somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হৃদয় জুড়ে শোকের মাতম!!!

২৭ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হৃদয় জুড়ে শোকের মাতম
(১)‘খোদেজা’ রংপুর থেকে এসেছে।বাড়িতে এক ছোট ভাই আর বোন থাকে,পরিবারের হাল ধরার সে-ই আছে।বাবা থেকেও যেন নেই।প্যারালাইসিস হয়ে বিছানায় দিনের পর দিন।গার্মেন্টসের এই চাকরিটা-ই তার ভরসা।নিজের এবং পরিবারের বেচে থাকার অবলম্বন।বাবা মায়ের অনেক নিষেধ সত্ত্বেও ঢাকায় চলে এসেছে।দু’তিনমাস বাড়িতে টাকা দেয়ার পর মেয়ের উপর থেকে বাবা মায়ের রাগ যেন আর থাকলো না।মেয়েটিকে নিজেদের ছেলের মতই ভাবতে শুরু করল।একদিন গার্মেন্টসে আগুন লেগে মেয়েটির মৃত্য হয়।
(২)মানিকগঞ্জের মেয়ে ‘রুপালী’।বাবা মায়ের আর্থিক অবস্থা খারাপের কারনে এক আত্নীয় তাকে তাদের কাছে নিয়ে আসে।মেয়েটিকে গার্মেন্টসে চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়।এই মাসটি ছিল গার্মেন্টসে ‘রুপালী’-র শেষ মাস।বেলা গড়িয়ে অনেকদুর চলে এসেছে।মেয়েটির বিয়ে নিয়ে কথাবার্তা চলছে।বাবা মা চাইছে চাকুরি ছেড়ে সে যেন চলে আসে।বিদেশ ফেরত এক ছেলের সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে।ছেলের শর্ত মেয়েকে গার্মেন্টসের চাকুরিটি ছেড়ে দিতে হবে।সংসার নিয়ে এখন সে-ই ভাববে।বিয়ের সংবাদটি রুপালীর মনে খুশির বন্যা বইয়ে দিয়েছে,প্রতিটি রাত স্বপ্নে দেখতো লাল টিপ আর রঙ্গিন বেনারসী শাড়ি পরে বধু সেজে আছে।এতদিনে সব বান্ধবীদের বলে দিয়েছে তার বিয়ের কথা,বিদেশ ফেরত হবু স্বামীর কথা।হল না;রুপালীর আর বধু সাজা হল না,গার্মেন্টসে আগুন লেগে তার সমস্ত দেহ পুড়ে গেল।সেই সাথে পুড়ে গেল তার স্বপ্নও।
বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি কালো রা্তের অধ্যায় রচিত হল ২৪ নভেম্বর দিবাগত রাত।রাতের আধার আরো কালো হয়ে উঠেছিল শোকের অমানিশায় মিশে।শোকের মাতম বইছে সমগ্র বাংলার আকাশ বাতাস জুড়ে।শোকের মাতম বইছে স্বজন হারানোদের হৃদয় জুড়ে।শোকের মাতম বইছে আমার হৃদয় জুড়ে।কোন না কোন দুর্ঘটনায় প্রতিদিন মানুষ মারা যাওয়া আমাদের নিত্য নৈমত্তিক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকলেও একদিনে এত মানুষ মারা যায়নি।আশুলিয়ায় গার্মেন্টসে আগুন ধরে দেড়শো’র মত শ্রমিকের প্রানহানি আর চট্টগ্রামে ফ্লাইওভার ভেঙ্গে মারা গেছে ১৫ থেকে ২০ জনের মত;সাথে প্রতিদিনের নিত্য নৈমত্তিক মৃত্য সংখ্যা তো আছেই।সব মিলিয়ে একশো ষাট থেকে একশো সত্তর জনের মত লোকের প্রানহানি ঘটল।

এই যে এতজন নিরীহ লোকের প্রানহানি ঘটল,এর জন্য কি তারা নিজেরাই দায়ী?তাদের মৃত্যুর জন্য তারাই দায়ী??যদি তা না-ই হয় তবে, এত লোকের মৃত্যুর দায়ভার কার?? কে নিবে???তারা নিরীহ বলে তাদের প্রানের কোন দাম নেই?এক লাখ টাকা দিলে কি কোন মায়ের সন্তান হারাবার জ্বালা মিটে যাবে?মিটে যাবে কোন স্ত্রীর স্বামী হারাবার বেদনা?যে মেয়েটি এতদিন সংসারের ঘানি টেনে আসছিল,যার টাকায় মাস শেষে বাবা মায়ের মুখে হাসি ফুটত,আজ সেই মেয়েটির শুন্যতা কি এক লাখ টাকা ভরিয়ে দিবে?হয়ত কয়েক মাস সংসার নিয়ে তাদের ভাবতে হবে না কিন্তু বাকি জীবনের ব্যবস্থা কী হবে?কপালে লাল টিপ আর রঙ্গিন বেনারসী শাড়ি পড়ে বধু সাজার স্বপ্ন কি স্বপ্নই থেকে যাবে রুপালী’দের।স্বজন হারানোর বেদনাকে এক লাখ টাকায় চাপা রাখার বৃথা চেষ্টার এই ধারা কি চলতেই থাকবে?আগামীর খোদেজা আর রুপালী’র মত মেয়েদের স্বপ্ন আর বেচে থাকার সংগ্রামের পথকে সুগম করার কোন পরিকল্পনা বা পদক্ষেপ কি তারা এখনো নিবেন না?বেচে থাকার অনুকুল পরিবেশ পাওয়ার অধিকার কি তাদের নেই?দিন-রাত যাদের খাটিয়ে,যাদের ঘাম ঝরা শ্রমে যারা ভুরি ভুরি টাকা আয় করেন,নিজেদের ভান্ডার সমৃদ্ধ করেন,তাদের জন্য তো আপনাদের সবচেয়ে বেশি মায়া হওয়া উচিত,নায্য পরিশ্রমের মুল্য না দেয়ার বিষয়টি না হয় বাদ-ই দিলাম কিন্তু তাদের নিরাপত্তায় এত অবহেলা কেন???প্রানের নিরাপত্তাটুকু পাওয়ার অধিকারও তাদের নেই?

কোন দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর আমাদের টনক নড়ে।ধরা পড়ে ঘটনা ঘটার কারন।মিডিয়া গুলোতে ঢালাওভাবে প্রচার করা হয় ঘটনার নৈপথ্যের কারন গুলো।কিন্তু,তখন কি লাভ?যা ঘটার তা তো ঘটেই গেল।চোর পালানোর পর বুদ্ধি উদয়ের মত।অথচ এর আগে সারা বছর এসব নিয়ে তাদের কোন মাতামাতি নেই।বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার বেহাল দশা নিয়ে কোন রিপোর্ট তেমন দেখা যায় না।সরকারি-বেসরকারি কন্সট্রাকশন কাজগুলোতে স্বচ্ছতার অভাব, অবহেলা আর অদক্ষতা নিয়েও তেমন জোরালো রিপোর্ট চোখে পড়েনা।এসব বিষয়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জোরালো ভুমিকা না থাকার কারনে বিষয়টি সরকারকে তেমন নাড়া দেয় না।আর যে কারনে সেগুলো বরাবরের মত দৃষ্টির অগোচরেই থেকে যায় এবং একটা ভয়াভহ দুর্ঘটনা ঘটার মধ্য দিয়ে সবার সামনে প্রকাশ পায়।মিডিয়ার সংশ্লিষ্টরা এখন হয়ত আমার উপর রেগে গেছেন;তারা হয়ত আমাকে দোষারোপ করছেন।মনে মনে বলছেন এসব বিষয় নিয়ে তাদের অতীতের প্রকাশিত রিপোর্ট গুলো আমার এবং সরকারের চোখে পড়ে নাই?যদি পড়ে থাকে তাহলে তো সরকারকে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখিনি?হ্যা,আপনাদের ধারনাও ঠিক।আর আমি মোটেও আপনাদের কাধে এসব দুর্ঘটনার দায়ভার চাপাচ্ছি না।আমাদের সরকার নিয়ে খুব বেশী বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।প্রতিদিন মারার পরও একশ্রেনীর ছাত্ররা পরদিনও পড়া না শিখেই স্কুলে যায়,অর্থাত তাদের কাছে শাস্তি বিনোদনের মতই মনে হয়। তখন শিক্ষকরা মজা করে প্রায় ওদের বলে ‘তোদের এত মারার পরও শিক্ষা হয়না,তোদের চামড়া বোধহয় গন্ডারের চামড়ার মত’।আমাদের সরকারে অবস্থা এখন অনেকটা গন্ডারের মত।চোখে আঙ্গুল দিয়ে সমস্যার দৃষ্টিপাত করলেও তাদের টনক নড়তে চায়না।এসব তাদের সয়ে গেছে।বিভিন্ন জরুরী বিষয়গুলো নিয়ে মিডিয়ার রিপোর্ট তাদের কাছে বিনোদনই মনে হয়।তবুও যখন কোন বিষয় নিয়ে মিডিয়ায় বেশ জোরালো ভাবে তুলে ধরা হয় তখন গন্ডারও কিছুটা ব্যাথা পেতে বাধ্য,তাদের ইমেজ রক্ষার্থে তারা অবশ্যই বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে দেখবে এবং সমাধানে এগিয়ে আসবে।
গার্মেন্টস কারখানায় আগুন লাগার ঘটনা নতুন কিছু নয়।এত ঘটনা ঘটার পরও,এত প্রান ঝরে পড়ার পরও বিষয়টি তাদের ভাবাচ্ছেনা?সরকারের উচিত পোশাক কারখানাগুলোতে মনিটরং-য়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যাবস্থা জোরদারের বিষয়টি খতিয়ে দেখা এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা ও পদক্ষেপ নেয়া।মানলাম তারা নিরীহ বিধায় তাদের প্রানের মুল্য আপনাদের কাছে নিতান্ত,কিন্তু একটা সময় পর নির্বাচন সময়ে এরাই আপনাদের কাছে মুল্যবান হয়ে উঠবে,অন্তত সে সময়ের কথা মনে করেও কি তাদের নিয়ে ভাবা যায় না?
এত মানুষ মারা যাচ্ছে,সড়ক দুর্ঘটনায়,আগুন লেগে,নৌকা কিংবা লঞ্চ ডুবিতে যে দুর্ঘটনা গুলো একটু সচেতন হলেই এড়ানো যায়,বেচে যায় অনেক প্রান।আমরা কি পারিনা সব কিছুর পাশাপাশি নিজেদের প্রানের কথা ভেবে একটূ সচেতন হতে?
মৃত্য মিছিল দেখতে দেখতে হৃদয়টাও যেন ক্রমান্বয়ে পাষান হয়ে যাচ্ছে,এত মৃতদেহ চোখের সামনে দ্রুত হামাগুড়ি খায় হৃদয়ের শোকাবহ আবরন যেন লেগেই আছে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×