somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুয়েতিদের নামাজ পড়ার আশ্চর্য নিয়ম, আপনিও অবাক হবেন!

০৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ৩:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন বাংলাদেশী যখন আরব দেশে আসবেন তখন সবচেয়ে যেই বিষযে আশ্চর্য হবেন সেটা হলো আরব দেশগুলোর নামজ পড়ার নিয়ম কানুন ও মসজিদে মুসল্লিদের আচারণ দেখে। কারণ আগে আমি ভাবতাম পুরো দুনিয়াতে সকল মুসলমান একই ষ্টাইলে একই নিয়ম কানুন অনুসরণ করে নামাজ ও ইসলাম র্ধমীয় নিয়ম পালন করেন, কিন্তু আমার ধারণা সঠিক নয়, যা আমি কুয়েতে এসে সর্বপ্রথম নিজে দেখলাম আর জানলাম, তবে কুয়েতিদের মাতৃভাষা আরবী তারা নিশ্চয় হাদিস কোরআন আমার ও আমারা বাংলাদেশীদের তুলনায় বেশী জানেন ও বুঝেন,তায় তাদের নামাজ ও র্ধমীয় নিয়ম পালনকে কোন অবস্থয় ভুল বলা যাবেনা, তবে ইসলাম র্ধমে বেশ কয়েটি মাজাহাব আছে, অর্থাৎ প্রতিটি মাজাহাবের মুসলিমদের নামাজ ও র্ধমীয় নিয়ম পালনের নিয়ম ভিন্ন ভিন্ন, তবে ইসলামের মুল ভিত্তিটা ১০০% অভিন্ন ও একই।


জুম্মার নামাজ


আমাদের দেশে সাধারণত জুমার আযান হয় প্রায় দুপুর ১২টার পর, আর জুম্মার নামাজ হয় প্রায় দুপুর ১ টার পর, কিন্তু কুয়েতে জুম্মার আযান
হয় গরমের সময় সকাল ১০ টা বেজে ৪৫ মিনিটে, শীত কালে ১১ টা বাজে আর দুপুর ১২ টার আগে সম্পূর্ণ জুম্মার নামাজ শেষ হয়ে যায়।


মাগরীবের নামাজ।


আমাদের দেশে সন্ধা সুর্য অস্ত যাবার সাথে সাথে মাগরিবের আযান হয় এবং আযানের সাথে সাথে ইমাম সাহেব ফরজ মানাজ শুরু করেন, কিন্তু কুয়েতে মাগরিবের আযান সুর্য অস্ত যাবার সাথে সাথে হয, কিন্তু আযানের পর পর ফরজ নামাজ হয়না, প্রথমে সকল মুসল্লি সুন্নত আদায় করে নেন, তার পর হয় মাগরিবের ফরজ নামাজ।


তারাবীহ নামাজ।

পবিত্র রমজানে আমাদের দেশে সাধারণত ২০ রাকাত তারাবিহ নামাজ হয়, কোন কোন মসজিদে সুরা তারাবিহ আর কোন কোন মসজিদে খতম তারাবিহ, কিন্তু কুয়েত আসার পর আমি অনেক মসজিদে তারাবিহ পড়েছি , সব মসজিদে মাত্র ৪ রাকাত তারাবিহ নামাজ হয়, কোন সুরা বা খতম তারাবিহ বলতে কোন র্পাথক্য নেই।


ঈদ ও কোরবানের নামাজ

আমাদের দেশে ঈদ ও কোরবানের দিন সাধারণত ঈদের জামাত সকাল ৭ টার আগে নামাজ হযনা, কখনো কখনো দেখেছি ৮ টা ও ৯ টায় নামাজ হয়, কিন্তু কুয়েতে দুই ঈদের নামাজ সকালের ফরজ নামাজের পর পর হয়ে যায়,


শবে-বরাত ও শবে-কদরের নামাজ।


আমাদের দেশে শবে-বরাত ও শবে-কদরের রাত্রে মসজিদে ইমাম সাহেবের পেচনে জামাতের সাহিত সকল মুসল্লি নামাজ আদায় করেন, কিন্তু কুয়েতে শবে-বরাত ও শবে-কদরের রাত্রে কোন মসজিদে নিদিষ্ট ৫ ওয়াক্ত ছাড়া অতিরিক্ত কোন নামাজ জামাতের সহিত আদায় করা হয়না।


দুর্যোগ আবহাওযার সময় নামাজ।

কুয়েতে যে দিন বৃষ্টি হয় বা কোন ধুলি ঝড় হয় বা অতিরিক্ত গরম পড়ে তখন জোহরের ওয়াক্তে সহিত আসরের নামাজ এক সাথে আদায় করা হয়, আবার কখনো কখনো আসরের সময় এক সাথে মাগরীবের নামজ, মাগরীরের সময় এক সাথে এশার নামাজ আদায় করা হয়, তবে দু ওয়াক্ত নামাজের জন্য আলাদা ভাবে দুই বার নিয়ত করা হয়, এবং যদি যোহরের সময় আসরের নামাজ হয়ে যায়, সেই ক্ষেত্রে পুনরায় আসরের ওয়াক্তর সময় নতুন করে আর আসর নামাজ হয় না,


আযান

আমাদের দেশে সাধারণত ৫ ওয়াক্ত নামাজের জন্য ৫ বার আযান দেওয়া হয় মসজিদে, কিন্তু কুয়েত প্রতিটি মসজিদে প্রতিদিন ৬ বার আযান দেওয়া হয়, প্রথম আযান হয় সকালের আযানের অন্তত এক ঘন্টা আগে এই আযান দেওয়া হয়, এটাকে বলা হয় তাহাজ্জুত নামাজের আযান,


মোনাজাত।

আমাদের দেশে সাধারণত নামাজের নামাজের পর মোনাজাত হয়, কিন্তু কুয়েতে প্রতিটি নামাজের আগে মুনাজাত হয়। এই প্রসঙ্গে এক মিশরীয় লোককে জিজ্ঞসা করলে তিনি বলেন, মোনাজাতের সাথে নামাজের কোন সর্ম্পক নেই, মোনাজাত আগে পড়ে করা যায় বা মোনাজাত না করলের চলবে।


দুরুদ শরীফ ও জিকির।

আমাদের দেশে বিশেষ দিনে যেমন শবে-বরাত, শবে-কদর, বছরের শেষ জুম্মা, মসজিদে সকল মুসল্লি এক সাথে সবাই দরুদ শরীফ ও জিকির করেন, কিন্তু আমি কুয়েত আসার পর আজ প্রায় ৭ বছরে কুয়েত মসজিদে সকল মুসল্লি মিলে এক সাথে কোন দুরুদ শরীফ ও জিকির করতে দেখিনি।


পোষাক পরিচ্ছেদ।

আমাদের দেশে সাধারনত যখন কোন মুসল্লি মসজিদ নামাজ পড়তে যান তখন মাথায় টুপি, পুল পেন্ট, পায়জামা বা লুঙ্গী পড়েন পায়ের গোরালী পর্যন্ত, কিন্তু কুয়েতে প্রায় বেশীর ভাগ মুসল্লি কোন টুপি ব্যাবহার করেনা, তবে বেশীর ভাগ কুয়েতি লম্বা জোব্বা ও মাথায় পাগড়ী পড়েন, অনেক মুসল্লিকে দেখেছি হাফ ও থ্রি কোয়াটার টাইপের পেন্ট পড়ে নামাজ পড়তে,


মসজিদের আদব কায়দা।

আমাদের দেশে মসজিদের ভিতরে বাচ্চাদের নামাজ ছাড়া প্রবেশ নিষেধ, কিন্তু কুয়েতে মসজিদে ভিতরে নামাজ ছাড়া প্রায় সময় কুয়েতি বাচ্চারা দৌড়া দৌড়ি আর খেলা করে , আমাদের দেশে ছোট ছোট ছেলেরা নামাজ পড়তে মসজিদে যায়, কিন্তু ছোট ছোট বাচ্চা মেয়ের যায়না, কিন্তু কুয়েতে ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ছেলে মেয়ে কোন পার্থক্য নেই, ছোট ছোট মেয়েরাও তাদেও বাবার সাথে পুরুষের কাতারে দাড়ীযে নামাজ আদায় করেন। কুয়েতে প্রায় মসজিদে দেখা য়ায় এয়ার কন্ডিশ চালু করে মসজিদের ভেতরে ঘুমাতে।


নামাজের শেষে করা ও সালাম পেরানোর প্রদ্ধতি


আমাদের দেশে যে সব ফরজ নামাজ ইমাম সাহেবের পেছনে পড়ি সেই সব নামাজের শেষে যখন ইমাম সাহেব ডান ও বাম দিকে সালাম পেরান আমরাও ঠিক একই সময় একই তালে ইমামের সাথে সাথে সালাম পেরায়, কিন্তু কুয়েতে আগে ইমাম সাহেব সালাম পেরান ও নামাজ শেষ করেন, ইমাম সাহেব সালাম পেরানোর ঠিক পর পর মুসল্লিগন গন বাম আর ডান দিকে সালাম পিরিয়ে নামাজ শেষ করেন।


সুরা ফাতেহা পড়ার নিয়ম।

আমাদের দেশে প্রতিটি ফরজ নামাজের সময় যে সব ওয়াক্তে সুরা উচ্চ শব্দ করে ইমাম সাহেব পড়েন, তাতে দেখে যায় ইমাম সাহেব সুরা ফাতেহার ঠিক শেষ অংশে ( আমিন ) একটি শব্দটি উচ্চরণ করেন, তখন আমাদের দেশের মুসল্লিগন চুপ থাকেন, কিন্তু কুয়েতে নামাজের সময় ইমাম সুরা ফাতেহা পড়েন ঠিকই, কিন্তু সুরা ফাতেহার শেষ অংশে এসে ( আমিন) শব্দটি ইমাম সাহেব উচ্চ স্বরে উচ্চারণ করার পর পর সব মুসল্লি এক সাথে একই সুরে আমি শব্দটি উচ্চারণ করেন। যা আমাদের দেশে করেনা।


কুয়েতের জাতীয় মসজিদের একটি ছবি,
নাম - মসজিদ ই আল কবির।
অবস্থান - কুয়েত সিটি





সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:৫১
৪২টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×