somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

করুণাধারার খোঁজে(কিঞ্চিৎ ১৮+) - অনিক মল্লিক

২৯ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ১২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

করুণাধারার খোঁজে

জীবন কখন কোন দিকে মোড় নেয়, কেউই আগে থেকে বলে দিতে পারে না। শুরু হতেই পাথরের মতন জীবন গড়িয়ে যেতে থাকে, যেতে যেতে পথে সে মাড়িয়ে যায় অসংখ্য ছোট ছোট ঘাসফুল। আবার বড় কোন হিমবাহ এসে সেই পাথররূপী জীবনটাকেই ধসিয়ে দিয়ে যায়। মানুষ কেন যেন এই জীবনটাকেই নিয়ন্ত্রণ করতে শিখল না, জীবনই তাকে সর্বদা চালনা করে আসছে, ভবিষ্যতেও করবে। ঈশ্বর নামক এক সর্বশক্তিমান সবার মাথার ওপরে বসে থেকে তার ছড়ি ঘুরাচ্ছেন, আর জীবনও ঘুরছে সেই তালে। মানুষ তার হাতের পুতুলমাত্র।
এই কাহিনী কেবল একটি ঘটনাকে ঘিরে নয়, বরং অনেকগুলো ছোট ছোট ঘটনা নিয়ে পুঞ্জীভূত এটি। এটা জীবনযুদ্ধে পরাজিত মানুষের গল্প, ভাগ্যের কাছে কখনো নতি স্বীকার না করার গল্প, বিশাল ঝড়ে ডুবে যাওয়া জাহাজের নাবিকের গল্প, হতাশার সাথে লড়াইয়ে আশার জয়ের গল্প, এটা জীবন নামক জটিল এক জালের পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা বিস্ময়ের গল্প।


রাতুল অস্বস্তিতে নড়ে-চড়ে উঠল। তার বস্ তাকে অকারণে ধমক দিচ্ছে। মন-মেজাজ হয়ত অফিসে আসার আগে থেকেই খারাপ ছিল। অফিসে একটা কানা-ঘুষা চলছে ইদানিং- বস্রে নাকি তার বৌয়ের সাথে সম্পর্ক ভালো চলছে না। ডিভোর্সও হয়ে যেতে পারে।
“রাতুল সাহেব, এভাবে তো আর চলতে পারে না। আমি এই ব্রাঞ্চে ট্রান্সফার হয়ে আসার মূল কারণই ছিল এখানকার ইনডিসিপ্লিন দূর করা। আপনি সবসময় লেইট করে অফিসে ঢোকেন- খেয়াল করেছি আমি।”
রাতুল মোটেও প্রতিদিন দেরি করে অফিসে আসে না। আজ অবশ্য কিছুটা দেরি হয়েছে। বাস-ধর্মঘট না কী যেন ছাই চলছে, আর সিএনজিও রাস্তায় ফাঁকা পাচ্ছিল না। বস্রে পারিবারিক সমস্যার বলি হচ্ছে- এটা ভেবে চুপচাপ থাকার সিদ্ধান্ত নিল সে।
“এর রিপিটেশন যদি আরেকদিন দেখি, আপনাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে- বলে দিচ্ছি। জি.এম. সাহেবও আপনার চাকরি বাঁচাতে পারবে না।”
রাতুল কোন কথা না বলে বেরিয়ে আসল।
আসলে এই চাকরিটা ওর খুবই দরকার। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছে সে বড় চাচার টাকায়। এমন নয় যে তাকে তার আত্মীয়-স্বজন কেউই দু’চোখে দেখতে পারে না। ছোটবেলা থেকেই সে অনেক আদরে বড় হয়েছে। তাকে পড়াশোনা করাতে গিয়ে বড় চাচাকে রীতিমত হিমশিম খেতে হয়েছে। বড় চাচার নিজেরও একটি ছেলে, আরেকটি মেয়ে আছে। মেয়েটি বড়, প্রায় রাতুলেরই বয়েসী। বড় চাচা ছোট একটি সরকারি চাকরি করতেন, আয় ছিল অল্প। বিপতœীক মানুষটি রোজ সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে পড়াতে বসাতেন তাদের তিনজনকে। রাতুল একটু বড় হয়েই সিদ্ধান্ত নেয় যে পড়াশোনা শেষ করে আর বড় চাচার বোঝা হয়ে থাকবে না। একাউন্টিং থেকে বি.কম. পাশ করে সে চাকরি-যুদ্ধে নামে। এই চাকরিটা পেতে তাকে বেগ পেতে হয়েছে অনেক। একটা ভালো চাকরি এ মন্দার বাজারে হিরের মতনই দামি। এ চাকরিটা হারালে তাকে আবার পথে বসে যেতে হবে।
সামিট গ্রুপের কর্পোরেট অফিসের এ্যাসিস্ট্যান্ট একাউন্টেন্ট রাতুল। মাস তিনেক হল জয়েন করেছে। সারাদিন সে ঘাড় গুঁজে হিসেব কষতে থাকে। ব্যাপারটা খুবই বিরক্তিকর। তার হাতের ওপর াদয়ে এত টাকার লেনদের হয়ে যাচ্ছে, অথচ এর একটা কড়িও তার না! তবে মাঝে মাঝে কম-বয়েসী সুন্দরী শায়লার সাথে তার চোখাচোখি হয়। তখন মনে হয়, জীবনটা তো এতো বাজে না!
বস্রে ধমক খেয়ে মুখ গোমড়া করে নিজের ডেস্কে বসে ছিল রাতুল। আর একটু পরেই জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার শায়লা বিপরীত দিকের ডেস্ক থেকে তার দিকে তাকিয়ে স্মিত একটা হাসি উপহার দিল।
রাতুলের মন কেন যেন আবার চনমনে হয়ে উঠল!


সুমিত ভার্সিটির সিঁড়ি বেয়ে উঠছিল। একটি মেয়ে অপেক্ষা করছে চার তলায়। তাহমিদা নামের এ মেয়েটি তার এ মাসের দ্বিতীয় শিকার! সুমিতের এই একটিমাত্র শখ- সুন্দরী কারোর সাথে বন্ধুত্ব করা, তার সাথে কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত কাটানো, তারপর নতুন কাউকে ভালো লাগলে বর্তমানকে অতীত বলে বিদেয় করে দেওয়া। ভালো মানুষ সে নয়, তবে তার একমাত্র ভালো দিক হচ্ছে- কোন প্রকার ভালোমানুষি সে দেখানোর চেষ্টাও করে না!
সুমিত তার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। উচ্ছন্নে যাবার জন্য বাবার ঠিক যতটুকু টাকা-পয়সার প্রয়োজন, তার বাবার তার থেকেও কিছু বেশি টাকা আছে। দেশের সম্ভ্রান্ত এবং ধনী হিন্দুদের মধ্যে সুমিতের বাবা শীর্ষস্থানীয়। এস.এস.সি., এইচ.এস.সি.- কোনোটাতেই সুমিতের ফলাফল খুব একটা আশানুরূপ ছিল না, তবে তাতে সমস্যাও খুব একটা হয় নি। অঢেল অর্থের জোরে ঠিকই সে ভর্তি হয়ে গেছে ভালো একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে। তার নিজস্ব একটা স্পোর্টস কার এবং একটা বাইকও আছে। একেকদিন সে একেকটায় চড়ে ক্লাস করতে আসে। তবে দুর্ভাগ্যবশত, ক্লাস আর করা হয় না। তার মূল্যবান সময় থেকে কখনো সে ইলাকে কিছুটা দেয়, কখনোবা মিলাকে।
এ ধরণের ছেলেদের জন্য বাংলা ভাষায় কোন সুন্দর নাম নেই। হয়তো বাংলা মাতা তাঁর এ ধরণের সন্তানদের কখনো তাঁর বিশাল বক্ষে আশ্রয় দেন না। তবে ইংরেজিতে এদেরকে আদর করে ‘প্লে-বয়’ ডাকা হয়। সুমিত নিজেও অবশ্য নিজেকে প্লে-বয় ভাবতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। সে সুদর্শন, অফুরন্ত টাকাও আছে, সেই সাথে সুন্দর করে কথা বলার ক্ষমতা- এ সবক’টা গুণ একত্রিত হয়ে তাকে করে তুলেছে অনন্য!
যেসব মেয়েদেরকে সে ইচ্ছেমত ধরে এবং ছেড়ে দেয়, তাদের মনের অবস্থা পরবর্তীতে কী হয়, সেটি জানতে সে কখনো তেমন কোন আগ্রহ বোধ করে নি। তবে সে শুনেছে, একজন নাকি ভার্সিটি ছেড়ে দিয়েছে। বাকিদের সম্ভবত তেমন কোন প্রতিক্রিয়া নেই এ ব্যাপারে। তারাও তো সম্ভ্রান্ত ঘরেরই আধুনিকা কন্যা!
সহসা বরাবরের মতন সুমিতের নজরে নতুন একটি মেয়ে পড়ল। মেয়েটি দোতলার বারান্দায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে গোলাপী কামিজ, চূড়িদার সালোয়ার, হাতে সবুজ চুড়ি। মেয়েটিকে আগে সে কখনো দেখে নি। খুব সম্ভবত, মেয়েটি ক্যাম্পাসে নতুন।
সুমিত চারতলায় এখনি যাবে না বলে ঠিক করল। তাহমিদা বোধ হয় আরেকটু অপেক্ষা করতে পারবে।


নাঈম কোনোমতে প্রথম আক্রমণটা ঠেকালো। কার মা আজ একটু বেশিই রেগে গেছেন। বলা চলে, উন্মাদ হয়ে গেছেন। অমানুষের মতন পেটাচ্ছেন তাকে। রাগলে অবশ্য কোনদিনই হুঁশ থাকে না তাঁর। তবে ইদানিং ব্যাপারটা বেশি বেশি হচ্ছে।
“তুই আর কোনদিন সিগারেট খেয়ে ঘরে ঢুকবি? বল!” নাঈমের মা কর্কশ স্বরে চেঁচিয়ে উঠলেন।
“সারা দুনিয়া আমার পেছনে সবসময় লেগে আছে। আমার বুঝি কষ্ট হয় না? সিগারেটটা দেখছ, কষ্টটা দেখতে পাও না?”
“কী বললি তুই? আমি তোর পেছনে লেগে আছি? আমি তোর শত্রু নাকি? হ্যাঁ?”
“শত্রু না তো কী? কোন মা তার নিজের সন্তানকে এভাবে পেটায়?”
“ওহ্! লাট সাহেবের বাচ্চাকে বাইরের মানুষ এসে পেটালে ভালো লাগবে? তোর মত ছেলে যেন আমার দুশমনের পেটেও না হয়!” বলতে বলতে আরো দু’-এক ঘা দিয়ে দিলেন নাঈমকে।
“সেই ছোটবেলা থেকে মার খাচ্ছি। এত বড় হয়েও তোমার পিটানি সহ্য করছি। তোমার মত মা যেন আমার দুশমনেরও না হয়।”
নাঈম রাস্তায় বেরিয়ে এল।

জন্মদাতার ওপর প্রচ- ক্রোধ জমা হয় নাঈমের ।
নাঈম যখন খুব ছোট, নাঈমের বাবা তার মাকে ফেলে চলে যান। কোথায় যে গিয়েছেন, তার কোন হদিশ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। তার দু’বছর পর নাঈমের মা পরিবারের পীড়াপীড়িতে আবার বিয়ে করেন। তার সৎ বাবাকে খারাপ কোন দিক থেকেই বলা যাবে না, কিন্তু নাঈমের মনে পড়ে না কখনো তার সৎ বাবা আদর-মাখা কণ্ঠে তাকে ডেকেছেন কিনা। সংসারের প্রতি কর্তব্য সম্পর্কে তিনি যথেষ্ট সচেতন। তবে নাঈমের মায়ের এ ব্যবহারে তিনি কখনো প্রতিবাদ করেন নি। হয়তো তার ভালোই লাগে।
নাঈমের মা কেমন যেন পাগল-পাগল হয়ে গিয়েছেন। ঠিক কবে থেকে, নাঈম খেয়াল করে নি। প্রথম যেদিন নাঈম মার খেল, সেদিন হকচকিয়ে গিয়েছিল। দিনটি ছিল বুধবার। স্কুল থেকে ফিরতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল। বন্ধুদের সাথে ক্রিকেট খেলেছিল ছুটির পর। আর ফিরেই দেখে তার মা রুদ্রমূর্তি ধরে আছেন। একটা হাত পিছনে লুকানো ছিল। পরে দেখতে পেয়েছিল, সে হাতে ছিল মাছ কাটার বটি।
নাঈম এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এখন এই মারপিট। এটা ছাড়া তার জীবন এখন ভাবাই যায় না যেন।
নাঈম রাস্তায় বেরিয়েই সিগারেট ধরাল। আগে অনেক কান্না পেত। তারপর একদিন হঠাৎ আবিষ্কার করল, সিগারেট কান্না আটকে দিতে ওস্তাদ! কান্না-কাটি মেয়েদের ডিপার্টমেন্ট। এক দিক থেকে সিগারেট তাকে পুরুষ বানিয়েছে। এই সিগারেট তার বহু দুঃখের মুহূর্তের সঙ্গী, যে কখনো কোনো প্রশ্ন করে নি, কেবল দুঃখের ভার কমিয়ে গেছে। এই সঙ্গীটির কাছে সে অনেক কৃতজ্ঞ, একে সে কীভাবে ত্যাগ করবে?
তবে সৌভাগ্যের বিষয় এই যে, বাসায় এখন পর্যন্ত তার দু’টি বন্ধু রয়েছে। একটি তার পোষা ময়না পাখি, আরেকটি হচ্ছে তার সাত বছর বয়সী সৎ ভাই।
নাঈম সিগারেটে বিশাল এক টান দিয়ে পরপর ছয়টা ধোঁয়ার রিং ছাড়ল শূন্যে, সেই সাথে একটা দীর্ঘশ্বাস।


রাতুল দরজায় টোকা দিতেই মিথিলা দরজা খুলে দিল। মিথিলা তার বড় চাচার বড় মেয়ে। তার থেকে মাস-ছয়েকের ছোট হবে। বি.বি.এ পড়ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর কিছুদিনের মাঝেই হয়ত পাশ করে বের হয়ে যাবে। বড় চাচা অবশ্য মিথিলার জন্য ছেলে দেখা শুরু করেছেন অনেক দিন আগে থেকেই।
“মাসে কেবল একবার আসতে হবে, এরকম নিয়ম বানিয়ে নিয়েছ নাকি?” অভিমান ঝরে পড়ল মিথিলার কণ্ঠে।
“না, তা কেন হবে? রানা বাসায় নেই?”
মিথিলা কথার উত্তর না দিয়ে ভেতরে চলে গেল। রাতুলও জানে, মিথিলা মিথ্যে বলে নি। এখন ব্যাপারটা এমনই হয়ে গেছে। মাসের শুরুতে একবার বড় চাচার বাসায় এসে বেতনের সিংহভাগ দিয়ে যায় এখানে। বড় চাচা রিটায়ার্ড করার পর সংসারটা বেহাল অবস্থায় পড়েছিল। এখন রাতুলের দেয়া টাকাটাই একমাত্র ভরসা।
বড় চাচা সাদা পাঞ্জাবী, সাদা লুঙ্গি আর মাথায় টুপি পরে আছেন। মাত্রই নামাজ শেষ করে উঠেছেন মনে হয়। ঘরের কোনার আলনায় জায়নামাজটা রেখে রাতুলের পাশে খাটে এসে বসলেন। পরম ¯েœহে রাতুলের কাঁধে একটা হাত রাখলেন।
“কী রে, তুই কি খাওয়া-দাওয়া করা ছেড়েই দিয়েছিস নাকি? শরীরের এই হাল কেন?”
“আমার শরীর ঠিকই আছে চাচা। আপনার কথা বলেন। পায়ের ব্যাথাটা কি আর উঠেছিল?”
“উঠলেই বা তোমার কী? তুমি কি খোঁজ-খবর নাও কোনো?” মিথিলা কখন যে এসে দরজায় দাঁড়িয়েছে রাতুল খেয়ালই করে নি।
“আসলে অফিসে এতটাই ব্যস্ত থাকি যে দম ফেলার সময়ই পাই না, চাচা।” রাতুল মিথিলার কথার বাণ এড়ানোর চেষ্টা করল।
“ব্যস্ততা না ছাই! আসলে তুমি আমাদের ভুলেই গেছ।”
রাতুল মিথিলার দিকে তাকাল। মিথিলা বেশ সুন্দরী হয়ে গেছে। কথায়ও বেশ চটপটে হয়ে উঠেছে। আজকে আবার বেশ সুন্দর করে সেজেছে সে।
“না, মিথি। মেসের খাবার খেতে খেতে যখন হাঁপিয়ে উঠি, তখন অন্তত তোর রান্নার কথা মনে পড়ে। তোরা আমার রক্তের সাথে মিশে আছিস। তোদের মরেও আমি ভুলতে পারব না।”
“ওসব বাদ দে তো। মিথি, মা, ছেলেটা কতদিন বাদে এসেছে। ওকে খেতে-টেতে দিবি না?” বড় চাচা মিথিলাকে বললেন।
মিথিলা সরে গেল না। একদৃষ্টিতে রাতুলের দিকে চেয়ে আছে। রাতুল জানে, মিথিলা তার কাছে কী চায়।
রাতের খাবার খেয়ে রাতুল তার মেসের উদ্দেশ্যে রওনা হল।


সুমিত অনেকক্ষণ হল বসে আছে সামিট গ্রুপের রিসেপশনে। সে রাতুলের সাথে দেখা করতে এসেছে। প্রায় আধঘন্টা হয়ে গেল, এখনও রাতুলের দেখা নেই। মেজাজটা ধীরে ধীরে গরম হতে শুরু করেছে। থার্মোমিটার ফেটে যাবার ঠিক আগ মুহূর্তে রাতুল এসে গেল।
“কী রে, কতক্ষণ হল এসেছিস?”
“আধঘন্টা।”
“সরি রে। আসলে কাজের অনেক চাপ। চল বাইরে যাই। ২০ মিনিটের একটা ব্রেক দেয় এরা লাঞ্চের জন্য।”
“আচ্ছা, ঐ মালটা কে রে?”
রাতুল বুঝতে পারল, সুমিতের নজর পড়েছে শায়লার ওপর।
“তোর ভাবী, শালা!”
রাতুল সুমিতকে নিয়ে রাস্তার পাশে একটা চায়ের দোকানে এল। দু’কাপ চায়ের অর্ডার দিল আর নিজে একটা কেক হাতে নিয়ে খেতে শুরু করল।
“সুমিত, তোর যা যা খেতে মন চায় খা। আমার বাকীর খাতা আছে এ দোকানে!”
“তুই লাঞ্চে এসে কেক আর চা খাচ্ছিস?”
“হ্যাঁ। আসলে দুপুরে বিশেষ কিছু খেতে মন চায় না। তাছাড়া, কেক জিনিসটা ভালোই। অনেকখানি গ্লুকোজ!”
সুমিত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সে তার বন্ধুটিকে চেনে। সামান্য ক’টা টাকা জমানোর জন্য সে দুপুরের খাবার বিসর্জন দিচ্ছে প্রতিনিয়ত।
“তোকে বলেছিলাম, বাবার কোনো একটা কম্পানিতে জয়েন করে নে। তাহলে আর এত কষ্ট করতে হত না।”
“না রে, তোর বাবার কম্পানি তো আমার ব্যাক-আপ ছিল! ব্যাক-আপ এত সহজে ব্যবহার করতে নেই!”
“থাক, ওসব আর বলতে হবে না। সব বুঝি আমি।”
“আচ্ছা, বাদ দে। এখন বল, কী দরকারে এসেছিস। রুমের চাবি লাগবে তো?”
সুমিত একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেল।
“ইয়ে, ঐ আর কি! নতুন একটা মাল পটিয়েছি রে! নীলা। তুই খুশি হবি এবারে। এই মালটা হিন্দু!”
“তোর কাছে আবার মেয়েদের জাত বলতে কিছু আছে নাকি? হিন্দুই হোক আর মুসলমানই হোক, কাউকে ছাড়িস নাকি তুই? এরপর খ্রিস্টান-বৌদ্ধ কিছু একটা ধরতে পারিস নাকি দেখ।”
“নাহ! এবার মনে হচ্ছে সেটলড হয়েই যাব। হিন্দু মাল, তাও আবার সুন্দরী, পাওয়া যায় না সচরাচর!”
“তোকে তো আর শুধরানো সম্ভব না। আর কতবার তোকে বলব যে এসব ভালো না। আল্লাহ ক্ষমাশীল। তবে তুই যাদের সাথে এই কাবাডি-কাবাডি খেলেছিস, তারা যদি তোকে মাফ না করে, আল্লাহও তোকে মাফ করবে না।”
“শোন, আল্লাহ, ঈশ্বর- এদের কেউই আর এক্সিস্ট করে না। দে অল আর মিথস। আগের জামানায় থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু এখন আর নেই। এই দুনিয়ায় মানুষেরই থাকার জায়গা নেই, আর ঈশ্বর!”
রাতুল আর কথা না বাড়িয়ে সুমিতের দিকে চাবিটা বাড়িয়ে দিল। এসব নিয়ে যতই কথা হবে, ততই তর্ক বাড়তে থাকবে। রেললাইন অসীমে গিয়ে মিললেও মিলতে পারে, কিন্তু আস্তিক-নাস্তিক? এরা কখনো মিলবে না।
“বাই দ্য ওয়ে, তোর অফিসের মালটা কিন্তু চরম রে। বিয়ে করে ফেল! তারপর আমি দেখব, কী করা যায়!”
সুমিত বাইকে চড়ে নিমেষেই অদৃশ্য হয়ে গেল।


সন্ধ্যে হয়ে এল প্রায়।
সুমিতের দেহের সাথে লেপ্টে আছে নীলার দেহ। সুমিত যথেষ্ট আনন্দিত। বহুদিন পর এমন সুখের কিছু সময় পার করল সে। মেয়েটা খুবই নিরীহ টাইপ। যা বলেছে সে, তা-ই শুনেছে, পাল্টা কোন কথাই বলে নি। এটার সাথে আরো দিন পনেরো সহজেই পার করে দেওয়া যাবে। আর এর মধ্যে রাতুলের রুমটা আরো তিন-চার বার ধার করতে হবে।
নীলা সুমিতের এলোমেলো চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করে দিচ্ছিল। সুমিতের কাছে এ মুহূর্তটা খুবই পরিচিত। এ সময় মেয়েরা টিপিক্যাল প্রেমের ডায়লগ দেয়। “তুমি সারা জীবন এভাবেই আমার থাকবে তো?” “আমাকে ছাড়া আর কাউকে কখনো ভালোবাসবে না তো?” “তোমাকে যদি না পাই, তবে কিন্তু আত্মহত্যা ছাড়া আমার আর উপায় থাকবে না!” গা জ্বালা করে সুমিতের এসব কথা শুনলে। সুমিত প্রস্তুত হল এ মুহূর্তটার জন্য।
নীলা খুব নীচু কণ্ঠে বলা শুরু করল।
“জানো, আমার বাবা আমার মা’কে খুব পেটাতো। অমানুষের মত পেটাতো। আমার মাও অনেক কাঁদত। একমাত্র ঐদিনই কাঁদত না, যেদিন মা অজ্ঞান হয়ে যেত। একদিন মার খেতে খেতে মা মরেই গেল। আমার মা ভালোবাসা পায় নি, ভালোবাসা দিতেও পারে নি। আমি ঠিক করলাম, ভালোবাসতে হবে আমার। ভালোবাসা পাব কিনা জানি না, তবে প্রাণভরে একজনকে ভালোবাসব।
ভালোবাসা কী- আমি কখনো দেখি নি। তাই জানতাম না, ভালোবাসা কী। ভালোবাসার কোন সংজ্ঞাও জানতাম না। অনেক কষ্টে নিজে নিজেই একটা সংজ্ঞা বানিয়ে নিলাম। আর সে সংজ্ঞা থেকেই তোমাকে আমি ভালোবেসেছি। তোমার কাহিনী আমি সবই জানি। মেয়েদের সাথে বিছানায় যাওয়া তোমার এক ধরণের হবি। সব জেনে-শুনেই আমি তোমার কাছে এসেছি, মন উজাড় করে ভালোবাসতে এসেছি। না, না! ভয় পেও না। তোমাকে বলব না আমার সাথে থাকতে- এমন পিছুটানে তোমায় আমি বাঁধব না, চিন্তা করো না। তুমি যাও। নতুন কারো খোঁজ করো। আমি তোমায় ভালোবাসতে এসেছিলাম একদিনের জন্য।
কিন্তু জানো, একটা সমস্যা হয়ে গেছে। ভালোবাসা আসলে একদিনের হয় না- এই ছোট্ট জিনিসটা আগে বুঝি নি। তোমাকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি সারা জীবনের জন্য। কেন হল, কীভাবে হল, কখন হল- জানি না। তবে, ভালো সত্যিকার অর্থেই বেসেিেছ, তুমি চলে গেলেও বাসব। কিন্তু তুমি এ নিয়ে কখনো চিন্তা করো না। আমি ভালো থাকব। আমার মা ভালোবাসতে পারে নি, আমি তো পেরেছি। আমি এ ভালোবাসা নিয়েই জীবন কাটাবো। আর দূর থেকে প্রার্থনা করব তোমার জন্য। তুমি অনেক ভালো থাকবে।”
নীলার কথায় কী ছিল সুমিত জানে না। শুধু জানে, কথাগুলো তার মজ্জা ভেদ করে তাকে নাড়া দিয়ে গেছে। এমন কথা সে আগে কখনো শোনে নি, জানে, শুনবেও না। কেউ তাকে এভাবে ভালোবাসে নি, বাসবেও না। ভালোবাসার এমন নিঃস্বার্থ রূপ সে আগে কখনো দেখে নি, জানত না, ভালোবাসা যে এমনটাও হতে পারে। সুমিতের ভেতরটা ওলট-পালট হয়ে যেতে লাগল।
নীলার গাল বেয়ে চোখের পানি পড়ছিল ধীরে ধীরে। সুমিতের সহ্য হচ্ছিল না সেই অশ্রূ। না! নীলা কাঁদতে পারে না, অন্তত সে বেঁচে থাকতে নয়।


নাঈম কিছুদিন হল এই মেসে উঠেছে। সে চাইলে রাতুলকে জানাতে পারত, ওর মেসেই উঠতে পারত। কিন্তু রাতুল-সুমিতের সাথে ওর কেমন যেন একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে- ঠিক কীভাবে, ও জানে না। ওরা স্কুল জীবনের অনেক ভালো বন্ধু। থ্রি মাস্কেটিয়ার্স- নাম দিয়েছিল নিজেদের। নাঈমের বাসার অবস্থা রাতুল, সুমিত- দু’জনেই জানত। কেন যেন ওর মনে হত- ওরা ওর প্রতি করুণা দেখায়। মমতার সৃষ্টি সবসময় ভালোবাসা থেকে হয় না। আর করুণা, সান্ত¦না- এ ব্যাপারগুলোকে নাঈম সবসময়ই প্রচ- ঘৃণা করে এসেছে। কাউকে সে সান্ত¦না দেয় না, কারোর কাছ থেকে নেয়ও না।
ওর মায়ের ব্যবহার চরম সীমা পেরিয়ে আরো অনেক দূরে চলে গিয়েছিল। অবস্থা শেষদিকে এমনটা দাঁড়িয়েছিল যে ওকে দেখলেই ক্ষেপে যেতেন। যখন-তখন মার দিতেন, আর তার সাথে চলত অশ্রাব্য যত গালাগাল। উপায় না দেখে ওর সৎ বাবাই শেষমেষ ওকে বললেন বাসা ছেড়ে দিতে। তবে বাসা ছেড়ে এলেও খরচ এখনো চলে সৎ বাবার টাকাতেই। যদিও টাকাটা নিতে খুবই লজ্জা লাগে নাঈমের, সেই সাথে চাপা একটা ক্ষোভও কোথায় যেন দানা বাঁধে।
নাঈম পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। সি.এ. করছে সে একটা প্রাইভেট ফার্মে। সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে পাশাপাশি অন্য কিছু করার শক্তি বা ধৈর্য্য- কোনটাই থাকে না। তারপরও একটা টিউশনি করে সে- হাজার তিনেক টাকা আসে সেখান থেকে। ফার্মটাও এখন কিছু টাকা দিচ্ছে। চেষ্টা শুধু সৎ বাবার কাছ থেকে সাহায্য না নেবার। সৎ বাবা ক’দিন পর কৃতিত্ব নেবে, তার টাকায় পড়াশোনা করে নাঈম মানুষ হয়েছে- এটা সে চায় না।
মন নাঈমের খারাপ হয় না। তার পোষা ময়নাটা মারা গেছে তিন মাস হল। বাসার কারোর কথা মনে পড়ে খারাপও লাগে না। কেবল ছোট ভাইটার কথা মনে পড়ে মাঝে মাঝে। নাহ! ভুল হল। মায়ের কথা মনে পড়ে সবসময়। এই মহিলা তাকে এত কষ্ট দিয়েছেন। তবু একটা বার যদি তাকে একবার বুকে জড়িয়ে ধরতেন, আর বলতেন, বাবা, আমাকে মাফ করে দিস, নাঈমের চেয়ে সুখী হয়তো এ পৃথিবীতে কেউ থাকত না। কিন্তু, এ সম্ভব নয়- নাঈম জানে। ¯্রষ্টার অস্তিত্বে সে বিশ্বাস করে না। এ জগতের কোন নাঈমেরই হয়তো স্রষ্টায় বিশ্বাস থাকার কথা নয়।
নাঈমের চোখে কিছু বেয়াড়া বাষ্প জমা হয়। তার সম্বিত ফেরে জামান সাহেবের কথায়। জামান সাহেব এই রুমেই আরেকটা বেডের বোর্ডার।
“কী নাঈম সাহেব? বাড়ির কথা মনে পড়ছে?”
“না তো। কখন এলেন আপনি?”
“এসেছি তো অনেকক্ষণ হয়। আপনার তো এদিকে খেয়ালই নেই।”
“হুম, একটা জিনিস নিয়ে চিন্তা করছিলাম।”
“নাঈম সাহেব, আপনার বয়স কম। এ বয়সে অনেক অদ্ভ’ত রকমের কিছু আবেগ থাকে। সেই আবেগের ভার সবাই সহ্য করতে পারে না। আর যারা পারে না, তাদের জন্য আমার কাছে ওষুধ আছে।”
“কী ওষুধ?”
“আপনি চলেন আমার সাথে।”
“এত রাতে? কোথায়?”
“আহ! চলেন তো। গেলেই দেখতে পাবেন। আর শোনেন নাঈম সাহেব, আমি আপনার খারাপ চাই না- এটা মনে রাখবেন।”
নাঈম জামান সাহেবের পেছন পেছন হাঁটছে। রাস্তা-ঘাট খুব একটা সুবিধের মনে হচ্ছে না। চারপাশে ময়লা-আবর্জনা, আর কিছু উন্মাদের রক্ত-জল-করা বিশ্রি হাসি।
ওরা গিয়ে পৌঁছল একটা ঘরের সামনে। আধো-আলো, আধো-অন্ধকার সে ঘরে। ভুরভুর করে বিকট গন্ধ বেরোচ্ছে। কয়েকটি ছেলে নাকের সামনে টিউবের মতন কী যেন একটা ধরছে, কয়েকজন আবার একটা কাগজের ওপর কিছু একটা রেখে নিচ থেকে আগুন জ্বেলে উত্তাপ দেবার চেষ্টা করছে, কেউ কেউ শুয়ে এদিক ওদিক করছে আর অসংলগ্ন বুলি আওড়াচ্ছে। আর একজন অল্পবয়েসী ছেলে শুয়ে আছে, নাঈমের দিকে ফিরে, কোন কথা বলছে না, নড়ছেও না।
ছেলেটিকে নাঈম চিনতে পারল।


“হ্যালো রাতুল?”
“হ্যাঁ। কে বলছেন?”
“আমি নাঈম।”
রাতুলের হতচকিত ভাব কাটতে বেশ কিছুক্ষণ লাগল। নাঈমের সাথে যোগাযোগ নেই বহু বছর হল। আর এত রাতে সে ফোন দিয়েছে- ব্যাপারটা অস্বাভাবিকই বটে।
“বল রাতুল। কোন সমস্যা? এত রাতে ফোন দিলি যে?”
“তুই এই মুহূর্তে আয়শা মেমোরিয়ালে আসতে পারবি? রানা, তোর চাচাত ভাই, ওর একটা সমস্যা হয়েছে।”
“কী হয়েছে ওর?” রাতুলের কণ্ঠে উদ্বিগ্নতা শোনা গেল।
“তুই আয়। তারপর বলছি। আর এটা আমার নাম্বার। এসে এই নাম্বারে ফোন দিস।”
১০
রাতুল মিথিলাকে নিয়ে এসেছে আয়শা মেমোরিয়াল হসপিটালে। গত রাতে রানাকে এখানে ভর্তি করিয়েছে নাঈম। বড় চাচার কাছে মিথ্যে বলতে হয়েছে। তিনি শুনলে হয়তো সহ্য করতে পারতেন না। রাতুলই বিশ্বাস করতে পারে নি প্রথমটায়। রানাকে নাঈম খুঁজে পেয়েছে একটা বস্তিতে, ড্রাগস নিয়ে সে অচেতন হয়ে পড়ে ছিল। ডাক্তাররা বলছেন, অবস্থা অনেক সিরিয়াস। এডিকশান অনেক দূর গড়িয়েছে। এখন আপাতত সুস্থ আছে, তবে কোন মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করানো ছাড়া না কি আর উপায় নেই।
মিথিলা রাতুলের বুকে আছড়ে পড়ে আর্তস্বরে কাঁদতে শুরু করল।
“রাতুল, এ আমাদের কী হল? এমনটা তো হবার কথা ছিল না। রানা তো এমন ছেলে নয়। ও তো পড়াশোনায় ডুবে থাকা ছেলে। ও কেন এরকম হয়ে যাবে?”
রাতুল সান্ত¦না দেবার বৃথা চেষ্টা করে। পরিবারের এরূপ আশা যদি কেউ ধ্বংস হয়ে যেতে দেখে, সে শত চেষ্টা করলেও স্বাভাবিক থাকতে পারে না। মানুষের জীবনে আশা ছাড়া আর আছেই বা কী?
রানাকে রিলিজ করে দেয়া হল কিছুক্ষণ বাদেই। রানা আর মিথিলাকে নিয়ে রাতুল বড় চাচার বাসার দিকে রওনা হল। পথে রানা একটা কথাও বলল না।
আজকে অফিসে আর যাওয়া হল না। এত ঝামেলার মাঝেও শায়লা কী রঙের শাড়ি পরে এসেছে- এ চিন্তাটা রাতুলের মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল।

১১
রাত ৯টা বাজে। রাতুল নাঈমের মেসে বসে আছে। নাঈম কোন কথা বলছে না। রাতুলের মনে অনেক প্রশ্ন। কিন্তু সেগুলো সে নাঈমকে জিজ্ঞেস করতে পারছে না।
“তো, কবে উঠলি এখানে?”
“এই তো, মাসখানেক হল।”
“আমাকে জানাতে তো পারতি।”
“তোকে জানিয়ে আর কী হবে?”
“মানে?” রাতুল কিছুটা ক্ষেপে গেল। যদিও সে নিশ্চিত নয়, নাঈমের ওপর সেই অধিকারটুকু তার আর আছে কি না।
“মানে, তুই এমনিতেই তো কত ঝামেলায় থাকিস, আবার আমার ঝামেলা-”
“আমি ঝামেলায় থাকি সেটা তুই জানলি কী করে? তুই কোন যোগাযোগ রেখেছিস আমার সাথে?”
“যোগাযোগ না রাখলে কি বোঝা যায় না? আমি তোকে চিনি না?”
“না, তুই চিনিস না। চিনলে এতকাল দূরে সরিয়ে রাখতি না।”
রাতুল উঠে পড়ল। সে দরজার দিকে পা বাড়ালো।
“দেখ নাঈম, আমি তোকে কিছু বলব না, তুইও আমাকে বলবি না। কিন্তু এটা কখনো মনে করিস না যে দুনিয়ায় তুইই একমাত্র মানুষ, যার দুঃখ-কষ্ট আছে। আমরা কেউই পাথরে-গড়া মূর্তি না। তোর ছোটবেলার বন্ধু আমি। আমি সবই বুঝি। বুঝিস না কেবল তুই।”
“রাতুল, তুই ভুল বুঝছিস-”
“আমার কথা তো বাদই দে। তুই সুমিতের সাথেও কোন কন্টাক্ট করেছিস কখনো? তোর বিপদ দেখে আমরা কোনদিন আকাশ ফাটিয়ে হাসি নি, বরং তোকে সাপোর্ট করেছি। আর আমাদেরকেই তুই পর করে দিলি?”
রাতুল ঝড়ের বেগে বেরিয়ে এল।

১২
নাঈম মাথা নিচু করে কথা শুনছে। রাতুল আর সুমিত- দু’জন মিলে তাকে ইচ্ছেমত বকা-ঝকা করছে। করবেই তো, তাদের ঐ অধিকার আছে। নাঈম জানে, এটা তার প্রাপ্য। প্রাণের বন্ধুদের সে ভুল বুঝেছে। এত কষ্টের মাঝেও তাদেরকে কিছু জানাতে যায় নি সে।
“আচ্ছা, যা হবার হয়েছে। এখন থেকে মানুষ হয়ে যা। আর কেউ তোর পাশে থাকুক আর নাই থাকুক, আমরা তোর পাশে সবসময় থাকব। তোর নিজের জন্য হলেও এই অধমদের সাথে একটু দেখা-সাক্ষাৎ করিস।” সুমিত আবহাওয়া প্রশমিত করার চেষ্টা করল।
এরপর অনেক কথা হল তাদের মধ্যে। কে কী করেছে এই কয়েক বছরে, কে কেমন আছে, কার কী ইচ্ছে কী করার- আড্ডায় উঠে এল। ঠিক হল রাতুলের মেসে সপ্তাহে অন্তত একদিন ওরা দেখা করবে।
“কী রে সুমিত, আমার রুমে সময় কেমন কাটল ওদিন?”
“বন্ধুসকল, আমি একটা বিপদে পড়ে গেছি। আমার তো মনে হয় মোহব্বতই হয়ে গেল রে!”
“সে কী রে? প্রেম, ভালোবাসা, ইশক, লভ?” নাঈম টিপ্পনী কাটল!
“হ্যাঁ, জানি, আমার মতন ছেলের জীবনে এই ভালোবাসা মানায় না। আমি ঘুরব, ফিরব, মেয়ে ধরব, ছাড়ব- আমার স্বভাব তো এটাই। কিন্তু কী করে যে এই ভালোবাসা নামের বিপদটায় পড়ে গেলাম? আমি টের পাচ্ছিলাম, আমার বিপদ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু ঠেকাতে পারছিলাম না, বিশ্বাস কর।”
“এসব বিপদ বিপদ- কী লাগিয়ে রেখেছিস। তোর সাত-পুরুষের কপাল, অবশেষে তোর একটা গতি হচ্ছে।” রাতুল খেঁকিয়ে উঠল।
“হ্যাঁ রাতুল। আমি ভালোবেসে ফেলেছি। জানিস, নীলা খুবই সহজ-সরল একটা মেয়ে। ও কোনো জটিল ইকুয়েশনে লাইফ লিড করে না। যেমন সরল ও, তেমনি সরল ওর ভালোবাসা। এভাবে আমি কাউকে কখনো ভালোবাসতে দেখি নি। জানিস, ও আমার কাছ থেকে কিছুই চায় না। শুধু ভালোবাসা দিয়েই যায়, দিয়েই যায়। একে ছাড়া আমি অন্য কাউকে নিয়ে জীবন কাটাতে পারব না। নীলাই আমার সব। নিঃশ্বাসের প্রতিটি কণায় আমার এখন নীলা জড়িয়ে আছে।”
“বাহ! ভালোই তো! তোর মুখে এসব কথা শুনতে যদিও অদ্ভ’ত লাগছে খুব। তারপরও, বেশ ভালো লাগছে যে তোর জীবনে ভালোবাসা এসেছে।” নাঈম বলে উঠল।
“হ্যাঁ। আল্লাহ ওর দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছেন। ওর একটা গতি তো হল-”
“রাতুল, এসব ঈশ্বর-টিশ্বরের কোন কীর্তি নয়। আমার নিজের যোগ্যতায় আজ এতদূর এসেছি, নীলাকে পেয়েছি। তোরা কী, হ্যাঁ? কোন ভালো কিছু হলেও ঈশ্বরের নাম, আর খারাপ কিছু হলে তো কথাই নেই।”
সুমিত কোনোদিন ঈশ্বরে বিশ্বাস করে নি। হয়তো করবেও না। যার বাবার অঢেল টাকা থাকে, তার এসব উপাসনা-ইবাদত না করলেও চলে। কেননা, ঈশ্বরের কাছে তখন কিছু প্রার্থনা করবার দরকার পড়ে না, যা চাইতে হয়, ধনী পিতার কাছে গিয়ে বললেই চলে। তার জীবন শুরু থেকেই অনেক সুন্দর, অনেক তৃপ্তিদায়ক।
“সুমিত, এভাবে চিন্তা করিস না, ভাই। ¯্রষ্টা আছেন, তাঁকে বিশ্বাস করতে শেখ্, মান্য র্ক তাঁকে। নইলে কে জানে, হয়তো ভবিষ্যতে পস্তাতে হবে তোকে।” রাতুল চিন্তিত কণ্ঠে বলল।

১৩
মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। জানালার কাচগুলো পর্যন্ত ঘোলা হয়ে গিয়েছে। অফিসে অবশ্য খুব বেশি কেউ নেই। রাতুল আটকা পড়ে গেছে এই বৃষ্টিতে। আজকে বড়চাচার বাসায় যাবার কথা ছিল। যাওয়া হল না। তবে তার খুব একটা বিরক্ত লাগছে না। কারণ, শায়লাও তারই মতন আটকে আছে। মাঝে মাঝে আড়চোখে দেখতে খারাপ লাগে না।
বৃষ্টি থামল বেশ খানিকটা সময় নিয়েই। কিন্তু গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি তাও পড়ছিল। রাতুল বের হয়ে পড়ল।
“এই যে রাতুল সাহেব, আপনি কোন রাস্তা দিয়ে যাবেন?”
রাতুলের হৃদপি- সহসা থমকে দাঁড়ালো। শায়লা তার পিছু পিছু রাস্তায় নেমে এসেছে।
“আমি মালিবাগের দিকে যাচ্ছিলাম। আপনি?”
“আরে, আমিও তো একই দিকে যাব! চলুন না, এক সঙ্গে যাওয়া যাক, যদি আপনার কোন সমস্যা না থাকে।”
“আমার কোন সমস্যা থাকবার প্রশ্নই ওঠে না! চলুন।”
রাতুলের আরাধ্য নারী তার সাথে হাঁটছে, কথা বলছে, খিলখিল করে হেসে উঠছে। তার চুড়ির রিনিঝিনি শব্দে রাতুল পুলক অনুভব করছে। মনে হচ্ছে যেন স্বর্গ থেকে কোন দেবী তাকে আলোকের ঝর্ণাধারার ধুইয়ে দিচ্ছে।
“তারপর, রাতুল, বলুন, আপনার ফ্যামিলিতে কে কে আছেন? এতদিন ধরে একসাথে কাজ করছি আমরা, অথচ নিজেদের সম্পর্কে কিছুই জানি না। কী বিশ্রি ব্যাপার, তাই না?”
“আমার বাবা-মা দু’জনেই মারা গেছেন আমি যখন খুব ছোট। রোড এক্সিডেন্ট। অনেক ছোটবেলার স্মৃতি, কিন্তু এখনো যেন সেই দৃশ্যটা আমার চোখের সামনে ভাসে। মা আমাকে স্কুল থেকে নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। কিন্তু রাস্তায় অনেক গাড়ির চাপ ছিল, পার হতে পারছিলেন না। বাবা ছিলেন রাস্তার ওপারে। তিনি আমাদের দাঁড়াতে বলে নিজে আমাদের কাছে আসতে লাগলেন। রাস্তাটা পার হবার সময় হঠাৎ একটা লোকাল বাস এসে বাবাকে প্রায় উড়িয়ে নিয়ে যায়। মা ঘটনার আকস্মিকতায় কী করবেন কিছু বুঝে উঠতে না পেরে আমাকে রেখেই বাবার অচেতন দেহের দিকে দৌড় দেন। ব্যস। আরেকটা প্রাইভেট কার এসে মাকেও চাপা দিয়ে যায়।”
“ওহ! আই এ্যম সো সরি।”
“নো নো, ডোন্ট বি। ইটস অলরাইট। তারপর থেকে বড়চাচার বাসায় আমি মানুষ। অনেক অভাবে, কিন্তু অনেক ভালোবাসায় আমি বড় হয়েছি। এখন একটা মেসে থাকি। চাকরি করি, দু’পয়সা রোজগার হয়, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিই- জীবন চলে যায় কোন রকমে। তারপর? আপনার কথা বলুন কিছু।”
“আমি? মা নেই। সংসারে প্রাণী কেবল বাবা আর আমি। বাবার লাংস ফেইলড। প্রতি মাসে একবার করে ডায়ালাইসিস করাতে হয়। চাকরিটা কোনোমতে সেই খরচ বিয়ার করে। এই তো, আর কী!”
“বারে, দু’লাইনেই শেষ? বিয়ে-থা করেছেন, নাকি করবেন?”
“হা হা হা! বিয়ে? সে অনেক দেরি!”
“কেন? এত সুন্দরী মেয়েদের এরকম সিঙ্গেল থাকতে নেই।”
“কেন? সিঙ্গেল থাকলে সমস্যা কী?”
“না, মানে, সিঙ্গেল পুরুষরা অনেক স্বপ্ন দেখে ফেলে তো, তাই!”
“হা হা! আপনি কথাও পারেন বটে!!”
রাতুল সে রাতে অনেকখানি আনন্দ নিয়ে ঘুমোতে গেল। হায় মানুষ, সে যদি নিজের ভবিষ্যৎটা দেখতে পেত!



১৪
নাঈমের সৎ বাবা নাঈমকে নিয়ে এসেছেন পি.জি.তে। নাঈমের মা খুবই অসুস্থ। ব্রেন টিউমার। হঠাৎই ধরা পড়ল। ডাক্তাররা বলছেন, একদম শেষ পর্যায়ে আছেন তিনি। অপারেশন করালে বেঁচে যাবার সম্ভাবনা আছে, তবে খুবই কম, না করালে সর্বোচ্চ দুই মাস।
নাঈম তার ছোট ভাইটাকে জড়িয়ে ধরে বেঞ্চে বসে আছে। তার মায়ের জ্ঞান ফেরে নি কাল রাত থেকে। তার সৎ বাবা অনেক দৌড়াদৌড়ি করছেন। নাঈমের মাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাবেন বলে ঠিক করেছেন। এ জন্য নানা জায়গায় কথা বলছেন। বিদেশের কোন ডাক্তারের সাথেও নাকি যোগাযোগ করেছেন।
রাতুল আর সুমিতও চলে এসেছে নাঈমের ফোন পেয়ে। চুপচাপ বসে আছে সবাই। কোনো কথা বলছে না। সুমিতই প্রথম নীরবতা ভাঙল।
“আন্টির সাথে দেখা হয়েছে তোর?”
“মা তো আই.সি.ইউ তে। দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখেছি।”
“আন্টির সাথে তোর কথা বলা উচিত।”
“কেন? কী কথা বলব আমি?”
“জানি না, কী কথা বলবি। শুধু মনে হচ্ছে, কথা বলতে হবে। না হলে হয় না। এ কাহিনীর একটা উপসংহার থাকবে না?”
“কী বলছিস যা তা! কীসের কাহিনী? কীসের উপসংহার?”
“সুমিত, চুপ র্ক।” রাতুল বলে উঠল। “নাঈম, চিন্তা করিস না। দেখবি, আন্টি ঠিক সুস্থ হয়ে উঠবেন। সব ঠিক হয়ে যাবে।”
রাত বেশি হয়ে যাচ্ছে। রাতুল আর সুমিত উঠে দাঁড়াল।
নাঈম ঘুমোতে পারছিল না। ওর ভাইটা ওর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। নাঈমের বারবার মনে পড়ছিল সুমিতের কথাগুলো। নাঈম উঠে ওর মায়ের কেবিনের দিকে রওনা হল।
মায়ের জ্ঞান এখনো ফেরে নি। আগের থেকেও অনেক সুন্দরী হয়ে গেছেন তিনি। নাঈম কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল তার মায়ের দিকে। তারপর সেখান থেকে বের হতে লাগল, কিন্তু আচমকা তার মায়ের গলার আওয়াজ শুনতে পেল সে!
“নাঈম, বাবা, কাছে আয় আমার।”
নাঈম দো’টানায় পড়ে গেল। সে বুঝতে পারছে না সে কী করবে। হয়তো তার মা আবার জান্তব হয়ে যাবেন তাকে কাছে পেলে, আবার কে জানে, হয়তো সারা জীবন সে যে ভালোবাসা খুঁজছিল তার মায়ের কাছে, আজ তাই পেয়ে যাবে।
নাঈম গুটি গুটি পায়ে তার মায়ের কাছে গেল।
“বস, আমার পাশে, এখানে বস।”
নাঈম তার মায়ের বেডে বসল।
“তুই আমার ওপর অনেক রেগে আছিস, তাই না?” নাঈম কোন কথা বলল না।
“আমি জানি, তুই রেগে আছিস, অনেক রেগে আছিস। কী করব বল? তোকে দেখলেই আমার তোর বাবার কথা মনে হত। তোর সেই বাবা, যে আমার কোলে সাত মাসের একটা ফুটফুটে বাচ্চা রেখে চলে গিয়েছিল। আমার শুধু মনে হত, তোর দেহেও ঐ একই রক্ত বইছে। তোকে দেখলেই কেমন যেন উন্মাদ হয়ে যেতাম আমি। কোনো হুঁশ-জ্ঞান থাকত না আমার ভেতরে। তোর বাবার কথা মনে পড়লেই আমার হাতটা নিশপিশ করত, খুন করতে মন চাইত ঐ নিষ্ঠুর মানুষটাকে। আমি তোকে তার জন্য এত শাস্তি দিয়েছি।”
হঠাৎ করে নাঈমের মা হাউমাউ করে বাচ্চাদের মত কেঁদে উঠলেন।
“বাবা, আমাকে মাফ করে দে। তুই আমার সন্তান। আমার রক্তে-মাংসে গড়া তুই। নয় মাস আমার পেটে তোকে আমি ধরেছি, তোকে রক্ষা করা ছিল আমার দায়িত্ব। আর তা না করে আমি অত্যাচার করেছি তোর ওপর। প্রতিনিয়ত তোকে মার-ধোর করেছি ইচ্ছেমত। আমার কোনদিন প্রায়শ্চিত্ত হবে না রে, বাবা। আমাকে তুই মাফ করে দিস।”
নাঈম তার চোখের জল ধরে রাখতে পারল না। বহুদিনের জমে থাকা অভিমান আজ এক লহমায় ভালোবাসার উষ্ণতায় গলতে শুরু করল। নাঈম সেই ছোটবেলার মতন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করল।
“মা, তোমার ওপর আমার কোন রাগ নেই, মা। তুমি আজকে আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছো, পৃথিবীতে কোন সন্তানই তার মায়ের কাছ থেকে কোনোদিন সেই ভালোবাসা পাবে না। মা, তুমি আমাকে মেরেছো, পিটিয়েছো, তবু তোমাকে কখনো এক মুহূর্তের জন্যও আমি ঘৃণা করতে পারি নি। আমি তোমার ওপর রাগ করি নি, মা। তুমি শুধু আমাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে রাখ।”
ক্ষুধার্ত শ্বাপদের ভয়ে মা যেমন তার বাচ্চাকে জড়িয়ে রাখেন, নাঈমকে তার মা তেমনি অনেকক্ষণ বুকে আগলে রাখলেন। তার ক্ষণিক বাদে তিনি আবারো ঘুমিয়ে পড়লেন।
নাঈম সুমিতকে ফোন করল।
“সুমিত, আমি আমার মা’কে ফিরে পেয়েছি রে। আমার মা’কে আমি পেয়েছি। আমার মা আমাকে আদর করেছেন, বুকে জড়িয়ে ধরেছেন। আমার মা ফিরে এসেছেন।”
নাঈমের মা সেই ঘুম থেকে আর কোনদিন ওঠেন নি।



১৫
রাতুলের তাড়া ছিল আজ। বড় চাচার বাসায় যেতে হবে। মিথিলাকে দেখতে ছেলেপক্ষ আসবে। সম্বন্ধটা না কি খুবই ভালো। ছেলে ইংল্যান্ডে সেটেলড। ভালোই হয়তো কামাই। রাতুল অবশ্য বেশি কিছু জানে না। বড় চাচার পাত্র পছন্দ হয়েছে- সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি রাতুলকে খুব করে বলে দিয়েছেন সময়মতো তাঁর বাসায় চলে যেতে। রাতুল তড়িঘড়ি করছিল ঠিকই, কিন্তু বের হতে তারপরও দেরি হয়ে গেল।
নিচে নেমে পার্কিংয়ের দিকে তার চোখ গেল। তার বস্রে পাজেরোতে বস্ এবং আরেকটি মেয়ে ঘনিষ্ঠভাবে বসে আছেন। তাঁরা খুব করে জড়াজড়ি করছেন। বাইরের দিকে তাঁদের তেমন একটা খেয়াল নেই, হয়তো আলো কিছুটা কম বলে নিশ্চিন্ত তাঁরা। মেয়েটাকে দূর থেকে কেমন যেন চেনা চেনা মনে হল রাতুলের। সে আরেকটু এগিয়ে গেল। হঠাৎই মেয়েটার চেহারা স্পষ্ট হয়ে উঠল। মেয়েটা শায়লা।
রাতুলের ওপর পুরো পৃথিবী নিমেষের মাঝেই ভেঙে পড়ল। অপ্রকৃতিস্থের মত ওখান থেকে বেরিয়ে এল রাতুল।

১৬
“কী রে, তুই খুশি তো?” মিথিলাকে জিজ্ঞেস করল রাতুল।
“কেন খুশি হব না? পাত্র ভালো, আমাকেও তাদের খুব পছন্দ, বাবা, তুমি- সবাই খুব খুশি। আমার খুশি না হবার কোন কারণ তুমি দেখাতে পার?” অন্যদিকে ঘুরে মিথিলা জবাব দিল।
রাতুল জানে মিথিলা তাকে পছন্দ করে। তারপরও এ প্রশ্ন করা রাতুলের সাজে না। রাতুল নিজেই জানে না যে সে কী শুনতে চায় মিথিলার কাছ থেকে। মানবমনের এ বিচিত্র খেলা। রাতুল জানে, এ কখনো সম্ভব নয়, তার নিজেরও তেমন কোন ইচ্ছে নেই এ ব্যাপারে। তারপরও সে বেমক্কা প্রশ্ন করে বসে। মিথিলাও বুঝতে পারে রাতুল ব্যাপারটা জানে। সে শুধু বোঝে না যে রাতুল সব জেনে, সব বুঝেও কেন কিছু বলে না। তার বুকে জমে থাকা অভিমানের পাহাড় সহসা কেঁপে ওঠে।
“মিথি, তুই কিছু বলতে চাইলে আমায় বলতে পারিস। তোর যদি অন্য কোন ইচ্ছে, অন্য কোন স্বপ্ন থেকে থাকে, আমাকে তুই বল।”
মিথিলা ওখান থেকে চলে আসতে চাইল। রাতুল মিথিলার হাত টেনে ধরল। এক হ্যাঁচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে এল মিথিলাকে।
“মিথি, আমার চোখের দিকে তাকা। বল্ আমাকে, কী হয়েছে তোর। কেন এমন মন খারাপ করে আছিস?” রাতুল কেমন যেন ব্যাকুল হয়ে উঠল। মিথিলার কথাগুলো আজ তার শুনতেই হবে।
মিথিলা ডুকরে কেঁদে উঠল। সে রাতুলকে জড়িয়ে ধরল শক্ত করে।
“তুমি কি কিছুই বোঝো না? সেই ছোটবেলা থেকে আমি তোমাকে এক মুহূর্তের জন্য চোখের আড়াল হতে দিতাম না। তোমাকে ছাড়া খেতে বসতাম না। জানি না, ঠিক কবে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। কিন্তু বুঝতে পেরেছি যেদিন তুমি এই বাসা ছেড়ে মেসে গিয়ে উঠলে। তোমাকে না দেখতে পেরে আমার প্রাণ হাঁপিয়ে উঠত। কত যে কেঁদেছি তোমার জন্য, তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। তোমার যেদিন আসার কথা থাকত, সেদিন আমি অনেক সাজতাম, অপেক্ষা করতাম কখন তুমি এসে দরজার কড়া নাড়বে, শুধু তোমার জন্য। তোমার জন্য এ অপেক্ষা আমি আজীবন করতে পারব, কিন্তু আমি অন্য কারো হতে পারব না। তোমাকে সেই ছোটবেলা থেকেই চেয়েছি, এখনও চাই, তোমাকে ছাড়া এ পৃথিবীতে আমি আর কিছু কখনো চাইবও না।”
রাতুলের বুকের ভেতরটা সিক্ত হয়ে উঠল। মিথিলাকে আরো শক্ত করে সে জড়িয়ে ধরল। খুব করে ভালোবাসতে মন চাইল তাকে। কোমল স্বরে অনেকগুলো কথা বলতে চাইল সে মিথিলাকে। এমন সময় পাশের ঘর থেকে হুটোপুটির আওয়াজ এল।
রাতুল দৌড়ে গিয়ে দেখে তার বড় চাচা মাটিতে পড়ে আছেন। রাতুলকে জ্ঞান হারাবার আগে শুধু একটা কথাই তিনি বললেন। মিথিলা অনেক সুখে থাকবে এ ছেলের সাথে। রাতুল অনেক কষ্টে এ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে একটা বেবিট্যাক্সিতে করে বড় চাচার নিথর দেহটাকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করাল। ডাক্তাররা বললেন, মেজর স্ট্রোক। অবস্থা সঙীন।
রাত আড়াইটার দিকে বড় চাচাকে মৃত ঘোষণা করা হল।

১৭
নীলা হেঁটে হেঁটে তার বাসায় ফিরছে। ক্লাসের পরে একটা পার্ট টাইম জব করে সে। সুমিত বারবার তাকে বলেছে, এগুলোর কোন দরকারই নেই। সুমিতের বাবার অসেক টাকা। খুব সহজেই নীলার জীবন সে টাকায় চলে যাবে। কিন্তু নীলা সে টাকা নিতে চায় নি। সুমিত তাকে ভালোবাসে ঠিক, তাই বলে তার কাছ থেকে সে টাকা নিতে পারে না। নিজের বলে কী থাকল তবে? নীলা তাই কষ্ট করে হলেও এ চাকরিটা করছে, জীবন চলে যাচ্ছে কোনোমতে।
নীলার বাসায় যাবার পথে একটা গলি পড়ে। এ গলিতে সবসময় তিনটা ছেলে বসে থাকে। নীলা প্রতিদিন এ জনশূন্য গলি দিয়ে যাবার সময় ছেলে তিনটার অশালীন মন্তব্য সহ্য করে- কখনো তার বুক নিয়ে, কখনোবা তার নিতম্ব নিয়ে। নীলার প্রচ- ক্রোধ জাগে। মেয়ে হয়ে জন্মেছে বলে তো কোন পাপ সে করে নি। তবে কেন এগুলো নিয়ে তার বাঁচতে হবে। তার দেহে যেদিন থেকে বয়ঃসন্ধির পরিবর্তনগুলো আসতে শুরু করেছে, সেদিন থেকেই পুরুষ নামক কতগুলো জন্তুর নজরের শিকার হচ্ছে সে অবিরত। এখন আর এগুলো তেমন গায়ে লাগে না তার।
আজও গলিটায় ছেলে তিনটা দাঁড়িয়ে আছে। নীলার হয়তো বুঝতে ভুল হল, কিন্তু আজ ছেলে তিনটার হাবভাব একটু অন্য রকম লাগছে। আজ ওরা কোনো খারাপ কথা বলছে না। নীলা ওদেরকে পার করে চলে আসল। ওরাও নীলার পেছন পেছন হাঁটতে শুরু করল। নীলার মনে অজানা এক আতঙ্ক এসে ভর করল। সে তার হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিল।
ওই তিনজনের মাঝে হঠাৎ দু’জন দৌড়ে এল নীলার দিকে। নীলা চিৎকার করবার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে ওর মুখ একজন চেপে ধরল, আরেকজন তাকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিল। রাস্তার পাশেই এক বাড়ির দরজায় তাকে নিয়ে ওরা ঢুকে পড়ল।
নীলার জীবনের ভয়াবহতম দুঃস্বপ্নটিও বোধ হয় এতটা নৃশংস ছিল না।

১৮
রাতুল ইদানিং কেমন যেন হয়ে গেছে। অফিসের কারো সাথে তেমন একটা কথা বলে না। সুবোধ বালকের মত অফিসে এসে ঢোকে, খাতার ওপর ঘাড় গুঁজে হিসেব কষে, কাজ শেষ করে মেসে চলে যায়। রাতুলের জীবন তাকে বিশাল বড় এক ধোঁকা দিয়েছে। শায়লার অবৈধ প্রেম, মিথিলার অবাধ্য ভালোবাসা, বড় চাচার হুট করে চলে যাওয়া- তাকে কষ্ট-সাগরের তীরে এনে ফেলেছে। তার ওপর বড় চাচা যেদিন মারা গেলেন, রানা কোথায় যেন নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে। রাতুল কম চেষ্টা করে নি, তারপরও তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
সুমিত আর নাঈমও কোথায় যেন বেমালুম উবে গেছে। রাতুল দিন দিন ভেঙে পড়ছে। তাকে সামলাবার কেউই এখন তার পাশে আর নেই।
সন্ধ্যে হয়ে গেছে। অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ল রাতুল।
“রাতুল, কোথায় যাচ্ছেন আপনি?” শায়লার গলা শোনা গেল। রাতুল বেশ অবাক হয়ে ঘুরে তাকাল।
“এই তো, মেসের দিকে।”
“আপনার হয়েছে কী, বলুন তো? আপনি কারো সাথে আর তেমন মেশেন না। এমন কি আমার সাথেও কথা-বার্তা বলেন না।”
রাতুল হাসল। “আপনার সাথে কথা বলতে হবে, এমন কোন ডিল হয়েছিল কি আমাদের মাঝে?”
“না, কোন ডিল থেকে তো আপনাকে কথা বলতে বলি নি। আপনি কি কষ্টে আছেন খুব?”
“দেখুন শায়লা, কষ্টের অনেক রং। সবক’টা রং সবার চোখে ধরা পড়ে না। তাই আমার কষ্টগুলো আমি চাইলেও আপনাকে দেখাতে পারব না।”
“কী হয়েছে আপনার বলুন তো?”
রাতুল অনেকক্ষণ ধরে নিজেকে আটকে রেখেছিল। কিন্তু বাঁধ ভেঙে পড়ছিল যেন ক্রমশই।
“আপনার জীবনটা অনেক সুন্দর। সেখানে কেন আমাকে টানছেন শুধু শুধু?”
“কে বলেছে আমার জীবনটা সুন্দর?”
“ভালো চাকরি করেন, বেতনও ভালোই পান। ঘরে অসুস্থ বাবা আছেন, তো কী হয়েছে? বসের সাথে প্রেম করতে তো বাধা দিচ্ছে না কেউ-”
“কী বললেন আপনি? বসের সাথে আমার-”
“ন্যাকামি করার কোন দরকার নেই। আপনাকে আমি দেখেছি, পার্কিং লটে, বসের গাড়িতে। দিন-ক্ষণও আমি বলে দিতে পারব যদি শুনতে চান।”
শায়লার মুখ লাল হয়ে উঠল। সে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে ফেলল চকিতেই। রাতুল দেখতে পাচ্ছিল না, কিন্তু শায়লা যে কাঁদতে শুরু করেছে- এটা তার বুঝতে বাকি রইল না। এসব দেখানো সভ্যতা তার অসহ্য লাগে। পরকীয়া করার সময় কোন পাপবোধ আসে না, ধরা পড়ে গেলে কান্নার প্রলেপ দিয়ে এরা ভদ্র সাজতে চায়। রাতুল তার কান্না থামানোর কোন চেষ্টাই করল না।
“আপনার কান্না আমার ভেতরে কোন করুণা তৈরি করতে পারছে না। দুঃখিত আমি। আপনার কান্না দেখে আমি আপনার মাথায় হাত বুলিয়েও দিতে যাব না। হয়তো নিতান্তই দেখানোর জন্য কাঁদছেন। আপনার প্রতি কোন মায়া, কোন মমতাও আমি বোধ করছি না। রিয়েলি সরি।”
“আপনার কাছ থেকে আমি কোন মায়া, করুণা চাই না। শুধু কিছু কথা বলতে চাই, আপনার সেগুলো জানা দরকার।
আমার বাবা মারা গেছেন এক মাস হল। তখন আমার বাবা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। অপারেশনের টাকা আমার কাছে ছিল না। কত আত্মীয়ের বাসায় গেলাম। দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি একটু সাহায্যের জন্য, কিন্তু কেউই ফিরে তাকায় নি আমার দিকে। আমার একটা রাস্তাই খোলা ছিল। আমার বাবাকে বাঁচাতে আমি সব কিছু করতে পারতাম, করেছিও। বাবাকে আমি বাঁচাতে পারি নি এত কিছুর পরেও। উল্টো আমি এখন বসের হেরেমের রক্ষিতা হয়ে গেছি। এ ছাড়া উপায়ও ছিল না। নইলে আমার স্ক্যান্ডাল এতদিনে ইন্টারনেটে চলেই আসত। আপনারা কী বলে ডাকেন আমায়? ‘অফিস-স্লাট’? এই হল একজন অফিস-স্লাটের জন্মের ইতিকথা।
আমি বুঝতে পারছিলাম, আপনি জেনে গেছেন ব্যাপারটা। লজ্জায় কথা বলতে পারতাম না আপনার সাথে। আজ সেধে কথা বলতে আসলাম কেন জানেন? আমি এ চাকরিটা ছেড়ে দিচ্ছি। আসলে এ শহরই ছেড়ে দিচ্ছি। চলে যাব এমন কোন জায়গায়, যেখানে পুরোনো স্মৃতিগুলো দগদগে ঘায়ের মতন আমার মনে আর জ্বালা ধরাবে না।”
রাতুল থমকে গেল। তার চিন্তার ¯্রােত উল্টো দিকে প্রবাহিত হতে শুরু করল। তার হৃদয়ের যে কুঠুরিতে ঘৃণার জন্ম হয়েছিল, সেখানেই এখন জায়গা করে নিল অচেনা কোন মায়া। তার কণ্ঠস্বরের রূঢ়তা দূর হয়ে কোমলতা স্থান পেল।
“তার মানে আপনি পালাচ্ছেন? কিনÍু পালিয়ে যাবেন কোথায়? যে বলয়ে আপনি ঘুরপাক খাচ্ছেন, এর থেকে বের হবার কোনই উপায় নেই। কোনদিনও এর থেকে নিস্তার পাবেন না। আপনি যে শান্তির খোঁজে যাচ্ছেন, সেটি আলেয়ামাত্র।”
শায়লার হাসি পেল। হাতের অপর পাশ দিয়ে ছোখ মুছে বলল-
“হয়তো আপনার কথাই ঠিক। কিনÍু ভালোবাসার মানুষটির চোখদু’টো তো অন্তত রোজ রোজ দেখতে হবে না, যে চোখে ভালোবাসার বদলে ভীড় করে থাকে ঘৃণা, প্রতিহিংসা। আমি রিজাইন লেটার দিয়ে দিয়েছি। কাল ভোরেই রওনা দেব।”
“কোথায় যাবেন আপনি?”
“ঠিক করি নি এখনো। আর ঠিক করলেও আপনাকে বলতাম না।” হাসল শায়লা। “শুধু এতটুকু জেনে রাখুন, আপনার কাছ থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছি। ভালো থাকবেন। আপনি মানুষটা অনেক ভালো। পৃথিবীতে কষ্টের পরিমাণ অনেক। কিন্তু সেখানে আপনার কোন ভাগ নেই, থাকার কথাও না। যাই।”
শায়লা চলে যেতে লাগল। রাতুলের প্রচ- কষ্ট হচ্ছিল। অনেক কিছু বলতে চাচ্ছিল সে। শায়লার প্রতি তার আর কোন ঘৃণা নেই। শায়লাকে সে ভালোবাসে। সারা জীবন সে শায়লাকে বেঁধে রাখবে ভালোবাসার মধুর বাঁধনে। কোন অশুভ কখনো স্পর্শ করতে পারবে না শায়লাকে।
কিন্তু রাতুল কিছুই বলতে পারল না। তার গলার কাছটায় কী যেন একটা আটকে রইল। মনের কথাগুলো মুখে এসেও থেমে গেল। শায়লাকে সে কখনো বলতে পারবে না যে সে কতটা ভালোবাসে তাকে।
শায়লা চলে গেল। পিছনে সে ঘুরে তাকাল না একটিবারের জন্যও।

১৯
“আপনার সঙ্গে কে যেন দেখা করতে আসছে। উপরে পাঠায়া দিব?” নাঈমকে মেসের কাজের ছেলেটা এসে জিজ্ঞেস করল।
“কে এসেছেন?”
“রহমান না কী যেন নাম বলল, মনে নাই।”
“আচ্ছা, পাঠিয়ে দে।”
কাল রাতে নাঈম বরাবরের মতন মেসে ফেরে নি, এসেছে ভোরবেলায়। কাজেই ঘুমটা বিশেষ ভালো হয় নি। শরীরটাও কেমন যেন খারাপ লাগছে ইদানিং। জ্বর আসছে প্রায়ই, আর সারছেও অনেক দেরি করে। শরীর খুবই দুর্বল।
এখন সে প্রায়ই রাত কাটায় বাইরে। রঙ-বেরঙের আলোয় নিজেকে আবিষ্কার করে প্রতিনিয়ত। উচ্চশব্দে হিন্দি গান বাজতে থাকে চারপাশে। সিগারেটের ধোঁয়ায় ঘর ভরে যায়। সে ধোঁয়ায় রঙিন আলোটা আধিভৌতিক রূপ নেয়। মেয়েগুলোর শরীর থেকে ভেসে আসে সস্তা সুগন্ধীর কড়া গন্ধ। লাল লিপস্টিকে ভরা ঠোঁটে চুমু খেতে বিস্বাদ লাগে খুব, শত মানুষের আঁচড়ানো দেহে সুখ খুঁজে পাওয়াটাও দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। চোরাবালিতে নাঈম ডুবে যায় প্রতিনিয়ত। সেখান থেকে জেগে ওঠার কোন ইচ্ছেও সে অনুভব করে না।
“আসব?” দরজায় দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলেন ভদ্রলোক।
“আসুন। আপনার পরিচয়?” নাঈম শুয়ে থেকেই প্রশ্ন করল।
“আমাকে তুমি চিনবে না। আমার নাম আবিদুর রহমান।”
“কী দরকারে এসেছেন, বলবেন কী?”
“তোমাকে দেখতে এসেছি।” ভদ্রলোক কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। ”আমি তোমার বাবা।”
নাঈমের সমস্ত ¯œায়ু সচকিত হয়ে উঠল। গা ঝাড়া দিয়ে সে উঠে বসল।
“কী বললেন আপনি?”
“আমার কথা শোন, বাবা। জানি, তোমার মনে অনেক প্রশ্ন- সবক’টার উত্তরও হয়তো আমার কাছে নেই।”
“আপনার কথা শুনতে তো আমি বাধ্য নই। আপনি চলে যান এখান থেকে।” নাঈম উত্তেজিত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল।
“না, বাবা, আমাকে একটু সুযোগ দাও। আমার গতমাসেই ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়েছে। আর হয়তো বেশিদিন বাঁচবোও না। তোমাকে একথাগুলো না বলতে পারলে আমি মরেও শান্তি পাবো না। প্লিজ, বাবা ভেবে নয়, একজন মৃত্যুপথযাত্রী ভেবে আমার কথাগুলো শোনো।”
নাঈম কিছু না বলে খাটে বসে পড়ল। রুমের এক কোণায় রাখা চেয়ারটা দেখিয়ে তার বাবাকে বসতে বলল।
“তোমার বয়েস যখন সাত মাস, তখন তোমাদের মা-ছেলেকে ফেলে আমি চলে আসি। আমাদের বিয়েটা ছিল এ্যারেঞ্জড্। বিয়ের আগে আমার একটা প্রেম ছিল, মেয়েটার নাম ছিল নীলুফার। নীলুফারের ফ্যামিলি নতুন জায়গায় বাসা বদল করে, তারপর ওর সাথে আর কোন যোগাযোগ হয় নি আমার। বিয়ের দু’বছর পর হঠাৎ ওর সাথে আমার দেখা হয়। দেখি, ও তখনও আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে। আমি আমার আবেগকে আর মাটি-চাপা দিয়ে রাখতে পারি নি। ওর হাত ধরে আমি তোমাদের ফেলে পালিয়ে আসি। তোমাকে নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম্ পরে মনে হল, তোমার মায়ের কাছেই তুমি বরং ভালো থাকবে। আমি দুঃখিত। দায়িত্বহীনভাবে তোমাদেরকে আমি ত্যাগ করেছি। কিন্তু ভেবে দেখো, যদি সেদিন আমি স্বার্থপর না হতাম, এখন হয়তো সারাটা জীবন আমি আফসোস করে মরতাম।”
“তো, এখন কি আপনি সুখের সন্ধান পেয়েছেন?”
“হ্যাঁ, আমি নীলুফারকে নিয়ে অনেক সুখী।”
“তাহলে আমার আর কিছু চাওয়া নেই। আপনি যদি সুখী হয়ে থাকেন, তবে আমিও খুশি। আমার আর কোন রাগ নেই আপনার ওপর।”
“ধন্যবাদ তোমাকে। তুমি ভালো আছো?”
“হ্যাঁ, আমি ভালো আছি। আপনি এখন চলে যান। বেশিক্ষণ থাকলে হয়তো আবার আমার মন বদলে যেতে পারে।”
“হ্যাঁ, আমি যাচ্ছি। তুমি ভালো থেকো।”
নাঈমের বাবা উঠে পড়লেন। দরজার দিকে পা বাড়াতেই নাঈমের মনে হল তার মায়ের মৃত্যুর সংবাদটা তাকে জানানো দরকার।
“আপনি কি জানেন, মা মারা গেছেন?”
ভদ্রলোক একটু থমকে গেলেন বলে মনে হল নাঈমের।
“ওহ!” কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, “ঠিক আছে। আমি তবে যাই।” আবিদুর রহমান সাহেব বেরিয়ে গেলেন।
নাঈমও উঠে দাঁড়ালো। ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার। শরীরটা বড্ড বেশিই খারাপ লাগছে।

২০
নীলা সুমিতকে ধরে হাঁটছে। সে সুমিতের কাছে কিছুই গোপন করে নি। যা যা ঘটেছিল ঐদিন, সব আদ্যোপান্ত বলেছে সুমিতকে। সুমিত একটুও দমে যায় নি, একটুও কষ্ট প্রকাশ করেনি। হাসিমুখে সে নীলাকে বলেছে- “নীলা, কোন চিন্তা করো না। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি তোমার সঙ্গে আছি, থাকব, যতই ঝড় আসুক না কেন।”
সুমিত নীলার সাথেই আছে। নীলাকে সে ছেড়ে যায় নি। নীলাকে সকল দুঃখ-কষ্ট থেকে সরিয়ে রাখবে সে। ঐ ঘটনাকে একটা দুঃস্বপ্ন ভেবে নীলাকে ভুলে যেতে বলে সে। যদিও নিজে ভুলতে পারে না। এ দুঃসহ স্মৃতির বোঝা তাকে বয়ে বেড়াতে হবে আজীবন। সে জানে, এ স্মৃতি থেকে তার পরিত্রাণ নেই।
“সুমিত?”
“হুম?”
“তোমাকে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে, না?”
“বোকা নাকি? কীসের কষ্ট আমার? তুমি আছো আমার সাথে। দুনিয়ার কোন কষ্টই আমার কাছে কিছু না। কষ্টে হয়তো আছো তুমি। তোমাকে এতো করে বোঝালাম আমি, তারপরও তুমি এসব কথা বলে যাচ্ছো অবিরত।” সুমিতের কণ্ঠে অভিমান ঝরে পড়ল।
“আমার বোকামির জন্য তোমাকে এখন ভুগতে হচ্ছে। তোমার এত কষ্ট আমি আর সহ্য করতে পারছি না।”
“তুমি আবার বোকার মত কথা বলছ! এসব ছাইপাশ কথা বাদ দাও তো। এখন বল, তুমি কোথাও ঘুরতে যেতে চাও?”
“নাহ! আমি শুধু চাই, তুমি সুখে থাকো। আমার চেহারা দেখলেই তুমি আর সুখে থাকতে পারবে না, আমি জানি।”
“দেখো নীলা, তোমাকে একটা কথা সাফ সাফ বলে দিই। আমার এ জীবন তুমি বিনা পুরোটাই অর্থহীন। তুমি আমার পাশে থাকলে এ জীবন আমার কাছে স্বর্গের মতন। তোমাকে ছেড়ে যাবার কথা বলছ? মরে যেতে বলছ আমাকে?”
“তুমি কেন মরে যাবে, বল? ভুল আমার। প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে আমাকেই।”
“নীলা, উল্টোপাল্টা কথা বলবে না তো। একদম বলবে না। তোমার মাথাটাই গেছে খারাপ হয়ে। তুমি কালই আমার সাথে ঘুরতে বেরুবে। আমরা সিলেট চলে যাবো, কেমন? ওখানের পরিবেশে তুমি স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।”
“তুমি বুঝতে পারছ না, সুমিত-”
“না নীলা, তুমি বুঝতে পারছ না। চল, এখন তোমাকে বাসায় নামিয়ে দিই। কাল সকাল সকাল রেডি হয়ে থাকবে। আমি তোমাকে নিতে আসব।”
সুমিত নীলাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসল। পরদিন সকালে গিয়ে সে নীলার মৃতদেহ আবিষ্কার করল। আর তার পাশে একটা চিঠি-
“ভালোবাসা সুমিত,
আমি যতদিন পৃথিবীতে থাকব, তোমার জীবনে সুখ থাকবে না- এ আমি বুঝে গেছি। তোমাকে আস্তে আস্তে আমি শেষ হয়ে যেতে দেখতে পারব না। আমি চলে যাচ্ছি। বহুদূরে চলে যাচ্ছি। তুমি ভালো থেকো। অন্য কোথাও তোমার ভালোবাসা খুঁজে নিও। আমাকে পারলে ভুলে যেও।
প্রার্থনা শুধু এটুকুই, তুমি ভালো থেকো। অনেক, অ-নে-ক ভালোবাসি তোমায়।
তোমার, শুধুই তোমার
নীলা”
সুমিতের ইচ্ছে করল এক ঝটকায় পুরো পৃথিবীটাকে ধ্বংস করে দিতে। কিন্তু সে শুধু পারল বিকট এক স্বরে চিৎকার করতে। তারপর অনেকক্ষণ ধরে সে ওপরের দিকে চেয়ে রইল কোন অলক্ষ্যে। বোধ হয়, অনেক অভিযোগ তার সেই ওপরওয়ালার প্রতি।
ঈশ্বর, তুমি ভালো আছো তো?

২১
বহুদিন পর তিন বন্ধু আবার জড় হয়েছে এক ঘরে। এবার সঙ্গী আরো এক জিনিস- মদ। তারা কথা বলছে প্রাণ খুলে, মাতাল হয়ে। মদের নেশা ক্ষণিকের জন্য সব ভুলিয়ে দিচ্ছে, কিন্তু যখন মনে পড়ে যাচ্ছে সব, বেঁচে থাকাটা মুশকিল হয়ে উঠছে।
“জানিস, নীলা অনেক ভালো মেয়ে ছিলো রে। ওর এ অবস্থা হল কেন, জানিস? আমার জন্য। কত মেয়ের জীবন নষ্ট করেছি খেলাচ্ছলে, কিছুই গায়ে লাগে নি। কোন পাপবোধেও ভুগি নি। কিন্তু ঈশ্বর ঠিকই হিসেব করে রেখেছিলেন। তিনি একদিন ঠিকই আমাকে সকল পাপের শাস্তি এক মুহূর্তে দিয়ে দিলেন। আমি এত বড় শাস্তি এক সঙ্গে পেয়ে যাব, কোনওদিন ভাবি নি। তখন বিস্ময়ে বোবা হয়ে গিয়েছিলাম। চলৎশক্তিরহিত- কথাটা শুনিস নি? ঐ ওটাই হয়ে গেছিলাম। আমি তারপর থেকে আর কোনোদিন ঈশ্বরে অবিশ্বাস করি নি। ঈশ্বর আছেন। হান্ড্রেড পার্সেন্ট আছেন। কিন্তু ব্যাটা খুব খারাপ, বুঝলি? আমার পাপের শাস্তি- পুরোটাই তো আমার, তাই না? তবে এর ভাগ কেন ঐ নিষ্পাপ মেয়েটাকেও নিতে হল? বুঝলাম না কিছুই খেলাটার। বড়ই আজিব!” সুমিত কাঁদতে শুরু করল।
“আহ! মরাকান্না শুরু করে দিল দেখছি!” বিরক্ত নাঈম বলে উঠল। “এই আমাকে দেখ্। জীবন এতভাবে আমাকে পরাস্ত করেছে যে কিছুই আর এখন করার নেই আমার। ঐ রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা পতিতাগুলোও এই জীবনের চেয়ে ভালো। ওদের মাঝেও ভালোবাসা আছে, জীবনের নেই। ওরা অনেক স্ট্রেইট-ফরওয়ার্ড। টাকায় না পোষলে খদ্দেরকে সোজা না বলে দেয়। টাকা পেলে সারা রাত আদর করে। এ্যাই জানিস, আমার না এইডস ধরা পড়েছে। আমি নাকি আর বেশিদিন বাঁচব না রে।” বলেই নাঈম উন্মাদের মতন হাসা শুরু করে দিল। সুমিত আর রাতুল হতভম্ভ হয়ে রইল।
তারপর অনেক সময় ধরে নীরবতা মঞ্চ কাঁপাল। রাতুল তাতে ব্যাগড়া বাঁধালো।
“তোদের মনে আছে, ছোটবেলায় আমি বলেছিলাম এক জায়গায় যাবার কথা? মনে আছে?”
সুমিত বলল, ”হ্যাঁ, মনে আছে।”
“যাবি নাকি? আমার মনে হয়, এখনই উত্তম সময়।”
“যাবি তো চল। আমার তো তেমন কোন কাজ নেই, শুধু সময় গোনা ছাড়া!” বলেই আবার হাসতে শুরু করল নাঈম।
“তুই থামবি?” রেগে গেল সুমিত।
“চল্, তবে যাই। আমার জীবনের একটা আখেরী কাজ বাকি। ওটা সেরেই রওনা হব। কী? ঠিক আছে?”
কেউ কোন কথা বলল না। আবার নীরবতা এসে জেঁকে ধরল ওদের।

২২
“মিথি, তোর আব্বার শেষ ইচ্ছেটা এই ছিল, তোর বিয়েটা যেন ঠিকঠাকভাবে হয়।”
“কিন্তু তাই বলে, ঐ ছেলের সাথেই হতে হবে- এমন তো কোন কথা নেই।”
“বড় চাচা নিশ্চিন্তে ছিলেন এই ভেবে যে ঐ ছেলের সাথেই তোর বিয়ে হবে।”
“না, রাতুল, তুমি এমনটা বোলো না। তুমি তো সবই জানো, তুমি ছাড়া আর কারো সাথে আমি সুখী হতে পারব না। আমি তোমাকে পাগলের মতন ভালোবাসি।”
“নারে পাগলি, তুই জানিস না। সুখ ব্যাপারটা অনেকটা অভ্যস্ততার মতন। যেখানে অভ্যস্ত হয়ে যাবি, সুখ তোর ওখানেই খুঁজে পাবি।”
“তুমি কথা এড়াচ্ছ রাতুল। তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না?”
রাতুল অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। “আমি, আমি জানি না।”
“না, রাতুল, জানতে তোমাকে হবেই। আজ, এই মুহূর্তেই। আজ আমার ভাগ্য নির্ধারণের দিন। তুমি আজ অন্তত পালাতে পারবে না। তুমি একবার বলে দাও, তুমি আমায় ভালোবাসো না, আমি বিনা দ্বিধায় ঐ ছেলেকে বিয়ে করবো। খুব ভালো বৌ হব আমি, বিশ্বাস করো। ঘর সামলাবো, বাচ্চাদের মানুষ করব। কি›তু, মনে কোনোদিন আমার শান্তি থাকবে না।”
“না মিথি, আমার এটা না জানলেও হবে। আমি শুধু জানি এতটুকুই, বড় চাচা আমার কাছে আল্লাহর ঠিক পরেই। তাঁর শেষ ইচ্ছে আমায় পূরণ করতেই হবে। তুই মানসিকভাবে প্রস্তুতি নে বিয়ের জন্য। আমি সব ব্যবস্থা করছি।”
খুব ধুমধামের সঙ্গেই মিথিলার বিয়ে হয়ে গেল। মিথিলা সাদা একটা প্রাইভেট কারে চড়ে শ্বশুড়বাড়িতে চলে গেল। জানালার কাঁচ ধরে সে রাতুলের দিকে তাকিয়ে ছিল একদৃষ্টে। চোখে ছিল একটিমাত্র প্রশ্ন- “কেন তুমি এমনটা করলে? কেন রাতুল?”
মিথিলাকে অনেক সুন্দর লাগছিল, অনেকটাই পরীর মতন।

২৩
জীবন কখন কোন দিকে মোড় নেয়, কেউই আগে থেকে বলে দিতে পারে না। শুরু হতেই পাথরের মতন জীবন গড়িয়ে যেতে থাকে, যেতে যেতে পথে সে মাড়িয়ে যায় অসংখ্য ছোট ছোট ঘাসফুল। আবার বড় কোন হিমবাহ এসে সেই পাথররূপী জীবনটাকেই ধসিয়ে দিয়ে যায়। মানুষ কেন যেন এই জীবনটাকেই নিয়ন্ত্রণ করতে শিখল না, জীবনই তাকে সর্বদা চালনা করে আসছে, ভবিষ্যতেও করবে। ঈশ্বর নামক এক সর্বশক্তিমান সবার মাথার ওপরে বসে থেকে তার ছড়ি ঘুরাচ্ছেন, আর জীবনও ঘুরছে সেই তালে। মানুষ তার হাতের পুতুলমাত্র।
রাতুল এইসব ভাবতে ভাবতে পাহাড় বেয়ে উঠছিল। সঙ্গে আছে সুমিত আর নাঈম। রাতুল যখন খুব ছোট, তখনই এই স্বপ্নটা দেখেছে- ওরা তিনজন একসাথে একটা পাহাড়ের পাদদেশ হতে বেয়ে বেয়ে তার চূড়ায় উঠবে। যখন পৃথিবী মাতা তার বিশাল শাড়ির আঁচলের সবক’টা প্রান্ত ওদের হাত থেকে কেড়ে নেবে, রাতুলের বিশ্বাস ছিল, ঐ পাহাড়ের চূড়ায় তাদের জন্য কোন এক করুণাধারা অপেক্ষা করবে। সেই বিশ্বাস থেকেই রাতুল ওদেরকে নিয়ে এসেছে এখানে।
একটি ফুটফুটে উপজাতি মেয়ে দেখছিল ওদেরকে। সে অবুঝ মনে ঈশ্বরকে একমনে ডাকল- “হে ঈশ্বর, তুমি ওদেরকে পাহাড়টার ওপরে তুলে নাও।”
ঈশ্বর সারা জীবন ওদেরকে জর্জরিত করেছেন তীক্ষœ বল্লমের আঘাতে। ওদের জীবনের এই মহাযাত্রায়ও কি তিনি ব্যাঘাত ঘটাবেন?

বিঃ দ্রঃ পোষ্টটির লেখক 'অনিক মল্লিক' তার এত সুন্দর সুন্দর লেখাগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করতে চায় না কেন আমি বুঝিনা, লেখকের কিছুটা অনিচ্ছা থাকা সত্তেও পোস্ট দিয়ে দিলাম... আপনাদের ভালো লাগলে জানাবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:২০
৯টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×