somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিরন্তর

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৮:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিরন্তর
মোহাম্মদ শরীফ
আব্দুর রহমান অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী্ ।থাকেন বড় ছেলে আব্দুর রশীদ এর সংসারে ।ছোট ছেলে আব্দুর রাজ্জাক থাকেন সৌদি আরবে ।আব্দুর রহমান সরকারি ডাক বিভাগে চাকরি করেছেন আজীবন। সততা ,নিষ্ঠা আর ত্যাগের মূর্ত প্রতীক আব্দুর রহমান্।জীবনের প্রথম লগ্নে তার সামান্য মাসিক মাইনে দিয়ে চাকরি জীবন শুরু, শেষ জীবনেও তা বাজারের উর্দ্ধগতির সাথে সংগতিপূর্ণ হয়নি। একই অফিসে চাকরি করার সুবাদে মন্ডল হাওলাদার এর সাথে ভাল সম্পর্ক আব্দুর রহমানের ।হাওলাদার এর হাত ভাল,তিনি তার দুই ছেলেকে বিলেতে পাঠিয়েছেন।তিনিই আব্দুর রহমানকে বুঝিয়ে তার ছোট ছেলেকে সৌদি আরবে পাঠানোর পরামর্শ ও বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন। ছোট ছেলে আব্দুর রাজ্জাক পড়াশোনাতে তেমন ভাল না হওয়াতে তাকে নিয়ে বাবার কিছুটা শঙ্কাও ছিল্।এমন সুযোগ আসাতে আব্দুর রহমান তা হাতছাড়া না করে গ্রামের জমি বিক্রি করে এবং চাকরির সুবাদে ব্যাংক লোন করে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছেন্।প্রথম প্রথম ছেলে বিদেশ থেকে টাকা পাঠালেও শেষাবধি তা পাঠানো্ বন্ধ করে।এ নিয়ে আব্দুর রহমা্ন এর কোনো্ মাথা ব্যথা দেখা যায়নি কখনো।দীর্ঘ অর্ধ যুগ আব্দুর রহমান এই লোনের ঘানি টেনেছেন।তবু আশা একটাই দূর্দিনে ছেলে যদি বাবার পাশে এসে দাড়ায়………….। দীর্ঘ একযুগ বিদেশে থাকা আব্দুর রাজ্জাক মাত্র দুবার দেশে এসেছেন। এখন মাঝেমাঝে বৃদ্ধ বাবার সাথে ফোনালাপ হয় মাত্র।
আব্দুর রহমান এথনও শারীরিকভাবে খুব দুর্বল নন,তবে মনের ভারে ভারাক্রান্ত্,ভারাক্রান্ত দৈনিক ছক বাধা ও যে কোন সময়ে আরোপিত কাজের ভারে।তার দৈনিক কাজের মধ্যে রয়েছে নিয়মিত নাতিকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া ও আসা,বাজার করা,মাসে একবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিল দিয়ে আসা আরও কত কি….।ছেলে-বৌমা দুজনই সরকারি চাকরিজীবী বেতন সামান্য্,তবে সচ্ছল তাদের সংসার।বৌমা বৃদ্ধ শ্বশুড়ের দেখভাল করার সময় তেমন পান না্ ।আর যতটুকু সময় পান সে সময়টুকু সন্তানের জন্যই বরাদ্দ রাখেন ।আব্দুর রহমান মাসে দুবার ডাক্তারের সরণাপন্ন হন। বাসা থেকে হেটে যাওয়া-আসা করেন,উদ্দেশ্য টাকা বাচিয়ে হাত খরচ বের করা।তার স্ত্রী গত হয়েছেন এক দশক আগে্।এত অল্প সময়ে স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যাবে আব্দুর রহমান কখনো এমনটি ভাবতে পারেননি।স্ত্রীহীন জীবনটা তার কাছে বড় অসহায় লাগে।আব্দুর রহমান কখনো ভাবেননি সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে পারিবারিক চাকরিতে যোগদান করতে হবে ।আব্দুর রহমান মাঝেমাঝে নিজের কাছে প্রশ্ন করেন আর নিজের কাছেই উ্ত্তর অন্বেষণ করেন এজন্যই কী তিনি তিলতিল করে গড়ে তুলেছেন এই সংসার।সাত বছর বয়সে আব্দুর রহমানের বাবা বিগত হলে তাকে সংসারের হাল ধরতে হয়েছিল।সেই থেকে সংগ্রামের শুরু।বাবার মৃত্যুর পর মায়ের ইচ্ছাতেই বাবার পুরাতন পেশা স্থানীয় নদীতে মাঝিগিরি করতে আরম্ভ করেছিল আব্দুর রহমান (কিন্তু নদীবক্ষে ভাসমান দোদুল্যমান জীবন আব্দুর রহমানের ভাল লাগেনি একটুকুও, তার স্বপ্ন ছিল একটা রঙিন ও সুন্দর জীবনের), পাশাপাশি বাবার রেখে যাওয়া দুএক বিঘা জমিতে কৃষিটা চলত তার।কিন্তু ভাল লাগে না এই জীবন তার কাছে।তাই তো মায়ের ইচ্ছা আর নিজের প্রাণান্ত চেষ্টাকে সঙ্গী করে আব্দুর রহমান পড়ালেখা চালিয়ে গেছেন নিরন্তর।যৌবনের উচ্ছ্বল দিনগুলোত আব্দুর রহমান নিজেকে তিলতিল করে নিবেদন করেছিলেন একটা সুন্দর জীবন আর সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নির্মাণ এর জন্য। বি.এ. পাশ করে আব্দুর রহমান নিজ যোগ্যতা আর মেধার পরিচয় দিয়ে জেলা ডাক অফিসে সরকারি চাকরি নিয়েছেন । সমগ্র চাকরি জীবনে তিনি সততা আর নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছেন ।এক সময় বদলি নিয়ে এসেছিলেন ঢাকায়,উদ্দেশ্য ছিল সন্তানদের মানুষের মত মানুষ করা।সফল তিনি হয়েছেন ।এভাবেই তিনি নিজের নিয়তিকে নিজ হাতে গড়েছেন, অথচ নিয়তির গোলকধাধায় তিনি যেন আজ ঘুরপাক থাচ্ছেন।জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি এখন আর হিসেব মেলাতে পারছেন না্। আসলেই কী জীবনের হিসেব অনেক কঠিন?আব্দুর রহমান কাগজে-কলমে অবসর পেয়েছেন ঠিকই কিন্তু অবসর তার মেলেনি।অবশ্য এই নিরন্তর পথ চলায় এক ধরনের তৃপ্তিও অনুভব করেন আব্দুর রহমান আর তা হল এই বৃদ্ধ বয়সে তাকে কোন বৃদ্ধাশ্রমের সদস্য হয়ে আপনজনদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জীবন কাটাতে হয় না ,শারীরিক ভাবে অক্ষম হয়ে কারো অনুগ্রহ প্রার্খী হতে হয় না(তার সমবয়েসী অনেকের ঠিকানাতো এখন বৃদ্ধাশ্রম ) ।তাই এই নিরন্তর পথ চলাতেই আব্দুর রহমান মানসিক স্বান্তনার পরশ পান ,জীবনের শেষ লগ্নে নিজ বাসভূমে (বাড়িতে)বসবাস করতে পারার তৃপ্তি অনুভব করেন। এজন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে আব্দুর রহমান অপরিসীম শূকরিয়া আদায় করেন …………..।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×