somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতারক

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৯:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকেও বাসা থেকে বের হতে দেরী করবে ছেলেটা, তারপর পড়ি মরি করি চোখে মুখে নাস্তা একটু দিয়েই দেবে দৌড়। ত্রিলয়, এই ত্রিলয়... বলতে নাস্তার প্লেট হাতে যেতে থাকেন ত্রিলয়ের রুমে। গিয়ে দেখেন ত্রিলয় মনোযোগের সাথে পিসি চালাচ্ছে।

- এই তোর খাওয়া লাগবে না?
- রেখে যাও, খেয়ে নেব
- কয়টা বাজে সে খেয়াল আছে?
- কয়টা?
- ১০টা ৩০ বাজে
- এই সেরেছে...............
বলেই ছুটল রুমের বাইরে, ব্রাশ করে, গোসল করে নাকে মুখে নাস্তা একটু গুজে বেড়িয়ে গেল ত্রিলয়। ছেলেকে নিয়ে সবসময় ই দুশ্চিন্তায় থাকেন ত্রিলয়ের মা, ছেলেটা যেভাবে রাস্তায় চলা ফেরা করে কবে না যেন কি অঘটন করে বসে, একটা মাত্র ছেলে তার। তাই টেনশন টা আরও বেশি হওয়াই স্বাভাবিক।

ত্রিলয় একটু পাগল টাইপ হলেও ফাজলামির বেলায় একেবারে সেরা, টেকনোলোজির বিষয়ে সে নেশার থেকে বেশি আসক্ত, বাসায় যতক্ষণ ই থাকবে মিউজিকে ঘর কাপাবে, আর একটার পর গেমস এর লেভেল কমপ্লিট করবে, আজ প্রিন্স অফ পার্সিয়া, তো কাল মাস এফেক্ট না হয় এন.এফ.এস চলছে। ত্রিলয়ের মায়ের ভাষায়, খাওয়া ঘুম ছাড়া তার ছেলের মুখ পিসি ছাড়া কেউ দেখতে পায় না।

রাস্তায় বের হয়েই মনে পড়লো রাস্তা তো কাটা, রাস্তা ঠিক করা হচ্ছে, রিকশা নিলেও ঘুর পথে যাবে তাতে আরও দেরী হবে বরং হেটে যাওয়াই ভালো। বাস স্টপে আসতেই দেখে বাস দাড়িয়ে আছে, দেখেই রাস্তা এদিক, ওদিক এক ঝলক দেখেই দৌড়ে পার হয়ে গেল। টিকেট কেটে বাস উঠবে, ভাড়া ঠিক ই ডাবল দিচ্ছে কিন্তু গেটে বাঁদর ঝোলা হয়ে যেতে পারবে কিনা তাও সন্দেহ !! তার উপর ক্লাসে আজ প্রোজেক্টর বিষয়ে কাজ আছে, আগেই যেতে পারলেই ভালো, তারউপর ঢাকা সিটির যা জ্যাম, লাগতে পারলে হয় একবার ছাড়ার নাম আর করে না।

বাসে উঠে দাঁড়িয়েছে, তার পাশে এক লোক, আর তার পাশে দুইটা মেয়ে। লোকটার পায়ে মেয়ে দুইটার একজন পাড়া দিল, লোকটা ককিয়ে উঠে, আপনি আমার পায়ে পাড়া দিলেন কেন? আর বলবেই না কেন একেবারে পেনসিল হিলের পাড়া :p মেয়েটা অতি শুদ্ধ ভাষায় বলে ওঠে
- “আশ্চর্য, আপনার পায়ে আমি পাড়া দেব কেন? আপনি কি আমার পরিচিত নাকি”
- ওমা, তাহলে কি পরিচিত দের পায়ে পাড়া দিয়ে বেড়ান?
- আপনি আমার সাথে পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করছেন কেন?
- পায়ে পাড়া দিলেন আমার, আবার বলছেন আমি আপনার পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করছি, বাহ ভালোই তো...

ত্রিলয় মিটি মিটি হাসছে, জনসংখ্যা বেশি হয়ে এই দেশে খারাপ হয় নি, এভাবে পাবিকের গুতা ঠাসা খেয়ে বাসে ঝুলে যাবার সাথে সাথে নির্মল বিনোদন ও পাওয়া যায়। মহিলা সিট খালি হতেই মেয়ে দুইটি সেখানে গিয়ে বসে, পাশের লোক চেপে দাঁড়ালে এবার সেও একটু বামে চেপে ভালো করেই দাড়ায়। কানে ইয়ার ফোনে এতক্ষণ পিটবুলের টোমা গানটা বাজছিল, গানের প্লে লিস্ট শেষ হওয়াতে পকেট থেকে মোবাইল বের করতে গিয়ে দেখে তার সামনে এক মেয়ে বসে আছে... মেয়েটাকে দেখে তার ভালো লাগে... এবার সুন্দর মত মেয়েটার সিটের সাথে দাড়ায়, বাসের বাম পাশের সারির প্রথম সিটেই মেয়েটা বসে আছে, এতক্ষণ কেন সে দেখলো না সেই লজিক খোজা শুরু করেন, প্রোগ্রামার দের এই এক দোষ, কোড করার মত সবকিছুতেই লজিক খোজে। যাই হোক সে প্লে লিস্ট পাল্টে মেয়েটিকে দেখতে শুরু করে, দু’এক বার চোখা চুখি হয়ে গেল। মেয়েটা কাকে যেন মেসেজ করলো, মোবাইলের স্ক্রিন এক রকম ঢেকে মেসেজ করলো।

আবার ত্রিলয়ের লজিক খোজা শুরু, ত্রিলয়কে নিয়ে ওর ফ্রেন্ডরা প্রায়ই পচায়,বলে তোর যা স্বভাব তাতে তোর ল পড়া উচিৎ ছিল, কারন দর্শানো নোটিস দিতে পারতি, কি মনে করে ত্রিলয় নিল কে মেসেজ দেয়, দোস্ত আমার তো এক মাইয়ারে পছন্দ হইছে, এঙ্গেজড কিনা বুজতাছি না, যামু? নিল হল ত্রিলয়ের সকল বদমাইশি আর অপকর্মের সাক্ষী। ওপাশ থেকে গ্রিন সিগন্যাল দিয়ে রিপ্লাই আসে যা, আমি এদিক সামলে নিতেছি।

ব্যাস নেমে যায় মেয়ের পিছু মতিঝিল, মেয়েটা বোধ হয় এদিকের কোন কলেজে পড়ে, মেয়ের পিছু নেবে এমন সময় দেখে সেই মেয়ে দুইটাও এসে যোগ দিয়েছে, বুঝতে আর বাকি নাই ঘটনা কি, তারা তিন বান্ধবী একসাথেই এসেছে। তা যাই হোক সে পিছু নেবেই, কিছুদূর যাবার পর ফোনে মেসেজ দেয় নিল, যেখানে খুশি যা ১২টার মধ্যে আসতেই হবে। এদিকে বাজে ১১.২০, তারা নটরডেমের সামনে। এইদিকে ত্রিলয় যদি চলে যায়, মেয়েটার বিষয় এখানেই সমাপ্তি, না গেলে ওদিকে প্রজেক্টা গোল্লায় যাবে, নিজেকে ঝাড়ি দিতে থাকে আজ সকালে নেটে না বসলেই হত। পরক্ষনেই ভিন্ন চিন্তা ধুর নেটে না বসলে দেরী করে বের হতাম আর একেও দেখতে পারতাম। যাক দেরী করে ভালোই হল।

কি মনে করে মেয়েটাকে পিছন থেকে শুনছেন বলে চেচাতে সামনে চলে যায়।

- আমাদের বলছেন?
- হ্যাঁ
- বলুন
- আপনাকে না ওনাকে বলবো

- জি, আমাকে কি বলবেন বলেন, আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে

- আমারও দেরী হয়ে যাচ্ছে, এত আস্তে হাটেন কেন?

- বুঝলাম না, আপনি কি এটা বলতেই এসেছেন?

- এত শুদ্ধ ভাষা আমার ভালো লাগে না, আপনার ফোন নাম্বার দেন

বিস্ফোরিত চোখে সে বলতে শুরু করে...
- আমাকে দেখে কি পাবনা ফেরত মনে হয়?
- আমি কিভাবে বলবো ওখানে গিয়েছেন কিনা
- আপনি কোন সাহসে আমার নাম্বার চাইলেন?
- কেন আপনি কি বিশেষ কেউ নাকি, নাম্বার চাওয়া যাবে না?
- দেখুন, আপনাকে আমি চিনি না, আমার কথা বলবার ইচ্ছা নেই
- আপনাকেও আমি চিনি না, আপনার সাথে কথা বলবো তাই নাম্বার চাইছি

এমন সময় ফোনে আবার মেসেজ, তারতারি কর। ত্রিলয় ব্যাগ থেকে খাতা বের করে খচ খচ শব্দ করে নিজের নাম্বার লিখে মেয়েটিকে দেয়, বলতে শুরু করে, আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে, নামটাও জিজ্ঞেস করতে পারলাম না, এই নাম্বার কল দিয়েন, কথা আছে বলেই উলটো দিকে দৌড়।

ত্রিলয় যেতেই নিরার বান্ধবী জুথি আর সামিয়া হাসতে শুরু করে, এইটার সার্কিটে ডিস্টার্ব আছে, জুথির সাথে সামিয়া গলা মিলায়, তালুকদার স্যারের ভবিষ্যৎ বউ রাস্তায় পাগলের পাল্লায়। নিরাদের কলজের বয়সে সবচেয়ে প্রবীণ হলেন এই স্যার, আর ক্লাস পারফরম্যান্স ভালো থাকায় নিরাকে বেশ ভালোই জানেন। হাসি কথার ফাকে মনের ভুলে কাগজটা ফেলে না দিয়ে ব্যাগে রেখে দেয় নিরা।

রাতে ব্যাগ থেকে বই বের করতে গিয়ে উঠে আসে কাগজের টুকরো টা, হাতে নিয়ে দেখতেই মনে পরে যায়। সেটা টেবিল ল্যাম্পের পাশে ফেলে রেখে সে তার কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে। রাত ১১টার দিকে ঘুমাতে যাবে করে সবকিছু গুছ গাছ করতে গিয়ে আবার কাগজের টুকরো টা চোখে পড়ে। নিরার ভাবে পাগলটার নাম্বারে একটা ফোন দিয়েই দেখি, সে ফোন দেয়...

ওদিকে ত্রিলয় একটা গেমসের লাস্ট স্টেজ পার করছে, এমন সময় ফোন বেজে উঠে, গেমারের মোবাইলের রিং টোন ও সেরকম, যা হবার তাই হল ভয় পেয়ে যায় ত্রিলয়, ব্যাস গেমসের ১২টা। বিরক্তিভর ভাবে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে একটা অপরিচিত নাম্বার, সে ভেবেছিল ক্লাসের আবির ফোন দিয়েছে, প্রস্তুতি নিয়েই নিয়েছিল তার ১৪গুষ্টি উদ্ধার করবে বলে। কিন্তু অপরিচিত নাম্বার হওয়ায় রাগ জিদে পরিণত হয়। ত্রিলয়-

- হ্যালো, কে বলছেন?
- মানুষ
- কি বলতে চান?
- কিছু না
- তাহলে ফোন দিছেন কেন?
- আমারে নাম্বার দিয়ে আসছেন কেন?
- আমারে কি মর্জিনার বাপ মনে হয়? আপনারে নাম্বার দেব কেন? কি চান আপনি?
- আপনার নাম জানতে চাই, কি করেন তাও জানতে চাই।
- আমার গেমসের ১২টা বাজিয়ে এই ফালতু প্যাচাল শুনানোর জন্যে ফোন দিয়েছেন?
- আমাকে নাম্বার দিয়ে আসলেন, বললেন কি যেন বলতে চান, আবার এই কথা বলছেন?
- ওহ, আপনি চিনতেই পারি নাই, আপনার নামটা বলবেন না?
- আপনি কি আমার নাম জানেন?
- না
- তাহলে বলে লাভ হত কি? চিনতে তো পারতেন না
- তা ঠিক
- এভাবে কয়জন মেয়েকে নাম্বার দিয়ে আসছেন?
- আর কাউকে না, আপনাকেই দিয়ে আসছি।
- তা কেন দিলেন? আর কি বলতে চান?
- আপনাকে ভালো লাগছে, ফ্রেন্ডশিপ করতে চাই।
- আপনি কি করেন? নাম কি আপনার?
- আমি ত্রিলয়, সি.এস.এই তে শেষ বর্ষে পড়ছি ঢাকা ভার্সিটি তে।
- এই জন্যেই তো বলি কমন সেন্সের এর আকাল কেন, সি.এস.ই পড়া ছেলে মেয়েরা সব পিসি নিয়ে পড়ে থাকে, মাথায় সারাদিন ওই একটা জিনিস থাকে, কখনো পিসি চালাবে,কখন পিসি চালাবে হবে ! নাম ত্রিলয়, সব কিছু লয় করেন নাকি?

- হুম গেমসে।
- ঠিক আছে, রাখি।
- আপনার নাম টা?
- জানার দরকার নেই, জেনে কি করবেন?
- আপনি আমার ফ্রেন্ড হবেন, জানবো না।
- কে বলল আপনাকে আমার ফ্রেন্ড বানাবো?
- এই যে ফোন দিলেন
- ফোন দিলাম আপনার কমন সেন্সের অভাব কেন তা জানার জন্যে, আপনার মত আঙ্কেল গোছের কারো ফ্রেন্ড হবার ইচ্ছা নেই।

বাই বলেই ফোন রেখে দিল নিরা। বেচারা ত্রিলয় শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পাস করা রাখা গেমসের স্ক্রিনের দিকে...

কেটে যায় আরও কিছু দিন... ত্রিলয় ফোন করে কথা বলতে চায় কিন্তু নিরা কোনভাবেই তার সাথে কথা বলতে রাজি না, হঠাৎ একদিন রাত ৩টার দিকে নিরা কি মনে করে যেন ত্রিলয়কে ফোন দেয়। ত্রিলয় রাত জেগে গেমস খেলছে।
- আপনি এত রাতে কল করলেন?
- ডিস্টার্ব করলাম বুঝি? আমি আসলেই ভাল কিছু করতে পারি না, সরি, রাখি
- আরে শুনুন, আমি তা বলি নি, আপনি হঠাৎ কথা বলতে চাইলেন তাই অবাক হয়েছি
- কি করছিলেন এত রাতে?
- গেমস খেলছিলাম, আপনি ঘুমান নাই কেন?
- এমনি, ঘুম আসছিল না তাই
- আপনার নাম টা এখনো জানা হল না
- নিরা
- আপনার গলাটা কেমন যেন লাগছে, আপনার কি মন খারাপ?
- হুম মন খারাপ কিভাবে বুঝলেন?
- তা কি নিয়ে মন খারাপ?

নিরা জানায় তার এক বান্ধবীর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে সে বিয়ে করতে চায় না, দুজনের কথা এগিয়ে যেতে থাকে, এক পর্যায়ে ত্রিলয় নিরার নাম জেনে নেয়। এভাবেই শুরুটা হয়। ধীরে ধীরে দুজনের মধ্যে কথা বাড়তে থাকে। তারা একজন আরেকজনের সাথে বন্ধুর মত আচরন করতো, বলা চলে সব ই শেয়ার করতো। খুব ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে যায় দুজনের, কিন্তু তাদের সম্পর্কের আসল ভিত কি? ত্রিলয় উত্তর খুজে পায় না, সে যে নিরাকে খুব ভালবাসে কিন্তু এই বন্ধুত্বের মিথ্যে আঁচলে কেন বেধে রাখবে? ত্রিলয় সিদ্ধান্ত নিয়ে সে নিরাকে ভালবাসে বলে দেবে।

দিনটা ১৯জানুয়ারি, ২০০৯, সকাল ১০টার দিকে ত্রিলয় নিরাকে ফোন করে বলে, আজ আমার সাথে যেভাবে পার দেখা করো, কথা আছে। কয়দিন বাদে নিরার পরীক্ষা নিরা ফ্রেন্ডের বাসায় নোট আনার কথা বলে বের হয়।

নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে দেখে ত্রিলয় টেবিলে বসে আছে, আগে তাদের কয়েকবার দেখা হলেও আজ ত্রিলয়কে কেমন যেন লাগছে। চুপ করে গিয়ে তার পাশে গিয়ে বসল নিরা। ত্রিলয় ঠাণ্ডা চোখে তাকিয়ে আছে নিরার দিকে। নিরাই কথা শুরু করে, জানতে চায় কি এমন জরুরী দরকার।

ত্রিলয় বলি বলি করে বলতে পারছে না, এদিকে নিরার হাতেও সময় ফুরিয়ে আসছে। নিরা জানায় সে আর বেশিক্ষণ থাকতে পারবে না, তাকে যেতে হবে। কিছুক্ষন পর নিরা উঠে দাড়ায়, হাটা শুরু করবে এমন সময় ত্রিলয় বলে বসে সে নিরাকে ভালবাসে। নিরা কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। আবার বসে পড়ে, ত্রিলয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। ত্রিলয় চুপ করে থাকে কিছুক্ষন, আবার কিছু বলতে যাবে, এমন সময় চলি উঠে দাড়ায় নিরা। ত্রিলয় পিছন থেকে তার প্রশ্নের উত্তর জানতে চায় কিন্তু নিরা পিছু ফিরে তাকালেও কিছু না বলে চলে যায়।

ত্রিলয় সে দিন রাতে বেশ কয়েকবার ফোন করে নিরা রিসিভ করে না, পরের দিন ও এভাবে কেটে যায়। পরের দিন নিরা ফোন ধরে, ত্রিলয় রাগান্বিত ভাবে কথা বলে, কেন সে ফোন ধরে নাই, নিরা কোন প্রশ্নের জবাব দেয় না, শুধু চুপ করে থাকে। নিরার কাছে ত্রিলয় আবার তার প্রশ্নের উত্তর চায়, নিরা জানায় সম্ভব না, ত্রিলয় তাকে অনেক কিছু বোঝায়।

সময় পেরিয়ে যেতে থাকে, এক সময় বাধ্য হয়ে নিরা হার মানে ত্রিলয়ের ভালবাসার কাছে, সম্পর্কটা শেষ পর্যন্ত গড়ে ওঠে। ভালোই চলতে থাকে সবকিছু।

মাঝে আরও কয়েক বছর পেরিয়ে গেছে, নিরা অনার্স তৃতীয় বর্ষে উঠবে আর ত্রিলয় একটা জব করছে, যে কেউ বলবে তাদের সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত না গড়িয়ে থেমে যাবে না। নিরার বাসায় ইতিমধ্যে নিরার জন্যে ছেলে দেখা শুরু হয়ে গেছে, নিরা বাসায় জানায় কিন্তু তার পরিবার মানতে চায় না, নিরা ত্রিলয়কে জানালে, ত্রিলয় তাদের বাসা থেকে প্রস্তাব পাঠানোর কথা বলে কিন্তু নিরার বাবা-মা এক বাক্যে না জানিয়ে দিয়েছে। সময় বাড়তে থাকে, অসহ্য পরিস্থিতির মাঝে দু’জন। ত্রিলয়ের বন্ধুরা তাদের পালিয়ে যাবার জন্যে বলে, ত্রিলয় নিরাকে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে রাজি করায়। ঠিক হয় ৭তারিখ তারা পালিয়ে যাবে, তার আগেই ত্রিলয় আর তার বন্ধুরা সব ব্যবস্থা করে রাখে।

৬ তারিখ, দিবা গত রাত, মধ্য রাত, সময় রাত ৩টা, নিশি আর নিলার ঘুম ভেঙ্গে গেছে কান্নার শব্দে, উঠে নিরা কাঁদছে, নিরার বড় দু বোন তারা।

নিশি কিছুটা প্রতিবন্ধী, তার চোখ ও ট্যারা। নিশিকে যারা দেখতে আসে তারা সবাই ফিরে যায়, কে বলে একটা সুন্দর চেহারাই সব? নিশির জন্যে বর পক্ষ মোটা অঙ্কের টাকা যৌতুক দাবি করে, নিরার বাবার ক্ষমতা নেই অত টাকা দেবার, নিশির ও বিয়ে হয় না।

নিলা একজনকে ভালবেসে বিয়ে করেছিল, বাবা মা ও অমত করেনি কিন্তু তার কপালেও সুখ জোটে নি, শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারে বাড়ি ছেড়ে চলে আসে, আসার মধ্যে এক্সিডেন্টে পা দুটো খোয়াতে হয়, হুইল চেয়ার ই যার শেষ ভরসা, ভালবাসা, স্বামী, সংসার সব হারিয়ে গেছে, একটা পঙ্গু মেয়ের বোঝা কে বইবে?

নিরা নিলাকে সব খুলে বলে, কাঁদতে থাকে ছোট বোনটিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখে। নিরা জানে না কি করবে? কাকে বেছে নেবে ত্রিলয় না তার পরিবার? মোবাইল ত্রিলয়কে পাঠাবে বলে টাইপ করে রেখেছে “ত্রিলয় কালকের সকাল টা যেন না আসে, আমি হয়তো পারবো না”
নিরা কাঁদছে, আর চাইছে ঘড়ির কাটা পেরিয়ে কালকের ভোর যেন না আসে, নিরার বোন ছাড়া আর কেউ জানবে এই রাতের কথা কিংবা কান্নার কথা। কেউ জানবে নিরার অশ্রুর আড়ালে লুকিয়ে থাকা ক্ষত। হয়তো কাল নতুন কোন কথার রচনা হবে, হয়তো কাল থেকে ত্রিলয়ের কাছে নিরার পরিচয় হবে প্রতারক হিসেবে কিংবা তার বাবা মার কাছে অবাধ্য কোন সন্তান নামে।

লিখতে লিখতে নিজের অজান্তেই চোখ জলে ভরে আসলো লায়লা আফসারের, হঠাৎ ই খেয়াল শামিমের গলার আওায়াজ আসছে।
- এই হল কি তোমার? আজ আমাদের ম্যারেজ ডে ভুলে গেলে নাকি?
- এইতো আসছি

কিছুক্ষন সাজগোজ করে শামিমের সাথে বেড়িয়ে গেলেন তিনি, টেবিলের উপর টেবিল ল্যাম্প জ্বলছে, খাপ ছাড়া কলম পড়ে রইলো কাগজের উপর। অজানা থেকে গেল হতভাগ্য নিরা কিংবা ত্রিলয়ের বাকিটা গল্প।

পুনশ্চঃ

দুটো মানুষ একজন আরেকজনকে খুব ভালবাসে, সবকিছু অনুকূলে থাকলেও অদৃশ্য কোন হাতের আগমনে ভেঙ্গে যায় সব, এক হওয়া হয় না সে মানুষ দুটোর আর সেখানে এক তরফা ভালবাসার জন্যে বিপথে পা বাড়ানো কিংবা কাউকে দোষ দেয় কিংবা এর ব্যর্থতার জন্যে কাউকে নিয়ে খেলা কতটা যৌক্তিক? একটা সফল অঙ্কের ফল শুন্য ও হতে পারে।

ত্রিলয় বা নিরার ঘটনার একটা হ্যাপিং দিতে পারতাম কিন্তু ইচ্ছে হল না, কেউ একজন সরে গেলেই কি সে প্রতারক? কারো সরে যাবার কারন কি কেউ জানতে চান? নিরা কিংবা ত্রিলয়ে অবস্থানে নিজেকে নিয়ে ভাবুন, তাদের স্থানে হলে কি করতেন? একটু ভেবে দেখেন।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্টে যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×