somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিষণ্ন বিরিওজা - ৯

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিষণ্ন বিরিওজা - ৯
------------------------------ ডঃ রমিত আজাদ

(পূর্ব প্রকাশিতের পর থেকে)

বাহ্ মেয়েটিতো সুন্দর!" বেশ উচ্ছসিত হয়ে বললেন আশরাফ ভাই। পাশে বসে মুচকি হাসলেন শিশির ভাই।
ডিভানের এক পাশে চুপচাপ বসে ছিলো তাতিয়ানা। ও বাংলা বোঝেনা তাই আমাদের সুবিধা হচ্ছিলো। এদেশে এটাকে অভদ্রতা মনে করা হয়, যখন ভিনদেশী একজন বা কয়েকজনার উপস্থিতিতে কেউ কেউ তার মাতৃভাষা বা এমন কোন ভাষায় কথা বলে যা সবাই বুঝতে পারেনা। কিন্তু আমরা বাঙালীরা অত ভদ্রতা বুঝিনা। সমানে অন্যদের সামনে বাংলায় কথা বলে যাচ্ছি। অন্যে যে আমার কথাটা বুঝতে পারছে না,সে বিব্রত বোধ করতে পারে, এটা চিন্তা না করে বরং এটার সুযোগই নেই বেশীর ভাগ সময়ে।

আশরাফ ভাই আর শিশির ভাই, আমার রুমে এসেছিলেন বেড়াতে। আধ ঘন্টা তক গল্প-গুজব করার পর এক পর্যায়ে তাতিয়ানা এসে ঢুকলো আমার রূমে। সাদা টপস আর কালো স্কার্ট পরিহিতা তাতিয়ানাকে আমার খুব সাদাসিদে মনে হচ্ছিলো। যার সম্বন্ধে আমি ইতিমধ্যেই উনাদেরকে বলেছি, 'অসুন্দর'। সেই মেয়েটিকেই আশরাফ ভাই সুন্দরী আখ্যা দিলেন! আসলে পছন্দের রকমফের হয়।একবার রাশিয়ার ভ্লাদিমির শহরে বেড়াতে গিয়েছিলাম। একটি উঁচু টিলায় বসে শহরের বুক চিরে চলে যাওয়া ছোট একটি নদীর সৌন্দর্য্য উপভোগ করছিলাম। এসময় দুটি রুশ মেয়ে এগিয়ে এসে আমার পাশে বসা ভ্লাদিমিরে অধ্যয়নরত আমার বন্ধুটির সাথে কুশল বিনিময় করলো। দুজনাই ইউনিভার্সিটিতে সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী। এদের মধ্যে একজন ছিলো দীর্ঘাঙ্গী, প্যান্ট শার্ট পরা, অপরজন ছিলো মাঝারী গরনের, পরনে স্কার্ট। ওরা চলে যাওয়ার পর আমার বন্ধুটি বললো, "কেমন দেখলি ঐ মেয়েটিকে?"
আমিঃ কোন মেয়েটি?
বন্ধুঃ স্কার্ট পড়া মেয়েটি।
আমিঃ হাসিখুশী।
বন্ধুঃতা ঠিক আছে। কিন্তু দেখতে কেমন?
আমিঃ হু, মোটামুটি। (দায়সারা গোছের উত্তর দিলাম)
বন্ধুঃ সুন্দর না, তাইনা?
আমিঃ হ্যাঁ, তাই। এবার সত্যি কথাটা বললাম।
বন্ধুঃ অথচ, এক ইন্ডিয়ান ছেলে ওর জন্য পাগল। ছেলেটি খুব ভদ্র। মেয়েটিকে ভীষণ ভালোবাসে। মেয়েটির জন্য ও কেঁদেছে পর্যন্ত। ওর বক্তব্য, "এতো সুন্দর মেয়ে আমি জীবনে কখনো দেখিনি"।
আমি ভাবলাম, এজন্যই বোধহয় গান রচিত হয়েছে, 'যার নয়নে যারে লাগে ভালো!'


আশরাফ ভাইরা চলে যাওয়ার পর আমি কিছুক্ষণ টিভি দেখলাম। কালকে একটা ক্লাস টেস্ট হবে, পড়তে ইচ্ছা করছিলো না। ফাইনাল ইয়ারে এসে আর ক্লাস টেস্টে কোন টেস্ট পাইনা। টিভিতে চলা এ্যমেরিকান ফিল্মটি বোগাস মনে হলো। সব এক ধাঁচের। ক্রাইম, খুন, গাড়ী ভাঙা, টাকা আর সেক্স। এই হলো এ্যামেরিকান ফিল্মের মাল-মশল্লা! কফি তেস্টা পেলো। ইলেকট্রিক কেটলটা অন করলাম।

টুক টুক টুক, তাতিয়ানা হতে পারে। আজকাল দিনে দুবারও আসে। যা ভেবেছিলাম তাই। তাতিয়ানাই। পোষাক পাল্টে এসেছে। পরনে হালকা খাটো সাদা শার্ট আর কালো রঙের মিনি স্কার্ট। যথারিতি সিডাকটিভ পোষাক। ও কি আমাকে সিডিউস করার জন্য এই পোষাক পড়েছে? বুঝিনা। হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। এখানে তো ঐ পোষাক স্বাভাবিক। এই মুহুর্তে করিডোরে অনেক মেয়েকেই ঐ পোষাকে দেখা যাবে।

আমিঃ বসো।
তাতিয়ানাঃ কি করছো?
আমিঃ কিছুনা। টিভি দেখার চেষ্টা করছিলাম। বোগাস এ্যামেরিকান ফিল্ম।
তাতিয়ানাঃ অন্য চ্যনেলে দেখো কি আছে।
আমিঃ মুড নাই।
তাতিয়ানাঃ তাহলে গান শোন।
আমিঃ গান? হ্যাঁ, গান শোনা যায়।
তাতিয়ানাঃ তাহলে চালাও।
আমিঃ ওকে
এই বলে আমি ক্যাসেট প্লেয়ারের সুইচ অন করতে গিয়ে থেমে গেলাম।
তাতিয়ানাঃ কি ব্যাপার?
আমিঃ না থাক।
তাতিয়ানাঃ কেন?
আমিঃ এখানে তুমি আছো।
তাতিয়ানাঃ আমি থাকাতে গান শুনতে অসুবিধা কি?
আমিঃ আমি তো বাংলা গান শুনি। তুমি তো বুঝবে না। শুধু শুধু বোর ফীল করবে।
তাতিয়ানাঃ ওহো, এই ব্যাপার! না তোমাদের গানের অর্থ আমি বুঝিনা সত্য, কিন্তু সুর খুব ভালো লাগে।
আমিঃ একটা গান শুনেই সুর ভালো লেগে গেল?
তাতিয়ানাঃ একটা গান? না একটা গান না। আমি আগেও তোমাদের দেশের গান অনেক শুনেছি।
আমি সরু চোখে ওর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম
আমিঃ আমার আগেও আরো কারো কাছে আমাদের গান শুনেছ নাকি?
তাতিয়ানাঃ (হেসে ফেললো) না, কারো কাছে নয়। আমি ইন্ডিয়ান ফিল্ম দেখি মাঝে মাঝে। সেখানে তো অনেক গান থাকে। গান ছাড়া তো কোন ফিল্ম করতে পারোনা তোমরা।
আমিঃ কোথায় দেখো ইন্ডিয়ান ফিল্ম?
তাতিয়ানাঃ টিভিতে তো দেখায়। তাছাড়া আাদের গ্রামের সিনেমা হলেও আসে মাঝে মাঝে।
আমিঃ ও।
তাতিয়ানাঃ আচ্ছা তোমাদের ফিল্মগুলো গান ছাড়া হয়না, না?
আমিঃ তুমি তো ইন্ডিয়ান ফিল্মের কথা বললে। আমি তো ইন্ডিয়ান না, বাংলাদেশী।
তাতিয়ানাঃ জানি তোমাদের ভিন্ন ভিন্ন দেশ, কিন্তু আমার কাছে তোমাদের একই রকম মনে হয়। ইন্ডিয়ান বাংলাদেশীতে পার্থক্য কি খুব বেশী?
আমিঃ কিছু পার্থক্য তো আছেই। তা নইলে আলাদা আলাদা দেশ হবে কেন?
তাতিয়ানাঃ সে বোধহয় আমাদের ইউক্রেন আর রাশিয়ার মতো।
আমিঃ হতে পারে। ফিল্মে গানের কথা যেটা বলছো, ওটা কিন্তু হিন্দি ছবির আগে বাংলা ফিল্মেই প্রথম এসেছে।
তাতিয়ানাঃ তাই?
আমিঃ যতদূর জানি, প্লে-ব্যাক বিষয়টি, মানে নেপথ্যে গায়ক-গায়িকা গান গাইবে, আর পর্দায় নায়ক-নায়িকা লীপ মিলাবে এই বিষয়টি পৃথিবীতেই প্রথম চালু করা হয় বাংলা সিনেমায়।
তাতিয়ানাঃ তাই? তোমাদের সিনেমায়?
আমিঃ হ্যাঁ, তবে তখন ফিল্ম ঢাকায় চিত্রায়িত হতোনা, হতো কোলকাতায়।
তাতিয়ানাঃ ইন্টারেস্টিং। আমাদের রুশ কিছু ছবিতেও তো প্লে-ব্যাক রয়েছে।
আমিঃ আমি দেখেছি। বিখ্যাত ছবি ‘কাভখাজকাইয়া প্লেননিত্সা’, ‘ইরোনিয়া সুদবি ইলি এস লিওগকিম পারোম’, ইত্যাদি ছবিগুলেতে প্লে-ব্যাক আছে।
তাতিয়ানাঃ তাইতো। তার মানে এটা আমরা তোমাদের কাছ থেকে শিখেছি?
আমিঃ তাইতো মনে হয়। বাই দ্য বাই। আমি কিন্তু তোমাদের টিভিতে একটা প্রোগ্রাম দেখেছিলাম, 'সিনেমার গান' নামে।
তাতিয়ানাঃ হ্যাঁ, এক সময় খুব জনপ্রিয় ছিলো ঐ প্রোগ্রাম।
আমিঃ আমাদের দেশেও 'ছায়াছন্দ' নামে ঐরকম একটি প্রোগ্রাম খুবই জনপ্রিয় ছিলো।
তাতিয়ানাঃ ইন্টারেস্টিং, দেখতে পারলে ভালো লাগতো।
আমিঃ দেখবে?
তাতিয়ানাঃ কিভাবে?
আমিঃ ভিডিও চালিয়ে দেই।
তাতিয়ানাঃ ক্যাসেট আছে?
আমিঃ আছে।
তাতিয়ানাঃ চালাও তাহলে।
আমি গীতমালার একটি ক্যাসেট হাতে নিলাম, এখানে কিছু বাংলা ও হিন্দি গান রয়েছে। ভিডিওটার কাছে গিয়ে বললাম

আমিঃ না আজ থাক
তাতিয়ানাঃ (অনেকটাই ক্ষিপ্ত হয়ে) আজ থাকবে কেন? আশা দিয়ে এভাবে নিরাশ করো! দিস ইজ ভেরি ব্যাড।
আমিঃ না, নিরাশ করতে চাচ্ছিনা। মানে আজ অনেক রাত হয়ে গেছে।
তাতিয়ানাঃ কি হয়েছে তাতে? আমি কি হাজার মাইল দূরে থাকি নাকি?
আমিঃ কাছেই থাকো (একটু দমে গিয়ে বললাম)
তাতিয়ানাঃ তোমার ফ্লোরেই তো থাকি। আর দুটো রূম পরে। গভীর রাত হলেই বা সমস্যা কি?
আমিঃ না, তার পরেও।
তাতিয়ানাঃ তার আবার পর কি? এখানে কি আমার বাবা-মা আছে যে, আমার ফিরতে দেরী হলে তাদের রাতে ঘুম হবে না? ডরমিটরিতে তো আমরাই রাজা।
ওর এতো মারমুখো কথায় আমি আর, বাধা দিতে পারলাম না। ভিডিওটা অন করে দিলাম। গীতমালা বা ছায়াছন্দ চলতে শুরু করলো। তাতিয়ানাকে দেখলাম বেশ মুগ্ধ হয়ে দেখছে।
তাতিয়ানাঃ আচ্ছা এখানে যেমন দেখায়, তোমাদের দেশে প্রেমিক-প্রেমিকা কি সত্যিই এমন নাচ-গান করে?
আমিঃ সব্বোনাশ! রাস্তা-ঘাটে এরকম নাচ গান করলে রক্ষে আছে?
তাতিয়ানাঃ কেন কেন, কি অসুবিধা?
আমিঃ পাবলিক ধাওয়া দেবে।
তাতিয়ানাঃ বুঝলাম না!
আমিঃ মানে এরকম হয়না। আমাদের কালচারে নেই। এটা কেবলই সিনেমা।
তাতিয়ানাঃ ও, স্বপ্নের জগৎ!
আমিঃ তবে তোমরা এদিক থেকে এগিয়ে আছো।
তাতিয়ানাঃ কি রকম?
আমিঃ তোমাদের এখানে ডিসকো-টেকা হয়। সেখানে নাচ-গান করো। প্রেমিক-প্রেমিকা একে অপরের সান্যিধ্যে এসে ক্লোজ ড্যান্স করতে পারো।
তাতিয়ানা মৃদু হেসে বললো
তাতিয়ানাঃ তুমি ডিসকোতে যাওনা?
আমিঃ খুব কম।
তাতিয়ানাঃ তোমাকে দেখিনি কখনো।
আমিঃ কম যাই, তাই দেখোনি।
তাতিয়ানা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে, একটু দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে বললো
তাতিয়ানাঃ চলোনা নেক্সট স্যটারডেতে যাই।
আমিও একটু চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়লাম। কি উত্তর দেব। এই মেয়েটির সাথে আমি নিজেকে জড়াতে চাইনা। একটু থেমে ক্ষীণ স্বরে উত্তর দিলাম
আমিঃ দেখি।

ঐরাতে তাতিয়ানা আরো একঘন্টা আমার রূমে বসে সিনেমার গান শুনেছিলো। তারপর চলে যাওয়ার জন্য নড়েচড়ে বসে বললো
তাতিয়ানাঃ খুব রোমান্টিক, তোমাদের এই গানগুলো!
ও উঠে দাঁড়াতেই বাইরে ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো।
তাতিয়ানাঃ বাহ্ বৃষ্টি! তোমাদের দেশে তো অনেক বৃষ্টি হয়, তাই না?
আমিঃ হ্যাঁ আমাদের দেশে ঝম-ঝম বর্ষা নামে। ঝিলের বুকে শাপলা ফোটে। উথাল-পাতাল জোছনায় ভরে যায় চারিদিক। হালের দুপাশে দিগন্তজোড়া ধান ক্ষেত, তার উপর দিয়ে হু হু করে বয়ে যায় দুরন্ত হাওয়া!

তাতিয়ানা গভীর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো, জানিনা ও কি ভাবছে।

তাতিয়ানা উঠে দাঁড়ালো। আমি ভাবলাম চলে যাবে তাই উঠে দাঁড়িয়েছে। আমিও উঠে দাঁড়াতে যাব, এসময় ও আবার বসে পড়লো।
তাতিয়ানাঃ কি ধরনের ফিল্ম পছন্দ কর তুমি?
আমিঃ সব রকমই।
তাতিয়ানাঃ তাই হয় নাকি?
আমিঃ কেন হবে না?
তাতিয়ানাঃ সবার কি সব পছন্দ হয়? এই ধর রঙ , তোমার কি সব রঙই পছন্দ?
আমিঃ না।
তাতিয়ানাঃ এই দেখো, কোন একটি বিশেষ রংয়ের প্রতিই তোমার দুর্বলতা রয়েছে।
আমিঃ না ঠিক তাও নয়। কোন একটি বিশেষ রংয়ের প্রতি নয়, কিছু কিছু রং ভালো লাগে। যেমন আকাশী, ম্যাজেন্টা, বেগুনী।
তাতিয়ানাঃ তাইতো বলছি, সব ভালো লাগতে পারেনা। ভালো হলেও না। আবার ধরো ফুল, ফুল সবই তো সুন্দর, তারপরেও নিশ্চয়ই কোন একটি ফুল তোমার বেশি ভালো লাগে?
আমিঃ হ্যাঁ, তবে আবারও সেই, একটি নয় কয়েকটি ফুল আমার ভালো লাগে।
তাতিয়ানাঃ কোন কোন ফুল ভালো লাগে তোমার?
আমিঃ আমার ভালো লাগার ফুলগুলো দিয়ে তোমার বাগান ভরিয়ে দিতে চাও নাকি?
তাতিয়ানাঃ যাহ্ (লজ্জ্বা পেয়ে গেল তাতিয়ানা)। এম্নিই জানতে চাইছি।
আমিঃ আমার যে ফুলগুলো ভালো লাগে, তার কিছু তোমাদের দেশে আছে, আর কিছু কেবল আমাদের দেশেই আছে।
তাতিয়ানাঃ তোমাদের দেশে বুঝি অনেক ফুল ফোটে?
আমিঃ হ্যাঁ, তাতো ফোটেই। ট্রপিকাল কান্ট্রি। আবহাওয়া ভালো।
তাতিয়ানাঃ তাহলে নিশ্চয়ই তোমাদের দেশ পুরোটাই ফুল দিয়ে সাজানো অদ্ভুত সুন্দর একটা দেশ।
এবার আমার দীর্ঘনিশ্বাস ফেলার পালা। আমার দেশ সাজালে-গোছালে অবশ্যই অদ্ভুত সুন্দর একটা দেশ হওয়ার কথা। কিন্ত বিধাতা আমাদের যা দিয়েছেন, তার কিছুই আমরা কাজে লাগাতে পারিনি! রুচিবোধ বলে তো কিছুই আমাদের নেই। রাজধানী থেকে শুরু করে প্রতিটি শহর একেবারে ডাস্টবিন বানিয়ে রেখেছি। আর এদের সামান্য যা আছে, তাই দিয়েই এরা স্বর্গ রচনা করেছে।


তাতিয়ানাঃ কই বললে না তো তোমার কোন কোন ফুল ভালো লাগে?
আমিঃ আমার দেশের ফুলের মধ্যে, রজনীগন্ধা, কৃষ্ণচূড়া, বাগানবিলাস, কামিনী, কাঠ গোলাপ, অলকানন্দা, মাধবীলতা, ডালিয়া। তোমার দেশের মধ্যে যেগুলো আমার দেশেও পাওয়া যায়, লিলি, জেসমিন, গ্লাডিওলাস, ক্রিসেনথিমাম। যা তোমার দেশে পাওয়া যায় কিন্তু আমার দেশে নেই, যেমন কারনেশন, টিউলিপ।
তাতিয়ানাঃ ওরে বাব্বা! কোন ফুলই তো বাদ রাখলে না।
আমিঃ অনেকটা সেরকমই হয়ে গেল।
তাতিয়ানাঃ আসলে কি জানো?
আমিঃ কি?
তাতিয়ানাঃ তোমার মনটা খুব সুন্দর! সুন্দর মনের মানুষরা ফুল প্রিয় হয়।
আমিঃ তাই? (একটু অপ্রস্তুত হয়ে বললাম আমি)
তাতিয়ানাঃ আমি প্রথম দিন যেদিন তোমার রূমে ঢুকেছি সেদিনই লক্ষ্য করেছি, তোমার ঘর ভরা ফুল। এখানে সেখানে ফুলদানী আর তাতে নানা রংয়ের ফুল। তোমার পর্দার প্রিন্টেও খুব সুন্দর ফুলের ছবি তোলা। ডিভানের কাভারটাও ছোট ছোট চমৎকার ফুলের প্রিন্ট।
আমিঃ থাক থাক আর বলতে হবেনা। প্রশংসা বেশি হয়ে যাচ্ছে।
তাতিয়ানা: তোমাদের দেশে গোলাপ নেই গোলাপের কথা বললে না যে?
আমিঃ ও, গোলাপ! আসলে গোলাপ খুব কমোন একটা ফুল। আমি একে অসুন্দর বলবো না। গোলাপ তো সুন্দরই। তবে খুব কমোন হওয়ায় বোধহয় এর প্রতি আসক্তি কমে গিয়েছে।
তাতিয়ানাঃ গোলাপের প্রতি আসক্তি কমিও না।
আমিঃ কেন?
তাতিয়ানাঃ প্রিয়জনকে গোলাপই উপহার দিতে হয়।
আমি হেসে ফেললাম।
আমিঃ আচ্ছা ঠিকআছে, কোনদিন প্রিয়জন হলে আমি গোলাপই উপহার দেব।
হঠাৎ খুব করুণ চোখে আমার দিকে তাকালো তাতিয়ানা। আমি একটি বিব্রত হয়ে গেলাম। ওর দৃষ্টি হঠাৎ বদলে গেলো কেন?
তাতিয়ানাঃ তারপর ফিল্ম? ফিল্ম সম্পর্কে তো কিছু বললে না?
আমিঃ তুমি বলো। তোমার কি ধরনের ফিল্ম ভালো লাগে?
তাতিয়ানাঃ উঁ, হরর মুভি ভালো লাগে। তবে সবচাইতে বেশি ভালো লাগে রোমান্টিক মুভি।
আমিঃ আমি সব মুভিই দেখি, তবে ক্লাসিকাল মুভিগুলো বেশী ভালো লাগে।
তাতিয়ানাঃ তোমার দেশে টিভিতে এ্যরোটিকা দেখায়?
আমিঃ না।
তাতিয়ানাঃ কেন?
আমিঃ মুসলমানদের দেশ। টিভিতে এ্যরোটিকা দেখানো আন এথিকাল মনে করা হয়।
তাতিয়ানাঃ আমাদের দেশেও এগুলো একসময় আন-এথিকাল মনে করা হতো। এখন আর কোন বাছ-বিচার নাই। সবই দেখায়।
আমিঃ হ্যাঁ ইদানিং সবকিছুই লাগামহীন হয়ে গেছে।
তাতিয়ানাঃ তোমার দেশে টিভিতে পর্নোগ্রাফি দেখায়?
আমিঃ এ্যরোটিকাই দেখায় না, পর্নো তো অনেক দূরের কথা।
তাতিয়ানাঃ ও তাইতো, এ্যরোটিকা না দেখালে পর্নোতো অনেক দূরের কথা। ভিডিওতে পর্নো দেখা আইনসিদ্ধ?
আমিঃ আইনসিদ্ধ না। তবে চলছে। এই বিষয়ে কোন কড়াকড়ি নেই।
তাতিয়ানাঃ তুমি দেশে থাকতে পর্নোগ্রাফি দেখেছ?
একটু ফাঁপড়ে পড়ে গেলাম, কি উত্তর দেব! মেয়েটা এমন প্রশ্ন করছে কেন?
তাতিয়ানাঃ উত্তর না দিতে চাইলে থাক।
দেখলাম ওর চোখে কৌতুক চিকচিক করছে।
-------------------- *** -----------------------------------

টুক টুক টুক দরজায় নক করার শব্দ। তাতিয়ানাই হবে। এখন ও 'প্রোস্তা মারিয়া' দেখা ছাড়াও দিনে কয়েকবার আসে। গল্পগুজব করে। আমিও এতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। 'প্রোস্তা মারিয়া' ছাড়া বাকী সময়টুকুতে ওর জন্য আর বিশেষভাবে অপেক্ষা করি না। বাইরে নিজের কোন কাজ থাকলে বের হয়ে যাই। এই সময় তাতিয়ানা আসলেও আমাকে না পেলে ফিরে যায়, আবার আসে।

আমি "কাম ইন বলে দরজার দিকে চোখ রাখলাম।" দরজা ঠেলে যে ভিতরে ঢুকলো সে তাতিয়ানা তো নয়ই, এমনকি আমার বন্ধু-বান্ধবদেরও কেউ নয়। দীর্ঘকায় একজন সুপুরুষ ঢুকলেন তাও ইউনিফর্ম পড়া। ইউনিফর্মটির দিকে লক্ষ্য করলাম। পুলিশের ইউনিফর্মও নয়, মিলিটারির ইউনিফর্মও নয়। তাহলে কার ইউনিফর্ম?

ইউনিফর্মধারীঃ স্দ্রাভস্তভুইচে (সুস্থ থাকুন)!
আমিঃ স্দ্রাভস্তভুইচে!
উনার পিছনে পিছনে ডরমিটরির কমান্ড্যন্ট ঢুকলো। এবার আমার মেজাজ একটু তিরিক্ষি হলো। কোন ঝামেলা পাকাতে এসেছে নাকি?
আমিঃ আপনি?
ইউনিফর্মধারীঃ (সরল হাসি হেসে বললেন) না, কিছুনা। জাস্ট দেখতে এসেছি।
আমিঃ কি দেখতে এসেছেন?
ইউনিফর্মধারীঃ সব ঠিক আছে কিনা।
আমি (আরও অবাক হয়ে) কি ঠিক আছে?
ইউনিফর্মধারীঃ আমি ফায়ার ব্রিগেডের লোক। এটা আমাদের দায়িত্ব।
এবার বুঝতে পারলাম। ফায়ার ব্রিগেডের ইন্সপেকটর। রুটিন চেক আপ-এ এসেছে। এখানে অনেক ভালো কিছু আছে। প্রতিটি বাড়ী নির্মিত হয় যথাযথ বিল্ডিং কোড মেনে। তাই এখানকার কন্সট্রাকশন বেশ নিরাপদ।
একটি বাড়ী নির্মানের সময় ফায়ার ব্রিগেডের অনুমোদনেরও প্রয়োজন পড়ে। তারপর ফায়ার ব্রিগেডের ইন্সপেক্টররা নিয়মিত পরিদর্শন করেন সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা? আগুন লেগে যাওয়ার মত ঝুঁকিপূর্ণ এমন কিছু থাকলে তা সাথে সাথে সরিয়ে ফেলেন বা সমাধানের ব্যবস্থা করেন। কেউ অগ্নি সংক্রান্ত আইন অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়। তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই জনগন নিজেদের প্রয়োজনেই সচেতনভাবে এইসব আইন মেনে চলে। আমি মনে মনে ভাবলাম। দেশে থাকতে বিল্ডিং কন্সট্রাকশনে ও ইন্সপেকশনে যে ফায়ার ব্রিগেডেরও যে ভূমিকা থাকে এটা জানতামই না। আর কখনো কোন ফায়ার ব্রিগেডের ইন্সপেকটরকে দেখি নাই বাসা বাড়ী ইন্সপেকশন করতে।
ইউনিফর্মধারীঃ না ঠিকই আছে। (বলে আর একবার সরল হাসি হাসলেন)
আমিঃ আপনাকে ধন্যবাদ।
ইউনিফর্মধারীঃ আপনার ফার্নিচারগুলো ঠিকঠাক মতো রাখা আছে। অতিরিক্ত দাহ্য কোন পদার্থও দেখছি না।
আমিঃ ও, ধন্যবাদ।
ইউনিফর্মধারীঃ ভালো কথা। আপনার রুমে কি রান্নার হিটার আছে?
আমিঃ না। রান্নার হিটার লাগবে কেন? ফ্লোরে তো দুইটা কিচেন আছে।
ইউনিফর্মধারীঃ ঠিক। কেউ যাতে রূমে রান্না না করে এইজন্যই এই ব্যবস্থা।
আমিঃ আর কিছু?
ইউনিফর্মধারীঃ না। ও আচ্ছা। আপনার রূমের ফায়ার এলার্মটা একটু চেক করি।
এখানে প্রত্যেকটা রূমেই ফায়ার এলার্ম থাকে। দুর্ঘটনা বশতঃ আগুন লেগে গেলে বা লাগার সম্ভাবনা দেখা গেলে সাথে সাথে এলার্ম বেজে ওঠে।

ইউনিফর্মধারীঃ না। সবই ঠিক আছে। ইউ আর এ গুড বয়।
আমি হাসলাম ।
বিল্ডিং কোড কথাটি দেশে থাকতে শুনেছি বলে মনে পড়েনা। আইনে আছে নিশ্চয়ই। তবে ব্যাপক জনগনের মধ্যে প্রচলিত নেই। গায়ে গা লাগানো ঘিন্জি দালান-কোঠা তো খুবই বিপজ্জনক। কিন্তু এই বিষয়ে সরকারি কোন পদক্ষেপের কথা কখনো শুনিনি। পুরোনো ঢাকার পর নতুন ঢাকাতেও একের পর এক ঘিন্জি এলাকা গড়ে উঠতে শুরু করেছে। অথচ কারো কোন ভ্রুক্ষেপই নেই। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় একবার ঢাকার রামপুরা, মগবাজার, মালিবাগ সহ বেশ কিছু এলাকায় বড় বড় চওড়া লিংক রোড ও অন্যান্য রাস্তা তৈরী করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছিলো। কিন্তু উনি শহীদ হওয়ার পর এই সব পরিকল্পনাও শহীদ হয়ে যায়। তখন কাজটা করা অনেক সহজ হতো, কারণ উঁচুতলা কোন ভবন তখন ঐ সব এলাকায় ছিলনা শতকরা নব্বই ভাগই ছিলো একতলা বা টিনের ঘর। এরপর এরশাদের শাসনামলে শহরের পরিবেশ, যোগাযোগ কোনকিছুর কোন সুদুরপ্রসারী চিন্তাভাবনা না করেই সরু রাস্তা, আঁকা-বাঁকা অলি-গলির পাশে ব্যঙের ছাতার মত গড়ে উঠতে থাকে বহুতল ভবন। পুকুর ভরাট করে কখনো অনুমতিহীন আর কখনো ঘুষ দিয়ে অনুমতি নিয়ে তৈরী করা হয় অট্টালিকা। এরকম বেশ কিছু দালান ধ্বসে পড়ারও সংবাদ পাওয়া যায়। এসবের দায়ভাগ কেউ নিয়েছে বলে শুনিনি। উদ্ধার তৎপরতায়ও সরকারের উৎসাহ ছিলোনা কোন। হায়রে আমার দেশ! মানুষের জীবনের কি কোন মূল্য নেই? নাকি ইকোনোমিক্সের ডিমান্ড-সাপ্লাই থিওরী কাজ করছে। মানুষের সাপ্লাই এত বেশী হয়ে গিয়েছে যে, মূল্য কমে গিয়েছে অনেক। রেসিডেন্সিয়াল এরিয়ায় একের পর এক গড়ে উঠেছে গার্মেন্টস থেকে শুরু করে নানা ধরনের মিল-কারখানা। উন্নত দেশগুলোতে যেখানে রেসিডেন্সিয়াল এরিয়া, কমার্শিয়াল এরিয়া, ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়া ভিন্ন ভিন্ন, এবং অগ্র পশ্চাৎ অনেক চিন্তা ভাবনা করে এগুলো তৈরী করা হয়, সেখানে আমাদের দেশে হলো ডালে-চালে খিচুড়ী।

কোন একটি দুর্ঘটনায় উদ্ধার তৎপরতাও আশাব্যন্জক নয়। হঠাৎ আমার ফিলিপাইনের একটি মর্মান্তিক ঘটনার কথা মনে পড়লো। ১৯৮১ সালের ১৭ নভেম্বরের কথা। ফিলিপাইনের রাষ্ট্রক্ষমতায় তখন ছিলো জান্তা ফার্দিনান্দ মার্কোস। দেশের জনগণের কাছে যার কোন জনপ্রিয়তাই ছিলনা। তারপরেও বহাল তবিয়তে সিংহাসনে বসে ছিলো খুটির জোড়ে। একবার তার খ্যাতির লক্ষ্যে ভাবলেন, তাক লাগানো একটি ফিল্ম সেন্টার তৈরী করবেন তিনি। যথারীতি শুরু করলেন ব্যয়বহুল 'ম্যানিলা চলচ্চিত্র কেন্দ্র'-এর নির্মাণ। নির্মাণ চলাকালীন সময়ে তিনি এবং তার রূপসী স্ত্রী ইমেল্দা মার্কোস কয়েকদফা নির্মাণ পরিকল্পনা পরিবর্তন করেন। এর ফলে একদিকে যেমন কাজে বারবার বাধা আসছিলো আবার সেই বাধা মেক-আপ করার জন্য আসন্ন ফিল্ম ফেস্টিভালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে লক্ষ্য করে বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য তাড়াহুড়োও করা হচ্ছিলো প্রচুর। এসময় দুর্ভাগ্যবশত একটি scaffold ধ্বসে পড়ে, আর শ্রমিকরা পতিত হয় ভেজা সিমেন্টের মধ্যে যার উপরে ধ্বসে পড়েছিলো ভারী ভারী ইস্পাতের বার। অনেকেরই জীবন্ত কবর হয় ওখানে। বেঁচে থাকা অনেকেই ট্র্যাপ্টড হয়ে যায় । যেহেতু মৃতদেহ ও জীবিতদের উদ্ধার করতে যথেস্ট সময়ের প্রয়োজন ছিলো, তাই ইমেল্দা মার্কোস নির্দেশ দিলো, "উদ্ধার করার প্রয়োজন নেই, দেহগুলোকে সিমেন্ট দিয়ে ঢেকে দাও। কন্সট্রাকশন ওয়ার্ক চলুক।" এই দুর্ঘটনায় ১৬৯ জন মারা যায়। এবং তাদের দেহাবশেষ ঐ ইমারতেই রয়ে যায়। এই ভয়াবহতা ও নির্মমতার সংবাদ সকল ম্যানিলাবাসীই জানতো। কিন্তু প্রেসিডেন্ট মার্কোসের নির্দেশে ফিলিপিনি কোন সংবাদ মাধ্যেমেই তা প্রচারিত হয়নি। হায়রে নিস্ঠুরতা! স্বৈরাচার থাকলে যা হয় আরকি!!

ঐ অভিশপ্ত ভবনটির চারপাশ দিয়ে ভয়ে কেউ হাটতে চাইতো না। লোকে বলতো, নিহত হতভাগ্য শ্রমিকদের আত্মার দীর্ঘশ্বাস শোনা যায় ওখানে। পুরো ভবনের বাতাস ভারী হয়ে থাকে অকালে ঝরে পড়া অতৃপ্ত আত্মাদের চাপা কান্নার শব্দে। এর ফল অবশ্য ক্ষমতার দাপটে অন্ধ মার্কোস পরিবার পেয়েছিলো। কয়েক বৎসর পরে এই সাধারণ মানুষগুলোই ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ক্ষমতা থেকে ফেলে দিয়েছিলো ফার্দিনান্দ মার্কোস ও ইমেল্দা মার্কোসকে। ক্ষমতার জোরে অনেকেই অনেক কিছু করে আর বেমালুম ভুলে যায় ইতিহাসের শিক্ষা যে, ‘ক্ষমতা চিরকাল থাকেনা’।

----------------------------------------------------- ***---------------------------------------------

টুক টুক টুক দরজায় নক করার শব্দ। তাতিয়ানাই হবে। এখন রাত নয়টা বাজে। এসময় আজকাল তাতিয়ানাই বেশী আসে। দরজা ঠেলে তাতিয়ানা ঢুকলো।

আমিঃ কেমন আছো?
তাতিয়ানাঃ (বিষন্ন কন্ঠে) বোরিং।
আমিঃ কেন বোরিং কেন?
তাতিয়ানাঃ (আবারও মন খারাপ করা গলায়) জীবনটাই বোধহয় বোরিং।
আসলে ও ভুল কিছু বলছে না। মাঝে মাঝে আমারও খুব বোরিং লাগে। কিন্তু ঐ কথা না বলে ওকে শান্তনাই দেয়া উচিৎ।
আমিঃ ডরমিটরিতে বোধহয় তোমার ভালো লাগছে না। কয়েকদিনের জন্য বাড়ীতে চলে যাও। গ্রামের শান্ত নির্জন পরিবেশে ভালো লাগবে।
তাতিয়ানাঃ বাড়ীতেও বোরিং!
আমিঃ বাড়ীতেও বোরিং?
তাতিয়ানাঃ তার উপরে অনেক কাজ।
আমিঃ কি কাজ?
তাতিয়ানাঃ (একটু ক্ষুদ্ধ হয়ে), অনেক।
আমিঃ যেমন।
তাতিয়ানাঃ যেমন, ঘরে দুইটা গরু আছে। দিনে দুইবার করে ওদের দুধ দোয়াতে হয়।
আমিঃ হাঃ, হাঃ, হাঃ, (আমি হেসে ফেললাম)। তাহলে তো অনেক কাজই বলতে হবে।
আমার সাথে সাথে তাতিয়ানাও লাজুক হাসলো।

তারপর ভাবলাম। মেয়েটির বোরিং লাগে কেন? লাগতেই পারে। আমারও তো মাঝে মাঝে ভীষণ বোরিং লাগে। মাঝে মাঝে এই জীবন তো অর্থহীনই মনে হয়। গতকাল রাতেও তো এমন হয়েছিলো। রাত বারোটার পর চুপচাপ ডরমিটরির বাইরে বেরিয়ে এসেছিলাম। ঠিক মাথার উপরে চাঁদ হাসছিলো। চাঁদটাকে খুব বিমর্ষ মনে হচ্ছিলো। আসলে চাঁদ নয় আমিই বিমর্ষ ছিলাম। বাংলা সাহিত্যের শিক্ষক সাইফুল ইসলাম স্যারের কথা মনে পড়লো। উনি বলেছিলেন, “তোমার মনের অবস্থার মতই মনে হয় চারপাশের প্রকৃতিটাকে। যদি তুমি উৎফুল্ল থাকো, দিঘীর ঢেউয়ে চাঁদের খন্ড-বিখন্ড প্রতিফলন দেখে মনে হবে, ‘বাহ্! চাঁদটা কেমন হেসে কুটি কুটি যাচ্ছে’। আর তুমি যদি দুঃখ ভাড়াক্রান্ত থাকো, তোমার মনে হবে, ‘আমার দুঃখে চাঁদটা ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছে’। গতরাতে আমিও এমনি বিষণ্ন হয়ে পড়েছিলাম। এ বিষাদ বোধহয় মানুষের চিরকালের চিরন্তন চিত্তবৃত্তি। যেমন উইলিয়াম শেক্সপীয়র প্রশ্ন করেছিলেন, "হোয়াই আই এ্যাম সো স্যাড?" মানুষের অক্ষমতা আর অপূর্ণতার বেদনাই কি এই বিষাদের কারণ?

ওহ্! এইতো উত্তর পেয়েছি। তাতিয়ানার কোন অপূর্ণতা রয়েছে। কি সেই অপূর্ণতা?

আমিঃ তাতিয়ানা, তোমার কি কোন অপূর্ণতা রয়েছে?
দপ করে জ্বলে উঠলো তাতিয়ানার দৃষ্টি।
তাতিয়ানাঃ কি অর্থে?
আমিঃ না, মানে তোমাকে মাঝে মাঝে খুব বিমর্ষ লাগে তাই।

দৃষ্টি নামিয়ে নিলো তাতিয়ানা। কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলো না। একি সেই চিরন্তন নারী? ধ্যানস্তদ্ধ গভীর অরণ্যে, কম্পিত তারার তিমিরে আদিকাল থেকে কাকে যেন খুঁজে ফিরছে। সেই আকাঙ্খার নিবৃত্তি হবে কি কোন কালে? নাকি ঐ চাঁদের মতই বড় একাকী ও নিঃসঙ্গ রয়ে যাবে চিরকাল?


(চলবে)



বঁধু, মিটিলনা সাধ


বঁধু, মিটিলনা সাধ ভালোবাসিয়া তোমায়
তাই আবার বাসিতে ভালো আসিব ধরায়।
আবার বিরহে তব কাঁদিব
আবার প্রণয় ডোরে বাঁধিব
শুধু নিমেষেরি তরে আঁখি দুটি ভ’রে
তোমারে হেরিয়া ঝ’রে যাব অবেলায়।
যে গোধূলি-লগ্নে নববধূ হয় নারী
সেই গোধূলি-লগ্নে বঁধু দিল আমারে গেরুয়া শাড়ি
বঁধু আমার বিরহ তব গানে
সুর হয়ে কাঁদে প্রাণে প্রাণে
আমি নিজে নাহি ধরা দিয়ে
সকলের প্রেম নিয়ে দিনু তব পায়।।
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×