somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধ্বসে পড়া ভবনে জীবিত আটকা পড়লে কি করবেন?

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৯:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাভারের নির্মম ট্রাজেডির পর সবাই হয়ত মনে মনে ভাবছেন কি করে এই ধরনের ট্র্যাজেডিগুলোকে মোকাবেলা করা যায়। উন্নত কাচামাল দিয়ে বিল্ডিং কোড মেনে বিল্ডিং তৈরি করার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এর শিকার হচ্ছেন ভোক্তারা যারা সেই ভবনে যাতায়াত করে থাকেন

হঠাৎ করে কোন ভবন ভেঙ্গে পড়তে শুরু করলে এবং দুর্ভাগ্যবশত আপনি সেখানে থাকলে ঐ মুহুর্তে তেমন কিছু করার নেই এটা কিন্তু সত্যি নয়। ভাগ্যের জোরে যদি বেঁচে যান তাহলে প্রাথমিকভাবে যা করবেন এবং যা থেকে বিরত থাকবেন তা নিয়েই আজকে আমার এই জরুরী লেখাটি।

ধ্বসে পড়া ভবনে জীবিত আটকা পড়লে যা করবেনঃ

হঠাৎ করেই আপনার ঘর-বাড়ি অনাবশ্যক ভাবে কেঁপে উঠছে বুঝতে পারলে তৎখনাৎ ভবন থেকে বাইরে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করুন। বহুতল ভবন হলে বাইরে বের হওয়া সম্ভব হয় না সেই অবস্থায় সাথে সাথে ঘরের সকল সদস্যকে বলুন শক্ত টেবিল, চেয়ার কিংবা ঘাটের পায়া (legs) পাশে গিয়ে অবস্থান নিতে। অনেক বিশেষজ্ঞরা বলেন চেয়ার টেবিল বা খাটের সরাসরি নিচে ঢুকে যেতে, কিন্তু আরেকদল বিশেষজ্ঞ মনে করেন এতে করে আপনি চাপা পড়ে মারা যেতে পারেন। কিন্তু পায়ার কাছে অবস্থান নিলে এর উপার ছাদ ধ্বসে পড়লেও আঘাত পাবার সম্ভাবনা কম। তাছাড়া সেখানে টেবিল(বা খাট) ও ছাদের ভেঙ্গে পড়া অংশের মধ্যে কিছু খালি জায়গার সৃষ্টি হবে যা আপনাকে উদ্ধার পূর্ববর্তী সময়টুকুতে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা প্রলম্বিত করতে সাহায্য করবে।



ভেঙ্গে পড়ছে এমন ভবনের তিনটি জায়গায় কখনোই অবস্থান নেবেন না-

ক) সিঁড়ি

খ) দরজার জানালার কাছে

গ) ঘরের একদম মাঝামাঝি (বরং দেয়ালের কাছে অবস্থান নিতে পারেন)

অনেক ভুমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলেন Fetal Position এ শুয়ে পড়তে। এতে করে আপনার শরীর অনেক কম জায়গা নেবে। ধ্বংসস্তুপের যেকোন ফাঁক ফোকড়ে পড়ে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়বে।

ভবন ধ্বসের পর আপনি সেখানে জীবিত আটকা পড়লে তৎখনাৎ যেটি করবেন তা হল নাক মুখ দিয়ে ধুলা বালি প্রবেশ বন্ধ করে আপনার শরীরের জন্য অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা। আপনার দু-হাত যদি নাড়াতে পারেন, তাহলে দু-হাত কাপের মত করে মুখের কাছে এনে নাক মুখ ঢেকে দিন ও হাত ও মুখের মধ্যেকার জায়গা থেকে অক্সিজেন নেবার চেষ্টা করুন।


এইভাবে হাত দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখুন

বোঝার চেষ্টা করুন আপনি সোজা আছেন নাকি উলটো হয়ে আছেন। এ জন্য জিহবা দিয়ে খানিকটা লালা গড়িয়ে যেতে দিন, যদি তা আপনার মুখ থেকে নাকের দিকে চলে আসে তার মানে আপনি উলটো হয়ে আছেন। সাবধানে সোজা হবার চেষ্টা করুন। উলটো হয়ে ঝুলে থাকলে অভিকর্ষ বলের কারনে আপনার মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তপ্রবাহ হবে, এটি একজন মানুষকে আধা ঘন্টা থেকে চল্লিশ মিনিটে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট। যদি নড়াচড়া করতে না পারেন তাহলে যতটুকু পারা যায় মাথাটিকে শরীরের সাথে আনুভূমিক করার চেষ্টা করুন।


এভাবে জিহবা বের করে আপনার লালার গতিপথ বুঝুন

মোবাইল ফোন কিংবা অন্য কোন যোগাযোগ মাধ্যম কাছে থাকলে তার সাহায্যে সাথে সাথে পরিচিত কাউকে কল দিন এবং সাহায্য নিয়ে আসতে বলুন। যদি মোবাইল না থাকে তাহলে চিৎকার দিয়ে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করার চেষ্টা করুন। কিন্তু চিৎকার করে শরীরের সব শক্তি খরচ করে ফেলবেন না, কেননা আপনি হয়ত এমন কোন কোনায় আটকা পড়তে পারেন যেখান থেকে বাইরে কোন শব্দই পৌছে না। তাই থেমে থেমে কিছুক্ষন পর পর সাহায্যের জন্য আওয়াজ তুলুন।

অযথা জোরাজুরি করে শরীরের শক্তি নষ্ট করবেন না, এসব করলে শরীরের অক্সিজেনের স্বল্পতা তৈরি হয় বলে অনেক অক্সিজেন দরকার হয়। আর তাতে করে ঐ বদ্ধ স্থানে অক্সিজেন দ্রুত শেষ হয়ে আপনি দম বন্ধ হয়ে মারা যাবেন। ভয় না পেয়ে পারা যায় না, কিন্তু মনে রাখবেন যতটুকু পারা যায় শরীরের শক্তি সঞ্চয় করবেন। শরীর একদম ছেড়ে দেবেন। আড়ষ্ট হয়ে থাকবেন না।

ভবন ধ্বসের পর আহত না হয়ে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুব কম। গায়ের উপর সিলিং এর কংক্রিট, ইট, রড, আসবাব ইত্যাদি এসে পড়লে সামান্য থেকে ভয়াবহ রকম আহত হতে পারেন। তখন যদি হাত পা নাড়াতে পারেন তাহলে যেভাবেই হোক পড়নের কাপড় ছিঁড়ে হলেও সেটা দিয়ে রক্ত পড়া বন্ধ করুন। কোন হাড় ভেঙ্গে গেছে বুঝতে পারলে সেই স্থান নাড়াচাড়া বন্ধ করে দিন বা কাপড় দিয়ে গিট দিয়ে তা স্ট্যাবিলাইজ করার চেষ্টা করুন। ব্যাথায় বেশি চিৎকার করবেন না, কেননা চিৎকার করে কোন কাজ তো হবেই না, বরং শরীর আরো দুর্বল হয়ে ভেঙ্গে পড়বে।


কেটে যাওয়া অংশে হাতের কাছে যা পান তা দিয়ে বেঁধে রক্ত বন্ধ করুন

আপনার সাথে আর কোন বেঁচে যাওয়া মানুষকে দেখতে পেলে তাকে সাথে করে ধীরে ধীরে পথ খুঁজে বের হবার চেষ্টা করুন। ভাঙ্গা দেয়াল, পিলারের পাশ দিয়ে যাবার সময় খুব সাবধান। অযথা কিছু ধরে টানাটানি করে নড়ানোর করার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন।

যদি বাইরে আসার কোন ব্যবস্থাই না করতে পারেন কিংবা আপনি গুরুতর আহত হন তাহলে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন। সাহায্য আসা পর্যন্ত বেঁচে থাকার চেষ্টা করুন।
মূল পোষ্টঃনাহিদ আনোয়ার খান
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৯:৩০
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেলা ব‌য়ে যায়

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩০


সূর্যটা বল‌ছে সকাল
অথছ আমার সন্ধ্যা
টের পেলামনা ক‌বে কখন
ফু‌টে‌ছে রজনীগন্ধ্যা।

বাতা‌সে ক‌বে মি‌লি‌য়ে গে‌ছে
গোলাপ গোলাপ গন্ধ
ছু‌টে‌ছি কেবল ছু‌টে‌ছি কোথায়?
পথ হা‌রি‌য়ে অন্ধ।

সূর্যটা কাল উঠ‌বে আবার
আবা‌রো হ‌বে সকাল
পাকা চু‌ল ধবল সকলি
দেখ‌ছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×