somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৈশাচিক অস্কার

৩০ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ৮:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অদ্ভূত সোনালি রোদের আকাশ।কিন্তু লালচে আভা। লালচে আভাটা এমন একটি গোলযোগ থেকে হয়েছে যা মূলত পিশাচদের জন্য আনন্দের। পৈশাচিক অধিকার রক্ষা কমিটি সভা আহবান করেছে। এর পূর্বে কখনো দিবালোকে পৈশাচিক সভা-সমাবেশ হয়নি। অতি প্রয়োজনে এবার দিবালোকেই সভা ডাকা হয়েছে। তাছাড়া ঝুকির বেশি কিছু নেই। কারণ মানবজাতি আজ হাহাকারে ব্যস্ত। পৈশাচিক কাজকর্মে ধ্যান দেয়ার কোন সুযোগ নেই। গোরস্থানেই সভার স্থান। সভার আহ্বানকারীরা হচ্ছে ভূত-প্রেত এবং পিশাচ। শিমুল গাছের শীর্ষ ডালে জৈষ্ঠ পিশাচ সর্দারের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্যরা একে একে শেওরা, কেওরা, তাল, হিজলের ডালে বসবে। সকল আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। জৈষ্ঠ পিশাচ সর্দারের পায়ে অঞ্জলি দেবার জন্য সদ্য মৃত ১৬ বছর বয়সী লাশের কলিজা এবং পেয় হিসেবে রক্তের আয়োজন করা হয়েছে। উপহার আয়োজন যতই হোক, আজ ভূত-প্রেত এবং পিশাচেরা একটা বড় সমস্যা নিয়ে এখানে হাজির হয়েছে। অস্তিত্ব যখন সীমাহীন বিলোপের পথে তখন এর একটা বিহিত করতেই হবে। তরুণ ভূত-প্রেত এবং পিশাচদল কানাকানি করছে যে আজ একটা রফাদফা হয়ে যাবে। উদীয়মানদের টেম্পার একটু বেশিই থাকে। সেইসাথে সবাই অপেক্ষায় আছে। অবশেষে অপেক্ষার প্রহর কাটল। সূর্য তখন ঠিক মাথার উপর। মানুষের ছায়া যখন খুবই ছোট্ট, ঠিক তখন পিশাচনেতা শিমুলের শীর্ষ ডালে এসে আসন গ্রহণ করলেন। বসতে না বসতেই সবার মধ্য থেকে সমস্বরে শ্লোগান আসে
“মানিনা, মানবনা।
আমার ঘামে, আমার শ্রমে
পুরস্কার অন্য কে নেবে?
আমার পুরস্কার অন্য কেউ নেবেনা, নিতে দেবনা”।
পিশাচ সর্দার সবাইকে শান্ত করলেন। আজকের মিটিং আসলে পিশাচ অস্কার নিয়ে। এ পুরস্কারের নিয়ম হচ্ছে প্রতিবছর যে সবচেয়ে নিষ্ঠুর প্রক্রিয়ায় কাজের প্রমাণ দিতে পারে তাকে একটি অস্কারে ভূষিত করা হয়।ভূত-প্রেত এবং পিশাচদের জনসংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। তার উপর তাদের কাজের ক্ষেত্র ক্রমেই দূর্জয় হয়ে পড়ছে। তার মধ্যে তাদের যথাকাজের পুরস্কার যদি যায় অন্যের হাতে, তবে তাদের ক্ষোভ হবে এটাই স্বাভাবিক। এ পুরস্কার পাওয়ার জন্য পিশাচদল অনেক ঝুকি নিয়ে কত কষ্টে পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে ঘাড় মটকানো, রাতে ভয় দেখিয়ে, তাল গাছে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করতে হয়। তাছাড়া এখন এই প্রযুক্তির যুগে হিলিয়াম বাতির আলোয় তাদের কাজ আরো কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে। তারমধ্যে এত কষ্টে মানুষ হত্যা করে অস্কার প্রতিযোগিতায় নিজের অবস্থান করতে হয়। কিন্তু সমস্যাটা অন্য জায়গায়। আজকাল প্রায় প্রতিবছরই অস্কার আর এদের কেউ পাচ্ছেনা। তাদের সাংবিধানিক রীতি অনুসারে যে সবচেয়ে নিষ্ঠুর প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে নিষ্ঠুর কাজটি করতে পারবে পুরস্কার সেই পাবে। আর সে যদি পিশাচ না হয় তবে তার উদ্দেশ্যে একটি পিশাচ শাবক অঞ্জলি দেয়া হয়। আজকাল এ পুরস্কার বেশির ভাগই পায় মানবজাতি। ফলে এমনিতেই তাদের জনসংখ্যা হ্রাসমান তার উপর প্রায়ই তাদের শাবক অঞ্জলি দিতে হয়। অন্যদিকে শত শ্রম দিয়েও অস্কার হারাতে হয়। এ নিয়েই আজকের সভা এবং তাদের মধ্যে এত ক্ষোভ।
আসা মাত্রই পিশাচদল প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। পিশাচনেতাও জুরি বোর্ড ও প্রমাণ-শাবুদ নিয়ে তাদের মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত। তারা প্রশ্ন করল- “মানবজাতি কি এমন কাজ করতে পারে যে আমাদের চেয়ে বেশি নিষ্ঠুরতার প্রমাণ রাখে” ?
জুরি বোর্ড- “তোমরা বহু চেষ্টা করে, আড়ালে-আবডালে থেকে তাল গাছে, পুকুরে, শিমুল গাছে মানুষ মারতে পার মাত্র একজন। আর মানবজাতি একবার আগুন লাগিয়ে দিয়ে মানুষ মারতে পারে শত শত জন। শুনা যায় তারা শুধুমাত্র টাকার লোভে এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে। তোমরা তা করতে পেরেছ ?
এ ঘটনা শুধু একবার নয়, বারবার হচ্ছে। কেউ এ ব্যাপারে কিছু সংস্কারের আদেশ দিলে তারা তা শিকেয় তুলে রাখে। এবং তারা বারবার এমন মৃত্যুর ঘটনা দেখে এনজয় করে। তোমরা কি তা করতে পেরেছ ?
এমন নির্মম ঘটনা ঘটার পরও একজন মানুষের জীবনের দাম ১০০০০০ টাকা দিয়ে সেরে ফেলে। এভাবে মৃতের পরিবারের উপর আবার একটা পৈশাচিক অবস্থা তৈরি করে। শুধু তাই নয়, শুনলে অবাক হবে যে ক্ষতিপূরণ যেন কম দিতে হয় সেজন্য তারা মৃতের লাশ পর্যন্ত সরিয়ে ফেলে। তোমরা যে লাশের কলিজা এবং রক্ত উপহার হিসেবে এনেছ তা সরিয়ে ফেলা একটি লাশের। তোমরা এগুলো করতে পেরেছ ?
তাছাড়া তোমাদের কস্মিনকালেও সাহস হবেনা যে পিশাচ হয়ে একটা পিশাচকে হত্যা করবে। কিন্তু তারা তা অনায়েসে করতে পারে। এমনকি মানুষ দেখছে যে সে নিশ্চিত মরছে এমন অবস্থাও তৈরি করতে পারে। তোমরা কি এত বড় নিষ্ঠুর এবং বেহায়া হতে পারবে ?
আর তোমরা জনসংখ্যা নিয়ে ভাবছ ? ভাবনার কিছু নেই। মানুষ নিজেরাই পিশাচের বৈশিষ্ট্য নিয়ে নিচ্ছে। তাছাড়া আমাদের পরবর্তী পরিকল্পনা হচ্ছে মানুষের মাঝে আমাদের বৈশিষ্ট্য ঢুকিয়ে দেয়া। এতে করে আমাদের ঝুকি কমে যাবে অথচ আমাদের কাজ ঠিকই হবে।
তোমরা তো আর মানুষের সাহিত্য কি তা বুঝনা। আমরা জেনেছি মানুষের মাঝে আবুল হাসান নামে একজন কবি একদম খাটি সত্য একটি কথা বহু পূর্বেই বলেছেন যে-
“বাড়ছে দাম চালের, ডালের, তেলের, নুনের
শুধু বাড়ছেনা দাম মানুষের”।
পিশাচ জুরি বোর্ডের অকাট্য যুক্তি শুনে শেষে পিশাচদল বুঝতে পারল যে কেন বারবার তাদের অস্কার মানবজাতির কাছে যায়। অবশেষে তারা এ সিদ্ধান্ত মেনে পিশাচনেতাকে কুর্নিশ করে চলে যায়। এভাবেই সভার সমাপ্তি হয়।



০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ফাঁদ (The Middle Class Trap): স্বপ্ন না বাস্তবতা?

লিখেছেন মি. বিকেল, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৪৫



বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত কারা? এই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে কিছু রিসার্চ এবং বিআইডিএস (BIDS) এর দেওয়া তথ্য মতে, যে পরিবারের ৪ জন সদস্য আছে এবং তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×