somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাঁদতে আসি নি

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


যারা চলে গেছে তারা প্রিয়তম স্বজনের আর্তনাদেও আর ফিরবে না। আফসোস তারা দেখে গেল না তাদের বাঁচাতে কত মানুষ নিজে থেকেই এগিয়ে এসেছে। তারা মৃত্যুর আগে ভুল ধারণা নিয়ে গেছে। আমি কল্পনা করতে চেষ্টা করি চারিদিকে যখন অন্ধকার করে সব কিছু ভেঙ্গে পড়ছিলো, তারা কি খুব অভিমান ভরে চিন্তা করেনি যে তাদের জীবনের দাম মালিকের এক শিফটের কাজের চাইতে কম, বাড়িতে রেখে আসা ছেলেমেয়ে স্বজনদের জন্য তাদের বুকের ভিতরে যে ভালোবাসা, তার শক্তি মালিকের লোভের শক্তির কাছে পরাজিত? সাভারে আজকে কি লোভের নিচে ভালোবাসা আর মানবতাই এই মুহুর্তে চাপা পড়ে নেই?
এ কয়েকদিন হাজার হাজার মানুষ মানবতার অদৃশ্য পতাকা হাতে যেভাবে ছুটে গেছেন তার ভেতর দিয়ে মানুষের ভিতর বয়ে চলা শুভ ইচ্ছার ঝরনা তার অস্তিত্ত্ব আর শক্তি জানান দিয়েছে।– অনেকে সাংবাদিকদের দোষ দিচ্ছেন,কিন্তু তারা ওই ধ্বংস স্তুপে সারা দেশের মানুষেরে চোখ হিসেবে কাজ করেছেন, মানুষ দেখেছে, বিচলিত হয়ে থাকতে না পেরে ছুটে গেছে। তারা কাউকে বলেনি টেলিভিশন খুলে সারাক্ষণ বসে থাকো- যার করার ইচ্ছা আর ক্ষমতা আছে সে কিছুটা দেখে বাকিটা নিজে চোখে দেখতে ছুটে যাবে।
দু:খের কথাটা হচ্ছে, এমন ঘটনা আমাদের কাছে খুব একটা নতুন নয়। আগেও ঘটেছে, আগামী কাল সকালেও আরেকটা ভবন ধ্বসে পড়লে কি আরেকটা গার্মেন্টস পুড়ে গেলে মনে হবে আরে এটাই তো নিয়ম- ভবন গুলো তৈরিই হয় মাঝে মধ্যে ধুমধাম করে ভেঙে পড়ে আমাদের চমকে দেবার জন্য।
প্রতিবার এরকম দুর্ঘটনা ঘটে, পরের কয়েকদিন বিভিন্ন ধরণের ক্ষতি পূরণের খবর আসতে খাকে। আমরা চমকে চমকে উঠি-মানুষের জীবনের দাম সম্পর্কে আস্তে আস্তে ধারণা পরিষ্কার হতে আরম্ভ করে। কখনো হাজার দশেক এককালীন টাকা, কোন্ বার যেন শোনা গেল এক পিস করে ছাগল- সাধারণ ছাগল অবশ্য না, একেবারে ব্ল্যাক বেঙ্গল গোট- প্রচুর মাংস হয় আর দুধও দেয় না কি অনেক!
দোষীদের খুজতে তাড়াহুড়া করে কমিটি গঠন করে পাবলিকের আই ওয়াশ করা হয়। মাঝে মাঝে চিন্তা করি, গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের নিজেদের বিবেক বলে কিছু কি থাকে না?, সারাদিন আমজনতাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে দিন শেষে তারা সেই বিবেকের কাছে কি জবাব দেন, আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে।
দেয়ালে পিঠ ঠেকা মানুষ আর কিছু করতে না পেরে সামনে যায়। আমরা সবাই চাইলে সেরকম কিছু কি করা যায় না?-আমি দোষীদের ফাসি টাসি চাই না। শত শত মানুষকে মেরে শতবার ফাসি তাদের পাওনা হয়েছে, তা যখন দিতে পারবেন না, তখন দরকার নাই ফাসির । বরং প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্তের(নিহত/আহত) পরিবার যেন দশ হাজার টাকা প্রতিমাসে সরকারি চাকুরেদের পেনসনের মত করে পায়, তার জন্য মালিক পক্ষকে দিয়ে একটা ট্রাস্ট গঠন করানো অনেক বেশি কার্যকর একটা পদক্ষেপ হতে পারে। হিসেব করে এমন পরিমাণ টাকা ( ক্ষতিগ্রস্তদের সংখ্যা অনুযায়ী কয়েক কোটি থেকে কয়েকশ কোটি টাকা হতে পারে) মালিকপক্ষ (দোষী কোম্পানী/ব্যক্তি) ব্যাংকে রাখবে, যাতে পেনসনের পুরো টাকাটা প্রতিমাসে ইন্টারেস্ট হিসেবে আসবে। টাকা দিতে না পারলে তার/তাদের স্থাবর অস্থাবর সব সম্পত্তি বিক্রি করে এই টাকা জোগার করা হবে। (তখনও না উঠলে না হয় যে যার সামর্থ মত এগিয়ে আসবে – কিন্তু তার আগে দোষীদের আন্ডার ওয়্যার পর্যন্ত খুলে দিতে হবে)
এটা মোটেও বেশি কিছু চাওযা নয়, অনেক পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি মারা গেছে, এই ঘটনার পর অনেক পঙ্গু বাবা মায়ের সন্তানকে স্কুল ছাড়তে হবে, অনেক অসহায় মেয়ে হয়তো বেচে থাকার যুদ্ধএ টিকে থাকতে নিজের শরীর ফেরি করতে নামবে, আমরা কেন বুঝবো না যে অনেকগুলা মানুষের জীবন এই সূর্যদয় থেকে সূর্যাস্তের ব্যবধানে পুরো এলোমেলো হয়ে গেছে- এবং সমস্ত ঘটনাটি ঘটেছে কিছু মানুষের সর্বগ্রাসী লোভের কারণে।
আমরা এমন এক জাতি যাদের দেশপ্রেম আর মানবতাপ্রেম হঠাৎ হঠাৎ জাগ্রত হয় ,বাকি সময় আমরা রাণীক্ষেত রোগে আক্রান্ত মুরগীটার মত ঝিমাই- আমাদের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা জন্তুগুলো সেইসময় তাদের যা খুশি তাই করে বেড়ায়।
এই বিশাল পরিমাণ অর্থ দোষীদের কাছ থেকে নেয়া হলে আমি মনে করি দুটি ব্যাপার হবে, প্রথমত সব হারানো মানুষদের বেঁচে থাকা কিছুটা সহজ হবে।
দ্বিতীয়ত ভবিষ্যতে যে কোন প্রতিষ্ঠানের মালিক এই জাতীয় কাজ করার আগে দুইবার ভাববে- ঝুঁকির মধ্যে কাজ করানোর আগে ভবন মেরামত করবে- মানবতা বোধ থেকে করবে না, যাদের যা নাই তাদের কাছে সেইটা আশা করা ঠিক না, ভবিষ্যতে আরো বেশি টাকা গচ্চা যাওয়ার ভয় থেকে করবে।
এখন আমরা ব্যস্ততার মধ্যে একটু সময় বের করে নিয়ে নিজেদের মনের কাছেই খুব গোপনে প্রশ্ন করতে পারি যে, আমরা আসলে কি চাই। আমরা কি কয়েকদিন পরপর নিয়মিত বিরতিতে আর্ত মানবতার পাশে দাড়িয়ে নিজেদের মনুষ্যত্বের প্রমাণ দিতে চাই, না কি মানবতাকে আর্ত করে এমন সব সম্ভাবনা আর উৎসকে একটা একটা করে মাটি চাপা দিয়ে এই জনপদে মানবতা আর মনুষ্যত্বের ভবিষ্যতকে নিরাপদ করতে চাই।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×