somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের ক্রিকেটঃ কিছু টার্নিং পয়েন্ট এবং স্মৃতিচারণ ৪

০৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ম পর্বঃ- Click This Link

২য় পর্বঃ- Click This Link

৩য় পর্বঃ- Click This Link

(এই লেখাটা যখন লিখছি তখন ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট জর্জরিত। তবে আশা করি বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে, মাথা উঁচু করে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিবে ক্রিকেট বিশ্বে।)


তামিম ইকবালের আগমন


তামিম ইকবাল বাংলাদেশের জন্য এক আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। ওর মত একজন দুর্দান্ত, ড্যাশিং ওপেনিং ব্যাটসম্যান বাংলাদেশ অনেকদিন ধরেই খুঁজছিল। তামিম আসার আগে আমরা কোনোদিন পাওয়ার প্লে ঠিকমত ব্যবহার করতে পেরেছি কিনা সন্দেহ। আগে আমাদের ওপেনিং ব্যাটসম্যানদের কাজ ছিল কিভাবে প্রথম দশ ওভার উইকেটে কাটিয়ে দেয়া যায়। রান টান কোনো ব্যাপার না। তামিম আসার পর ব্যাপারটা পুরোপুরি পাল্টে গেল। এখন আমরা পাওয়ার প্লে ব্যবহার করতে পারি। প্রথম দশ ওভারে আমাদের ৫০-৬০ রান হয়ে যায়।


তামিম প্রথম লাইমলাইটে আসে ভারতের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপে তার সেই ফিফটির পর। জহির খানকে ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে মিড উইকেটের উপর দিয়ে যখন স্ট্যান্ডে আছড়ে ফেলে, তখনি বুঝে যাই ও হচ্ছে এক স্পেশাল ট্যালেন্ট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এক কিংবদন্তী (নামটা মনে আসছে না) এই ইনিংসের পর তামিম সম্পর্কে বলেছেন-ডোন্ট কিল হিম। অর্থাৎ তাকে তার মত খেলতে দাও।


এরপর ভারতের বিরুদ্ধে তার আরো কিছু দুর্দান্ত ইনিংস আছে। ঢাকায় টেস্টে ১৫১ রানের এক অসাধারণ এক ইনিংস খেলেছে তামিম। সেই খেলায় তামিমকে আউট করার জন্য কত চেষ্টাই না করেছে ভারত। অফ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরে লোপ্পা লোপ্পা বল দিয়ে যাচ্ছিল হরভজন আর শেবাগ, তামিম সবগুলা বলই ছেড়ে দিচ্ছিল। অথচ ততক্ষণে তামিম সেঞ্চুরি করে ফেলেছে!


কিন্তু তামিমকে বিখ্যাত করেছে মূলত ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তার অসাধারণ পারফর্ম্যান্স। তামিমের প্রিয় প্রতিপক্ষই হয়ে গেছে ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চার টেস্টে তামিম ২টা সেঞ্চুরি আর ৪টা ফিফটি করেছে। ওয়ানডেতেও একটা সেঞ্চুরি আছে।


লর্ডসের সেই দুর্দান্ত সেঞ্চুরি আজও চোখে ভাসে। ফলোঅনে পরে আবার ব্যাটিঙে নেমে তামিম-কায়েস ওপেনিং জুটিতেই করে ১৭৬। প্রথমদিকে কায়েস পিটিয়ে খেললেও পরে তামিম আস্তে আস্তে খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসে। উইকেটের চারিদিকে দুর্দান্ত সব শর্ট খেলে খুব দ্রুতই সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যায় তামিম। টিম ব্রেসনানের চার বলে ১৪ রান নিয়ে সেঞ্চুরিতে পৌঁছে যায় মাত্র ৯৪ বলে। প্রথম বলেএকটা ব্যাকফুট ড্রাইভ কাভার দিয়ে, পরের বলে স্ট্রেটে একটা ফ্রনফুট ড্রাইভে চার,তার পরের বলে মিড উইকেটে ঠেলে দিয়ে দুই রান, তারপরের বলে লং অনের ওপর দিয়ে দুর্দান্ত এক লফটেড ড্রাইভে চার-তামিম ততক্ষণে আকাশে উড়ছে। দৌড়ে গিয়ে হেলমেট খুলে তার জার্সির ব্যাকসাইড ড্রেসিংরুমে দেখিয়ে বলছে দেখ, আমি সেঞ্চুরি করেছি। আমার নাম অনার্স বোর্ডে ওঠাও। সে এক অবিশ্বাস্য অনুভূতি!


অথচ আগের দিন জেফরি বয়কট বাংলাদেশের টেস্ট খেলার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। তামিমের উইলো সেই প্রশ্নকে সপাটে টেমস নদীতে ফেলে দিয়েছে।


লর্ডসে তামিমের সেই সেঞ্চুরির ভিডিও আমি ইউটিউব থেকে ডাউনলোড করেছি। মাঝে মাঝেই আমি সেই ভিডিও দেখি। যতবারই দেখি, ততবারই শিহরিত হই। কি অসাধারণ সব শর্ট খেলছে তামিম। পুরো ইংল্যান্ড দল দিশেহারা। কাকে ছেড়ে কাকে বল দেবে কিছুই বুঝতে পারছে না স্ট্রাউস। পরে স্ট্রাউস বলেছিল যে তামিমের কারণে তাদের প্ল্যান ই পর্যন্ত যেতে হয়েছিল!


তামিমের এর চেয়েও স্পেশাল ইনিংস হচ্ছে পরের টেস্টে ওল্ড ট্রাফোর্ডে করা সেঞ্চুরি। ইংল্যান্ডে মৌসুমের শুরুতে ওল্ড ট্রাফোর্ডে রান করা খুবই কঠিন। খেলা হচ্ছে জুন মাসের শুরুতে, মাত্র ২য় দিনের খেলা, অথচ সোয়ানের টার্ন দেখে মনে হচ্ছিল খেলা হচ্ছে ভারতে আর টেস্টের ৫ম দিন চলছে। বিশাল বিশাল একেকটা টার্ন। আর তামিম এই উইকেটেই ১০০ করে ১০১ বলে!


ফেব্রুয়ারিতে যখন বাংলাদেশে আসে ইংল্যান্ড তখন তামিমের এগ্রেসিভ ব্যাটিং দেখে পিটারসেন বলেছিল সামারে ওল্ড ট্রাফোর্ডে দেখব কেমন খেলো। তামিম ওল্ড ট্রাফোর্ডেও মারমার কাটকাট ব্যাটিং করে সেঞ্চুরি করার পর পিটারসেনের দিকে তাকালে পিটারসেন মাথা নিচু করে ফেলে।


তামিম আমাদের দেশের ওপেনিং ব্যাটিঙের ধারা বদলে দিয়েছে। আমাদের ওপেনিং ব্যাটসম্যানরা এখন আর উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য যায় না, তারা রানও করতে যায়। এই ব্যাপারটা তামিম আসার আগে ছিলই না। তামিম পুরো ব্যাপারটাই উল্টে দিয়েছে।


(চলবে)

©Muhit Alam


২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×