বাসায় আসলাম, আম্মাকে সব বললাম। কিন্তু আন্ধাশার নাম না শুনতে পেয়ে আম্মা বললেন –
“হাঁরে ব্যাটা তোকে কি একখান আন্ধাশা খাওয়াইতে পারেনি?”
ভাবছিলাম আন্ধাশার রেসিপি দিব, কিন্তু এটা সবাই জানে। আপনি যদি চাঁপাই নবাবগঞ্জে কারো বাড়িতে বেড়াতে আসেন, আর সে বাড়ির মানুষ আপনাকে যদি আন্ধাশা বা তেলের পিঠা বানিয়ে খাওয়ায়, তবে ধরে নিবেন, সেই বাড়ির মানুষ আপনার সর্বোচ্চ পর্যায়ে সম্মান করেছেন।
যাহোক আপনাদের আমাদের কলাই রুটির কথা বলি।
কলাই এর রুটি , আমরা চাঁপাইবাসী বলি- “কালাই এর রুটি”
আমাদের চাঁপাইতে জনপ্রিয় একটি খাবারের নাম।
বিশেষ করে শীতকালে এটা ছাড়া লাহাড়ী মানে সকালে খাবার হয় না।
এটার রেসিপি দেওয়া মুখে সহজ। কিন্তু বাস্তবে কঠিন।
ভাল কলাই এর রুটি খেতে চাইলে মেশিনে ভাঙা নয়, জাতাতে পিষা কলাই আর আতপ চাল (আমাদের এখানে আলো চাল বলে) এর আটা লাগবে। যদি মেশিনে ভাঙতে হয় তবে, আটাটা একটু মোটা করে ভাঙতে হবে। বেশি চিকন হলে রুটি খাইতে মজা লাগবে না।
আটা প্রস্তত।এখন মাটির খোলা দরকার।তবে একেবারে নতুন খোলায় রুটি ভাল হবে না।কিছুদিন খোলাটাকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত করে নিতে হবে। চুলাতে জাল দিয়ে খোলা গরম করতে হবে।
শানকিতে এক চিমটি লবণ, পরিমাণমত পানিতে আটা দিয়ে আসতে আসতে আটা মোথতে হবে। গমের রুটির বানাতে যে ভাবে আটা মোথতে হয়, ঠিক সে ভাবে।
ব্যস আটা মোথা শেষ। খোলা গরম থাকতে হবে। ছোট বাটিতে হালকা পানি হাতের কাছে রাখতে হবে।
টেনিস বলের মত করে মোথা আটাকে গোল করে চ্যাপ্টা করতে হবে। এক হাতের তালু বাটির পানিতে ভিজিয়ে ঐ তালুতে চ্যাপ্টা আটাকে নিয়ে আসতে হবে, পরে অন্য তালুটা ভিজিয়ে নিতে হবে। এতে সু্বিধা হয় যে আটা যেন হাতের তালুতে আটকে না যায়।যখন আটা হাতের তালুতে লাগার মত হবে, তখন সেই তালু আবার ভিজিয়ে নিতে হবে।
চাকতির মত আটাকে আস্তে আস্তে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এই তালু থেকে অন্য তালুতে বারবার নিয়ে আটাকে যতটুকু সম্ভব পাতলা করে নিতে হবে।
তারপর সেটা খোলায় দিতে হবে। কিছুক্ষণ গরম হবার পর রুটিটিকে আবার উল্টিয়ে অন্যপাশ দিতে হবে। অন্যপাশ না হওয়া পর্যন্ত এটা ঐভাবে খোলাতে রাখতে হবে। ততক্ষনে আপনি আরেকটি রুটি হাতে পাকাতে শুরু করবেন।
অন্যপাশ হয়ে গেল, আরেকপাশ দিয়ে দিবেন, দেখবেন কিছূক্ষণ পর সুন্দর একটা কলাই এর রুটি হয়ে গেছে।
এখন বেগুণ ভর্তা, অথবা ধনে পাতার চাটনি, অথবা মরিচের চাটনি দিয়ে গরম গরম রুটি খাওয়া শুরু করেন।
তবে অনেকে আছেন যারা বেলন চাকতিতে রুটি বানান। আমি রেসিপি দিলাম ঠিকই কিন্তু বানাতে কিছুটা কষ্ট। যাদের ছোটবেলা থেকে আম্মার সাথে রান্নাঘরে সময় দেওয়ার অভ্যাস আছে, তারাই সহজে পারবে।
আর দেরী কেন – কোন এক শীতের সকালে চেষ্টা শুরু করে দেন। আর আমি তো আপনাদের পাশে আছি (খাওয়ার জন্য)।