somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিকিট নিয়ে অভূতপূর্ব উন্মাদনা

২৮ শে নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্রিকেটের রান-উইকেট-সেঞ্চুরি নিয়ে কতই না রেকর্ড আছে। প্রতিদিনই ভাঙছে-গড়ছে রেকর্ডের খেলা। কিন্তু ক্রিকেট ম্যাচের টিকিট নিয়ে উন্মাদনার কোনো রেকর্ড কি আছে। অনেক ঘাটাঘাটি করে ‘ক্রিক ইনফো’তে এমন কিছু খুঁজে পাওয়া গেল না। তবে শতভাগ নিশ্চিত, এমন কিছু থাকলে সকল রেকর্ড অতিক্রম করতো খুলনার বর্তমান পরিস্থিতি।
আগামী ৩০ নভেম্বর খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ-বাংলাদেশের ওয়ান ডে ম্যাচের টিকিট নিয়ে অকল্পনীয় উন্মাদনা বিরাজ করছে খুলনায়। ঘরে-বাইরে, হাট-বাজারে, স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত সর্বত্র এখন একটাই আলোচনা টিকিট। যেভাবেই হোক একটা টিকিট চাই-ই চাই। এজন্য কেউ রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারস্ত হচ্ছেন, কেউ প্রশাসনের আবার কেউ বা যাচ্ছেন জনপ্রতিনিধিদের কাছে। পত্রিকা অফিসগুলোয় ফোন করেও টিকিটের আবদার করছেন পরিচিত জনেরা। টিকিট বিক্রির ২৪ ঘণ্টা আগে থেকে মানুষ লাইন দিয়েছে বিক্রয় কেন্দ্রগুলোর সামনে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত ১০টা) প্রায় ৫ হাজার মানুষ টিকিটের জন্য জেলা স্টেডিয়ামে অপেক্ষা করছে। রাত বাড়ার সাথে সাথে মানুষের ভিড়ও বাড়ছে। অতীতে কোনো বিষয় নিয়ে এতো আগ্রহ মানুষের মাঝে দেখা যায়নি।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আজ বুধবার সকাল ৯টা থেকে ওয়ান ডে ম্যাচের টিকিট বিক্রি শুরু হবে। খুলনা জেলা স্টেডিয়ামের ৪টি কাউন্টারে সাধারণ এবং ব্যাংকে মোবাইলে আবেদনকারী ও ভিআইপি টিকিট বিক্রি করা হবে। টিকিট বিক্রির এ সংবাদে গতকাল মঙ্গলবার ভোর থেকেই স্টেডিয়ামে মানুষের ভিড় জমে যায়।
বেলা ১টায় সরেজমিন স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখা গেছে, মানুষের দীর্ঘ সারি। কেউ চটের বস্তা বিছিয়ে শুয়ে আছেন, কেউ সাইকেল ও বেঞ্চের ওপর বসে আছেন। ইট দিয়ে সিরিয়াল রেখেছেন প্রায় শ’দুয়েক মানুষ। বেলা ২টার দিকে পুলিশ সবাইকে সরিয়ে দিতে চাইলে টিকিট প্রত্যাশীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েন। পরে পুলিশ বেঞ্চগুলো সরিয়ে দেয়।
এক নম্বর কাউন্টারের প্রথম সিরিয়ালটি ধরে রেখেছেন পিরোজপুর জেলা থেকে আসা হাসিবুল হাসান। তিনি জানান, ভোর ৫টায় তিনি স্টেডিয়াম এসেছেন। টিকিট নিয়ে তবেই বাড়ি ফিরবেন। দ্বিতীয় কাউন্টারে শুরুতেই রয়েছে ৬ জনের একটি দল। তাদের মধ্যে নগরীর আহসান উল্লাহ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মেহেদী হাসান রুবেল জানান, তারা ৬ বন্ধু ৯টার সময় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। দুপুরে খাবার বাসা থেকে একজন নিয়ে এসেছে। রাতেও এখানেই খাবেন।
জিমনেসিয়ামের পাশে ইট দিয়ে সিরিয়াল করছিলো সিটি কলেজের একদল ছাত্র। ডিগ্রী দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজু শাহরিয়ার জানান, কাল এসে টিকিট পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে, এজন্য আজ থেকেই সিরিয়াল দিয়েছেন।
সন্ধ্যায় গিয়ে দেখা গেছে, লাইন দীর্ঘ হতে হতে স্টেডিয়ামের সীমানা ছাড়িয়েছে। অল্প-বয়স্ক ছেলেরা ঘাড়ে স্কুল ব্যাগ নিয়ে এসেছে। তাতে রয়েছে রাতের খাবার। রাত ৯টা নাগাদ মানুষের লাইন স্টেডিয়াম মার্কেট ঘুরে সার্কিট হাউজের দিকে চলে গেছে। তখনো দলে দলে ছেলেরা আসছে টিকিটের জন্য সিরিয়াল দিতে। এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশকে। বেশ কয়েকবার লাঠিচার্জ করে দর্শকদের সরিয়ে দিলেও দলে দলে ছেলেরা আসছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াসে মোট দর্শক ধারণ মতা ১০ হাজার ৮৫১টি। এর মধ্যে ভিআইপি আসন পূর্ব ও পশ্চিম মিলিয়ে ৮৩০টি, কাব হাউজ ১হাজার ৪৫৬টি, ইন্টারন্যাশনাল ৮৬৪টি এবং প্রায় ৭ হাজার সাধারণ গ্যালারি। মোট টিকিটের প্রায় ৩০ ভাগ সৌজন্য বিতরণ করছে বিসিবি। ব্যাংক পাড়ায় গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে বাকি ৬ হাজার টিকিটের মধ্যে বিপুল সংখ্যক দলীয়ভাবে কিনে নেয়া হচ্ছে। বাকি কয়েক হাজার টিকিট দর্শকদের মাঝে বিক্রি করা হবে। রাতে এই টিকিটের একটি বড় অংশ ব্যাংক থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে বের হয়ে গেছে। দর্শকদের জন্য বরাদ্দ সেই টিকিটের মধ্যে পুলিশ, ব্যাংকার, কাব ও পেশাজীবী সংগঠন ভাগ বসাচ্ছে। ফলে ওয়ান ডে ম্যাচের টিকিট আদৌ সাধারণ মানুষ পাবে কিনা তা’ নিয়েই খুলনায় চলছে গুঞ্জন। এজন্য টিকিট পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সবাই।
খুলনার সরকারি দলের প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক নেতা বলেন, ‘আগে চাকরির জন্য সুপারিশ নিতে লোকজন আসতো। গত ৪ দিন ধরে যারা দেখা করতে এসেছে তাদের ৯৫ ভাগই টিকিট চায়’। অভিযোগ রয়েছে, টিকিট নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারাও ব্যাংকে চাপ দিচ্ছেন। টিকিট দেয়ার জন্য অব্যাহত রাজনৈতিক চাপে এসআইবিএল খুলনা শাখার জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বিসিবি’র নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকের কর্মকর্তারা কেউই সংবাদ মাধ্যমে কথা বলতে রাজি হননি। তবে তারা জানান, ২৮ নভেম্বর বেলা ৯টা থেকে টিকিটি বিক্রি শুরু হবে। চলবে বেলা ২টা পর্যন্ত। যত সময় টিকিট থাকবে বিক্রি করা হবে।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×