somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বহদ্দারহাট ট্র্যাজেডি : নগরজুড়ে ফ্লাইওভার আতঙ্ক!

২৭ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মঙ্গলবার, ২৭ নভেম্বর, সকাল সাতটা। পোশাক শ্রমিক রেহেনা বেগম। একবার উপরে তাকাচ্ছিলেন আবার কয়েক কদম এগিয়ে যাচ্ছেন। এভাবে পার হচ্ছিলেন চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার এলাকা। এভাবে উপরে তাকিয়ে কেন হাটছেন জানতে চাইলে বললেন ‘শনিবারের ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে আছি। ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হয় এখুনি ধসে পড়বে।’
শুধু মমতাজ বেগমই নন চট্টগ্রামের সব শ্রেনীর পেশার মানুষের কাছে ফ্লাইওভার এখন যেন মরণ আতঙ্ক। এ অবস্থায় ফ্লাইওভার তুলে নেওয়ার দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা। বিশেষজ্ঞরাও ফ্লাইওভারটির কারিগরি দিক পরীক্ষার জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের দাবি করেছেন। ইতিমধ্যে অন্য আরেকটি গার্ডার ধসে পড়ার আশংকায় শাহ আমানত সংযোগ সড়কের এক পাশে দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের ভবিষ্যৎ কী তাই এখন দেখার বিষয়। তবে স্থানীয়রা এভাবে আর ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে চাচ্ছেন না। তাঁরা দ্রুত ফ্লাইওভারে বন্দী জীবন থেকে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন খোদ জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নানের কাছে। জেলা প্রশাসকও দ্রুত এ অবস্থা থেকে উত্তরণের আশ্বাস দিয়েছেন। সিডিএ’র সাথে আলোচনার পর এলাকাবাসীর চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত করার ঘোষণা দেন।
এদিকে ফ্লাইওভারের কার্যকারিতা নিয়ে চট্টগ্রাম প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘পরপর তিনবার যখন দুর্ঘটনা ঘটেছে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করাটা স্বাভাবিক। অতি শিগগির উচ্চ পর্যায়ের দু’টি কমিটি করা প্রয়োজন। একটি কারা দোষী তা খতিয়ে দেখার জন্য। অন্যটি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এ ফ্লাইওভার আদৌ রাখা যাবে কিনা, নাকি এটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে অপসারণ করতে হবে তা নির্ধারণের জন্য।’
স্থানীয় সুত্র জানায়, নিমার্ণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার পরে পরপর তিনবার দুর্ঘটনা ঘটার পর থেকে ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে বা আশপাশে নিশ্চিন্তে পথচারিরা চলাচল করতে শংকা বোধ করছেন। গত ২৯ জুন প্রথমবারের মতো নগরীর চাঁন্দগাও থানার সামনে ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসে পড়ে। জুমার নামাজের সময় রাস্তায় লোকজন কম থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এরপর গত মঙ্গলবার ফ্লাইওভার থেকে লোহার এঙ্গেল খুলে পড়ে এক শিক্ষিকার শখের নতুন কেনা প্রাইভেট কার দুমড়ে মুচড়ে যায়। সর্বশেষ গত শনিবার রাতে ফ্লাইওভারের তিনটি গার্ডার ধসে পড়লে ১৫ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে স্থানীয় লোকজন এ ফ্লাইওভারটি অপসারণের দাবি তুলেন।
স্থানীয় সংসদীয় আসনের সাবেক এমপি বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান এম. মোরশেদ খান বলেছেন, ‘স্থানীয় জনগণের কাছে এ ফ্লাইওভার এখন মরণ ফাঁদে পরিনত হয়েছে। এটি অবিলম্বে অপসারণ করে নগরবাসীকে মরণ আতঙ্ক থেকে মুক্তি দেওয়া হোক।’
বহদ্দার বাড়ির বাসিন্দা জিয়া ও এক কিলোমিটার এলাকার বাসিন্দা আবদুল্লাহ জানান, বাসা-বাড়ি থেকে বের হয়েই ফ্লাইওভার অতিক্রম করতে হয় আমাদের। কিন্তু এর পাশ দিয়ে পথ চলতে এখন আতঙ্ক বোধ করছি। প্রতিনিয়ত মনে হয় এইবুঝি ধসে পড়ছে গার্ডার কিংবা ফ্লাইওভারের অন্যকোন অংশ। ১০ নম্বর রুটের গাড়ি চালক হামিদ জানান, ‘ফ্লাইওভার পার হওয়ার সময় আল্লাহরে ডাকি খালি। এত ভয় লাগে মনে হয় ফ্লাইওভার বুঝি গাড়ির ওপর পড়ল। কোনরকম তড়িগড়ি করে ফ্লাইওভার এলাকা পার হয়ে যাই।’
এদিকে ফ্লাইওভারের আরেকটি গার্ডার ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) মিরাজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘২০ ও ২১ নম্বর পিলারের একটি গার্ডার ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। এ জন্যে গতকাল দুপুরে জনসাধারণকে ওই পথে সাবধানে চলাচলের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনাস্থলের কাছেই নতুন চান্দগাঁও থানা থেকে ‘এক কিলোমিটার’ এলাকা পর্যন্ত গার্ডারটি ঝূঁকিপূণ তাই সড়কের একপাশে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ডিসেম্বরে বহদ্দারহাট এলাকায় ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজের প্রক্রিয়া শুরু হয়। মূল কাজ শুরু হয় ২০১১ সালের মার্চ থেকে। আগামী বছরের ফেব্র“য়ারীতে এটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে। ফ্লাইওভারটির দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ৩৩২ কিলোমিটার আর প্রস্থ ১৪ মিটার বা ৪৬ ফুট। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হচ্ছে ১০৬ কোটি টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আকতার-পারিসা এন্টারপ্রাইজ ফ্লাইওভারটি নির্মাণ কাজ শুরু করলেও এ প্রতিষ্ঠানের মালিক ডা. জাহাঙ্গির সাত্তার টিংকু’র মৃত্যুর পর বর্তমান জেভি কন্সট্রাকশন নামে অপর একটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×