somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুহেলিকা (আমার রচিত একটি ছোটগল্প)

২৮ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

|১|
মোহর ছুটে চলেছে এক জনবিহীন প্রান্তরে।আশেপাশে কেউ নেই।কেন সে ছুটছে সে নিজেও জানেনা।শুধু ছুটে চলেছে।সামনে এক বড় গর্ত ।সেই গর্তে সে পরে গেল…পড়ছে পড়ছে...হটাৎ...কোথাও আছড়ে পড়ল।এক ঝটকায় উঠে পড়ল মোহর।গলা শুকিয়ে গেছে।ঘন নিঃশ্বাস পড়ছে।একটু আগে সে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরল।.....না...এটা তারই খাট।
সেই একঘেয়েমী ঘর,আসবাবপত্র।ধুর,আর ভাল্লাগেনা।বাজে স্বপ্ন ছিল ওটা।এরকম স্বপ্ন সে আগেও দেখেছে।স্বপ্নের সময় মানুষ বুঝতে পারেনা সে ওটা স্বপ্ন দেখছে।তখন সব সত্যি মনে হয়।ভারচুয়াল রিয়ালিটির এক প্রাকৃতিক নিদর্শন।

হাত বাড়িয়ে পাশে টেবিলের ওপর রাখা জলের জাগটা থেকে জল খেয়ে মোহর,ফায়ারপ্লেসের পাশের চেয়ারে বসল।অক্টবর মাস।চিকাগো শহরে ফল সিজন শেষ হয়ে শীতের আগমনের সূচনা।আবার সেই হাড়কাঁপানো তুষার ঝড়।স্কুল কলেজ ছুটি।ঘরে ঘরে বিয়ারের আড্ডা,আর সঙ্গে ভুতের গল্প।ফার্স্ট ইয়ারে যখন সে কলকাতার ভবানীপুরের বাড়ি ছেড়ে,সুদূর ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগোতে পড়তে এসেছিল তখন তার এগুলো জিনিস খুব ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছিল।কিন্তু এখন এগুলো একঘেয়েমী হয়ে গেছে।এখানে সাউথ এলিস আভিন্যিউ এর কাছে কমদামি ফ্ল্যাটে ভাঁড়া থাকে সে।লোকগুলো খুব বাজে।মদ খেয়ে ফ্লাটের সিড়িতে চিৎকার করে,সবসময় ঝামেলা,হামেশাই পুলিশ এসে ফ্ল্যাটের কিছু মেক্সিকান ড্রাগখোর ছিচকে অপরাধীদের ধরে নিয়ে যায়।মোটকথা বাজে পরিবেশ।সে কাছাকাছি একটা বিয়ারের দোকানে পার্টটাইম জব করে।
শীত করছে কেন এত?...রুমহীটারটা কি খারাপ হয়ে গেছে?...প্রচন্ড গা হাত পা ব্যথা করছে।মনে হয় জ্বর আসছে।ড্রয়ারটা খুলে কিছুক্ষণ ঘাঁটাঘাটি করার পর একটা ব্রেসলেট চোখে পড়ল।খানিকটা পুরনো,ধূলো পরা,ওপরে খোদাই করা উপল+মোহর।ডেটঃ-১৪/০৪/২০১১...কিছুটা শুন্যতা গ্রাস করল তাকে।মনে হল মাটি সরে যাচ্ছে পায়ের নীচ দিয়ে।
।২।
সিয়াটল শহরে আজ থেকে তুষারাপাত শুরু হয়েছে।ছোট ছোট তুলোর প্যাঁজার মত তুষার কণা রাস্তায় পড়ছে।গাছপালা,বাড়ির ছাদ...সব ধীরে ধীরে সাদা হয়ে যাচ্ছে।টিভিতে এখনই সতর্কতা জারী করে দিয়েছে।কানাডার ভ্যাঙ্কুবার থেকে কনকনে উত্তুরে হাওয়া বইছে। কিছু বাচ্চা ছেলে তুষার নিয়ে খেলা করছিল।তুষার গোলা তৈরী ও সেটা দিয়ে অন্য জনকে ছুরে মারা।পাইক প্লেস মার্কেটে দাঁড়িয়ে এটা মন দিয়ে দেখছিল উপল।উপল তার ছোটবেলার সেই দুর্গাপুরের কালীমন্দিরের গলিটার কথা মনে পরে যাচ্ছিল।যেখানে শিবু,বান্টি,ববিরা মিলে একসাথে কত ক্রীকেট,চোরপুলিশ,কুমিরডাঙ্গা খেলেছে।এন আই টি তে ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়রিং এ এম টেক করার পর বিদেশের এই লোভনীয় চাকরীর সুযোগ হাতছাড়া করেনি।নতুন কিছু করার উদ্যোগে মা,বাবা,দিদিকে ছেড়ে এই ‘ল্যান্ড অফ অপরচুনিটির’ দেশে হাজির হয়েছে সে।শিকাগোতে দু বছর থাকার পর সে সিয়াটলে শিফট হয়েছে।



মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনে কিছুই পায়নি।বাবা হয়ত বাজার ফেরত কোন চেনা লোককে দেখা হলে গরব করে বলে-ছেলেটা আমেরিকায়,কিন্তু কোথাও একটা খারাপ লাগে।কখনো কখনো উপল তার ডাউনটাউনের ফ্ল্যাটে বসে আলবামের পুরনো ছবি দেখে,আর কাঁদে।নিজেকে বড় একা মনে হয় তখন।

এরকমই এক শীতের রাত ছিল।শিকাগো শহরের ফ্ল্যটের খাটে বসে ফেসবুকে হটাৎ করে খুজে পায় সোনার মোহর নামে এক বেশ সাজান গোছান প্রোফাইলকে।চ্যাট করতে করতে মোহর নামক রাজকন্যার মন হরণ করে সে।কায়দা করে জিজ্ঞেস করে-রাজকন্যার অন্য রাজপুত্র আছে?...উত্তর পায় সে তিনদিন পর।ওয়াশিংটন স্কয়ার পার্কে।এরকমই একটা তুষারঘন দিন ছিল।মোহর এসে বলেছিল “আই লাভ ইউ”...বলতে বলতে ঠান্ডায় তার ঠোট কাঁপছিল...আবেগে উপলের চোখ দিয়ে জল বেড়িয়ে গিয়েছিল।কত সংকল্প করেছিল তারা...এই হাত কোনওদিনও ছাড়বেনা,

মোহরের কথায়-“তুমি আমার মেল ফর্ম”।...আবেগে,উৎকন্ঠায়...এসে নিয়ে উপল ফেসবুকে স্ট্যাটাস আপডেট করেছিল-“আ কোল্ডডে ইন হেল উইথ মাই এঞ্জেল...”।

তারপর ফোনে কথা,দেখা করা,কফি খাওয়া,ঘুরতে যাওয়া-লেক পয়েন্ট টাওয়ার,শিকাগো অপেরা থিয়েটার,পোর্টেজ পার্ক...রিগলি ফিল্ডে একসাথে বেসবল দেখা
সময় গুলো খুব দ্রুত কাটতে লাগল।এরপর এল বসন্ত।কিছু কিছু ব্যাপারে ভুল বুঝাবুঝি হয়ে গেছে কয়েকবার,সেগুলো মিটেও গেছে ।ছোটখাট ব্যাপারে।কিন্তু ভুলবোঝাবুঝিগুলো একসময় প্রকট হয়ে দাঁড়ায়।

সামারের একটা সন্ধ্যা ছিল।ওয়াশিংটন পার্কে বেঞ্চে বসে ছিল মোহর আর উপল।উপলের হাতে একটা ব্রেসলেট।তাতে দুজনের নাম খোদাই করা।

“এই নাউ তোমার অ্যালু( অ্যালেক্স)।এখন থেকে এ তোমার কাছে ১৫ দিন ও আমার কাছে ১৫ দিন থাকবে”।

অ্যালেক্স।একটি টেডি বিয়ার।মোহরের সাথে প্রথম দেখা করার দিন উপল কিনে এনেছিল।প্রথম উপহার।

মোহর সেদিন যেন একটু বেশিই অন্যমনস্ক ছিল।আনমনে জিজ্ঞাসা করেছিল-

“উপল,তোমার ফিউচার প্ল্যান কি?’’

খানিকটা অবাক হয়ে উপল বলেছিল-“ওই আর কি।দেখি ভাল মেয়ে পাই কিনা।পেলেই বিয়ে করে নেব”।
দিয়েই হেসে ফেলেছিল উপল।
হেসে বলেছিল “বিয়ে করব পাগলী,তোমাকে।আর কয়েক বছরের মধ্যেই”...
না মোহর হাসেনি।উপল সেটা খেয়ালও করেনি।একটু একটু করে সন্ধে নামছিল সেদিন।ম্যাপল আর উইলো গাছ গুলো ক্রমশঃ কালো হয়ে যাচ্ছিল।অন্ধকার।তাও গোটা শহর আলো করে তোলার জন্য নিয়ন আলোর ছড়াছড়ি।মানুষের চেস্টা।

ফ্ল্যাটে ফিরেই অ্যালুকে নিয়ে একগাদা আদর করেছিল উপল।মোহরের ছোঁয়া লেগে আছে তাতে।হটাৎ মোহরের ফোন এসেছিল।খুব আনন্দের সাথে ফোনটা কানে নিয়ে যেই চুমু দিতে যাবে,অমনি-“উপল তোমার সাথে কিছু কথা আছে।...।।আমার পক্ষে আর এই রিলেশনশিপ টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।............”......

হাত থেকে সেলফোনটা পরে গিয়েছিল,উপল সেটা বুঝতেও পারেনি।পরে স্বাভাবিক হয়ে ফোনটা তুলে শুনেছিল-

--“উপল তুমি সেই রাজকুমার নও,যে আমার স্বপ্নে ছিল।আগে ভাবতাম তুমি আমার মেল ফর্ম,কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝলাম,তুমি আমার মত নও...তুমি কিছুটা অন্যরকম।সেই জন্যই ভুলবোঝাবুঝি হচ্ছে।আমি চাইছি এমন এক বয়ফ্রেন্ড যার সাথে আমার মেন্টালিটি একদম ম্যাচ করে।তার সাথে আমার কোন ভুলবোঝাবুঝি না হয়’’।

--"কিন্তু বাস্তবে তা হয় না মোহর,একটু ভুলবোঝাবুঝি সকল কাপ্‌ল-দের ক্ষেত্রেই ঘটে।আর প্রেমে চাওয়া পাওয়া,লোভ এগুলো কখনই আসেনা মোহর।প্রেম হচ্ছে নিঃস্বার্থভাবে দুটি মনের মিলন,এখানে পরস্পরের জন্য কতকিছু স্যাক্রিফাইস করতে হয়...তবেই না প্রকৃত ভালবাসা......তুমি কি চাইছ বলতো?...তুমি এতদিন ধরে আমার সাথে টাইম পাস করে গেলে??...খুব তো ডায়লগ মারতে...এই তোমার ভালবাসা...মোহর...তুমি এতটা অচেনা হলে কি করে??.."
.....বিপ বিপ বিপ.....

ফোনটা কেটে দিয়েছিল মোহর।

সেদিন রাতে উপলের শুধু সঙ্গী ছিল আলেক্স(অ্যালু)।গভীর রাত অব্দি কেঁদেছিল উপল।মোহরের ছবি গুলো ছিঁড়তে খুব কষ্ট হয়েছিল তার।আলো ঝলমল চিকাগো শহর তখনো জানলা দিয়ে উঁকি মারছিল।











২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×