বেলুনগুলো নিজেই ফুলিয়েছিল রিয়া। বেশি নয়, গোটা ছয়েক হবে।
যদিও গুনে দেখেনি তুষার, তবে তার বেশি নয়। সেদিন রিয়া একা একাই ওর জন্মদিনের জন্য বাড়িটাকে সাজিয়েছিল। খুব সামান্য আয়োজন। কয়েকটা বেলুন, মোমবাতি আর একটা চকলেট কেক। নাম? নাহ! কেকের ওপর কিছু লেখা লেখাও ছিল না। তবু কিছু একটা ছিল যে জন্য বাড়ি ফিরে মন জুড়িয়ে গেছিল তুষারের।
সেদিন বন্ধুবান্ধবদেরও কাউকে ডাকেনি রিয়া। ঐ দিনটা শুধু নিজেদের মত করে পালন করতে চেয়েছিল। অন্যরা যেরকম ভাবে জন্মদিন পালন করে তার থেকে অনেকটা আলাদা। হইচই নেই। মনের মত রান্না করা কয়েকটা পদ। শুধু দুজন। তুষার মজা করে বলছিল, ‘খালি একটা মোমবাতি জালান আর রেড ওয়াইন বাকী। নাহলে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার হয়ে যেত-’ রিয়া হাসছিল। ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের কথা কেবল শুনেই এসেছে, কিন্তু কখনো আর করা হয়নি।
তাও সেসব কয়েকটা মাস আগের কথা। রিয়া নেই বলে যেন বাড়িটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে কদিন। একটা ছোট্ট গোলাপ গাছ কিনে এনেছিল তুষার। রান্নাঘরে সিঙ্কের সামনের জানালায় রাখা থাকত ক্ষুদে টবটা। রিয়া রোজ জল দিত। মাঝে মাঝেই ফুলও ধরত টবের গাছটায়।
কয়েকদিন ধরে আর ফুল ধরছে না। রিয়া বলেছিল গাছটাকে সামলে রেখ। তবু তুষার প্রায়ই জল দিতে ভুলে যায়। আজকে ওর শেষদিন এই বাড়িটায়। সব জিনিসপত্র এক এক করে সরিয়ে দেওয়ার পর একটু পরিষ্কার করে রাখছিল তুষার। এমন সময়ে সোফার কোনে নীচে পড়ে থাকা বেলুনটার দিকে নজর গেল। হাতে তুলে নিয়ে দেখল বেলুনটার ওপর বলপেন দিয়ে লেখা আছে, ‘আই লাভ ইউ’। এ তো অনেকদিন আগের সেই বেলুন। খাওয়া দাওয়া সেরে গল্প করতে করতে সে বেলুনের ওপর লেখার চেষ্টা করেছিল। কে জানে কোন কারনে করে সেটা এখনও চুপসে যায়নি।
তুষার ভাবতে চেষ্টা করল, রিয়া কি শুধু ফুঁ দিয়ে বেলুনটা ভরেছিল? সে খেয়াল করল না যে গোলাপ গাছটাও পুরোপুরি শুকিয়ে যায়নি। আরো কয়েকটি কচিপাতা গজিয়েছে নতুন করে।