somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাইরাসের নাম ভালবাসা ।

২৫ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার সম্পর্কে অনেকের ভুল ধারনা আছে । আশা করি এই লেখাটি অনেকের সেই ভুল ভেঙ্গে যাবে।

প্রতিটা মানুষের জীবনে কোন না কোন এক সময় ভালবাসা নামক ভাইরাসে আক্রমন করে। আমার জীবনেও করেছিল। যদিও ঐ সময়টা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সঠিক সময় ছিল না। এখন বুঝি যে সময়টা ঠিক ছিল না । কিন্তু তখন বুঝিনি। মনে হয় খুব তাড়াতাড়ি পেকে গিয়েছিলাম । তাই যা হওয়ার তাই হল । ভাইরাস খুব ভাল ভাবেই ধরল। সময়টা ছিল ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বর মাস । যখন প্রথম প্রেমের চিঠি পেয়েছিলাম । কিন্তু সরাসরি চিঠিটা আমার হাতে আসেনি বা আমি তখনও ঐ চিঠি হাতে পাইনি। আমার প্রথম প্রেমের চিঠি আমার মায়ের হাতে দেওয়া হয়েছিল আমাকে দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিধি বাম। আমাকে দেওয়ার আগে আমার আম্মাজান এই চিঠিতে একবার চোখ বুলিয়েছিলেন । তারপর এই বিষয়ে আমার বাসায় গোল টেবিল বৈঠক বসল। অবশ্য বৈঠকে মানুষ ছিল মাত্র তিন জন । আমার মা-বাবা আর ছোটবোন । যাইহোক বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত হয়েছিল তা আমি আজও জানতে পারিনি । কিন্তু এইটুকু জানলাম আমার আর বাসায় থাকা হবে না। আমাকে পড়াশুনার জন্য দূরে কোথাও পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এইটুকু আমার ছোটবোনের কাছ থেকে শুনেছিলাম । কিছুদিনের মধ্যে আমাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যাওয়ার আগে একদিন লুকিয়ে আম্মার ব্যাগ থেকে নিয়ে সেই চিঠি পড়েছিলাম। যার পর থেকে আমার মনে সেই ভাইরাস ঢুকেছিল। সেই ভাইরাস মনে নিয়ে চলে গেলাম কিশোরগঞ্জে । ভর্তি হলাম বয়েজ স্কুলে । পারিবারিক কিছু সমস্যার কারনে বেশিদিন আমার কিশোরগঞ্জে থাকা হল না। তারপর আবার বাড়ীতে ফিরে এলাম। মন আনন্দে নেচে উঠল । তার সাথে দেখা হবে এই কথা ভাবতেই ভাল লাগছিল । যদিও আমি তার চিঠির উত্তর দেইনি। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দেখা হল । আবার একটি চিঠি পেলাম। এইপর তার সাথে আর দেখা হয়নি প্রায় ৫ বছর। যার কারনে তার এই চিঠির উত্তর ও দিতে পারিনি। ২ মাসের মধ্যে আমাকে আবার বাড়ীর বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হল। ওর আব্বা বদলি হয়ে গেল । আমি আমার এক বান্ধবীর মাধ্যমে তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু মন আমার মানে না। অনেক চেষ্টা করে তার ঠিকানা পাওয়া গেল । ততদিনে আমি মোবাইল ব্যবহার শুরু করেছি । ঠিকানা পাওয়ার পর তাকে চিঠি লিখলাম । আমার লেখা প্রথম চিঠি । তাতে আমার মোবাইল নাম্বার দিয়ে দিলাম। চিঠি পোষ্ট করার পর অপেক্ষার পালা। দিন যেন আর কাটছিল না। চিঠি পোষ্ট করার ২ মাস ৭ দিন পর আমার মোবাইলে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসল । এটা ছিল ২০০৫ সালের ৮ জানুয়ারি । সময়টা ছিল ১০.৩৮ মিনিট । এইটা এখনো ভুলতে পারিনি । পারব কিনা জানি না । ফোনের অপর প্রান্তের কণ্ঠ শুনে মনে হল আমার অনেক দিনের পরিচিত। যদিও এর আগে তার সাথে কথা হয়নি । দুই মিনিট কথা বলা শেষে ফোন রেখে দিল । আমার তখনও বিশ্বাস হচ্ছিল না । আমার বার বার মনে হচ্ছিল আমি স্বপ্ন দেখছি। সেইদিন সন্ধ্যায় একঘন্টার মত কথা বললাম । এতদিনের জমানো কথা। একঘন্টা কথা বলার পর ফোনের টাকা শেষ হয়ে গেল । তখন ৩০০ টাকার নিচে কার্ড ছিল না। যার হাতে টাকা পয়সা না থাকায় কার্ড কিনতে পারিনি তাই কথাও হয়নি চার দিন। এরপর থেকে আমাদের নিয়মিত কথা হতে থাকে। চলতে থাকে প্রেমের গাড়ী । দেখতে দেখতে আমাদের এস এস সি পরীক্ষা চলে আসে। আব্বা আমার মোবাইল নিয়ে যায়। কিন্তু আমাদের কথা চলতে থাকে । আমি ফোন ফ্যাক্সের দোকান থেকে ফোন করতাম। আমার পরিচিত একটা দোকান ছিল । পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল । আমাদের কথা বলার মাত্রা আরও বাড়তে লাগল। আব্বা প্রতি পরীক্ষার দিন ১০০ টাকা দিতেন । আমি হলে হেটে যেতাম আর হেটে আসতাম । আর ঐ টাকা দিয়ে কথা বলতাম । তার বাসার সবার সাথে আমার কথা হত । তার আম্মা আমাকে খুব আদর করতেন। পরীক্ষা শেষ হলে তাদের বাসায় যাওয়ার কথা বললেন । ঠিক হল পরীক্ষা শেষে তার বাসায় যাব। ২০০৫ সালের এপ্রিলের ১৪ তারিখ আমি আর আমার এক বন্ধু মিলে তার বাসায় যাই। বাসায় তার আব্বা আম্মা ছিল । তার আম্মা আমাদের ব্যপারটা জানত । অনেক মজা হল । অনেক দিনের আক্ষেপ পূরন হল । চোখ জুড়িয়ে তাকে দেখলাম। বসে গল্প করলাম। বিকালে আমরা চলে আসলাম। আমাদের প্রেম মনে হয় এরপরে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠল। আগে দিনে ১০ মিনিট কি ২০ মিনিট কথা হত । আর এখন ৩০ মিনিট ৪০ মিনিট কথা হয় । ততদিনে মোবাইলের কল রেট কিছুটা কমে এসেছিল। এফ এন এফ নামক নতুন এক অফার দিল। মাই টাইম নামক অফার দিল । আর আমরা তার উপযুক্ত ব্যবহার শুরু করলাম। ভালোই কাটছিল দিন । তখনও ভাবতে পারিনি কপালে কি অপেক্ষা করছে। ২০০৬ সালের মাঝামাঝি জানতে পারলাম তাদের এলাকার একটি ছেলে তাকে খুব পছন্দ করে । তাকে নাকি প্রায়ই রাস্তায় প্রেম নিবেদন করে । আস্তে আস্তে সেই ছেলে তার মনে জায়গা করে নিতে থাকে। পাথর ঘষলেও নাকি ক্ষয় হয়। আর এটা তো মেয়ে মানুষের মন। পরিবর্তন হতে বেশি সময় লাগেনি । এই সময়ে মধ্যে তার সাথে আমার আরও তিন চার বার দেখা হয়। আমাদের দেখা হত তার বাসায় । ২০০৭ সালের মাঝামাঝি তার পরিবর্তনের হাওয়া খুব জোরেশোরে লাগে। আর আমার সাথে তার দূরত্ব বাড়তেই থাকল । সে ঊল্টা পাল্টা কথা বলত। আর আমার মেজাজ খারাপ হত। এভাবে চলতে চলতে একদিন সে আমাকে বলল তাকে ভুলে যেতে । সে এখন আর আমাকে ভালবাসে না। তার সব স্বপ্ন এখন সেই ছেলেটিকে নিয়ে। আমার মনটাকে ভেঙ্গে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন টুকরো করে দিয়ে সে আমার জীবন থেকে সরে গেল। আমার মাথায় সমস্ত সৌর জগত ভেঙ্গে পড়ল । ট্রিলিয়ন টুকরো হৃদয় নিয়ে আমি কিছুদিন পাগলের মত হয়ে গেলাম। আমার স্বাভাবিক সব কাজ কর্ম থেমে গেল । আমার পৃথিবীতে এক প্রলংকারী এক সাইক্লোন আঘাত হানল । সাইক্লোন যখন থামল ততক্ষনে আমার সবকিছু হারিয়ে গেছে । আমি বিদ্ধস্ত অবস্থায় হয়ে পড়ে রইলাম। ঝড় থেমে গেছে সেই কবে । তার ক্ষয়ক্ষতি আজও পুষিয়ে উঠতে পারিনি । আজও মনে পড়ে সেই ঝড়ের দিনটার কথা । মনে পড়ে গা আজও শিউরে উঠে। যার জন্য পরবর্তীতে কারও সাথে কোন ধরনের সম্পর্কে জড়াতে পারিনি। যদিও আমার নামে অনেকে অনেক রকমের অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি ওই সব লোকের কথাকে থুরাই কেয়ার করি। নিন্দুকের কথায় কান দেওয়ার মত সময় আমার নেই।

প্রেম একবার এসেছিল নীরবে , আমার দুয়ার প্রান্তে ।


বিঃদ্রঃ- বিশেষ কারনে সেই মহীয়ষীর নাম ঠিকানা দিলাম না।
গুরুচন্ডালী দোষ ক্ষমাযোগ্য অপরাধ। তাই সবাই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । কষ্ট করে পুরো লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×