somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুরুঞ্চিনামা – বরিশাল

২০ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ১০:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বুয়েট এবং রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই – সুত্র মানিয়া যখন ১৪ তারিখের দিকে যখন পরীক্ষা পিছানোর গুজব শোনা গেল তখন এক ফ্রেন্ডের ওয়ালে দেখিলাম ৩-৪ জন মিলিয়া ঘুড়িতে যাইবার প্ল্যান – প্রোগ্রাম করিতেছে। মাত্র ১০ মিনিটের বেবধানে সিদ্ধান্ত হইল উহারা লঞ্চ ভ্রমণে যাইবে। আমি নিতান্ত ঘরকুনো মানুষ হইলেও মাঝে মাঝে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছাটা চাড়া দিয়া উঠে। তাই পোস্টের নীচে ছোট্ট কইরা কমেন্ট করিয়া বসিলাম, “আমারে নিবা মাঝি লগে?” বন্ধুরা রাজি হইয়া বলিল, “ পাত্তি লইয়া কাইল সন্ধায় ক্যাম্পাসে আইসা পরিস; একলগে জামুগা।“





পরদিন ১৫ তারিখ সন্ধ্যা ৬ টায় ক্যাম্পাস থেইকা ৪ ঘুরুঞ্চি রওনা দিলাম; প্রথমে রিকশা পরে বাসে কইরা সদরঘাট। লঞ্চের টাইমটেবিল, হিসাব নিকাশ কেউ কিছুই জানি না। সদরঘাট আইসা দেখি ডাকাডাকি চলতেসে। দোয়া দরুদ পইরা দাঁড়াইলাম পারাবত লঞ্চের সামনে। চেহারা দেইখাই ব্যাটারা বুইঝা গেল, পাইসি কতগুলা মক্কু; এই চান্স মিস করা ঠিক হইব না। আমাদের বুঝাইল, লঞ্চে সিট শেষ; তবে আমরা চাইলে একটা কেবিন আছে; সেইখানে নাকি “বিশাল(!!!!)” জায়গা; বালিশ,লেপ,কম্বল সবই আছে; দাম মাত্র ২,০০০ টাকা। আমি তো বিশাল চিন্তায় পইরা গেলাম; এইরকম ৫ স্টার কক্ষ এত সস্তায় ছাড়িতেসে কেন? বন্ধুরা বিশাল খুশি হইয়া আর কিছুক্ষন মুলামুলি করিয়া ১৪০০ টাকায় দফারফা করিয়া ফেলিল। টাকা জমা দিয়া মহানন্দে গেলাম রুম দেখতে !!!! দেইখা তো মাথায় হাত ; একি !!!! একখানা মুরগীর খোয়াড় সাইজের রুমকে উপর নিচ “দুইতালা (!!!!)” ভাগ করিয়া ভাড়া দেওয়া হইয়াছে !!!! পরে জানিতে পারিলাম, উহা স্টাফ কেবিন; উহারা নিজেরা না থাকিয়া যে যত টাকায় পারে ভাড়া দেয়।






লঞ্চ ছাড়িল রাত ৯ টার দিকে। আকাশে চাঁদ তো দুরের কথা, তারাও ছিল না। অন্ধকারেই বেশ কিছুক্ষন ফটোসেশন চালাইলাম (শত হইলেও ভ্রমনের মুল উদ্দেশ্যের একটা তো ছিল প্রোফাইল পিকের মানোন্নয়ন !!!! :):):):):)) যাই হোক, বাকিটা সময় ডেকে গল্প; পুরো লঞ্চে দৌড়াদৌড়ি করে উহার আকার আকৃতি সমন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ এবং কার্ড খেলিয়া পার করিয়া দিলাম। ভোর রাত ৪ টা নাগাদ লঞ্চ বরিশাল ভিড়ল। ডেকে সূর্যোদয়ের জন্য অপেক্ষা করিতে লাগিলাম। ধীরে ধীরে সূর্য উঠিল এবং আমরাও আরেকদফা ফটোসেশন সমাপ্ত করিলাম !!!!







লঞ্চ হইতে নামিয়া কাছেই এক দোকানে গো-গ্রাস গিলিয়া চা পান করিয়া বাইর হইলাম শহর দেখার নিমিত্তে। বরিশাল বেশ ছোট শহর; সদর এলাকা দেখতে মাত্র ১-১.৫ ঘন্টা হইলেই চলে। দেখা শেষ করিয়া গেলাম নতুল্লাহ বাস স্ট্যান্ডে। সেইখানে থেকে যাব প্রধান দুই আকর্ষণ এবং প্রায় একমাত্র আকর্ষণ দুরগাসাগর আর গুঠিয়া মসজিদ দেখতে।






২০ টাকা কইরা টিকেট কাইটা বাসে চাইপা বসলাম। একটা দিক ভাল লাগলো বাসগুলা একদম সময়মত ছাড়ে। বাসে কইরা প্রথমে গেলাম গুঠিয়া মসজিদে। অনেকেই শুনেছি শুধু এই মসজিদ দেখার জন্যই নাকি বরিশাল আসে; কেন সেইটা সাথে সাথেই বুঝলাম। এইরকম সুন্দর মসজিদ দেখার জন্য বরিশাল আসার ব্যাপারটা আসে । :D :D
খুব অনায়াসেই মসজিদটাকে সিঙ্গাপুর মালয়শিয়ার বইলা চালাইয়া দেওয়া যায়; এইরকম সুন্দর। সরল অঙ্কের সরল হিসাব মতই এইখানেও চলল ধুন্ধুমার ফটোসেশন; কারো কাছেই ক্যামেরা নাই; তাই মোবাইলই ভরসা। বাকি তিনজনের মোবাইল পাতে তোলা গেলেও আমারটা ছবি তুলতেই অক্ষম; হিসাবমতেই বেশিরভাগ ছবিতেই শুধু আমার চেহারা । :D :D :D






মসজিদ দেখা শেষে চললাম দুর্গাসাগর দেখতে। জায়গাটা যথেষ্ট সুন্দর; তবে আহামরি কিছু না। কিছুক্ষন কাটাইয়া চইলা আসতে পারেন।







শহরে যানজট খুব কম হওয়ায় এবং শুক্রবার হওয়ায় রাস্তা একদম ফাকা। দুইটা জায়গা দেখা শেষ কইরা খুব দ্রুত আবার নতুল্লাহ বাস স্ট্যান্ড ফিরে আসলাম। সেখান থেকে বরিশাল মেডিক্যাল। খাওয়া দাওয়া এবং জুমার নামাজ শেষ করলাম আশেপাশের এলাকায়। এরপর শুরু হইল হা হুতাশ !!! লঞ্চ ছাড়বে সেই রাতে; এতক্ষন কি করমু?!!!! ঠিক হইল নিজেদের মধ্যে পেটুক কেউ নাই বইলা বিখ্যাত কিছু না খাইয়া চইলা যাব – এত বড় অন্যায় তো কিছুতেই মানিয়া লউয়া যায় না। খুজিয়া পাতিয়া সিদ্ধান্ত হইল; সদরের কাছেই “শশী মিষ্টান্ন ভান্ডার” নাকি বেশ বিখ্যাত; উহাতে স্পঞ্জ খাইতে হইবে। নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করিয়া এই রাস্তা সেই রাস্তা ভুল ভাল ঘুরিয়া ৩০ মিনিটের রাস্তা প্রায় ১.৫০ ঘন্টা লাগাইয়া দোকান খুজিয়া পাইলাম; সেই সাথে মিষ্টি ভক্ষন। বলাই বাহুল্য; বেশ ভাল ছিল মিষ্টিটা।:):):):):):)






অতঃপর ফিরিবার পর্ব। এইকালে বলিয়া রাখা ভাল, পূর্বে যতই “মুরগীর খোয়াড়” কেবিনকে অবজ্ঞা করিয়াছি; লঞ্চে যাইবার ক্ষেত্রে উহা বেশ কার্যকরী। ব্যাখ্যা করিতেছি। লঞ্চে আপনার যাইবার ৩টি উপায় আছে;এক ডেকে – সকলের সাথে যুদ্ধ করিয়া জায়গা দখল করিয়া; সস্তা; তবে একবার জায়গা হারাইলে শেষ; রাত্রি জাপনের জায়গা পাওয়া মুশকিল। দুই কেবিনে – খরচ পড়বে ভাল; পরিবেশ ভাল, টিভিও আছে (:D :D); তবে ডাবল কেবিনে দুইটা খুব সরু বিছানা; বেশি বন্ধু বান্ধব লইয়া উঠিলে বিপদ। আর তিন – স্টাফ কেবিন। ঠিকমত দরাদরি করিয়া ভাল টাকায় পাইলে বেশ ভাল বন্দোবস্ত। এইবেলা কিছুটা বুদ্ধি খরচ করিয়া ১০০০ টাকায় ঠিক করিয়া ফেলিলাম। তবে ভয় পাবার কোন কারণ নাই; এইবেলাও শেষমেশ যে জিতিতে পারি নাই; ঠকিয়া আসিয়াছি- তাহা বলাই বাহুল্য। কেন, কি কারণ – তার বৃত্তান্ত নাহয় নিজেরাই উদ্ঘাটনের চেষ্টা করিবেন। আরে একটু আধটু মারা না খাইয়া আসিলে বন্ধুবান্ধবদের কাছে বিশাল গল্প ফাদিবেন কিভাবে?
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রম্য

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৬ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪১


জাতীয় পরিচয় পত্রে ভূল সংশোধন কক্ষে মহিলা অফিসার বললেন - কি করতে পারি?

- সুতির নাইটি টা ঠিক করতে হবে।

এই শুনে মহিলা তো রেগে আগুন। খেঁকিয়ে উঠলেন রীতিমতো।
- অসভ্যতা করছেন?... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওহাবী বাতিল মতবাদের স্বরূপ উন্মোচন

লিখেছেন মীর সাখওয়াত হোসেন, ২৬ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৭

নজদী ওহাবীদের সম্পর্কে আলােচনা করার পূর্বে নজদ দেশ সম্পর্কে আলােকপাত করতে চাই। আরবের মক্কা নগরীর সােজা পূর্ব দিকের একটি প্রদেশের নাম নজদ । এখন উক্ত নজদ দেশটি সৌদি আরবের রাজধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘূর্ণিঝড় রিমাল সর্তকতা।

লিখেছেন কাল্পনিক_ভালোবাসা, ২৬ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩

প্রিয় ব্লগারবৃন্দ,
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমাল প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে এবং ইতিমধ্যে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোর ব্লগারদের কাছে যদি স্থানীয় ঝড়ের অবস্থা এবং ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফ্রিল্যান্সার ডট কম

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৬ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৭

কাজের বুয়া ফ্রিল্যান্সার মাসে কামায় লাখ
হুমড়ি খেয়ে ডিগবাজি তায় পঙ্গপালের ঝাঁক
টিপলে বাটন মোবাইলটাতে ডলার আসবে রোজ
ডট কম কোচিং সেন্টার আমরাই দেব খোঁজ।

অমুকের বউ তমুকের ঝি হাতিয়ে নিচ্ছে সব
তোমরা মিছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীতে চিরতরে যুদ্ধ বন্ধের একটা সুযোগ এসেছিল!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৩


মনে হয় শুধু মানুষের কল্পনাতেই এমন প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন সম্ভব- যদি বাস্তবে হত তবে কেমন হত ভাবুন তো?
প্রত্যেকটি দেশের সমস্ত রকমের সৈন্যদল ভেঙে দেওয়া; সমস্ত অস্ত্র এবং সমর-সম্ভার, দুর্গ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×