somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাবলিকের খাদ্য

২২ শে নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুর্নীতি নিয়ে পত্র পত্রিকায় লেখালেখির অন্ত নাই। সাধারণত পত্র পত্রিকা সেই সব খবরই ছাপার যোগ্য মনে করে—যে লেখাগুলো জনগন গোগ্রাসে গিলে। খুব স্বাভাবিকভাবেই তাই সারাংশ দাঁড়ায়—‘আমরা পাঠকরা দুর্নীতি সম্পর্কে পড়তে বা জানতে পছন্দ করি।‘
কথাটার সঙ্গে আমি অনেকাংশে একমত, তবে এর মাঝে কিছু শ্রেণীবিভাগ আছে। সবচে পছন্দ বোধহয় চিকিৎসক, মন্ত্রী বা কোন ধনকুবেরের দুর্নীতি। পুলিশ, আমলা কিংবা কোন সাংবাদিকের দুর্নীতি নিয়ে কদাচিৎ রিপোর্ট দেখতে পাওয়া যায়। পত্রিকাকে সমাজের আয়না মেনে নিলে—ধরে নিতে হয়—এই সম্প্রদায় দুর্নীতি করে না।
কথাটা আংশিক সত্য। আঁতকে উঠবেন না প্লিজ—আমাকে একটু ব্যাখ্যা করতে দিন।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একজন লোক যদি অল্প কিছু দক্ষিণার বিনিময়ে আপনার কাজ করে দেয়—তিনি নিঃসন্দেহে একজন নীতিবান মানুষ। কোন অফিসে কোন কাজ হাসিলের জন্যে গেলে আমরা সবার আগে এমন একজন নীতিবান লোক খুঁজি। আর পেয়ে গেলে বর্তে যাই ‘যাক কাজটা হবে মনে হচ্ছে ।‘ আর হয়ে গেলে অকুণ্ঠ গুনগান করি—‘এমন লোক হয় না’
‘অর্থের বিনিময়ে কাজ করিয়ে নেয়া’—বোধহয় এখন আর দুর্নীতির পর্যায়ে পরে না। তাই—কোন থানাতে যেয়ে একটা জিডি করতে ও যে কিছু ‘খরচ’ করা লাগে—এমন কোন রিপোর্ট কোন পত্রিকায় পাবেন না—এর দুটো মানে হতে পারে—‘এমনটা হয় না’ কিংবা ‘এটা দুর্নীতি না’—আর পত্রিকা সম্পাদকের মতে—এমন সংবাদ—‘পাবলিক খাবে না’
ধনকুবেরের দুর্নীতি নিয়ে যা কিছু রিপোর্ট হয়—তা হয় ‘Professsional Jelousy’ থেকে। দুর্নীতি কমবেশি সব ধনকুবের ই করেন—পত্রিকায় আসে তাদের নাম—যারা রিপোর্টারকে কোন কারণে অসন্তুষ্ট করেছেন বা প্রতিপক্ষ রিপোর্টারকে সন্তুষ্ট করেছেন। ‘মিটার রিডার থেকে কোটিপতি’ এমনতর প্রতিবেদন নিয়েও সন্দেহ জাগে—ঢাকা শহরে এমন কোন ‘মিটার রিডার’ নাই যিনি কোটিপতি নন—তবে শুধু শুধু দুই একজনের সম্পর্কে প্রতিবেদন কেন—উত্তরটি সম্ভবত —প্রতিদিন দিলে ‘পাবলিক খাবে না’।
দারুণ ঝুঁকিপূর্ণ একটি ‘Investigation’ করে, অকাট্য প্রমাণসহ একটি প্রতিবেদন—তাও আবার কোন রুই কাতলার বিরুদ্ধে—এবং কারো আর্থিক প্রণোদনা ছাড়া-- এমনটি কখনই ঘটবে না (?)। এ কারনেই বোধহয় কোন আমলার দুর্নীতির কোন প্রতিবেদন দেখতে পাওয়া—দুষ্কর।
তাই ‘পাবলিকের খাদ্য’ হওয়ার মত দুর্নীতি যতক্ষণ না আপনি করছেন—‘নো টেনশান’।
এবার আসি ‘পাবলিকের খাদ্য’ নিয়ে আলোচনার দ্বিতীয় অংশে।
সত্য একটি ঘটনা বলি। একবার এক মন্ত্রীর শ্বাশুড়ী সরকারী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সিট না পেয়ে ফ্লোরে ছিলেন। আর্থিক কারণে কেবিন এর জন্য ও তাঁরা আবেদন করেন নি। মন্ত্রী নেহায়েত ‘বেকুব’ (সৎ) প্রকৃতির ছিলেন—তিনি কোন ফোন ও করেন নি বা সেই আত্মীয়ও নিজের ‘ক্ষমতাধর’ পরিচয়টা দেন নি। আর সব স্বাভাবিক রোগীর মতই তিনি চিকিৎসা নিয়েছেন।
এরপর কোন এক ‘আহাম্মক’ রুগীনীর ‘ক্ষমতাধর’ পরিচয়টা অধ্যাপক মহোদয়কে জানিয়ে দেন। আর তৎক্ষণাৎ শুরু হয়ে যায় ‘Damage Contol’—দিনে তিন বেলা অধ্যাপক নিজে দেখতে আসতে লাগলেন, কেবিন তো সঙ্গে সঙ্গে ই পেয়ে গেলেন, বোর্ড বসলো, পরিচালক সাহেব পারলে নিজের বাড়ি থেকে উপাদেয় খাবারের যোগান দেন—‘Typical High Profile Patient Management’—শুরু হয়ে গেল।
ঘটনাটির প্রথম অংশ নিঃসন্দেহে ‘পাবলিকের খাদ্য’। একজন মন্ত্রির আত্মীয়—একজন সাধারণ রোগীর মত চিকিৎসা নিয়েছেন— জেলার সিভিল সার্জন, হাস্পাতালের ডিরেক্টর তাকে দেখতে যায় নি— তাঁর জন্য স্পেশাল বোর্ড করা হয় নি—কিংবা তাকে স্পেশাল অর্ডারে কেবিন বরাদ্দ দেয়া হয় নি—প্রতিটি ই এক একটা ‘পাবলিকের খাদ্য’ হওয়ার মত খবর। পত্রিকা এমন একটি খবর ছোঁ মেরে নেবে।
বাংলাদেশের প্রতিটি সরকারী হাসপাতালের নিত্তদিনের চিকিৎসার এটি একটি চিত্র—যা একজন নামী মানুষের জন্য হলে—ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে সেই হাসপাতালের প্রতিটি চিকিৎসকের জন্য—শোকজ , সাস্পেন্ড এমনকি ‘রৌমারী’তে (শহীদ ডাঃ মিলনকে বদলী করা হয় এরশাদ বিরোধী আন্দলনের জন্য—শাস্তিমুলক ট্রান্সফারের জন্য খুবই পছন্দনীয়) ট্রান্সফার— এই শাস্তি গুলোর যে কোন একটি ‘ওপর মহলে’র জন্য অবশ্য করণীয় একটি ‘পাবলিকের খাদ্য’।
আর দ্বিতীয় অংশটি ‘দুর্নীতি’ (যদি নীতি থেকে সরে যাওয়া কে দুর্নীতি বলি, এবং সাধারণ একজন রুগী সরকারী হাসপাতালে যে চিকিৎসা পায় তাকে নীতি বলি) এর মহোৎসব—তবে ‘পাবলিকের খাদ্য’ নয়—‘মন্ত্রীর শাশুড়ীর জন্য তো এমনটা হবেই’।
তাই ‘দুর্নীতি’ সবসময় বিবেচ্য বিষয় নয়। সমাজের কোন অংশ দুর্নীতি করছে, সে সম্পর্কে প্রতিবেদন করলে—‘পাবলিক খাবে’ কি না, পত্রিকার বিক্রি বাড়বে কি না, প্রতিপক্ষের কাছে কিছু ‘আশীর্বাদ’ পাওয়া যাবে কি না, আমার নিজের কোন ক্ষতি হবে কি না— এমন হরেক রকম ‘Factor’ কে বিবেচনায় আনতে হয়।
আমি একক্ষণ যা করলাম—পুরো দেশ এখন সেই কাজেই ব্যাস্ত—‘সমালোচনা’—অন্যের দোষ ধরা। কেউ একবার ও ভেবে দেখি না—‘আমার কাজ কি আমি ঠিক মত করছি?’ কারণ ভাবতে গেলেই সমস্যা—বহু ভুল ধরা পরবে—‘দুর্নীতি’ করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।
তাই ‘সমালোচনা’ দিয়েই আপাতত ‘আত্মসমালোচনা’কে চাপা দিয়ে যাচ্ছি—এবং যাবো—যতদিন পারা যায়।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×