প্রবাসের দিনগুলো এখনো সৃতিতে উজ্জল হয়ে আছে । স¥ৃতি মলিন হওয়ার আগেই তা লিখে ফেলার ইচ্ছে হলো । নব্বই এর দশকে এক বছরের জন্য ইরাকে থাকা ও খুব কাছ থেকে ইরাক ও তার মানুষকে দেখার সুযোগ হয়েছিল । তখন ইরাক ছিল যুদ্ধ বিধ্বস্থ, নানা রকম আন্তর্জাতিক বিধি নিষেধ ও নিষেধাজ্ঞায় নিপীড়িত। তারপরও মানুষগুলোর আতিথেয়তা মুগ্ধ হওয়ার মত । যুদ্ধের আগে তারা প্রচন্ড ধনী ছিল । তখন কেমন ছিল তাদের আচার আচরণ তা জানার কোন উপায় নেই এখন। ১৯৮২ সালে ছাপা হওয়া ইরাকের টুরিস্ট গাইড দেখছিলাম । বইটা সাবেক যুগোস্লাভিয়া থেকে ছাপা হয়েছিল । বোঝাই যায় তখন সে দেশের সাথে ইরাকের সম্পর্ক খুব ভাল ছিল। সে সময় আরবের অধিবাসীর পাশাপাশি যুগোস্লাভিয়ার নাগরিকদের ও ইরাকে প্রবেশের জন্য কোন ভিসা লাগত না । হায়রে সমৃদ্ধ সেই ইরাক ও আজকের ২১ শতকের ইরাকের কান্না ।
১৯৯৬ - ৯৭ সালে আমি ইরাকের কুর্দিস্থানে যাই । সুদীর্ঘ ১৩ মাস অবস্থান কালীন সময়ের আমার অভিজ্ঞতা বিচিত্র এবং ঘটনাবহুল। আমি ইরাক ও উত্তর ইরাক অর্থাৎ কুর্দিস্থানের মানুষদেরকে পছন্দ করে ফেলেছিলাম। একদিকে যেমন মানুষ ও পরিবেশ অন্যদিকে এদের দুঃখ দুর্দশা সামাজিক ও সাং¯কৃতিক দিকগুলোও আমার দেখা হয়েছিল। আমার মনের কোনে সে দেশের মানুষগুলো এবং সেখানে যাদের সাথে একটা বছর আমি জীবনযাপন করেছিলাম তারা এখনও জীবন্ত। আমাকে এখনও তাঁদের স্মৃতি হাসায় ও কাঁদায়। আমি সেই এক বছর ডাইরী লিখেছিলাম । সেই ডাইরীর কিছু কিছু বিষয় এবং আমার স্মৃতির পাতা থেকে আবার নতুন করে ইরাকের উপর লিখছি। ১৯৯৬ এর নভে¤¦রে যখন আমি কুর্দিস্থানের সোলেমানিয়া প্রদেশে আসি তখন শীত শুরু হয়ে গেছে । বাংলাদেশ সবুজের দেশ, এখানে ভুমি সমতল, তাই কুর্দিস্থানের রুক্ষতা ও মালভূমি এলাকা আমার মনে বৈচিত্র এনে দিয়েছিল । বাগদাদ থেকে ইরবিল হয়ে সোলেমানিয়া, পথে খাইবার সুলতান পাহাড় শ্রেণী অতিক্রম করে মালভূমি, পার্বত্যপথ , ও সমতলের বুক চিরে অ্যাসফল্টের রাস্তা দিয়ে পাহাড়ের ওপারে সোলেমানিয়াতে যেতে হয়। একসময় রাস্তাগুলো ভালই ছিল বোঝা যায় বর্তমানে অর্থনৈতিক অবরোধের কারণে যথাযথ সংরক্ষণ না করার ফলে এখন একটু জীর্ন দশা।
সোলেমানিয়া কুর্দিস্থানের তিন গভর্ণরেটের একটি । এটা যেমন খোলামেলা তেমনি এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মনকে টানে। সোলেমানিয়া একসময় অর্থনৈতিক দিক থেকেও বেশ সফল শহর ছিল । এখানে অনেক গুলো শিল্প কারখানা ছিল এবং এটা ছিল একটা সমৃদ্ধ নগর। সোলেমানিয়া সিমেন্ট ফ্যাক্টরী মধ্য প্রাচ্যের একটা অন্যতম বৃহৎ ফ্যাক্টরী ছিল যা বর্তমানে বন্ধ । এছাড়াও এখানে সিগারেট ফ্যাক্টরী, মিনারেল ওয়াটার প্লান্ট ও অনেক শিল্প কারখানা সোলেমানিয়াতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল । বিধ্বস্থ অর্থনৈতিক অবস্থায় বর্তমানে সব মুখ থুবড়ে পড়ে আছে । সোলেমানিয়া গভর্ণরেট এর বর্ডার ইরাকী মূল ভূখন্ড , ইরবিল ও ইরানের সাথে। ইরান সীমান্ত দিয়ে বিভিন্ন ধরনের জিনিষপত্র আদান প্রদান হয়ে থাকে, সীমান্তও দেখার মত। পাহাড় শ্রেণীর মাঝ দিয়ে দুটো আলাদা দেশের সীমানা ভাগ করা । সেই পথ কখন ইরানের ভিতর চলে যায় তা বোঝা দুষ্কর ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:০৮