগুলো তালিকাভূক্তির অযোগ্য হলেও অন্যদের মত অন্তত অনৈতিক কোনও প্রস্তাবনা আমার জন্য আসবেনা। আমি আমার সেই আত্মীয় কর্মকর্তাকে বিনয়ের সাথে বলেছিলাম, আমাকে তালিকাভুক্ত হতে বা করতেই হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। তারচেয়ে বরং লেখা-লেখির অভ্যাসটাকে মানদন্ডের কাছাকাছি নিয়ে একটু পরখ করে দেখাই আমার মুখ্য উদ্দেশ্য।

যাহোক, পরবর্তীতে বেশ কয়েকবার সেই আত্মীয় কর্মকর্তাকে টেলিফোনে বিরক্ত করা ছাড়া এ পর্ব আর খুব বেশীদূর এগোয়নি। তবে শেষ টেলিফোন কথোপকথনে জেনেছিলাম যে, উঁনি আমার লেখাগুলো কোনও একজন সংগীত পরিচালককে দেখিয়েছিলেন, যিনি অন্তত ‘ঠিক আছে’ বলে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। এজন্য আমি দু’জনকেই ধন্যবাদ জানাতে চাই।

কাহিনীর বর্ণনায় হয়তোবা মনে হতে পারে যে, আমি নিজের মৃদঙ্গ ঠুকে নিজেই আত্মতৃপ্তি লাভ করা সহ অন্যদেরও দৃষ্টি আকর্ষণের ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছি। প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি সেরকম নয়। কারণ বিটিভি নামের এই জাতীয় সম্প্রচার কেন্দ্রটিতে বিভিন্ন শাখায় যাঁরা প্রচার পরিবেশনার সুযোগ পান, তাঁদের অনেকাংশই সপ্রতিভ ও যোগ্যতর হয়ে আসেননি। এখানে প্রতিভার সাথে ঐ ‘একটি’ টাকার একটা গোপন সখ্যতার স্বীকৃতি দিতে হয় নতুবা উপর বা বিশেষ মহলের সখ্যতা-ঘনিষ্ঠতা কিম্বা আনুগত্য পেতে হয়। তা না হলে প্রতিভার বিচ্ছুরণে আপন ভুবন আলোকিত হওয়া ছাড়া, সে আলো বিটিভি’র স্টুডিও পর্যন্ত গড়ায়না।

বিটিভি পরিদর্শনের এ পর্বে যে বিষয়টি আমাকে আরও বেদনার্ত করেছিল তা হল, টেলিভিশন ভবনে নাকি এখন আর কোনও গান ধারণ করা হয়না। সব চলে বাইরের রেকর্ডিং স্টুডিওগুলোতে। জনগণের কষ্টার্জিত পয়সায় স্থাপিত ও পরিচালিত এমন একটা ব্যয়বহুল সম্প্রচার কর্তৃপক্ষ, আধুনিক সকল কারিগরি সুযোগ সুবিধা সম্বলিত হয়েও কেন এমন আচরণ করছে, তা এতদ সংশ্লিষ্ট অনেকের কাছেই বোধগম্য। নিজস্ব স্টুডিও বা ল্যাবে ধারণকৃত অনুষ্ঠানাদির ব্যয়, আর বাইরের স্টুডিও বা ল্যাবের ব্যয় নিশ্চয়ই এক নয়। আর ব্যয়ের সাথে আয়ের যে একটা যোগসূত্র আছে তাও সকলের জানা।

প্রাপ্ত সূত্রে পত্রিকায় অন্যান্য যে অভিযোগগুলো উত্থাপিত হয়েছে, তা আরও গুরুতর। একই অনুষ্ঠান বার বার সম্প্রচার করে, অনুষ্ঠান তৈরির ব্যয়ের টাকা তসরুপ করা এর মধ্যে অন্যতম। এক্ষেত্রে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মান নিয়ে না হয় আর নাইবা বললাম। কারণ সত্যিকার প্রতিভাবানদের আগ্রাহ্য করে, মহল বিশেষের ঘনিষ্ঠজন বা অনুসারীদের দিয়ে এবং ‘একটি’ টাকার প্রতিভার স্ফুরণে এর চেয়ে আর কী বেশী মান আশা করা যায়?

জনগণের কাংখিত বিনোদন প্রচার আর তথ্য সরবরাহে ব্যর্থ, এই রকম একটি বিশালায়তনের সম্প্রচার কেন্দ্র ও কর্তৃপক্ষের তাহলে আর প্রয়োজন কোথায়? তারচেয়ে বরং ‘সাহেব বিবি গোলামের বাক্স’ থেকে রূপান্তরিত ‘বিবি গোলামের বাক্স’কে আরও ছোট আকারে নিয়ে আসার প্রস্তাব করা যায়, যাতে বিবি ও গোলামদের নানা ক্যারিকেচার প্রচার করা সহ বিশেষ মহলের সখ্য-ঘনিষ্ঠ বা অনুসারী এবং ‘একটি’ টাকার বিনিময়কারী প্রতিভাবানদের সুযোগই শুধু সংরক্ষিত থাকবে। তাতে তথাকথিত ও প্রত্যাখ্যাত বিনোদন এবং তথ্য প্রচারের পাশাপাশি নাগরিকগণকে অন্তত ট্যাক্সের বোঝা থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেয়া যাবে!

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:০৫
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরাধের সেকাল ও একাল

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

সেকাল
--------------------------------------------------------
স্কটল্যান্ডের বাসিন্দা হেনরি বেভারিজ ছিলেন বৃটিশ-ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের একজন সদস্য৷বেভারিজ ১৮৭০ সালের মার্চ হতে ১৮৭১ সালের মার্চ এবং ১৮৭১ সালের জুন থেকে ১৮৭৫ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর বরিশালের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×