somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শৈবাল

১৭ ই নভেম্বর, ২০১২ সকাল ৯:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






কটি অনেক উঁচু। কত উঁচু আন্দাজ করা কঠিন। ঠিক মাঝে একটি গম্বুজ। কিন্তু গম্বুজের চূড়াটায় কি আঁকা বা লেখা তা ঠিকমতো বুঝা যায়না। অস্পষ্ট বুঝা যায় কিছু একটা লেখা বা আঁকা। কখনও মনে হয় সুন্দর লতা-পাতা ফুল আঁকা। কখনও মনে হয় লাইনের পর লাইন কোন কিছু লেখা। বিজ্ঞানের কোন সূত্র। অথবা কোন ঘটনার বর্ননা। প্রাচীন পৃথিবীর উপসাগরীয় অঞ্চলের একটি ভাষা ছিলো। এ ভাষার ক্যলিওগ্রাফি ছিলো খুব সুন্দর। ক্যলিওগ্রাফির কারনে এ ভাষার বাক্য দূর থেকে ফুল বা কারুকার্যময় ছবি মনে হতো।
নুশ ভেতরে ঢুকে ভালোভাবে কটি দেখছে। বিশাল করে প্রতিটি অংশ তার আগেই অনেকবার দেখা হয়ে গেছে। ভিডিও ফুটেজ আর স্থির ছবিতে। তারপরেও নুশ করে সৌন্দর্য্যে অবাক হয়েছে। এত সুন্দর করেও কোন অফিস সাজানো যায়?
অসাধারন। অসাধারন।
নুশের মুখ ফুটে বের হয়ে গেলো। যদিও ওর কথা শোনার জন্য কাছাকাছি কেউ নেই। বিশাল কে মাত্র দু’জন ব্যাক্তি। বিজ্ঞানী ফাত আর রেন। দু’জনেই তার কাছ থেকে প্রায় পাঁচশ গজ দূরে। নিবিষ্ট মনে তাদের সামনের বিশাল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছেন।
করে সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হতে নুশ এখানে ঢোকেনি। নুশ বিশ্ব ব্যবস্থার গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান। এখানে সে বিশেষ মিশনে এসেছে। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী পৃথিবী গভীর সংকটের মুখোমুখি। পৃথিবীর নিরাপত্তা হুমকিতে। এই হুমকির মূল কারন তার পাঁচশ ফুট দূরে বসা দুই বিজ্ঞানী। এই কালপ্রিট দুইটার সাথে কথা বলে তাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পৃথিবীর নিরাপত্তার ব্যবস্থা সে কোন পথে করবে। এ মিশনের ব্যাপারে বিশ্ব পরিচালনা সংস্থা গোপন বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নুশকে মিশনের যেকোন পর্যায়ে যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য তার পদাধিকারের অতিরিক্ত মতা দেয়া হয়েছে। বিশ্ব পরিচালনা সংস্থার কোন কোন পরিচালক মতাটিকে ‘মাত্রাতিরিক্ত’ বলে বাঁকা চোখেও দেখছেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নুশ প্রয়োজন মনে করলে বিশ্ব পরিচালনা সংস্থার অনুমোদন ছাড়াই পৃথিবীতে সামরিক অভিযান চালাতে পারবে।

খ//

বিশাল করে চারিদিকে যে অসংখ্য ক আছে তা সহজে বুঝা যায়না। কটি যারা নিয়মিত ব্যবহার করেননা তাদের জন্য কটির কোন দরজা খুঁজে বের করা মহা কঠিন। বিশাল কটির চারিদিকে অসংখ্য ছোট ছোট ক। আর মাঝে গম্বুজওয়ালা বিশাল এ ক। ছোট কগুলিতে তরুন বিজ্ঞানীরা মহাকাশে প্রাণ নিয়ে গবেষনা করছেন। আর মাঝের কটিতে তাদের নেতৃত্বে রয়েছেন দুই বিজ্ঞানী। ফাত আর রেন।
বিশাল করে মতোই কটির স্ক্রিনও বিশাল। দেয়াল আর স্ক্রিন আলাদা কিছুনা। দেয়াল-ই স্ক্রিন। স্ক্রিন-ই দেয়াল।
বিজ্ঞানী ফাত আর রেন গভীর মনঃযোগে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছেন। স্ক্রিনে বিলোভেরা নত্রের একটি গ্রহকে দেখা যাচ্ছে। গ্রহের পানিতে নানা ধরনের শৈবাল ভেসে বেড়াচ্ছে। কোনটা লালচে,কোনটা নীলাভ সবুজ, কোনটা কমলা সবুজ। বেশকিছু শৈবালের ফুল ফুটে আছে। একগুচ্ছ নীলাভ-সবুজ শৈবাল স্ক্রিনের একদম সামনে। তাদের ফুলগুলি অন্য ফুলের চাইতে কিছুটা বড়। সেগুলি একসাথে নড়াচড়া করছে।
স্ক্রীনের একপাশে বিভিন্নরকম তথ্য উঠছে।
‘রেন বুঝতে পারছো ওরা কি বলতে চাইছে? ফাত বললো। ’
‘আমরা তো আগেই এমন কিছু আশঙ্কা করেছিলাম। এখন ওরা আশঙ্কা করছে।’
‘এখন আমাদের কি করা উচিৎ রেন?’
‘ঠিক কি করা উচিৎ আমি জানিনা। তবে এই মূহূর্তে এক ধরনের তাগিদ অনুভব করছি। আমাদের এ আবিস্কারটি আমাদের বাইরে অন্য কাউকে জানানোর তাগিদ। যাতে আমাদের কিছু হলে কেউ না কেউ আমাদের আবিস্কার সম্পর্কে জানে।’
চোখ বড় বড় হয়ে গেলো ফাতের। ‘কি বলছো রেন ? বিশ্ব সংস্থা আমাদের মেরে ফেলবে ? ’
মুচকি হেসে জবাব দিলো রেন। ‘তুমি বোকার মতো কথা বলছ। যারা একটা সভ্যতাকে বুঝতে পারেনা। একটা সভ্যতাই যাদের জন্য হুমকির মুখে, তাদের কাছে আমরা কি? ছাতু। ’
‘আমরা কিছু না?’
চোখের বিস্ময় কাটছে না ফাতের। ‘এতদিন ধরে আমাদের গবেষনা পৃথিবীর কত কাজে আসলো। সাড়াজীবন ব্যায় করলাম পৃথিবীর কল্যানে। আমরা কিছু না ? ’
‘লোভে উš§ত্ত মানুষের কাছে কোন কিছুই কিছুনা। তারা অনায়াসে অনেক ধ্বংস করতে পারে। হত্যা করতে পারে। পৃথিবীর ইতিহাসের কোন কিছুই কি তোমার মনে নেই ফাত? ’
বেশ কিছুন চুপ করে রইলেন বিজ্ঞানী ফাত। কিছুই বলতে পারলেন না। তার ভেতরটা হাহাকার করতে থাকলো। বিশ্ব সংস্থার কাছে এতই তুচ্ছ তারা?
‘কাকে জানাতে চাচ্ছো?’ রেনের প্রশ্নে নিরবতা ভাংলো ফাতের।
‘আমাদের গবেষনা কেন্দ্রের কাউকে জানালে হবেনা। দূরের কাউকে জানাতে হবে। আক্রান্ত হলে আমাদের সাথে সাথে আমাদের গবেষনা কেন্দ্রের অন্যরাও আক্রান্ত হবে।’
‘দূরে কাকে বলতে পারি?’
‘গোবি মরুভূমিতে ওরিয়া নামের আমাদের এক ছাত্র গবেষনা করে। ওকে জানাতে পারি।’
‘ঠিক আছে, তাহলে তা-ই করো।’
মূহূর্তেই যোগাযোগ হলো ওরিয়ার একাউন্টের সাথে। বছরের পর বছর গোপন রাখা দুই বিজ্ঞানীর গবেষনার সমস্ত ফাইল এক মূহূর্তে চলে গেলো তরুন বিজ্ঞানী ওরিয়ার একাউন্টে।
বিজ্ঞানীরা জানেননা তাদের গবেষনার বিয়টি বহু আগেই একজন জেনে গেছে। নুশ। বিশ্ব সংস্থার গোয়েন্দা প্রধান।

গ//

মানমন্দির না দূর্গ?
মানমন্দিরের চারিদিকে বেশ উঁচু দেয়াল। দরজাটিও পুরনো আমলের দূর্গের মতো। কাঠ আর লোহার তৈরী। কাঠে চমৎকার কারুকাজ। যিনি দরজাটিতে কাজ করেছেন তিনি নিঃসন্দেহে মাসের পর মাস সময় ব্যায় করেছেন। মানমন্দিরের দেয়ালেও ম্যুরাল আঁকা। দরজার পাশের ম্যুরালে এক কিশোরী দু’টি হরিন শাবকের পেছনে ছুটছে। চারিদিকে গাছ দুলছে বাতাসে। দূরে একটা নদী।
মরুভূমির মানমন্দিরে এ ম্যুর‌্যাল বেশ বেমানান। মরুভূমির মানমন্দিরের দেয়ালে থাকবে মরুদ্যানের দৃশ্য। খেজুর গাছ, বেদুঈন শিশুর খেলা বা উট চড়ানোর চিত্র। মরুভূমির দৃশ্য না এঁকে শিল্পী কেন এমন দৃশ্য আঁকলেন? তিনি কি মরুভূমীর শিল্পী না ? না যখন এ ভূমি মরু ছিলো না তখন এ ছবি আঁকা?
মানমন্দিরের ম্যূরাল নিয়ে ভাবতে ভাবতে লোকটা মন্দিরের প্রধান গেইট থেকে বেশ কিছুটা দুরে চলে গেলো। মানমন্দিরটির পাশের বালি মোটামুটি শক্ত। হাটতে হাটতে লোকটি যেখানে চলে এসেছে সেখানে বালি অনেক নরম। পা দেবে যায়। তারপরেও লোকটি না থেমে এগুতে লাগলো। বালিতে পা ডুবিয়ে ডুবিয়ে আস্তে আস্তে হাটছে সে। লোকটি কি মানুষ না রোবট? এ ব্যাপারে যে কারো সন্দেহ হতে পারে। কারন আজ দিনে এখানে তাপমাত্রা ছিলো বেয়াল্লিশ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এখন তাপ নেমে এসেছে আটাশ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে। এখানকার অধিবাসি হলে তার শীত করবে। মরুভূমির ঠান্ডা হাওয়ায় এ মধ্যরাতে কোন স্বাভাবিক মানুষ শখ করে হাটবে না। অন্তত গায়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের পোষাক ছাড়া।
লোকটি আকাশের দিকে তাকালো। শরৎের পরিস্কার আকাশ। আকাশে কালপুরুষ নত্রপুঞ্জ দেখা যাচ্ছে। কালপুরুষ নত্রপুঞ্জের পাশে তারার মতো পাঁচটি খুব ছোট আলো তৈরী হলো। আলোর ফোঁটাগুলি খুব দ্রুত বড় হচ্ছে। বিশ্ব ব্যবস্থার পাঁচটি গোয়েন্দা আকাশযান। লেজার বীম, আল্ট্রাভায়োলেট বীমসহ মারাত্মক সব অস্ত্রই রয়েছে এগুলিতে। কিছুনের মধ্যে তারা মানমন্দিরকে ঘিরে সমান দূরত্বে নামলো। তাদের আসার আর বালিতে নামার একটু শব্দও হলো না।
আকাশযানের এ বেষ্টনীর ভেতরে আরো একটি ছোট্ট আকাশযান। এটি আগেই এখানে এসেছে। সেটি ঐ পাগল লোকটার। যে মরুভূমির এ শীতল রাতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের পোষাক ছাড়াই বালিতে পায়চারি করছে।
লোকটা আবার এগিয়ে গেলো মানমন্দিরের দরজার দিকে। এবার তার দু’পাশে চারজন অস্ত্রধারি। হাতের কমিউনিকেটর মানমন্দিরের দরজায় ছোঁয়ালেন তিনি। তার কমিউনিকেটর মূহূর্তেই মানমন্দিরের কম্পিউটার সিস্টেমের নিয়ন্ত্রন নিজের কাছে নিয়ে নিলো। দশ সেকেন্ডের মাথায় তার কমিউনিকেটর তাকে অভ্যর্থনা জানালো।
‘সেল, গোবি’র ওরিয়া মানমন্দিরে আপনাকে স্বাগতম। এ মানমন্দিরের মূল কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রন এখন আমাদের হাতে। এই মূহূর্তে মানমন্দিরে কোন ধরনের সন্দেহজনক আচরন দেখছিনা। আপনার প্রবেশের জন্য মানমন্দির সম্পূর্ন নিরাপদ।’
সন্তুষ্টির হাসি নিয়ে মানমন্দিরের ভেতরে ঢুকলো সেল। সেল, বিশ্ব সংস্থার সহকারি গোয়েন্দা প্রধান।
কিন্তু সেলের সন্তুষ্টি পাঁচ মিনিটের মধ্যেই হাওয়া হয়ে গেলো। তার সাথের লোকজন আর রোবটদের পাঁচ মিনিট লাগলো মানমন্দিরের সমস্ত ক আর গবেষনাগার চষে ফেলতে। মানমন্দিরের গবেষকদের এনে লাইনে দাঁড় করানো হয়েছে তার সামনে। দু’জনকে আনা হয়েছে গবেষনাগার থেকে। বাকিদের আনা হয়েছে ঘুম থেকে তুলে। তাদের কমিউনিকেটরের সব তথ্যও চলে এসেছে সেলের লোকজনের কাছে।
কিন্তু মানমন্দিরের প্রধান গবেষক ওরিয়া নেই। তার কমিউনিকেটরও নেই। কমিউনিকটরের কোন সিগন্যালও কোথাও ধরা পড়ছে না ।

ঘ//

মরুভূমিতেও বরফ জমে? জায়গাটিতে এসে ওরিয়ার মনে প্রথম এ প্রশ্নটি-ই এসেছিলো। কয়েক ঘন্টা চলে গেছে। কিন্তু জায়গাটি দেখে ওরিয়ার বিস্ময় কাঁটছে না। যতই জায়গাটি দেখছে ততই ওর ভালো লাগছে। নিপ্পনকে জানাতে ইচ্ছে করছে। নিপ্পন ওর বান্ধবী। কিন্তু জানাতে গেলেই কমিউনিকেটর চালু করতে হবে। ওরিয়ার এই মূহূর্তে কমিউনিকেটর চালু করতে ইচ্ছে করছে না। কমিউনিকেটর মানেই আধুনিক মানুষের সাথে থাকা। আর আধুনিক মানুষ মানেই প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন।
সত্যিই কি বিচ্ছিন্ন? এর পে বিপে একশ করে দু’শ যুক্তি থাকতে পারে। কিন্তু ওরিয়া মনে করে আধুনিক মানুষ মানেই প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন । প্রকৃতির কাছে ফিরতে হলে পুরনো দিনের মানুষ হতে হবে। আর এজন্য প্রথমে বিচ্ছিন্ন করতে হবে কমিউনিকেটর।
ওর মানমন্দির থেকে জায়গাটি প্রায় বিশ কিলোমিটার দূরে। আঠারো কিলোমিটার সমুদ্র পার হয়ে আসতে হয়। অন্যরা পিএসভিতে *১ চললেও ওরিয়ার জন্য একটা উড়ন্ত পিজিভি *২ বরাদ্দ আছে। পিজিভিতে ওঠার সময়ই ওরিয়া ওর কমিউনিকেটরটি বন্ধ করে দিয়েছে। কমিউনিকেটরের শক্তি যোগায় ুদ্র একটা গ্রাভিটেশন মেশিন। ওরিয়া গ্রাভিটেশন মেশিনটাও কমিউনিকেটর থেকে খুলে ফেলেছে। বন্ধ অবস্থায়ও গ্রাভিটেশন মেশিনটা কাজ করে কমিউনিকেটরকে কাজের উপযোগি রাখে। ফলে একধরনের সিগন্যাল বের হয় গ্রাভিটেশন মেশিন থেকে। খুলে ফেললে এটি আর কাজ করেনা।
বরফ এলাকায় নেমে ওরিয়া পিজিভি’র গ্রাভিটেশন মেশিনও পিজিভি থেকে খুলে ফেললো। যাতে ওকে কেউ খুঁজে না পায়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পোষাকের বদলে গায়ে চড়ালো পুরনো দিনের মোটা পশমী পোষাক। কান ঢেকে যায় মাথায় এমন একটা টুপি। পশমী পোষাকের ভেতরে টুকিটাকি কয়েকটা জিনিস খুজে পেলো। একটা আলো জ্বালানোর ও আগুন জ্বালানোর যন্ত্র। একটা ফিডিং টিউব। ফিডিং টিউবের ভেতরে একটি সুষম খাবার খুব কম জায়গায় রাখা আছে। ফিডিং টিউবের ভেতরে এটি টুকরো টুকরো চাকতির মতো আছে। দুই সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের এক চাকতি খাবার খেলে দুইদিন ুধা পাবে না। আর একটা ছোট ছুড়ি।
ওরিয়া এখানে এসে নেমেছে প্রায় তিনঘন্টা হলো। এই তিন ঘন্টায় ওর সহকর্মীরা ওকে খুঁজতে পারেনি। কারন তারা বন্দি। আর বাইরের কোন বন্ধুও তাকে খুঁজেনি। এই মধ্যরাতে কে কাকে খোঁজে।
খুঁজেছে শুধু বিশ্ব গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। হন্যে হয়ে ওরিয়াকে খুঁজছে। খুঁজতে খুঁজতে তাদের মাথা খারাপ হওয়ার যোগাড়।

*১ পিএসভি: পার্সোনাল সোলার ভেহিক্যাল। সৌরশক্তিচালিত ছোট আকারের কাল্পনিক যান। যা প্রয়োজনে আকাশে, পানিতে ও ভূমিতে চলতে পারে।
*২ পিজিভি: পার্সোনাল গ্রাভিটেশনাল ভেহিক্যাল: মধ্যাকর্ষ ও মহাকর্ষ শক্তি চালিত কাল্পনিক যান। এটিও প্রয়োজনে আকাশে, পানিতে ও ভূমিতে চলতে পারে।

ঙ//

গবেষনা কেন্দ্রের বিশাল কে বিজ্ঞানী ফাত আর রেন বন্দি। তাদের সামনে বসে আছে গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান নুশ। কেউ কিছু বলছে না। নুশ মাথা নিচু করে আছে। তার সাড়া মুখে চিন্তার ছাপ। কি করবে বুঝতে পারছে না।
কমিউনিকেটরে সেল এর সিগন্যাল। নুশ সিগন্যাল রিসিভ করলো না। উঠে পাশের কে চলে গিয়ে রিসিভ করলো।
‘সেল খোঁজ পেলে।’
‘না।’
‘না মানে? না কেন?’
‘ওরিয়ার কাছে কোন সিগন্যাল ডিভাইস নেই। তাই আমরা তার অবস্থান খুঁজে পাচ্ছিনা।’
‘সিগন্যাল ডিভাইস ছাড়া মানুষ চলতে পারে নাকি? ওর কাছে নিশ্চই কমিউনিকেটর আছে। কোথাও যেতে হলে নিশ্চই পিএসভি বা পিজিভি ব্যবহার করেছে। গায়ে নিশ্চই শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের পোষাক আছে। এসব থেকে সিগন্যাল পাওয়া যাচ্ছেনা ?’
‘সব কমিউনিকেটরের সিগন্যালই প্রয়োজন না থাকলেও রেকর্ড করা হয়। মরুভূমিতে ওরিয়ার মানমন্দিরে আমরা অভিযান চালানোর আগেই ওর কমিউনিকেটর বন্ধ করা হয়েছে। অভিযান চালানোর পরে ওকে না পেয়ে ওর পিজিভি এবং সে ব্যবহার করতে পারে সম্ভাব্য এমন পিএসভি ও পিজিভি’র সিগন্যাল পর্যীা করা হয়েছে। ওকে বরাদ্দ দেয়া পিজিভি’র সিগন্যাল আমরা অভিযান শুরুর সময় থেকে বন্ধ রয়েছে। আর ওর শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের দুই জোড়া পোষাক মানমন্দিরেই পাওয়া গেছে। ওর সাথের লোকজন জানিয়েছে ও এগুলি ব্যবহার করেনা।’
‘তা কি করে সম্ভব? শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের পোষাক ছাড়া মানুষ কিভাবে বেঁচে থাকতে পারে? এটা কি বলছো? ’
সেল কোন উত্তর দিলো না।
‘ পিজিভি’র সিগন্যাল না পাওয়ার কি কারন থাকতে পারে?’
‘সম্ভবত ওরিয়া কোথাও যাওয়ার পর পিজিভি’র পাওয়ার সাপ্লাই খুলে ফেলেছে।’
‘তা না হয় খুললো। কিন্তু ঠিক আমারা যখন অভিযান চালাবো সে সময়টাতে? ও কিভাবে জানলো আমরা অভিযান চালাবো?’
সেল নিরুত্তর রইলো।
‘তোমাকে না আগেই বলেছিলাম বিজ্ঞানী রেন আর ফাত কোনো ধরনের সিগন্যাল প্রদান করলে তা রেকর্ড করতে। নিশ্চই এটা রেকর্ড করতে তোমার মনে ছিলোনা সেল?’
‘না স্যার মনে ছিলো। টেকনিক্যাল সেকশনকে বলা ছিলো। কিন্তু তারা জানালো গ্রাহক যন্ত্রে গ্রহন না করলে তারা কোন সিগন্যাল রেকর্ড করতে পারেনা। বা রেকর্ড করলেও এর অর্থ বের করতে পারেনা। তখন সিগন্যালটি বাইনারি মুডে থাকে। বাইনারি মুডের সিগন্যাল কোন গ্রাহক যন্ত্রে ধরা না পরলে আমাদের গ্রহনযোগ্য পর্যায়ে থাকেনা।’
‘বাইনারি মুড মানে?’
‘বাইনারি মুড মানে হচ্ছে যেকোন কথা, গবেষনা, ছবি যা-ই হোক না কেন তা শুন্য আর এক দিয়ে প্রকাশ করা থাকে। আর বিজ্ঞানীদের কমিউনিকেটর যেহেতু বিশেষ ধরনের তাই তারা যে কমিউনিকেটরে এটা পাঠাচ্ছেন সে কমিউনিকেটরে গৃহিত না হলে ঐ সিগন্যাল ধরা যায়না।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে। তোমার সাথে পরে কথা বলছি।’
নুশ এর মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে। সেল ছেলেটা একটা ফাজিল। কত কত ব্যাখ্যা তার কাছে। কোন কাজ ঠিকমতো করার নাম নেই, সুন্দর ব্যাখ্যা নিয়ে বসে আছে। ও যে যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তা ঠিক কিনা এটা খোঁজ নিতে হবে। কাউকে বিশ্বাস নেই। সেলকেও না। সে-ও ওরিয়াকে সড়িয়ে দিয়ে থাকতে পারে।
নিজেকে ঠান্ডা করতে নুশ কিছুন চোখ বন্ধ করে রাখলো। চোখ বন্ধ করে নাকের ডগায় তাকানোর চেষ্টা করলো। মনে মনে গোয়েন্দা ট্রেনিংয়ের কমান্ড আওড়ালো ‘জিহ্বা দাঁতের আগায়, চোখ নাকের আগায়।’ এরপর একশ থেকে উল্টো গুনে এক পর্যন্ত এলো।
এ ব্যায়ামে উত্তেজনা কমে। চিন্তা অনেক সংগঠিত হয়।
যখন ওরা অভিযান শুরু করতে যাবে সে মূহূর্তে ওরিয়া তার সকল সিগন্যাল ডিভাইস বন্ধ করে দিয়ে নিরাপদ স্থানে সড়ে গেছে? এটা এমনি এমনি সম্ভব ? নুশ নিজের পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের নখের দিকে তাকালো। অর্ধেক সম্ভাবনা ঘটনাটা এমনি এমনি ঘটেছে। অর্ধেক সম্ভাবনা কেউ তাকে অভিযানের খবর অভিযান শুরুর মূহূর্তে জানিয়ে দিয়েছে। এমনি এমনি ঘটে থাকলে চিন্তা কম। কেউ জানিয়ে থাকলে বিষয়টা অনেক অনেক চিন্তার ব্যাপার। বিশ্বাসঘাতককে ধরতে হবে। কেউ অভিযানের খবর জানিয়ে থাকলে কে সেটা ?
নুশ তার আরেক সহকারি মিনোটার সাথে যোগাযোগ করলো। মিনোটাকে তার সন্দেহের বিষয়টা জনিয়ে দায়িত্ব দিলো এ অভিযানে প্রত্য পরোভাবে অংশ নেয়া সবার ব্যপারে তদন্ত করতে। সন্দেহের এক নাম্বারে সেল। যাকে সে এতদিন সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহকারি মনে করেছে।

চ//

সামনে কতজন দাড়িয়ে আছে? বা থেকে গোনা শুরু করলেই পারে সেল। কিংবা জিজ্ঞেস করতে পারে পাশে দাড়ানো রোবটটাকে। শুধু সংখ্যা না , ওর কাছে সামনে দাড়ানো লোকগুলির কে কত বিরতিতে নিঃশ্বাস নিচ্ছে, কার হার্ট বিট কতো, প্রেসার কতো, কে কত ডিগ্রি এঙ্গেলে দাড়িয়েছে , সে দাড়ানোটা থেকে বিপদের সম্ভাবনা কতটুকু সব তথ্য আছে। চাইলেই বলে দেবে। কিন্তু সেলের জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে না।
আজ নুশের কথা ওর ভালো লাগেনি। অভিযান শুরুর আগ মূহূর্তে ওরিয়া সব কমিউনিকেশন ডিভাইস বন্ধ কেন করে দিয়েছে সেটা সেল কিভাবে জানবে। সেল কি ওরিয়াকে বলে দিয়েছে এসব বন্ধ করে পালিয়ে যেতে?
কিন্তু শালা গেলো কোথায়? কেউ তো বলতে পারছে না। আর শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের পোষাক না নিয়ে যাওয়ার রহস্যটা কি ? এসব ছাড়া কেউ বেশিদূর কিভাবে যায় ?
সেলের সামনে একজন অল্প বয়েসি তরুনী দাড়িয়ে আছে। তাকে জিজ্ঞেস করা যেতে পারে।
‘আচ্ছা আপনাদের মানমন্দিরের প্রধান ওরিয়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের পোষাক ফেলে বাইরে গেলো কেনো? শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের পোষাক ছাড়া বাইরে হাটা যায়? দিনের চাইতে তো রাতে তাপমাত্রার পার্থক্য অনেক বেশি।’
‘আপনাকেও তো কিছুন আগে শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের পোষাক ছাড়াই বাইরে হাটাহাটি করতে দেখলাম। আপনি কিভাবে পারলেন ?’
উত্তরের সাথে সাথে সেলের কাশি ধরে গেলো। খুক খুক করে ও দ’ু-তিনটা কাশি দিলো। মেয়েটা এত কড়া করে উত্তর দিলো কেন? আর এই কথার মাঝখানে কাশিটা কোত্থেকে এলো?
‘ না মানে আমি তখন একটু দেখার চেষ্টা করছিলাম মরুভূমির আবহাওয়া কেমন। তাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের পোষাক ছাড়াই হাটাহাটি করছিলাম। কিন্তু আপনাদের প্রধানতো সাড়ানই মরুভূমিতে আছেন। তার তো নিশ্চই মরুভূমির আবহাওয়া দেখার শখ হয়নি।’
কথাটা বলে সেলের নিজের উপরই মেজাজ খারাপ হলো। এই পুচকে মেয়েটাকে ব্যখ্যা দেয়ার কি আছে ? ওকে যা জিজ্ঞেস করা হয়েছে তার উত্তর দেবে। এত বেশি কথা বলে কেন ?
‘ওরিয়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের পোষাক পড়েননা। সাধারন পোষাকের মাধ্যমে তাপমাত্রার ভারসাম্য রা করে চলাফেরা করেন। কখনই শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের পোষাক ব্যবহার না করায় তার তারতম্য সহ্য করার মতা বেশি। তিনি প্রকৃতিবাদি।’
শব্দটা নতুন ঠেকলো। প্রকৃতিবাদি। প্রকৃতিবাদি আবার কি?
‘প্রকৃতিবাদি মানে কি ?’
‘প্রকৃতিবাদি মানে হচ্ছে তিনি কৃত্রিম ব্যবস্থায় অভ্যস্থ না হয়ে প্রাকৃতিকভাবে চলতে পছন্দ করেন। যেমন শীততাপ নিয়ন্ত্রনের পোষাক পড়ে বা শীততাপ নিয়ন্ত্রন যন্ত্রের মাধ্যমে স্থাপনার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন তিনি পছন্দ করেননা। আমাদের এই মানমন্দিরটার ভেতরে কোন শীততাপ নিয়ন্ত্রন যন্ত্র নেই। কিন্তু এটা এমনভাবে তৈরী করা যে মরুভূমিতে রাতের ঠান্ডার সময় এর ভেতরে শীত লাগবে না। আর দিনের প্রচন্ড গরমেও ভেতরে গরম লাগবে না। তার এরকম আরো অনেক ব্যাপার আছে।’
‘ ঠিক আছে আপনাদের প্রধানকে ধরার পর মরুভূমির প্রচন্ড গরমেও দু’শ মাইল স্পিডে একটা দৌড় দেয়াবো। ওনার জন্য নিশ্চই এটা কোন ব্যাপার না।’
সেল খোঁচা দিলো মেয়েটাকে। মূহূর্তেই মোম একটা জবাব দিয়ে সেলের কথাটাকে উড়িয়ে দিলো মেয়েটা। ‘ আগে ওরিয়াকে খুঁজে বের করে নিজের দৌড়টা শেষ করুন। তারপর না হয় ওনাকে দৌড় দেয়াবেন।'
মুখটা কালো হয়ে গেলো সেলের। পাল্টা বলার মতো মোম কোনো জবাব খুঁজে পাচ্ছেনা ও।


ছ//

বিলোভেরা নত্রের এ ছোট্ট গ্রহটিতে কোন বড় প্রাণী নেই।
গ্রহটির নাম টারস। টারসের স্থল খুব অল্প। পুরো গ্রহের বেশিরভাগই পানির নিচে। পানির উপরে ভেসে আছে নানা ধরনের উদ্ভিদ। বেশিরভাগ শৈবাল জাতীয়। আছে ছোট আকৃতির প্রাণীও। কোনো প্রাণী অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে থাকে। কোনোটা বেঁচে থাকে নাইট্রোজেন নিয়ে।
স্থলভাগের কাছে মাইলের পর মাইল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে আছে নীলাভ সবুজ শৈবালের একটি বিশাল কলোনী। প্রতিটি শৈবাল আকারে পৃথিবীর নীলাভ সবুজ শৈবালের চাইতে বেশ বড়। প্রতিটি শৈবালের একটি করে ফুলের মতো অংশ। সবগুলি ফুলই সূর্যমুখি ফুলের মতো একদিকে মুখ করে আছে।
শৈবালের ফুলের মতো অংশগুলি সব মুখ করে আছে পৃথিবীর দিকে। শৈবালের দেহের ফুলের মতো অংশগুলি কাজ করছে এন্টেনার মতো। এরা যোগাযোগ করছে পৃথিবীর সাথে। বিজ্ঞানী ফাত আর রেনের সাথে।
বিজ্ঞানী ফাত আর রেন যে বিপদে আছে এটা ওরা জানে। দু’বিজ্ঞানী বিপদে পড়ার আগেই ওরা বিজ্ঞানীদের সতর্ক করেছিলো। তারা সতর্কবানী শোনেননি। নিজেদের গবেষনাগারে বন্দি দু’ বিজ্ঞানীকে কিভাবে উদ্ধার করা যায় এ নিয়ে ভাবছে ওরা। ওরা মানে আলাদাভাবে কেউ না। বা অল্প কয়েকজন না। কোটি কোটি শৈবাল একসাথে ভাবছে। ভাবনার জন্য নির্দিষ্ট করা বিদ্যুৎ তরঙ্গ দ্রুত চলাচল করছে তাদের মধ্যে। প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে পৃথিবী থেকে। কিভাবে দু’ বিজ্ঞানীকে সাহায্য করা যায়।
ওদের কোনো মহাকাশযান নেই যে পৃথিবীতে অভিযান চালাবে। যা করার দূর থেকেই করতে হবে। দূর থেকে কিভাবে করবে?
চিন্তার তরঙ্গে একগুচ্ছ শৈবালের তৈরী করা নতুন তরঙ্গ এলো। দূর থেকেই পৃথিবীর বিজ্ঞানীর সহায়তা করা যাবে। পৃথিবী থেকে ওরা মহাকর্ষ শক্তি ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ করে। এ শক্তি ব্যবহার করেই পৃথিবীতে আঘাত হানা যাবে। পৃথিবীর মানুষেরা কমিউনিকেটর নামের একটি যন্ত্রের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে। কমিউনিকেটরে ব্যবহার করা হয় বিদ্যুৎ ও চৌম্বক শক্তি। চৌম্বক শক্তি মহাকর্ষ শক্তির আরেকটি রুপ। পৃথিবীর অনেক যানবাহনে ব্যবহার হয় মহাকর্ষ শক্তি চালিত মোটর। কোনভাবে ওদের ভূ-পৃষ্ঠে মহাকর্ষ শক্তির সামান্য সময়ের শুণ্যতা বা অতিরিক্ত চাপ তৈরী করে সবকিছু লন্ডভন্ড করে দেয়া যায়। কিন্তু এতে আবার অনেক অনেক পৃথিবীবাসির তি হবে। যারা দু’বিজ্ঞানীর কোন তি করেনি। যারা এসবের সাথে জড়িত না তাদের তি না করে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা বের করতে হবে।
পরিকল্পনা এ পর্যায়ে এসে থেমে গেলো। কারন পৃথিবী থেকে নতুন তথ্য এসেছে। পৃথিবীবাসি টারস গ্রহে আক্রমনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। হাইড্রেজেন বোমা মেরে টারস গ্রহের সমস্ত প্রাণ শেষ করে দেয়া হবে।
টারস পরিণত হবে এক বিশাল ধ্বংসস্তুপে।

জ//

টেবিলটি কুঁচকুঁচে কালো। টেবিলটি দেখেই নুশের মনে কাব্যভাব জেগে উঠলো।

ব্ল্যাকহোলের কালো মেখে গায়
তুমি ডেকেছিলে আমায় রহস্যময় আঁধারে
ত্রস্ত পায়ে আমি গিয়েছিলাম কাছে
জানতাম যে যায় কাছে, সে-ই লীন হয়ে যায়।

নুশ নিজেই নিজেকে বাহবা দিলো। কবিতাটা ভালোই হয়েছে। ছাত্রজীবনে ও টুকটাক লেখালেখি করতো। সে প্রতিভা এখনও একেবারে শেষ হয়নি। তবে রহস্যময় আঁধারে শব্দটা কি কারো সাথে মিলে গেলো নাকি? কার সাথে? এই মূহূর্তে মনে পড়ছে না। যাক মিললে মিললো। ঘুরে ফিরে অনেকের কবিতাই অনেকের সাথে মিলে।
‘আপনি বসতে পারেন নুশ।’
বিশ্ব সংস্থার প্রধান পরিচালক লেন বললেন নুশের দিকে তাকিয়ে।
কে বারোটি চেয়ার। এগারোটি বিশ্ব সংস্থার এগারোজন পরিচালকের জন্য। বাকি একটি অতিরিক্ত। নুশের জন্য।
নুশ করে একমাত্র খালি চেয়ারটিতে বসলো।
লেন-ই শুরু করলেন। অনেকটা সবাইকে জানানোর ভঙ্গীতে। ‘নুশ টারস নামের একটি গ্রহে সামরিক অভিযান চালাতে চাচ্ছে। গ্রহটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আপনাদের কমিউনিকেটরে আগেই দেয়া আছে। তারপরেও বলি গ্রহটি বিলোভেরা নত্রের একটি গ্রহ। বিলোভেরা নত্রের অন্য কোন গ্রহে প্রাণের কোন সন্ধান আমরা পাইনি। একমাত্র টারস গ্রহে প্রাণ আছে। অন্য গ্রহগুলি থেকে আমরা নিয়মিত সিলিকাসহ বিভিন্ন খনিজ পদার্থ আনি। টারস এর পরের গ্রহ বিলারস-এ খনিজ আহরনের জন্য আমাদের একটি অস্থায়ী ঘাঁটি আছে। ’
‘ টারস গ্রহে কেন আমরা সামরিক অভিযান চালাতে যাচ্ছি?’ বিশ্ব সংস্থার একজন পরিচালক হাদ বললেন।
‘ আগের সভায় বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছিলো । তারপরেও আবারো বলি ঐ গ্রহের প্রাণীরা পৃথিবীবাসির জন্য হুমকি। তারা যেকোন সময় আমাদের উপর হামলা চালাতে পারে বলে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য আছে। আমাদের দু’জন বিজ্ঞানী না বুঝে টারস এর অধিবাসিদের সহায়তা করছিলো। তাদের কাছে প্রচুর তথ্য পাচার করেছে। তবে আমরা বিষয়টি টের পেয়ে এই দুই বিজ্ঞানীকে গ্রেফতার করেছি। তাদের সহযোগি একটি সন্ত্রাসবাদি বিশাল গ্র“পকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে ওরিয়া নামের সন্ত্রাসবাদি দলের এক নেতা এখনও গ্রেফতার হয়নি। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’ লেন জানালেন।
‘ আমাদের এতো করিৎকর্মা গোয়েন্দা প্রধান। যাকে আমরা এ বিষয়ে যেকোন সময় অনুমোতি ছাড়া সামরিক অভিযান চালাতে বিশেষ মতা দিয়ে রেখেছি। তার হাত থেকে সন্ত্রাসবাদি ছুটে যায় ? এ-তো বড়-ই বেদনার বিষয়। যে পালিয়েছে সে নাকি সন্ত্রাসবাদি না, একজন তরুন বিজ্ঞানী - এমন কি একটা যেন আবার শুনি।’ পরিচালক হাদ কটা করলেন।
হাদের কটাে নুশের চেহারা লাল হয়ে গেলো। তবে তাকে কথা বলতে না দিয়ে জবাব দিলেন লেন, ‘ তরুন বিজ্ঞানী , কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর কোন সন্ত্রাসবাদি আন্দোলনের সাথে জড়িত হয়ে গেছে -এমন কোন ঘটনা কি অতীতে ঘটেনি ? এটাও সেরকম একটি ঘটনা। ’
‘ টারস গ্রহে তো শুনলাম কিছু ুদ্র জলজ প্রাণী ছাড়া আর কিছু নেই। ওরাই আমাদের উপর হামলা চালাবে ? ’
‘ টারস গ্রহে খুব উন্নত প্রজাতির এক ধরনের নীলাভ সবুজ শৈবাল বসবাস করে। এরা প্রযুক্তিতে বেশ দ। এরা আমাদের দুই বিজ্ঞানীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করতো। যদিও আমরা এ দুই বিজ্ঞানীর কথা-বার্তার বিস্তারিত জানিনি। কারন বিজ্ঞানী হওয়ায় তারা বিশেষ ধরনের কমিউনিকেটর ব্যবহারের সূযোগ পেতেন। যেখানে আমরা সরাসরি আড়ি পাততে পারিনা। আর গ্রেফতারের আগেই তারা তাদের কথোপকথনের রেকর্ড সরিয়ে ফেলেছেন। তবে তাদের এক জুনিয়র বিজ্ঞানী আমাদের হয়ে কাজ করছে। সে আমাদের জানিয়েছে এই শৈবালরা নিজেরাই বিজ্ঞানীদের সাথে যোগাযোগ করেছে। তাদের ভাষা যাতে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারে এজন্য একটি কনভার্টিং সিষ্টেম তারাই বিজ্ঞানীদের দিয়েছে।’
‘ তারাই কনভার্টিং সিষ্টেমও বিজ্ঞানীদের দিয়েছে ? কেমন যেন গল্পের মতো শোনায়।’ হাদ নাছোর বান্দা।
‘ আমি একটু এই অভিযানের যুক্তিটা জানতে চাচ্ছি। কেন আমরা এই শৈবালদের হুমকি মনে করছি ? ’ আরেক পরিচালক মিরান এতনে মুখ খুললেন।
‘ যারা হাজার হাজার আলোকবর্ষ দূর থেকে আমাদের দু’বিজ্ঞানীর সাথে যোগাযোগ করতে পারে , তাদের ভিডিওচিত্র নিয়মিত পাঠাতে পারে, তারা আমাদের উপর হামলাও করতে পারে। আর এ সূযোগ আমরা তাদের দিতে পারিনা। আগেই আমরা তাদের উপর হামলা চালাতে চাই। ’
‘ কিন্তু তারা কেন আমাদের উপর হামলা চালাবে ? তাদের লাভ কি ? ’
‘ এই কথাগুলি আগের সভায়ও বলা হয়েছিলো। আবারো বলি। এই শৈবালরা যেহেতু কোনভাবে প্রযুক্তি আয়ত্ত্ব করতে পেরেছে তারা আমাদের কাজের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। টারস এর পাশের গ্রহ বিলারস-এ আমাদের ঘাটি ওদের জন্য হুমকির মুখে পড়তে পারে। বিলোভেরা নত্রের অন্যান্য গ্রহ থেকে আমাদের খনিজ আহরন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কারন যারা প্রযুক্তি ব্যবহার করতে জানে তাদের হয়তো একসময় বাইরের খনিজের প্রয়োজন পড়বে। যেমন আমাদের পড়ছে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তারা হয়তো এখনই আমাদেও বাঁধা দিতে পারে। আর জানেন তো এখন আমরা যা খনিজ ব্যবহার করি তার আশিভাগ আসে বাইরে থেকে। আর এ আশিভাগের মধ্যে পঞ্চাশভাগ বিলোভেরা নত্র থেকে। তাই আমাদের খনিজ নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ার আগেই আমরা ব্যবস্থা নিতে চাই।
‘ব্যবস্থা মানে কি ? ’
‘ব্যবস্থা মানে হাইড্রোজেন বোমা। আমরা পুরো গ্রাহে কোন প্রাণ রাখতে চাইনা। আমাদের উপর হামলার সামান্যতম সম্ভাবনাও আমরা উপড়ে ফেলতে চাই।’
‘ তুচ্ছ আশঙ্কায় একটা পুরো গ্রহ ধ্বংস ? ’ হাদ জিজ্ঞেস করলো।
‘ আপনার কাছে তুচ্ছ আশঙ্কা মনে হতে পারে। আমার কাছে না। আমি মনে করি এ অভিযানের জন্য যা তথ্য রয়েছে তা-ই যথেষ্ট। ’
‘ আমি এ অভিযানের বিরোধীতা করি। ’
‘ ঠিক আছে। সিদ্ধান্ত ভোটাভুটিতে হবে।’
ভোটাভুটিতে লেন দশ-এক ভোটে জিতলো। বিশ্ব পরিচালনা সংস্থায় লেনসহ নয়জন এক লবির। হাদ আর মিরান দু’টি ভিন্ন লবি থেকে এসেছে। মিরান অভিযান চালানোর পে ভোট দিলো।
সভা শেষ।
উঠতে উঠতে হাদ বললো,‘ টারস এর শৈবালগুলি বিশ্ব পরিচালনা সংস্থার প্রধানের সাথে যোগাযোগ না করে কেন দু’বিজ্ঞানীর সাথে যোগাযোগ করলো বুঝতে পারলাম না। তাদের যখন এতো মতা তারা লেনকে কব্জা করলেই তো কোন ঝামেলা হতো না।’
তার রসিকতায় সবাই হেসে উঠলো।
শুধু লেনের রক্ত মাথায় উঠে গেলো। কটমট করে সে তাকিয়ে রইলো হাদের দিকে। অনেক কষ্টে সামলালো তার রাগ।


নুশ আবার ফিরে এলো দুই বিজ্ঞানীর গবেষনাগারে। একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে সে টারসে হামলার পরিকল্পনাটা করছে। অভিযানে একটি স্পেসশীপ গেলেই চলে। সাথে কয়েকটা ছোট আকারের রোবট চালিত স্কাউটশীপ থাকতে পারে। বড় যানটা যাওয়ার এক ঘন্টা আগে টারসের আকাশে পৌছাবে স্কাউটশীপগুলি। এরা সেখান থেকে টারসের প্রচুর ছবি নেবে। সেখানে কয়টি বোমা ফেলা হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। এক ঘন্টা পর স্পেসশীপ টারসের ভূমির কাছাকাছি যাবে। তবে এটি ভূমিতে নামবে না। উপর থেকেই যা করার করবে।
কিন্তু এর আগে দুই বিজ্ঞানীর সাথে টারসের শৈবালদের কথার রেকর্ডটা পাওয়া গেলে ভালো হতো। বিজ্ঞানী ওরিয়াকে কি পাওয়া গেছে ?
নুশ কমিউনিকেটরে সেলের সাথে যোগাযোগ করলো। ‘ সেল কতটুকু এগিয়েছে ? ’
‘ আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ওরিয়ার মানমন্দিরের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ’
‘ কিছু পাওয়া গেছে ? ’
‘এখনও না। তবে যাবে। ’
‘ যাবে কিভাবে ? ’
‘ মনে হচ্ছে পাওয়া যাবে। ’
‘ ও, তোমার মনে হচ্ছে ? ঠিক আছে মনে হতে থাকুক। রাখি।’
নুশ কমিউনিকেটরে তার দ্বিতীয় সহকারি মিনোটার সাথে যোগাযোগ করলো।
‘ মিনোটা তোমাকে না সেলের উপর নজর রাখতে বলেছিলাম।’
‘ জ্বী রাখছি।’
‘ সেল এখন কি করছে ? ’
‘ ওরিয়ার সহযোগি একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে। কিছুনের মধ্যে প্রেমে পড়ার সম্ভাবনা আছে। ’
‘ বলো কি ? ’
‘ হ্যা। মেয়েটা একজন গবেষনা কর্মী । মেয়েটার পাশেই দাঁড়ানো আছে ওরিয়ার ব্যাক্তিগত সহকারি ছেলেটা। কিন্তু সেল ওরিয়ার ব্যাক্তিগত সহকারিকে জিজ্ঞাসাবাদ না করে মেয়েটাকে আধঘন্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। মেয়েটার কাছ থেকে তেমন কোন তথ্যও বের করতে পারেনি। দু’তিনবার মেয়েটা সেলকে অপমানের সুরে কথা বলেছে। সেল কিছু বলেনি। ’
‘ মেয়েটা সেলকে অপমানের সুরে কথা বলেছে ? আর সেল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনছে ? ওতো প্রেমে না শুধু প্রেমের খাদে পড়তে যাচ্ছে। আচ্ছা দাঁড়াও ওর সাথে কথা বলি।’
পরনেই নুশ সেলের সাথে যোগাযোগ করলো। আসলেই সেল জানেনা মেয়েটার পাশে দাঁড়ানো ছেলেটা ওরিয়ার ব্যাক্তিগত সহকারি। ‘ তুমি কেন এটা জানোনা সেল ? ’
‘আমি এখনও ছেলেটার সাথে কথা বলিনি। একটু পরেই বলতাম। ’
‘ কথা বলার তো দরকার নেই। তোমার কমিউনিকেটরে ওদের সব তথ্য চলে এসেছে। তুমি কথা বলা শুরু করার সময়ই নির্ধারন করা উচিৎ ছিলো, কার কার সাথে তুমি আগে কথা বলবে। ’
সেল কিছু বললো না। আসলেই উচিৎ ছিলো। ওর মাথায় কেন যে বিষয়টা আসেনি। এই ভুলটা কিভাবে হলো।
দশ মিনিটের মধ্যে সেলকে তার দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যহতি দেয়া হলো। তার দায়িত্ব বুঝে নিতে মানমন্দিরে এসে নামলো মিনোটা।

ঝ//

টারস গ্রহে আজ সাড়াদিন সান্ধ্য। সকাল থেকে বিলোভেরা নত্র একটুও সূযোগ পায়নি আকাশে উঁকি দেয়ার। কুচকুচে কালো মেঘেদের দখলে আকাশ। বৃষ্টি ঢেলে দিচ্ছে মেঘগুলি। প্রবল বৃষ্টি। শুরু হলে আর শেষ হতে চায়না। বিকেলের দিকে আকাশ পরিস্কার হয়ে এলো।
শৈবালের কলোনী থেকে প্রায় দুই মাইল দীর্ঘ একটি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। পানির নিচে পায়ের মতো ছোট ছোট উপাঙ্গ দিয়ে তারা সাঁতাড় কাটতে লাগলে। গিয়ে পৌছালো মাটির কাছাকাছি। কলোনীর একটা অংশ পানির নিচ দিয়ে মুড়ে এলো । কলোনীর উপরের অংশের সাথে আস্তে আস্তে জুড়ে গেলো। বিশাল লম্বা একটি সিলিন্ডারের মতো তৈরী করলো তারা। সিলিন্ডারের সামনের অংশ খুবই চিকন। এ সিলিন্ডার থেকে ওরা পানি বের করে দিলো। সিলিন্ডারের ভেতরে জমা হতে থাকলো ওদের তৈরী করা হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস। তবে গ্যাস সিলিন্ডারের উপরের চিকন অংশে যেতে পারেনা। সেখানে গ্যাস প্রবেশে একটি বাঁধা তৈরী করা হয়েছে। গ্যাস জমতে জমতে প্রবল চাপ তৈরী হলো সিলিন্ডারের ভেতরে। একসময় গ্যাসের প্রবল চাপ মাটির দিকে ধাক্কা দিয়ে সেদিকে সিলিন্ডার ভাংতে না পেরে উপরের দিকে প্রচন্ড চাপ দিলো। উপরের চিকন অংশ খালি থাকায় প্রচন্ড বেগে গ্যাস উঠে গেলো টারসের মেঘ স্তরের উপরে। গ্যাসের সাথে এলো প্রচুর শৈবাল। তারা ছড়িয়ে গেলো মেঘস্তরে।
শৈবালরা পৃথিবীতে তাদের অভিযানের পরিকল্পনা পাল্টেছে। তারা দূর থেকে বিজ্ঞানীদের সাহায্য করবে না। এখন তারা পৃথিবীতে গিয়েই বিজ্ঞানীদের উদ্ধার করবে।

জ//

গত রাতের প্রচন্ড মতাবান সেলের এই মূহূর্তে কিছু করার নেই। সূর্যের আলো ফুটেছে অনেন হয়েছে। সে এখন এই মানমন্দিরে থাকবে, না বিশ্ব গোয়েন্দা সংস্থার ডরমিটরিতে ফিরে যাবে বুঝতে পারছেনা। নিয়ম অনুযায়ী সাময়িক অব্যহতির পর চীফের সাথে আর কোন যোগাযোগ করা যায়না। এখন তার সমস্ত যোগাযোগ গোয়েন্দা সংস্থার প্রশাসনিক দপ্তরের সাথে। তারাই তার সাথে কথা বলবে। কিন্তু তারা এখনও ডরমিটরিতে ফেরার জন্য সেলকে কোন পিজিভি পাঠায়নি। ও যে পিজিভি নিয়ে এসেছিলো পদাধিকার বলে সেটি এখন মিনোটার যান। সে-ই এখন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের এক নাম্বার সহকারি।
কিছু পড়ার শব্দে সেল ফিরে তাকালো।
ওরিয়ার ব্যাক্তিগত সহকারি ছেলেটাকে হাত-পা বেঁধে মরুভূমির বালির ওপর ফেলা হয়েছে। ফেলার সময় শরিরটা উপুর করা ছিলো। এখন চিৎ করা হলো। যাতে তার চোখে সূযের্র আলো পড়ে। ছেলেটির গলায় ইলেকট্রিক শক দেয়ার চিহ্ন। সৈনিকদের কথায় বোঝা গেলো ওকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনটি তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু তথ্যগুলি ট্রুথ ডিটেক্টরে কনভার্ট করতেই দেখা গেলো তিনটি তথ্যই ডাহা মিথ্যা। এজন্য ওরিয়ার ব্যাক্তিগত সহকারির এ শাস্তি।
আরো বেশ কয়েকজনকে গলায় শক দেয়া হয়েছে। তাদের আর্তচিৎকার শোনা যাচ্ছে। সেল যে মেয়েটির সাথে কথা বলেছিলো তার হাত বেঁধে সেলের সামনেই বসিয়ে রাখা হয়েছে। তাকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছেনা।
রোদ ধীরে ধীরে তাতিয়ে উঠছে। মরুভূমিতে ফেলে রাখা ছেলেটা পানি চাইছে। এক সৈন্য ওর জন্য পানি নিয়ে যাচ্ছিলো। মিনোটা সৈন্যের কাছ থেকে পানির পাত্রটি নিয়ে নিলো। সৈন্যটিকে আদেশ দিলো ছেলেটাকে কসিয়ে একটা চড় বসাতে। তাই করলো সৈন্যটা।
তবে রহস্যজনক কারনে এসব কিছুই সেলকে স্পর্শ করছে না। তার চিন্তায় এসব কিছুই নেই। তার ভাবনার জগতের পুরোটা জুড়ে মানমন্দিরের দেয়াল জুড়ে আঁকা ছবিটা। বারেবারে অন্যকিছু চিন্তার চেষ্টা করেছে সেল। কিন্তু লাভ হয়নি। ঘুরে ফিরে ঐ ছবিটার কথাই তার মনে পড়ছে। আচ্ছা মরুভূমির শিল্পী মরুভূমির ছবি না এঁকে সবুজ তৃনভূমির ছবি আঁকলেন কেন? তিনি কি আসলে তৃনভূমির শিল্পী? সবুজ গাছপালা যেখানে সে এলাকার শিল্পী? তাকে ছবি আঁকার জন্য এখানে আনা হয়েছিলো? তিনি এসে নিজের এলাকার ছবি এঁকেছিলেন। নাকি শিল্পীর চিন্তায় সমস্যা তৈরী হয়েছিলো। যেমন এ মূহূর্তে তার নিজের চিন্তায় প্রচন্ড সমস্যা তৈরী হয়েছে।
কাউকে জিজ্ঞেস করা যেতে পারে। রোবটগুলি নিশ্চই জানে। কিন্তু ওদের জিজ্ঞেস করলে এখন আর সেলের কথার কোন উত্তর দেবেনা। কারন সেল এখন পদচ্যুত।
সামনে বসা মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করা যেতে পারে। ওতো আর রোবট না। সেলের কোন পদে থাকা না থাকায় ওর কিছু যায় আসে না।
‘আচ্ছা মানমন্দিরের দেয়ালে তৃনভূমির ছবি কেন? মরুভূমির মানমন্দিরে তো মরুভূমির ছবি থাকা উচিৎ । তাই না? ’
বলেই সেলের মনে হলো প্রশ্নটা করা উচিৎ হয়নি। পদ না থাকলেও সে এখনও বিশ্ব গোয়েন্দা সংস্থার একজন। আর সামনের মেয়েটি একজন বন্দি। যার হাত বাঁধা। যার সামনে তার অন্য সহকর্মীদের নির্যাতন করা হচ্ছে। এমন একজন মানুষকে এসব প্রশ্ন করা যায়না।
মেয়েটি কিছুন সেলের দিকে তাকিয়ে রইলো। সেল ভেবেছিলো মেয়েটি উত্তর দেবেনা। কিন্তু কিছুন চুপ থেকে মেয়েটি বেশ শীতল কন্ঠে বললো, ‘ সাহারা মরুভূমির একটা গুহাচিত্র এ ছবিটি। বহু বছর আগে একজন শিল্পী ছবিটি এঁকেছেন। পরে ঐ ছবিটির সূত্র ধরে গবেষনা করে জানা যায় যে সত্যিই এক সময় সাহারা মরুভূমি এলাকা মরুভূমি ছিলোনা। তৃনভূমি ছিলো। ওরিয়া ছবিটির একটি রেপ্লিকা মানমন্দিরের গায়ে তৈরী করিয়েছেন। ’
কথাগুলো বলে মেয়েটি সেলের চোখে স্থির হয়ে তাকালো। সেল চোখ সড়িয়ে নিতে পারলো না। মেয়েটি কিছুন সময় নিয়ে বললো, ‘আচ্ছা ওরিয়ার দোষটা কি ? কেন আপনারা এরকম করছেন ?’
ওরিয়ার দোষটা কি? কি যেন? সেল তো সব জানে। ও তো অবশ্যই জানে। কিন্তু এই মূহূর্তে মনে পরছেনা। কেন মনে পরছেনা? মাথা কি পুরো নষ্ট হয়ে গেলো?
মরুভূমিতে একটা পিজিভি এসে নামলো। একজন সৈনিক এসে মিনোটাকে স্যালুট করে জানালো ওরা সেলকে গোয়েন্দা সংস্থার ডরমিটরিতে নিতে এসেছে। মিনোটা সেলকে দেখিয়ে দিলো।
সৈনিকটা সেলকেও স্যালুট দিয়ে দাঁড়ালো।
‘স্যার আপনার জন্য পিজিভি এসে গেছে।’
চিন্তায় মগ্ন সেল মাথা তুললো। ‘ও পিজিভি এসে গেছে। আচ্ছা চলো।’
সেল মরুভূমির তপ্ত বালির উপর দিয়ে পিজিভির দিকে এগিয়ে চললো। এখন আর ওর মানমন্দিরের ছবিটার কথা মনে পড়ছেনা। বারবার শুধু মনে হচ্ছে ওকে অপমান করা হলো। চরম অপমান করা হলো।

সেলকে পিজিভিতে তুলে মানমন্দিরে গিয়ে মেয়েটির সামনে বসলো মিনোটা।
‘মেয়েদের আমি মারতে পছন্দ করিনা। কিন্তু আমার সাথে কথা না বললে ওই ছেলেটার মতো মেরে মরুভূমিতে ফেলে রাখবো।’
‘ ধমক দিয়ে আমাকে ভয় পাওয়ানো যাবেনা। ’
মিনোটা কিছুন চুপ করে রইলো। তারপর বললো,‘ ঠিক আছে তাহলে চেষ্টা করে দেখি। ’
পিন শকার নামের একটা যন্ত্র আনালো মিনোটা। পিন শকার মানুষের শরিরে ধরলে মনে হবে শত শত পিন ঢুকে যাচ্ছে চামড়া ভেদ করে। এক সেকেন্ডকে মনে হবে এক ঘন্টা।
মিনোটা মেয়েটির গলায় পিন শকার তিন সেকেন্ড ধরে রাখলো। চিৎকারও করতে পারলো না তরুনী বিজ্ঞানী। চেয়ারে অচেতন হয়ে পড়ে রইলো তার দেহটা।

ঝ//

মহাকাশ যানের আকৃতিটা বাদুরের মতো। সাথের দু’টি স্কাউটশীপের চেহারাও একইরকম। দূর থেকে দেখে মনে হবে যে একটা বাদুর তার দু’সন্তানকে নিয়ে প্রচন্ড গতিতে ছুটছে। যদিও তাদের দেখার জন্য এখন পর্যন্ত মহাকাশে কাউকে দেখা যায়নি।
বিলোভেরা নত্রের বিলারস ঘাটিতে মহাকাশযান রয়েছে। কিন্তু সেখানে হাইড্রোজেন বোমা নেই। তাই এ তিনটিকে টারসের অভিযানের জন্য পৃথিবী থেকে পাঠানো হয়েছে। মহাকাশযানটাতে যে হাইড্রোজেন বোমা আছে সেটি পুরনো দিনের বোমা না। নতুন ধরনের বোমা। ধ্বংসাত্মক মতা আরো বেশি।
অল্প কিছুনের মধ্যেই তারা বিলোভেরা নত্রের মহাকর্ষের সীমানায় পৌছে যাবে। শানিম ছেলেটা মহাকাশযানের স্ক্রিনে বিলোভেরা নত্রের দিকে তাকিয়ে আছে। তার কপাল কুঁচকে আছে। মেজাজ খারাপ। শৈবালদের একটা গ্রহে বোমা মারতে মহাকাশযানে মানুষের দরকার কি – শানিম এটা বুঝতে পারছে না। এখানে তো নতুন কোন সিদ্ধান্তের দরকার নেই। রোবট প্রোগ্রাম করা কাজকর্ম করবে। শুধু রোবট দিয়ে এ অভিযানটি চালানো যেতো।
শানিম মহাকাশযানে একা মানুষ না। তার সাথে শেন নামের একটা মেয়েও আছে। সে এই মুহূর্তে ঘুমুচ্ছে।
এ অভিযানে পাঠানোর জন্য এ দু’জনকে বেশ খুজে বের করা হয়েছে। শানিম এসেছে বিশ্বব্যবস্থার বিমানবাহিনী থেকে। বিমানবাহিনীতে তার বিরুদ্ধে নৃশংস আচরনের অভিযোগ রয়েছে। কোন অভিযানে বা যুদ্ধেেত্রই শুধু নয় বাসায় থাকলেও সে নৃশংস আচরন করে। এ পর্যন্ত সে তিনটি কুকুর আর পাচটি বেড়ালকে গুলি করে হত্যা করেছে। একটি বেড়ালকে হত্যা করেছে চার পায়ে বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে। তার ক্রোমোজের তথ্য বিশ্লেষন করে দেখা গেছে সে একজন বিমান চালকের বংশধর। যে বিমান চালক এর আগে পৃথিবীর একটি শহরে পারমানবিক বোমা মেরেছিলো। এ বোমা মারার পর থেকে চার মাস পর্যন্ত এক লাখ ছিষট্টি হাজার মানুষ মারা যায়। অর্ধেক মারা যায় প্রথম দিন।
শেন-ও একই রকম একটি পরিবার থেকে এসেছে। জাতি রাষ্ট্রের সময়কালে তার এক পূর্ব পুরুষ একটি বিশাল মহাদেশের শাসক ছিলো। আরেক দেশের তেল দখলের জন তাদের পূর্ব পুরুষ ঐ দেশের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়। গনহত্যা চালায়। হত্যা করে ঐ দেশের শাসককে। আবার নিজের এ মানুষ হত্যার অভিযানকে মজার একটি নাম দেয় ’ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ । বাক্তি জীবনে শেন ক্রিমিনাল সাইকোলজীতে স্কলার। ক্রিমিনাল সাইকোলজী ব্যবহার করে সমাজের অপরাধীদের ধরা হয়। তাদের বিরত রাখা হয়। তবে শেনের বিরুদ্ধে কোন কোন ধনী অপরাধীকে সহায়তা করার অভিযোগ রয়েছে। অপরাধীরা তার দেখানো সাইকোলজিকাল টুল ববহার করে বিশ্ব ববস্থার পুলিশ রোবটদের এড়িয়ে গেছে বলে লোকে বলাবলি করে।
তারা বিলোভেরা নত্রের মহাকর্ষ বলয়ের মধে ঢুকে পড়েছে । ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে টারস গ্রহের দিকে।
ঘুম থেকে উঠে এসেছে শেন। স্কিনের দিকে ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে আছে। ’ আমরা তাহলে বিলোভেরা নত্রের মহাকর্ষ বলয়ের ভেতরে ঢুকে পড়েছি ? ’
‘ পড়েছি। ’ চরম বিরক্তি নিয়ে বললো শানিম। শেনের মুখ থেকে গন্ধ বের হচ্ছে।
‘ তুমি ভুরু কুচকে আছো কেনো ? ’
তোমার মুখ থেকে গন্ধ বের হচ্ছে।’
‘ মুখে ব্যকটেরিয়া এটাক করেছে, এজন্য গন্ধ হচ্ছে। আমার মুখে কখনও গন্ধ হয়না। এজন্য ভুরু কুচকে থাকতে হবে নাকি ? ’
ভুরু কুচকেই রাখলো শানিম। কিছু বললো না।
শেন চলে গেলো। কিছুন পর ফিরে এলো মুখে এন্টি ব্যকটেরিয়াল স্প্রে মেরে। এখন আর ওর মুখে গন্ধ নেই।
‘টারস আর কতদূরে ? ’
‘বেশি দূরে না। চলে এসেছি।’
‘আমাদের পরিকল্পনাটা কি ? কিভাবে আমরা হামলা চালাবো। ’
‘আমাদের কিছু করতে হবে না। সব করবে মহাকাশযানের কম্পিউটার। ’
‘হামলার আগে আমাদের মতামত নেয়ার একটা অপশন রাখা হয়েছে পরিকল্পনায়। এটা ছাড়াও এ গ্রহ সংক্রান্ত সব বিষয়েই আমাদের মত নেয়ার একটা বিষয় আছে। ’
‘সবই তো জানো ? তাহলে আর জিজ্ঞেস করছো কেন ? ’
মিষ্টি হেসে শেন বললো, ‘ ঘুমিয়ে থেকে ভুলে গিয়েছি কিনা তা বোঝার চেষ্টা করছি। ভুলেও তো যেতে পারি। পারিনা ? আমার উপর এতো রাগ করছো কেন ? মানুষ তো ভাই। রোবট তো না। যে সব কিছু মেমোরিতে থাকবেই। ’
শানিম কিছু বললো না। তবে ওর কোচকানো ভুরু সোজা হতে শুরু করলো।
‘আমরা কি টারসের বায়ুমন্ডলের ভেতরে ঢুকে হামলা করবো ? না বাইরে থেকে ? ’
‘বায়ুমন্ডলের ভেতরে ঢুকে করবো। ভূ-পষ্ঠের কাছাকাছি গিয়ে। ’
‘কতটুকু কাছাকাছি গিয়ে করবো বোমা ফেলবো সে হিসাবটা কি করা হয়ে গেছে ?
সেটার একটা নির্দেশ আগে থেকেই দেয়া আছে। কম্পিউটার এক মিনিট আগে সেটা সামান্য পরিবর্তন করেছে। ’
ওরা দু’জনেই তাকিয়ে রইলো কম্পিউটার স্ক্রিনে। টারস গ্রহ আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। নীলাভ দেখাচ্ছে গ্রহটাকে। ওদের মহাকাশযান দ্রুত ছুটে চলেছে নীলাভ গ্রহটার দিকে।


টারস গ্রহের শৈবালদের সবগুলি ফুল হঠাৎ একদিকে ঘুরে গেলো। যেদিক দিয়ে মহাকাশযানটি আসছে সেদিকে। মহাকাশযানটি এখনও অনেক উপরে। তাকে দেখা যাচ্ছে না। তবে শৈবালগুলির ফুলে মহাকাশযানের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে। এটি টারস গ্রহের বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। এর আকার, আকৃতি, ধ্বংস করার মতা, অভিযাত্রী সংখ্যাসহ যাবতীয় তথ্য অনেক আগেই টারসের শৈবালদের কাছে চলে এসেছে। পৃথিবীর তথ্য স্থানান্তর সিষ্টেম থেকে। এখন শৈবালরা অপোয় আছে তাদের পরিকল্পনা ঠিকমতো বাস্তবায়নের।

মহাকাশযানটি টারসের বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করলো। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কম্পিউটার নির্দেশ করলো মহাকাশযানের শরিরের বিভিন্ন স্থানে অজানা বস্তুর উপস্থিতি।
শানিম, শেন দুইজনের কেউই বিষয়টিকে পাত্তা দিলো না। হতে পারে ধুলিকনা বা কোন যৌগ। যেটা কম্পিউটার ঠিক বিশ্লেষণ করতে পারছেনা। অনেক গ্রহে গেলেই দেখা যায় নতুন নতুন যৌগ আবিস্কৃত হচ্ছে। যৌগগুলির নাম রাখা হয়। এসবের সাথে জুড়ে যায় অভিযানকারিদের নাম। এ অভিযানেও হয়তো নতুন যৌগ আবিস্কৃত হবে। হলে হবে। এসব পরে দেখা যাবে। আগে মূল কাজ করা হোক।

কিন্তু অজানা বস্তু দ্রুত বাড়তে লাগলো। কম্পিউটার জানালো অজানা বস্তু যেভাবে বাড়ছে মনে হচ্ছে তারা মহাকাশযানের বিভিন্ন স্থানে বংশ বিস্তার করছে। বিশেষ করে এদের একটি বড় অংশ অবস্থান নিয়েছে মহাকাশযানের ইঞ্জিনের ভেতরে। কিছু কিছু ইঞ্জিনের পথ দিয়ে মহাকাশযানের ভেতরেও অনেক দূরে চলে এসেছে।
আর উপো করা যায়না।
শানিম, শেন আদেশ করলো বস্তুগুলির ছবি আর সমস্ত তথ্য হাজির করতে।
কয়েক সেকেন্ডের ভেতরেই বস্তুগুলির বিভিন্ন দিক থেকে তোলা ছবি আর তাদের সম্পর্কে পাওয়া তথ্য হাজির হলো। কম্পিউটার বলেছে এগুলি শৈবাল বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু তাদের কাছে টারস গ্রহের যেসব তথ্য ও ছবি আছে সেগুলির সাথে এ শৈবালগুলি মিলছে না।
শানিম বেশ অবাক হলো। এগুলি আসলেই টারসের শৈবালের মতো। কিন্তু প্রতেকটার সাথে একধরনের গ্যাসিয় আবরনী আছে। নতুন যেগুলি জন্ম নিচ্ছে সেগুলির চারিদিকেও গ্যাসিয় আবরণী তৈরী হচ্ছে। আরো অদ্ভূত বাপার এদের মনে হচ্ছে ছোট ছোট পা আছে। এরা মহাকাশযানের বিভিন্ন স্থানে খুব দ্রুত চলাচল করে ছড়িয়ে যাচ্ছে। এত প্রচন্ড বেগে ছুটতে থাকা মহাকাশযানে এরা কিভাবে আশ্রয় নিলো ? মহাকাশযান আর টারসের বায়ুমন্ডলের ঘর্ষনে এদের তো ছাই হয়ে যাওয়ার কথা।
টারসের শৈবালগুলি কি বিবর্তিত হয়ে এরকম হয়েছে ? শানিম বললো শেনকে।
তাইতো মনে হচ্ছে। কিন্তু টিকে থাকার এমন মতা সম্পন্ন কোন শৈবাল টারসের বায়ুমন্ডলে আছে -আগে তো শুনিনি।
আমিও শুনিনি। এগুলি কি মহাকাশযানে ঢুকে পড়ার জনই বিবর্তিত হয়েছে। ?
‘শানিম কি যে বলোনা। ’
‘কথাটা উড়িয়ে দিয়ো না। আমাকে কিন্তু বলা হয়েছে টারসের শৈবালরা বেশ মতা সম্পন্ন বুদ্ধিমান প্রাণী বলে বিশ্ব পরিচালনাকারিদের অনেকে সন্দেহ করেন। তবে এদের মতা ঠিক কতো তা তারা জানেন না। এ সম্পর্কে যে দুই বিজ্ঞানী সবচেয়ে বেশি জানেন তারা বিশ্ব পরিচালনা সংস্থাকে তা জানাননি। এ কারনে অবশ্য তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।’
‘আমাকেও বলা হয়েছে এসব কথা। তবে আমার বিশ্বাস হয়না। একেতো শৈবাল। শৈবাল কি আর মানুষ। আমার মনে হয়েছে বিশ্ব পরিচালনা সস্থা তাদের নতুন হাইড্রোজেন বোমা পরীা করার জন্য এ গল্প বানিয়েছে। আর এখন যেটা দেখছি তুমি বলছো এরা মহাকাশযানে ঢুকে পড়ার জন্য বিবর্তিত হয়েছে। তারা এত দ্রুত বিবর্তিত হবে ? এটা বিশ্বাস করাও বেশ কঠিন শানিম। আমার মনে হয় এ ধরনের শৈবাল এখানে ছিলো আগে থেকেই। যে তথ্য আমাদের কাছে ছিলো না।’
‘এরা তো আমাদের মহাকাশযানটা ছেয়ে ফেলছে।’
‘যাক চিন্তার কিছু নেই। দেখো আমরা বেশ দ্রুতই নিচে নেমে এসেছি। আর কিছুন পরে আমরা আমাদের টার্গেট পয়েন্টে পৌছাবো।’ শেন বললো।
শানিমও কম্পিউটারে দেখলো আসলেই শেনের কথা ঠিক। মহাকাশযানের শৈবালগুলির বাপারে একটা ব্যবস্থা অবশ্য নেয়া যায়। মহাকাশযানের সার্ফেসের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়া যায়। এতে শৈবালরা ঝরে যাবে।
শানিম মহাকাশযানের শরিরের উপরের অংশের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিলো।
শানিমের পরিকল্পনায় কাজ হলো। মহাকাশযানের সার্ফেসে থাকা শৈবাল মরে মহাকাশযান থেকে ঝরে গেলো। ইঞ্জিনের কাছাকাছি শৈবালও ঝরে গেলো। কম্পিউটারে দেখাচ্ছে আশিভাগ শৈবাল মহাকাশযান থেকে ঝরে গেছে। বাকি আছে মাত্র বিশভাগ। এ বিশভাগের ব্যাপারে পরে ব্যবস্থা নেয়া যাবে।
শানিম একটা গন্ধ পাচ্ছ ?
না কোন গন্ধ পাচ্ছিনা।
প্রথমে না বললেও কয়েক সেকেন্ডের মধেই একটা গন্ধ এসে শানিমের নাকে ধাক্কা দিলো। ‘একটা গন্ধ পাচ্ছি। ’
‘কিসের গন্ধ ?’
‘মনে হয় মহাকাশযানের সার্ফেসের তাপমাত্রা বাড়ানোর কারনে গন্ধটা হচ্ছে। হয়তো বেশি তাপমাত্রায় শৈবালগুলি পুড়ে গন্ধ তৈরী হয়েছে। দাড়াও তাপমাত্রা আগের অবস্থায় নিয়ে যাই। গন্ধটা কমে আসবে।’
শানিম মহাকাশযানের সাফেসের তাপমাত্রা কমিয়ে আনলো।
গন্ধটা বাড়লো কি কমলো ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।
টারসের টার্গেট পয়েন্ট দ্রুত এগিয়ে আসছে। আগামী দুই মিনিটের মধ্যে ওরা টার্গেট পয়েন্টে পৌছে যাবে। এরপর কি হবে সবই জানা। তারপরেও শানিম আবারও পরিকল্পনাটায় চোখ বুলালো। টার্গেট পয়েন্ট পৌছানো মাত্র মহাকাশযানের নিচের দিকের বম্ব চেম্বারের ঢাকনা খুলে যাবে। বোমাটি নিচে নেমে যাবে। আর মহাকাশযানটি উপরে উঠতে থাকবে। বোমা মাটিতে পড়া মাত্রই বিস্ফোরিত হবে। বিস্ফোরিত হলে তৈরী হবে প্রায় বিশ কিলোমিটার উচ্চতার ব্যাঙের ছাতার মতো ধুলির মেঘ। এছাড়া বাতাসের একটি প্রচন্ড ধাক্কা বা শক ওয়েভ তৈরী হবে। এসব থেকে মহাকাশযানকে নিরাপদ রাখতে মহাকাশযানকে টারসের পৃষ্ঠ থেকে দ্রুত উপরে উঠিয়ে নেয়া হবে।
শানিমের মাথা কেমন যেন ঝিম ঝিম করছে। প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। এরকম লাগছে কেন ? শেনকে পাশে বসিয়ে রাখতে হবে। বোমা ফেলার সময় কম্পিউটার একটা ম্যানুয়াল কমান্ড চাইবে। সেটা দিতে হবে পাচ সেকেন্ডের মধ্যে। পাচ সেকেন্ডের মধ্যে দেয়া না গেলে কম্পিউটার জিজ্ঞেস করবে ‘আমি কি নিজের মতো কাজ করবো? ’ উত্তর হ্যা হলে কম্পিউটার নিজের মতো কাজ করবে। উত্তর না হলে কম্পিউটার জিজ্ঞেস করবে, ‘আমরা কি ফিরে যাবো ?’
মহাকাশযানের কম্পিউটার স্ক্রিনের পাশ দিয়ে কি শৈবাল বের হচ্ছে নাকি ? বিভিন্ন সুইচের ভেতর থেকেও বের হচ্ছে শৈবাল। তাও কি সম্ভব ? জেগে জেগেই স্বপ্ন দেখা শুরু হয়ে গেলো? শানিম মনে মনে হাসলো।
ঘুমে আর বসে থাকতে পারছে না শানিম। শেন এর হাতে দায়িত্ব দিয়ে ওর উঠে যেতে হবে। ও আর পারছেই না। কিন্তু শেন মেয়েটা কোথায় গেলো ? এতন তো এখানেই ছিলো।
শেনকে খুজতে শানিম উঠেছিলো । কিন্তু দু’পা এগুতেই দড়াম করে মহাকাশযানের মেঝেতে পড়ে গেলো। চোখ বন্ধ হতে হতে দেখলো শেন মেঝেতে আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে।


জ//

মাথাটা কেমন যেন ঘোলা ঘোলা লাগছে লেনের। বিশ্ব পরিচালনা সংস্থার প্রধান লেনসহ আরো কয়েকজন বসে আছেন বোর্ড রুমে। বোর্ড রুমের বিশাল স্ক্রিন সামনে। সেখানে দেখা যাচ্ছে টারস গ্রহে অভিযানে যাওয়া মহাকাশযানটিকে। অভিযানে অংশ নেয়া দুই অভিযাত্রী-ই মহাকাশযানে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। মহাকাশযান থেকে আসা সিগন্যাল থেকে জানা যাচ্ছে তাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক। শরিরের কোথাও আঘাত করা হয়নি। তারপরেও এরা বেঘোরে ঘুমুচ্ছে।
মহাকাশযান থেকে বোমা ফেলার কথা ছিলো সেটিও ফেলা হয়নি। এটি না ফেলার জন্য সিদ্ধান্ত দিয়ে অভিযাত্রী শানিম ঘুমিয়ে গেছে। শেন নামের তরুনী অভিযাত্রীটি আগেই ঘুমিয়ে গেছে।
এসব কি হচ্ছে ? এসব কি হচ্ছে ? লেন দুইবার চিৎকার করে বললো। উত্তেজনায় সে দাড়িয়ে গেছে। কেউ কোন উত্তর দিলো না। কেউই বুঝতে পারছেনা এটা কি হচ্ছে।
মহাকাশযান কি আক্রান্ত হয়েছে ? আক্রান্ত হলে তেমন কোন সিগন্যাল কোথায় ? মানুষ অভিযাত্রীরা না পাঠাতে পারলেও রোবট অভিযাত্রীরা পাঠাবে। মহাকাশযানের কম্পিউটার পাঠাবে। তেমন ধরনের কোন সিগন্যাল-ই আসেনি।
দুই অভিযাত্রী ঘুমিয়ে পড়লো কেন ? ওদের যতন বসে থাকতে দেখা গেছে ততন তো ওদের মধ্যে কান্তির কোন ছাপ দেখা যায়নি! মহাকাশযানে কি কোন যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দিয়েছে ? সেরকম কোন তথ্যও তো পাওয়া গেলোনা।
পৃথিবীর মহাকাশ ষ্টেশনও সব ধরনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে। উত্তর খোজার চেষ্টা করছে কেন এমন হচ্ছে। কিন্তু বিশ্ব সংস্থার পরিচালকদের মতোই তারাও কোন উত্তর খুজে পাচ্ছেনা।
মহাকাশযান থেকে আরেকটি সিগন্যাল এসেছে। মহাকাশযান পৃথিবীতে ফেরৎ আসার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্তটি কে নিলো ? অভিযাত্রীরা ঘুমিয়ে পড়ার আগে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে? না মহাকাশযানের কম্পিউটার নিয়েছে ?
লেন ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো। সাথে সাথে তার হৃদযন্ত্রের স্পন্দন, নারীর স্পন্দন, রক্তের চাপ মাপা হয়ে গেলো। সব কিছুই স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা কম বা বেশি। তবে ঝুকির কোন আশঙ্কা নেই। কর্মী রোবট এক কাপ কোমল পানীয় এনে দিলো। এ পানীয় খেলে তার শরির স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
লেন হাত বাড়িয়ে কোমল পানীয়ের গ্লাসটি নিলো। অল্প সময়ের মধ্যেই গ্লাসটি খালি করে ফেললো।
এসময় মহাকাশ ষ্টেশন একটি খবর দিলো। তারা নিশ্চিত বোমা না ফেলার সিদ্ধান্ত এবং মহাকাশযান ফিরে আসার সিদ্ধান্ত মহাকাশযানের দুই অভিযাত্রী নেয়নি। কারন তারা ঘুমিয়ে পড়ার পর এ সিদ্ধান্ত দু’টি হয়েছে। মহাকাশ ষ্টেশন হিসাব কষে দেখেছে দুই অভিযাত্রীর ঘুমিয়ে পড়ার সিগন্যাল তারা আগে পেয়েছে। পরে পেয়েছে বোমা ফেলার সিদ্ধান্ত বাতিল আর মহাকাশযান ফিরে আসার সিদ্ধান্তের সিগন্যাল।
মহাকাশ ষ্টেশন আরেকটি খবর দিলো। টারসে অভিযান চালাতে যাওয়া মহাকাশযান বা এর সাথের স্কাউটশীপ দু’টি থেকে আর কোন সিগন্যাল আসছে না। এদের সাথে মহাকাশ ষ্টেশনের যোগাযোগ সম্পূর্ন বিচ্ছিন্ন।
লেন আরেক গ্লাস কোমল পানীয়ের জন্য রোবটকে ইঙ্গিত দিলো।
একই সাথে বিশ্ব পরিচালনা সংস্থার আরো কয়েকজন পরিচালকও রোবটের কাছে কোমল পানীয় চাইলেন। তাদেরও তৃষ্ণা পেয়ে গেছে।


ঝ//

বরফের জায়গাটুকুর কত পরে আবার মরুভূমি ?
ওরিয়া মাথা উঁচু করে আন্দাজ করার চেষ্টা করলো। ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। তিন দিকে বিস্তৃন্য বরফ ঢাকা এলাকা। একদিকে পাহাড়। পাহাড়ের দিকটায় প্রবল কুয়াশা। তবে সেদিক থেকে কুয়াশা এদিকে আসছে না। বাতাস নেই। অন্য তিনদিক মোটামুটি ভালই দেখা যায় চাঁদের আলোয়। ঠান্ডা বরফে কেমন ঘোর লেগে যায়।
ওরিয়ার আস্তে আস্তে শীত লাগতে লাগলো। ওর মোটা শীতের পোষাক ভেদ করে ঠান্ডা ঢুকে পড়তে চায়। কোথাও আশ্রয় নেয়া দরকার। কোথায় আশ্রয় নেবে ? নাকি ফিরে যাবে ? আশ্রয় পাওয়ার সম্ভাবনা পাহাড়ের দিকে। সেদিকে গুহা থাকতে পারে। গুহা থাকলে অবশ্য সেখানে অন্য কোন বন্য প্রাণীও থাকতে পারে। যারা তাকে আক্রমন করে নিজের খাদ্য বানাতে পারে।
সবই হতে পারে। আবার না-ও হতে পারে। দেখা যাক কি হয়। মনে মনে নিজেকেই বলল ওরিয়া।
পাহাড়ের দিকে হাটতে লাগলো ও। বরফে পা অল্প দেবে যায়। তবে বেশ ভালই হাটা যায়। খুব একটা অসুবিধা হয়না। ওরিয়া আস্তে আস্তে হাটতে লাগলো।
পাহাড়টা যত কাছে মনে হয়েছিলো। তত কাছে না। পাহাড়ের কাছে পৌছাতে পৌছাতে ওর বেশ সময় লেগে গেলো। দীর্ঘন হাটার কারনে শরির গরম হয়েছে। ঠান্ডা কম অনুভূত হচ্ছে।
একটা জায়গা খুজে পেলো আশ্রয় নেয়ার মতো। গুহা না। পাহাড়ের খাজ বলা যায়। ভেতরে পাশাপাশি দু’জন মানুষ অনায়াসে ঢুকে যেতে পারে। খাজের উপরের অংশ বরফ জমে বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু এ জায়গাটিতে বরফ জমছে না। বরফ গলে পানি হয়ে যাচ্ছে। ওরিয়া খাজের ভেতরে প্রবেশ করলো। অপোকৃত গরম একটা বাতাসের প্রবাহ অনুভব করলো সে। খাজের ভেতর থেকে বাইরের দিকে চলে যাচ্ছে। এ কারনেই বোধ হয় এর মুখটা বরফ জমে বন্ধ হয়ে যায়নি। ভেতরে কি কোন আগ্নেয়গিরি আছে নাকি ? কে জানে। থাকতেও পারে।
ওরিয়ার প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। ও দুই হাত ভরে বরফ গলা পানি খেলো। তারপর ফিডিং টিউব থেকে বের করলো একটা চাকতি। চাকতি মুখে পুরে দিলো। ুধা অনভূত হচ্ছেনা। শরিরও প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেয়ে গেছে। পাথুরে মেঝেতে গা এলিয়ে দিতেই ঘুম ঝাপিয়ে পড়লো শরিরে। ওর মনে রইলো না ও কোথায় শুয়ে আছে।
কোনো পাখির ডাকে ঘুম ভাংলো না। এমনি এমনি ঘুম ভেঙ্গে গেলো। সামনে যতদূর চোখ যায় চমৎকার সাদা বরফ। সকালের রোদে চকচক করছে। কোন শব্দ আসছে না কোন জায়গা থেকে। অদ্ভূত নির্জনতা।
শরির ঝেড়ে ওরিয়া বাইরে বের হয়ে এলো। বাইরে এসেই চমকে গেলো ও। ওকে স্বাগত জানালো বিশ্ব পরিচালনা সংস্থার গোয়েন্দা প্রধানের এক নাম্বার সহকারি। মিনোটা।
‘ওহ ওরিয়া, অনেক ভূগিয়েছেন ভাই। আপনি এই পাহাড়ের ভেতর থেকে না বের হলে, আপনাকে বের করতে আরো যে কতো ধকল সইতে হতো আমাদের। কি সমস্যায় পড়েছি দেখেন। আপনার পিজিভি থেকে কোন সিগন্যাল পাচ্ছিনা। গ্রাভিটেশন মেশিনের সিগন্যালও বন্ধ। আপনার কমিউনিকেটরের সিগন্যালও বন্ধ। অনেক খুজে এখানে এলাম। এখানে ভাবলাম আপনার সাথে নিশ্চই ফিডিং টিউব আছে। মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে সেটা খুজতে খুজতে আপনাকে পাবো। ডিটেক্টরও ভালো সিগন্যাল দিলো। সিগন্যাল অনুযায়ী এসে দেখি এখানে একটা লাভার পুরনো স্তুপ। যেখানে প্রচুর লোহা জমে আছে। সেখান থেকেই আমরা সিগন্যাল পাচ্ছিলাম। আমরা তো আন্দাজ করতেই পারিনি লোহার স্তুপটার পাশে এই খাজের ভেতর কোন মানুষ ঘুমিয়ে থাকতে পারে। ভাই আপনি তো রোবটকেও হার মানাবেন। আপনারা থাকতে কেন যে কষ্ট করে রোবট বানানো হলো। আপনারাই তো রোবটদের কাজগুলি করতে পারেন। ’
মিনোটা অনেক কথা বললেও ওরিয়া একটা কথাও বললো না। ও ঠিক বুঝতেই পারছে না এই লোকটা কে। তবে সাথের লোকজনের পোষাক আর যোদ্ধা রোবট দেখে আন্দাজ করেছে এরা বিশ্ব সংস্থার সামরিক বিভাগের কেউ হবে।
‘আপনারা আমার কাছে কি চান। ?’
‘আপনার কাছে? কি চাই ? কি চাই তাতো বলতেই হবে। না বললে তো হবে না। না বললে আপনার নাগরিক অধিকার ুন্ন হবে। ভীষন অন্যায়। ভীষন অন্যায়। ভাই সব কিছুই বলবো। কিন্তু আমি আমার খুশি সামলাতে পারছি না। আমি ভেবেছিলাম আপনাকে খুজতে গিয়ে আমারও বোধহয় চাকরিটা যাবে। আমার আগের জনের যেভাবে গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চাকরিটা বেচে গেলো। চলেন ভাই চলেন। পিজিভিতে ওঠেন। যেতে যেতে কথা বলি। ’
ওরিয়া এক পা-ও নড়লো না।
মিনোটা ওরিয়ার সামনে এসে দাড়ালো। কিছু বললো না। ততনে তার দু’পাশে এসে দাড়িয়েছে দু’টি যোদ্ধা রোবট। হাতের ইশারা করতেই তারা দুই পাশ থেকে ধরে ওরিয়াকে মাটির প্রায় এক ফুট ওপরে তুলে ফেললো। এভাবেই ওরিয়াকে নিয়ে তুললো পিজিভিতে।
পিজিভি মাটি ছাড়িয়ে বেশ কিছুটা উপরে উঠতেই ওরিয়ার কাছে ধরা পড়লো এ এলাকার কুয়াশার রহস্য। উচু পাহাড়টার ওপারে মরুভূমি। আর এপারে বরফ জমা অঞ্চল। ওই পারের গরম বাতাস আর এপারের ঠান্ডা বাতাসের সংঘর্ষ হয় পাহাড়েরর উপরে। তাই সেখানে প্রচন্ড কুয়াশা তৈরী হয়। পাহাড়ের খাজ দিয়ে বোধ হয় ঐ পারের মরুভূমির গরম বাতাসই রাতে এসেছে। রাতে যদিও মরুভূমির বাতাসও বেশ ঠান্ডা হয়ে আসে। তবে দিনের বেলায় বাতাস প্রচন্ড গরম হয়ে যায়। আরো কিছুটা সময় পাহাড়ের খাজটার ভেতরে থাকতে পারলে বোঝা যেতো বাতাসটা মরুভূমির বাতাস কিনা। মরুভূমির বাতাস হলে এটা রাতের তুলনায় দিনে অনেক বেশি গরম থাকবে।
কিন্তু লোকগুলি তাকে থাকতে দিলো না।
ওরিয়া বিরক্ত চোখে মিনোটার দিকে তাকালো। মিনোটা পিজিভি’র চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। মুখে একটা তৃপ্তির হাসি। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তাকে ?
পিজিভি এসে থামলো বিশ্ব গোয়েন্দা সংস্থার ভবনের সামনে। ওরিয়াকে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো মিনোটার ক।ে
একটুও সময় নষ্ট না করে ওরিয়াকে নিয়ে পাশাপাশি বসলো মিনোটা। শুরু করলো জিজ্ঞাসাবাদ।
‘ দুই বিজ্ঞানী আপনার কাছে পাঠানো বার্তায় কি বলেছে ? ’
‘ কোন দুই বিজ্ঞানী। কিসের বার্তা ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা। ’
‘বুঝতে পারছেন না এটা বিশ্বাস হয়না। তবে পুরো বার্তাটা আপনি হয়তো পড়েননি। ঠিক আছে আপনার কমিউনিকেটরটা চালু করুন। দেখুন সেখানে বিজ্ঞানী ফাত আর রেন কিছু পাঠিয়েছেন কিনা। ’
‘মহান বিজ্ঞানী ফাত আর রেন আমাকে বার্তা পাঠিয়েছেন। কি বার্তা পাঠিয়েছেন ?’
‘ হ্যা, আপনার মহান বিজ্ঞানীরা কি বার্তা পাঠিয়েছেন তা জানার জন্য আমরাও উদগ্রিব। কমিউনিকেটর চালু করুন। ’
‘কমিউনিকেটর আমার কাছে নেই। আমার পিজিভিতে। ’
‘ ও আচ্ছা। আনার ব্যবস্থা করছি। কিন্তু আপনাকে একটা কথা বলে রাখি ওরিয়া। আমি ইচ্ছে করলে আপনার মাথায় নিউরো ফাইন্ডার লাগিয়ে সব তথ্য এমনিতেই জেনে নিতে পারি। কিন্তু সে েেত্র আপনার ব্রেইনের স্থায়ী তি হবে। নানারকম সমস্যা দেখা দেবে। তাই আমরা সাধারনত বিজ্ঞানী, শিল্পী, মেধাবীদের মাথায় নিউরো ফাইন্ডার লাগাই না। আপনি সহযোগিতা না করলে কিন্তু আমি খারাপ পথে যেতে বাধ্য হবো। ’
চলে যাচ্ছিলো মিনোটা। আবার ফিরে এসে শুরু করলো। ‘ আপনাকে একটা কথা বলা হয়নি। আপনার এক সহকারির শরিরে আমরা সাতবার পিন শকার চালিয়েছি। একবার পিন শকার চালালেই মানুষের অবস্থা কি হয় আপনি তো জানেন। সাতবার চালানোর পর ও চলে গেলো নিজের নিয়ন্ত্রনের বাইরে। আবোল তাবোল বলতে বলতে জানালো আপনি মাঝে মাঝে মরুভূমির বরফ ঢাকা এলাকায় বেড়াতে যান। এ জীবনে বোধহয় আপনার এই সহকারির মাথা ঠিক হবে না। জীবনটা কাটাতে হবে নিউরো হসপিটালে। ’
মুচকি হেসে মিনোটা চলে গেলো। ওরিয়া ওর চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে রইলো ফ্যাল ফ্যাল করে।

অল্প কিছুনের মধ্যেই ওরিয়ার কমিউনিকেটর চলে এলো। কিন্তু মিনোটা এলোনা। কিছুন পর জানা গেলো মিনোটা ওরিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে না। ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে ওনিয়ার বস। বিশ্ব গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান নুশ। ওরিয়াকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিজ্ঞানী ফাত আর রেনের গবেষনা কেন্দ্রে। সেখানে দুই বিজ্ঞানীর সামনেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ওরিয়াকে দুই বিজ্ঞানীর দেয়া তথ্য-ও তাদের সামনেই ফাস করা হবে। যাতে বিজ্ঞানীদের মন ভেঙ্গে যায়।

বিজ্ঞানী ফাত আর রেনের গবেষনা কেন্দ্রে আনা হলো ওরিয়াকে।
এখানে বহুদিন কাজ করেছে ও। বহুবছর আগে। এরপর আর আসা হয়নি। পুরনো জায়গাটিতে দাড়িয়ে আবারো সেই দিনের বিস্ময় , মুগ্ধতা এসে ভীড় করলো ওরিয়ার দৃষ্টিতে। কি উচু একটা গম্বুজ। গম্বুজে কিছু লেখা না ছবি আকা তা বের করতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিলো ওরিয়ার। পরে জেনেছে এগুলি আসলে লেখা। বিজ্ঞানের জটিল কিছু সূত্র ও গুরুত্বপূর্ন কিছু তথ্য এ গম্বুজে লেখা। যা দুই বিজ্ঞানীর গবেষনায় জানা গেছে। এগুলিকে সুন্দর ক্যারিওগ্রাফির মাধ্যমে খোদাই করা হয়েছে গম্বুজে।
আজ যে ওরিয়া বন্দি হয়ে এসেছে তা ও খানিনের জন্য ভুলে গিয়েছিলো। রোবটের ধাক্কায় মনে পড়লো। ওকে সামনে এগিয়ে যেতে রোবট ধাক্কা দিচ্ছে। এসময় কার যেন কন্ঠ শোনা গেলো।
‘আরে ধাক্কা দিয়ো না। আস্তে আস্তে নিয়ে আসো। যতন না ওনার কাছ থেকে দুই বিজ্ঞানীর পাঠানো বার্তাগুলি উদ্ধার করছি ততন অন্তত ওনাকে সম্মান করতেই হবে। ততন উনি আমাদের সম্পদ। মিষ্টার ওরিয়া বসুন। আমিও প্রথম দিন এখানে ঢুকে এই গম্বুজের সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আপনি তো একসময় এখানে গবেষনা করেছেন। আপনার এত মুগ্ধ হওয়ার কি আছে। ’
প্রশ্নটার কি উত্তর দেবে ওরিয়া খুজে পেলোনা। কে কখন কেন মুগ্ধ হবে এর কি কোন বাধা ধরা নিয়ম আছে ? ছাগল কোথাকার। ওরিয়া মনে মনে লোকটাকে গালি দিলো।
‘আচ্ছা সময় নষ্ট না করে শুরু করা যাক। আমি নুশ। বিশ্ব গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান। আপনার হাতে আপনার কমিউনিকেটর দেয়া আছে। দুই বিজ্ঞানী আপনাকে দু’টি বার্তা পাঠিয়েছিলেন। সে বার্তাগুলি রিসিভ করুন। ’
কিছুটা দূরে দুই বিজ্ঞানী বসে আছেন। তাদের চেয়ারগুলি ঘুরিয়ে দেয়া আছে ওরিয়াদের দিকে।


দুই বিজ্ঞানীর বার্তা রিসিভ করে সার অংশগুলি নুশকে বলা শুরু করলো ওরিয়া।
টারস গ্রহে বড় কোন প্রাণী নেই। টারস ুদ্র প্রাণের রাজ্য। এর মধ্যে শৈবালেরা শক্তিশালী। নিজেদের গবেষনাগারে একদিন যখন দুই বিজ্ঞানী টারস গ্রহের বিভিন্ন তথ্য নিয়ে গবেষনা করছিলেন তখন তাদের সাথে যোগাযোগ করে টারসের শৈবালরা। বিজ্ঞানীদের গবেষনাগারের অদূরের মাইলের পর মাইল ফাঁকা ফসলের মাঠে অসংখ্য বিশাল বিশাল থালা আকৃতির এন্টেনা বসানো দূর গ্রহের বেতার বার্তা ধরার জন্য। এই এন্টেনায় টারস গ্রহ থেকে আছড়ে পড়তে থাকে অজানা বেতার বার্তা। কিন্তু কোন বেতার বার্তারই পাঠোদ্ধার করতে পারছিলেন না বিজ্ঞানীরা। বিষয়টি শৈবালরা বুঝতে পেরে তারা নিজেরাই তাদের ভাষা বোঝার জন্য একটি কনভার্টার তৈরী করে। এরপর বিজ্ঞানীদের ভাষায় তাদের পাঠানো সিগন্যাল অনুদিত হয়ে আসতে থাকে।
টারস গ্রহে নানা ধরনের শৈবাল থাকলেও দুই বিজ্ঞানীর সাথে যারা যোগাযোগ করেছে তারা পৃথিবীর নীলাভ সবুজ শৈবালদের সাথে মিলে। নীলাভ সবুজ শৈবাল এক অদ্ভূত ধরনের জীবন। এদের শরিরে কোরোফিল আছে। এরা সূর্যের আলো ব্যবহার করে খাদ্য তৈরী করে। ২৮০০ মিলিয়ন বছর আগে এরা পৃথিবীতে আসে। এরা একদিকে শৈবাল আবার একদিকে ব্যাকটেরিয়া। নীলাভ সবুজ শৈবালের আরেক নাম সায়ানো ব্যকটেরিয়া। এদের টিকে থাকার মতা অসাধারন। এরা আসার আগে পৃথিবীর বায়মন্ডলে অক্সিজেন ছিলো না। এরা পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে অক্সিজেন যুক্ত করতে থাকে। ফলে একসময় পৃথিবীতে অক্সিজেন নির্ভর প্রাণী আসা শুরু হয়।
টারস গ্রহের শৈবালদের প্রত্যেকের একটি ফুলের মতো উপাঙ্গ আছে। ফুলের মতো এই অংশ অনেকটা আমাদের ডিশ এন্টেনার মতো কাজ করে। শুধু একটি শৈবালের একটি ফুল তেমন কিছু না। কিন্তু লাখ লাখ, কোটি কোটি শৈবালের ফুল যখন একসাথে কাজ কওে তখন এদের শক্তি অনেক অনেক গুন বেড়ে যায়। এটি বহু আলোকবর্ষ দূরের সিগন্যাল গ্রহন ও নিজেদের সিগন্যাল পাঠাতে পারে। পৃথিবীর চৌম্বক শক্তি, বিদ্যুৎ শক্তি, অভিকর্ষজ শক্তি, মহাকর্ষ শক্তি সবই একই শক্তির নানা রুপ। আমরা দীর্ঘদিন চৌম্বক শক্তি ব্যবহার করে যোগাযোগ করেছি। তখন মোবাইল ফোন নামের একটি ডিভাইস আমাদের ছিলো। এরপর সৌর শক্তি ব্যবহার করেছি। এখন মাত্র অভিকর্ষজ শক্তি বা গ্রাভিটেশনাল পাওয়ার ব্যবহার করছি। এটি ব্যবহার করে কমিউনিকেটর দিয়ে যোগাযোগ করছি। বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করছি। যাতায়াত করছি। কিন্তু আমরা এখনও মহাকর্ষ শক্তি ব্যবহার করতে শিখিনি। কিন্তু টারস গ্রহের শৈবালরা মহাকর্ষ শক্তি ব্যবহার করা শুরু করেছে। তারা মহাকর্ষ শক্তি ব্যবহার করে আমাদের সাথে যোগাযোগ করছে। আমরা পৃথিবীতে যে শক্তি ব্যবহার করেই তথ্য আদান প্রদান করিনা কেন ওরা সব তথ্য নিয়ে নিচ্ছে। এর কারন হচ্ছে মহাকর্ষের মতো একটি শক্তি ব্যবহার করে ওরা অত্যন্ত শক্তিশালী প্রযুক্তি দাড় করিয়েছে। এ প্রযুক্তি ওদের শরিরের ভেতরেই। ওদেও শরিরের ভেতরেই বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চলাচল করে। প্রয়োজনে একেকটি গুচ্ছ একেকটা যন্ত্রের মতো আচরন করে। ওদের তথ্য ব্যবস্থায় ধাতুর বা মেশিনের প্রয়োজন নেই। আমাদের যেমন আগে মোবাইল ফোন নামের একটি ডিভাইস ব্যবহার করে তথ্য জানতে হতো। বিনোদন উপভোগ করতে হতো। আবার অনেক কাজ করতে হলে এক সময় কম্পিউটার নামের একটি যন্ত্র ব্যবহার করতে হতো। এখন আমরা কমিউনিকেটর নামের ছোট্র একটি বোতামে আগের মোবাইল ফোন, কম্পিউটার , থ্রি ডাইমেনশনাল সিনেমার কাজ করে ফেলতে পারি। এক সময় হয়তো আসবে যখন আমাদের কমিউনিকেটরের মতো এই বোতামটিরও প্রয়োজন হবে না। আমাদের শরিরেই আমরা প্রযুক্তি ব্যবহারের সিস্টেম দাড় করাতে পারবো। এবং প্রযুক্তি ক্রমাগত যেভাবে একটি যন্ত্রে কেন্দ্রীভূত হয়েছে ও ছোট হয়েছে তাতে মনে হয় সেটি-ই হবে। কিন্তু ব্যাপার হচ্ছে ওরা এ কাজটি এখনই পারে। আমাদেও জন্য যে প্রযুক্তি কল্পনা সেটি তারা এখনই আয়ত্ব করে ফেলেছে। কোন মহাকাশযান থেকে যদি আমাদের বেতার বার্তা পাঠানো বন্ধ করে দেয় তাহলে আমাদেও আর মহাকাশে ঐ মাহাকাশযানটির অবস্থা জানার উপায় নেই। কিন্তু ওদের এতে কোন সমস্যা নেই। কারন ওরা বেতার প্রযুক্তি-ই ব্যবহার করে না। ওরা মহাকর্ষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে। মহাকর্ষ শক্তি মহাবিশ্বের সব জায়গায় আছে। সুতরাং তারা নিমিষেই বহু আলোকবর্ষ দূরের খবরও পেয়ে যেতে পারে। যে কোন বস্তুকে নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নিতে পারে।
জীবগতভাবে টারস গ্রহের এই শৈবালদের আরো কয়েকটি বৈশিষ্ট হচ্ছে ওরা খুব দ্রুত বিবর্তিত হয়ে সম্পূর্ন নতুন প্রজাতি তৈরী করে ফেলতে পারে। যারা তখনকার সময়ের প্রয়োজন মেটাবে। প্রচন্ড গরমে, বা ঠান্ডায়ও এরা মারা যায়না। এমনিক ফুটন্ত গরম পানিতে ও ঘন নাইট্রিক এসিডেও এরা টিকে থাকতে পারে।


ঞ//

মহাকাশযানের ভেতরে বেঘোরে ঘুমুচ্ছে শানিম আর শেন।
মহাকাশযানটি দখল করে নিয়েছে নীলাভ সবুজ শৈবালেরা। মহাকাশযানের কম্পিউটারের কি বোর্ডের কি-এর ফাঁক দিয়ে, মেঝেতে, ছাঁদে, বিছানায় টয়লেটে সব জায়গায় তারা। মহকাশযান চলছে। কিন্তু সেটি তাদের নির্দেশিত পথে।
মহাকাশযান পৃথিবীর দিকে যাচ্ছে।
মহাকাশযানে শানিম আর শেনের কন্ঠ দেয়া। তাদের কন্ঠ পেলে মহাকাশযান সে নির্দেশ অনুযায়ী চলবে। শানিম আর শেন ঘুমিয়ে থাকলেও মহাকাশযানে তাদের কন্ঠ শোনা যাচ্ছে। শৈবালরা নানা ভঙ্গিমায় বিন্যস্ত হয়ে দু’টি স্বরযন্ত্র তৈরী করেছে। মানুষের শরিরের ভেতরে কন্ঠনালি, জিহ্বা, ঠোট, দাত শব্দ তৈরীর যন্ত্র হিসেবে কাজ করে। এগুলির মূল বিষয়টি সব মানুষের এক রকম হলেও আবার প্রতিটা স্বর যন্ত্রই আবার অন্য স্বরযন্ত্র থেকে আলাদা। যে কারনে একেক জন মানুষের কন্ঠস্বরও আলাদা। শৈবালরা শানিম আর শেনের শরিরের ভেতরে ঘুরে এসে তাদের মতো দু’টি স্বরযন্ত্র তৈরী করেছে। একটির ভিতর দিয়ে বাতাস বের করে শব্দ বের করলে শানিম এর মতো শোনা যায়। অন্যটি থেকে বের হয় শেনের কন্ঠ। কম্পিউটার শানিম আর শেন মনে করে শৈবালদের নির্দেশ শুনে যাচ্ছে।
মহাকাশযান যতই পৃথিবীর দিকে যাচ্ছে শৈবালরা ততই বংশবৃদ্ধি করছে। মহাকাশযানের উপরে তাদের বংশ বিস্তার ধীর গতিতে ছিলো। কারন সেখানে চরম প্রতিকূল পরিবেশ। ভেতরের পরিবেশ তাদের জন্য অনেক সহায়ক। মহাকাশযানের পানির উৎসটিও তারা খুজে পেয়েছে। এছাড়া পানি তৈরীর মেশিনটিও পেয়েছে। সবকিছু ব্যবহার করে দ্রুত তাদের বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে। মহাকাশযানের ভেতরে বিশাল কলোনী তৈরী হচ্ছে তাদের।
টারসে থাকা শৈবাল আর মহাকাশযানের শৈবালরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখছে। পৃথিবীতে নেমে তারা কি করবে তার পরিকল্পনা তৈরী করা হচ্ছে। কোটি কোটি শৈবাল এক সাথে ভাবছে। তাদের ুদ্র শরিরের ভাবনার স্তরে প্রবল বেগে ইলেকট্রনের প্রবাহ হচ্ছে।
মহাকাশযান পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশের সাথে সাথেই ভেতরের শৈবালরা বাইরে চলে আসবে। মহাকাশযানের সার্ফেস থেকে ছোট ছোট কলোনীতে বিভক্ত হয়ে তারা পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে নামতে থাকবে। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলেও প্রচুর পানি আছে। রয়েছে মেঘের স্তর। এ পানি ব্যবহার করে বায়ুমন্ডলেই বংশ বিস্তার করে বিশাল কলোনী তৈরী করতে হবে। পৃথিবী পৃষ্ঠের টানে ওরা নিচে নামতে থাকবে। কলোনী বড় হয়ে গেলে বাতাসে ভেসে থাকা কঠিন হবে। তখন নিচে নেমে যেতে হবে। কলোনী থেকে বাতাসে প্রচুর বীজ শৈবাল ছড়িয়ে দিতে হবে। তারা বাতাসে ভেসে বেড়াবে। সূযোগ পেলে বংশ বৃদ্ধি করে কলোনী তৈরী করবে। এ কলোনী থেকে আবার বীজ শৈবাল ছড়িয়ে যাবে। এ প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। কারন মানুষ হয়তো নিচে তাদের ধ্বংস করার নানা চেষ্টা করবে। এ প্রক্রিয়া চলমান থাকলে ধ্বংস হয়ে যাওয়া শৈবালদের জায়গায় নতুন শৈবালরা স্থান নেবে। শৈবালদের নিশ্চিহ্ন করা কঠিন হবে।
পৃথিবীতে নেমেই পৃথিবীর পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিটগুলির নিয়ন্ত্রন নিয়ে নিতে হবে। এতে ভয় পাইয়ে দেয়া যাবে। এক গ্র“প যাবে দুই বিজ্ঞানীর গবেষনাগারে। তাদের উদ্ধার করতে। বিজ্ঞানী ওরিয়ার সহযোগিদের আটকে রাখা হয়েছে তার মরুভূমিতে ওরিয়ার গবেষনাগারেই। সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করতে হবে। বিশ্ব পরিচালনা সংস্থার কার্যালয়ে অভিযান চালাতে হবে। যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করা হবে। এছাড়া পৃথিবীতে নামার পর অবস্থা বুঝে পরিকল্পনা আরো পরিবর্তন হবে।
কম্পিউটার জানালো পৃথিবীর বায়ুমন্ডল কাছে চলে এসেছে। তারা ইচ্ছে করলে সরাসারি মহাকাশ ষ্টেশনের দিকে চলে যেতে পারে। অথবা পৃথিবীর চারিদিকে উপগ্রহের মতো ঘুরতে পারে। অথবা একটি নির্ধারিত সময় পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরে পরে আবার পৃথিবীতে অবতরন করতে পারে। কোনটি করবে ? নির্দেশনা চাইলো মহাকাশযানের কম্পিউটার।
মহাকাশ ষ্টেশনে ঢোকার সিগন্যাল কিয়ার আছে কিনা ?
উত্তরে কম্পিউটার জানালো তাকে আগে পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছিলো। মহাকাশ ষ্টেশনে ঢোকার সিগন্যাল কিয়ার আছে কিনা জানতে হলে তাকে পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
শৈবালরা তাকে পৃথিবীর সাথে যোগাযোগের অনুমোতি দিলো।
মহাকাশযান থেকে পৃথিবীতে যোগাযোগ করতেই মহাকাশ ষ্টেশনে হৈ চৈ পড়ে গেলো। তারা জানালো মহাকাশ ষ্টেশনে ঢোকার সিগন্যাল কিয়ার। যদিও এটি একটি অপ্রত্যাশিত অবতরন। তারপরেও মহাকাশযানটি অবতরনের জন্য এখন তিনটি চ্যানেল খালি আছে। যে কোন একটি চ্যানেল দিয়ে তারা পৃথিবীতে অবতরন করতে পারে। অন্য চ্যানেলগুলি দিয়ে বিভিন্ন মহাকাশযান আসছে বা যাচ্ছে। পৃথিবীর মহাকাশ ষ্টেশন থেকে আরো অনেক কিছু জানতে চাওয়া হলো। কিন্তু এসবের কোন উত্তর দেয়া হলো না মহাকাশযান থেকে। মহাকাশযানের ভেতরের অবস্থার কোন চিত্র বা ভিডিও চিত্র পৃথিবীতে পাঠানোর সিগন্যালও বন্ধ করে দেয়া আছে। ফলে কোন স্থির চিত্র বা ভিডিও চিত্রও পৃথিবীতে যাচ্ছেনা।

বিশ্ব পরিচালনা সংস্থার প্রধান লেন চোখ বুলিয়ে একে একে সবাইকে দেখলেন। টারস থেকে ফিরে আসা মহাকাশযানটির পৃথিবীতে অবতরন নিয়ে জরুরি সভা ডাকা হয়েছে বিশ্ব পরিচালনা সংস্থার সভাক।ে সব পরিচালকই সেখানে যথা সময়ে উপস্থিত। এ সভায় পরিচালকদের বাইরে উপস্থিত আছে বিশ্ব গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান নুশ ও মহকাশ ষ্টেশনের প্রধান রিমান।
‘আমরা কি শুরু করতে পারি ? ’ লেন কারো অনুমোতি নিতে বাধ্য নন। বিশ্ব পরিচালনা সংস্থার প্রধান হিসেবে তিনি-ই সভা শুরু করার অনুমোতি দেবেন। তারপরেও প্রতি সভায়ই তিনি সবার একটা অনুমোতি নেয়ার ভঙ্গি করেন। সবার চেহার ঘুরে লেনের দৃষ্টি গিয়ে আটকে আছে ভিন্ন লবি থেকে আসা পরিচালক হাদের চেহারায়।
‘জ্বী শুরু করুন। সময় নষ্ট করার সময় হাতে নেই। ’
‘পরিস্থিতিটা মোটামুটি সবাই জানেন। টারস গ্রহে অভিযান পরিচালনার জন্য আমরা যে মহাকাশযান প্রেরণ করেছিলাম সেটি ফিরে আসছে। টারস গ্রহের তিকারক প্রাণীদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য সেখানে একটি সামরিক অভিযান চালানোর কথা ছিলো। কিন্তু আমাদের মহাকাশযান সে অভিযান চালায়নি। আমরা জানিনা কেন সে অভিযান চালানো হয়নি। অভিযান চালানোর নির্ধারিত সময়ের আগ মূহূর্তে সে সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়। এর কিছুন পর থেকেই মহাকাশযানের সাথে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কয়েক ঘন্টা আগে যোগাযোগ স্থাপিত হলেও মহাকাশযানে থাকা মানুষ অভিযাত্রীদের সাথে কোন কথা হয়নি। বিষয়টা তাই আমাদের মনে নানারকম প্রশ্ন তৈরী করেছে। এখানে গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ও মহাকাশ ষ্টেশনের প্রধান রয়েছেন। তারা কয়েকজন বিজ্ঞানীরও মতামত নিয়েছেন। সবার কাছ থেকে আমরা যে মত পেয়েছি সেটি হচ্ছে, এমনও হতে পারে মহাকাশযান টারস গ্রহের প্রাণীদের নিয়ন্ত্রনে। হয়তো তারা মহাকাশযানে পৃথিবীতে আসছে। তাই মহাকাশযান পৃথিবীতে নামার সাথে সাথে এটিকে সামরিক যান দিয়ে ঘিরে ফেলতে হবে। তন্ন তন্ন করে তল্লাশীর পর সন্দেহমুক্ত হলেই কেবল এটিকে ছাড়া হবে। নইলে এটিকে ধ্বংস করে ফেলা হবে। প্রয়োজনে এর ভেতরে যে দু’জন মানুষ অভিযাত্রী আছেন তাদেরসহ। ’
কিছুন নিরব রইলো সভাক।
হাদ নিরবতা ভাঙ্গলেন। ‘ টারস গ্রহের প্রাণী হচ্ছে শৈবাল। সে শৈবালরা এমন কঠিন আক্রমন চালাতে পারে যা নিয়ে বিশ্ব সংস্থাকে সভায় বসতে হবে তা আমার মনে হয় না। যদি সেরকম কিছু ঘটেই তাহলে শুধু মহাকাশষ্টেশনে না সতর্কাবস্থা জারি করলে হবেনা। করতে হবে পুরো পৃথিবীতে। বিশেষ করে পাওয়ার সাপ্লাই এলাকাগুলিতে। আর সেরকম হলে আমরা তাদের সাথে পারবো বলেও মনে হয়না।’
‘টারস গ্রহের শৈবালদের ব্যাপক ধ্বংস করার মতা আছে কিনা তা নিয়ে এ মূহূর্তে তর্কে যাবো না। এটি একটি পুরনো বিতর্ক। শুধু এটুকু বলি এ সভায় উপস্থিত গোয়েন্দা প্রধান ও মহাকাশ ষ্টেশনের প্রধান দু’জনই ঐ গ্রহের শৈবালকে অত্যন্ত শক্তিশালী বলে মনে করছেন। তাই আমাদের জোড়ালো সতর্কাবস্থা থাকা দরকার। কিছু না হলে ভালো। হলে যাতে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। আপনার প্রস্তাব অনুযায়ী এ ব্যবস্থা আরো বিস্তৃত করে গ্রহের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে ও গুরুত্বপূর্ন স্থানগুলিতেও আমরা সতর্কাবস্থা জারি করবো।’
সভাটি অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে গেলো। সাড়া গ্রহে জারি হলো সতর্কাবস্থা।
কিন্তু এ নিয়ে পৃথিবীবাসিকে খুব একটা উদ্বিগ্ন দেখা গেলো না। কিছু শৈবাল আক্রমন চালিয়ে পৃথিবীতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে - এটা বিশ্বাযোগ্য নয়।

ট//

নয়। আট। সাত। ছয় ...
মহাকাশযানের শরিরে বিশেষভাবে লুকিয়ে রাখা চাকা বের হয়ে মাটি স্পর্শ করলো। প্রচন্ড গতিতে মহাকাশযান ছুটছে রানওয়েতে। পেছন থেকে বের হয়ে এলো গতিরোধক বেলুনও। ধীরে ধীরে মহাকাশযানের গতিও কমে এলো।
মহাকাশযানটি থেমে যেতেই এটির চারদিক ঘিরে দাড়ালো বেশ কয়েটি সামরিক যান। নিরাপদ দূরত্বে মাস্ক লাগানো বিশেষ সামরিক পোষাক পড়ে দাড়িয়ে আছে এক ঝাঁক সৈন্য। সামরিক যানের সাথে মহাকাশযানের বিশেষ চ্যানেল তৈরী হলো। মহাকাশ অভিযানে যেতে পারেন-- এমন বাছাই করা বেশ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা ঢুকে পড়লো মহাকাশযানে। হাতে বিষাক্ত গ্যাসগান। তাদের মাথায় একগুচ্ছ ুদে সার্চ আই বা মৌমাছির মতো পুঞ্জা।ি পুঞ্জাি মহাকাশযানের কোনায় কোনায় খোজ নিয়ে ফেলছে। মূহূর্তে অসংখ্যবার চলছে তার খোঁজ। কিন্তু কোথাও কোন ধরনের শৈবালের সিগন্যাল দেখা যাচ্ছেনা। তারা এখানে ছিলো এমন কোন চিহ্নও নেই। মহাকাশযানের মূল কম্পিউটারের সামনে দু’জন মানুষ ঘুমিয়ে আছে--এমন সিগন্যাল পাওয়া যাচ্ছে বারবার। এছাড়া মহাকাশযানের বিভিন্ন স্থানে অকেজো হয়ে আছে বেশ কিছু রোবট।
সেনারা দ্রুত শেন আর শানিমকে মাস্ক লাগিয়ে দিলো। তারপর নিয়ে আসলো বাইরে। তাদের দ্রুত স্থানান্তর করা হলো মহাকাশ ষ্টেশন হাসপাতালে। অল্প কয়েক মিনিটের মধ্যেই জ্ঞান ফিরলো তাদের। তবে দীর্ঘদিন ওজনহীন পরিবেশে কাটানোর কারনে পৃথিবীতে তারা একটু অসুস্থ বোধ করছে।
মহাকাশযানে কিছু হয়েছে বলে তারা মনে করতে পারছে না। যান্ত্রিক ত্র“টির কারনে সামরিক অভিযান চালাতে পারেনি বলে তারা অনুমান করছে। তবে ঠিক কি কারনে তারা অভিযান চালায়নি সেটিও তাদের মনে পড়ছে না।
মহাকাশযানের কোথাও কোন শৈবাল পাওয়া যায়নি। বা শৈবালের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তারপরেও মহাকাশযানকে বিষাক্ত গ্যাস দিয়ে পরিস্কার করা হয়েছে।
মহাকাশ ষ্টেশনের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ছয়টায় টারস গ্রহ থেকে আসা মহাকাশযানটি পৃথিবীতে নেমেছে। তিন ঘন্টা পরে বিশ্ব পরিচালনা সংস্থার কর্তব্যাক্তিরা একটি সভায় বসলেন। পৃথিবীর কোথাও শৈবালের কোন আক্রমন না ঘটায় বিশ্ব পরিচালনা সংস্থার প্রধান লেন বেশ বিব্রত হলেন। তবে সভায় ব্যাতিক্রমী ভূমিকা রাখলেন হাদ। তিনি বললেন, ‘ঠিক আছে এখনও কিছু না ঘটলেও সতর্ক থাকতে দোষ নেই। ’

ঠ//

বিশ্ব পরিচালনা সংস্থার বিশাল ভবনটির বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ভবনের মাটির নিচে বসানো আছে চারটি গ্রাভিটেশন মেশিন। অভিকর্ষ শক্তি মেশিনের জেনারেটরের পাখাকে প্রবল বেগে ঘুরিয়ে দেয়। সে থেকে তৈরী হয় শক্তি। এ শক্তি দিয়ে পুরো ভবনটি চলে। পালাক্রমে দু’টি মেশিন চলে। দু’টি প্রস্তুত থাকে অন্য দু’টি না চললে এরা চলবে। গত ত্রিশ বছর ধরে এরা অপোয় আছে। কিন্তু মেশিন দু’টির কাজের ডাক পড়েনি।
প্রতি মাসে একবার মেশিন দু’টি নানাভাবে পরীা করে দেখা হয়। এগুলি কাজ করছে কিনা। বেশ কয়েকটি রোবট পরীাটি করে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিচালক ড্যান সাথে থাকে। এখনও তিনি দাড়িয়ে আছেন। একটি প্রকৌশলী রোবট পরীা শেষ করে এসে তাকে রিপোর্ট দেখালো। রোবটের মনিটরে একে একে সব ডাটা দেখলেন ড্যান। ঠিক আছে। মেশিন দু’টি দু’টি পুরোপুরি ঠিক আছে। কোন সমস্যা নেই। এখন চালাতে চাইলে এখনি চালানো যাবে।
চালু মেশিন দু’টিও পরীা করলেন। এগুলি প্রতিদিন পরীা করতে হয়। এগুলিও ঠিক আছে। কোন সমস্যা নেই।
কাজ শেষ করে নিজের অফিসে এসে বসলেন ড্যান। সাড়াদিন আর কোন কাজ নেই। এখন শুধু পড়া। ই-বুক তার পড়তে ভালো লাগে না। তিনি কাগজের বই-ই পড়তে ভালোবাসেন। যদিও কাগজের বই দাম দিয়ে কিনতে হয়। ই-বুক বিনামুল্যে পাওয়া যায়। ড্যান একটি কাগজের বই খুলে বসলেন।
কি যেন একটা তার বইয়ের উপর এসে পড়লো। শ্যওলার মতো। এখানে শ্যাওলা এলো কোত্থেকে ? ড্যান এর ভ্রু কুঁচকে গেলো। ভবনের রনাবেনে কি কোন ত্র“টি তৈরী হয়েছে ? ড্যান বিরক্তি নিয়ে তার করে ছাঁদের দিকে তাকালেন। তাকিয়েই তার গা ঘিন ঘিন করতে লাগলো। ছাঁদ ভরে আছে শ্যাওলায়। ধপাস করে শ্যাওলার একটি চাক তার উপর পড়লো। ড্যান ভয়ে প্রচন্ড শক্তিতে চিৎকার করলেন। কিন্তু শ্যাওলা ভেদ করে তার আর্তনাদ বাইরে বের হতে পারলো না। জ্ঞান হাড়িয়ে পড়ে রইলেন নিচের চেম্বারে।

হাতের কাছের কোন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস কাজ করছে না। কিভাবে এটা সম্ভব হলো বেশ কিছুন লেন এর মাথায়ই ঢুকলো না। বিশ্ব পরিচালনা সংস্থার সভা বন্ধ হয়ে গেলো। হাদ-ই প্রথম আবিস্কার করলেন পাওয়ার সাপ্লাই বন্ধ হয়ে গেছে। গত ত্রিশ বছরে এ ভবনে কখনও পাওয়ার সাপ্লাই বন্ধ হয়নি। পাওয়ার সাপ্লাই বন্ধ হয়-এটি তাদের চিন্তার মধ্যেই ছিলোনা। ছোটাছুটি করে এলো বেশ কিছু রোবট। এদের প্রত্যেকের আলাদা গ্রাভিটেশন ডিভাইস আছে। সেখান থেকে তারা বিদ্যুৎ পাচ্ছে। রোবটেরা জানালো বিদ্যুতের অভাবে বিশ্ব পরিচালনা সংস্থার ভবনের সব ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস এক সাথে অকেজো হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন মেশিন দু’টি বন্ধ হয়ে গেছে। এগুলি বন্ধ হলে সাথে সাথেই বিকল্প দু’টি মেশিন চালু হওয়ার কথা। সেগুলি চালু হয়নি। এসব দেখার জন্য একজন মানুষ প্রকৌশলীর নেতৃত্বে আটজন রোবট প্রকৌশলী ও চল্লিশজন কর্মী রয়েছেন। মানুষ প্রকৌশলী অচেতন। অন্যরা অকেজো।
রেড এলার্ট জারি হলো বিশাল ভবনে।
সৈন্য রোবটরা গ্যাস ব্যবহার করে প্রচুর শৈবাল মারলো। চালু করা হলো বিদ্যুৎ উৎপাদন মেশিন। ড্যানকে পাঠানো হলো হাসপাতালে। চালু হলো বিশ্ব পরিচালনা সংস্থার পরিচালকদের কমিউনিকেটর।
কমিউনিকেটর থেকে জানা গেলো সাড়া গ্রহে শৈবাল আক্রমন শুরু হয়েছে।
গ্রহের সড়কে মহাসড়কে ভয়ানক যানজট। গনপরিবহন বা ব্যাক্তিগত সব-ই অকেজো হয়ে রাস্তার উপর পড়ে আছে।
আক্রমনের সাথে সাথেই বিভিন্ন সেক্টরে শৈবালদের প্রতিহত করতে সৈন্যরা নেমেছিলো। তারা গ্যাসগান দিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা চালিয়েছে। প্রচুর শৈবাল মেরেছেও। কিন্তু তারপরেও বেশিন টিকে থাকতে পারেনি। যতটুকু শৈবাল মরেছে তার বহুগুন বেশি শৈবাল ঝাঁকে ঝাঁকে আকাশ থেকে নেমে এসেছে সৈন্যদের উপর। শৈবালরা রোবট সৈন্যদের অকেজো করে ফেলেছে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে। তাদের নেতৃত্বে থাকা সেনা কর্মকর্তারাও অচেতন হয়ে পড়ে আছেন বিভিন্ন সামরিক যানের ভেতর।
আকাশে ও পানিতে থাকা বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনী-ও আক্রান্ত হয়েছে। পানির নিচে থাকা জলযানগুলির ভেতর বিষাক্ত গ্যাস সৃষ্টি হয়েছে। এর আরোহিরা আত্মরার জন্য পানির উপরে উঠে এসেছে। যারা দেরী করেছে তারা অচেতন হয়ে পড়েছে। পানির উপরে থাকা জলযানগুলি পানির উপরে ভাসছে। আরোহিরা অচেতন।
বিমানবাহিনীরও একই অবস্থা। যেসব আকাশযান উড়ছিলো সেগুলি ঠিক-ই উড়ছে। তবে সেগুলির নিয়ন্ত্রন শৈবালদের কাছে। পাইলটদের ব্রেইন বা কপোট্রন দু’টোরই নিয়ন্ত্রন তারা অনায়াসে নিয়ে নিচ্ছে। এরপর মানুষ পাইলট বা রোবট পাইলটরা আকাশযান চালালেও এগুলি চলছে শৈবালদের নির্দেশে।
শৈবালরা সাধারন মানুষকে আক্রমন করছে না।
তারপরেও চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে গেছে। মানুষ অকারনে ছোটাছুটি করছে। খাদ্যের সংকট তৈরীর আশংকায় প্রচুর খাদ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে। অল্প কিছুনের মধ্যে খাদ্য সংগ্রহ নিয়ে নিয়ে দাঙ্গা লেগে গেলো বিভিন্ন নগরে। হুরোহুরি করে বিভিন্ন রেল টানেল, ওয়াক টানেল থেকে বের হতে গিয়ে পদদলিত হয়ে এক ঘন্টায় গ্রহে তিন হাজার মানুষ মারা গেলো। প্রতি মূহূর্তে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। গ্রহের সব বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছুটি দিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু যানবাহনের অভাবে ছাত্ররা বাসায় যেতে পারছেনা।

ড//

বিজ্ঞানী ফাত আর রেনের গবেষনা কেন্দ্র।
এই মূহূর্তে ফাত রেন, আর ওরিয়া এক সারিতে বসে আছে। তাদের মুখোমুখি নুশ। ওরিয়ার প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। সে মাথা তুলে রাখতে পারছে না। কিন্তু সে নুশের ভয়ে ঘুমুচ্ছে না। নিজেকে জাগিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।
দুই বিজ্ঞানী শুরুতে যেমন ছিলেন এখনও তেমন। নির্বিকার। তাদের চোহারায় কোন উদ্বেগ নেই। ভেতরে যা-ই থাকুক।
নুশের চেহারায়ও কোন বিকার নেই। ভেতরে যা-ই থাকুক। ভেতরে শুধু যা-ই না ওর একেবারে যাই যাই অবস্থা। গ্রহে শৈবাল আক্রমনের খবর ও পেয়েছে। বিশ্ব সংস্থা থেকে বারবার ওর সাথে যোগাযোগ করছে। পরামর্শ নিচ্ছে। পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করছে। কিন্তু কোন সফলতা পাচ্ছে না।
কমিউনিকেটরে আবারো সিগন্যাল এলো। নুশ উঠে কিছুটা দূরে চলে গেলো। বেশ কয়েকজন রোবট তিন বিজ্ঞানীকে পাহাড়া দিচ্ছে।
বিশ্ব ব্যবস্থার সেনারা শৈবালদের সাথে পারছে না কারন আকাশে শৈবালদের ব্লুম তৈরী হচ্ছে। নিচে সেনারা শৈবালদের ধ্বংস করলেও শৈবালদের বিশাল বিশাল কলোনী আকাশ থেকে নেমে আসছে। তাই আকাশে শৈবালদের ব্লুম তৈরী হওয়া বন্ধ করতে হবে। কি করা যায় তার পরামর্শ চাচ্ছে বিশ্ব ব্যবস্থা।
অল্প কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ভেবে ফেললো নুশ। বিষাক্ত গ্যাস নিয়ে আকাশে আক্রমন চালাতে হবে। এর অন্য একটা দিকও আছে। ভূমিতে বেশি মাত্রার বিষাক্ত গ্যাস ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বা বেশি বিস্তৃত জায়গায় বিষাক্ত গ্যাস ব্যবহার করা যাচ্ছে না। কারন নিচে বেশি মাত্রায় বা বিস্তৃত আকারে গ্যাস ব্যবহার করলে মানুষও আক্রান্ত হবে। প্রচুর মানুষ মারা যাবে। আকাশে এ কাজটা অনায়াসে করা সম্ভব। নুশ পরামর্শটা জানালো।
‘বিজ্ঞানীদের সাথে এখন আর কথা বলে কি লাভ নুশ ? ’ বিশ্ব সংস্থার প্রধান পরিচালক লেন প্রশ্ন রাখলেন।
‘আমার পরিকল্পনাটা হচ্ছে এদের জিম্মি করা। যেহেতু শৈবালদের সাথে এদের যোগাযোগ আছে , এবং শৈবালরা তাদের প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল বলে আমার মনে হয়, তাই আমি এদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চাই।’
‘ ঠিক আছে দেখেন কিছু করতে পারেন কিনা।’
হাসি হাসি মুখে নুশ হাটতে হাটতে পৌছালো তিন বিজ্ঞানীর সামনে। চেয়ারে বসলো। নুশ কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন বিজ্ঞানী ফাত। ‘ আপনার কিছু জিজ্ঞেস করার থাকলে করে ফেলুন। আমরা বেশিন জেগে থাকতে পারবো না। ওরিয়ার অনেক আগেই ঘুম পেয়েছে। আমাদেরও ঘুম পাচ্ছে।’
এক মূহূর্তে চেহারা থেকে হাসি মুছে গেলো নুশের। উঁচু হয়ে গেলো ব্যায়াম করা ককেশীয় চোয়াল। তারপর আবার নিজেকে সামলে নিলো সে। ‘মহান বিজ্ঞানী ফাত। আমি আপনার সাথে দূর্ব্যবহার করতে চাইনা। করবো-ও না। আমার একটা কাজ করে দিতে হবে। কাজ না করে দিলে আমি দূর্ব্যবহার শুরু করবো ওরিয়ার সাথে। কিংবা ধরেন আপনার এই গবেষনা কেন্দ্রে যারা আপনার সহকারি আছে তাদের সাথে। বেশি মেজাজ খারাপ হলে ওরিয়ার সহকারিদের সাথেও। ওদের সাথে এর মধ্যেই বেশ খারাপ ব্যবহার হয়ে গেছে। তারপরেও ওদের ধরে আনা হয়েছে এখানে। আপনি সহযোগিতা না করলে সবার সাথে আমার খারাপ ব্যবহার করতে হবে। আপনার গবেষনাগারের একেকটি ক হবে টর্চার সেল। আপনি ইতিহাসে স্মরনীয় হয়ে থাকবেন। বিশ্বব্যবস্থার নান্দনিক টর্চার সেলের মালিক ছিলো বিজ্ঞানী ফাত আর রেন। হা হা হা। ’
‘ও আচ্ছা তোমাকে সহযোগিতা না করলে তুমি নিরীহদের উপর নির্যাতন চালাবে। তুমি তো এসব করবেই। কুকুর, বেড়ালের কাজই কামড়া কামড়ি করা। সেখানে নিরীহ অনিরীহ বাছ বিচার থাকে না। আচছা বলো তোমার কি কাজ করতে হবে ?’
‘আপনাদের টারস গ্রহের শৈবালগুলি বেশ উৎপাত শুরু করেছে। তারা পৃথিবীর কয়েকটা জায়গায় হামলা চালিয়েছে। অবশ্য এসব করে কোন লাভ হবে না। মানুষের অস্ত্র বুদ্ধিমত্তার সাথে সামান্য শৈবাল পারবেনা। এটা তো আমার চাইতে আপনারাই ভালো জানেন। তারপরেও আমরা ওদের সাথে কোন সংঘর্ষে যেতে চাচ্ছি না। আপনারা ওদের বলেন থেমে যেতে। আমরা ওদের নিরাপদে ওদের গ্রহে ফিরে যেতে নভোযান দিয়ে সাহায্য করবো।’
‘যদি তোমাকে সাহায্য না করি?’
‘না করলে .. । না করলে ...। এই আমার হাতে একটা যন্ত্র আছে। এর নাম গামা বিম। আমার না ছোট বেলায় ভূতের ছবি দেখার খুব শখ ছিলো। নিশ্চই আপনারও ছিলো। কিন্তু ভূত কি আর সত্যি আছে ? বলেন ? আপনি যদি আমার কথায় রাজি না হন তাহলে প্রথমে ওরিয়ার পুরো মাথাটায় গামা বিম মারবো। আপনি তো জানেন গামা বিম মারলে পুরো মাথাটার কোন অস্তিত্ব পাওয়া যাবে না। ও বসে থাকবে চেয়ারে কিন্তু মাথা নেই। এভাবে একে একে আপনার সব সহযোগিদের মাথা হাওয়া করে দেবো। তারপর বসিয়ে রাখবো আপনার পাশে চেয়ারে। একেবারে ভূতের ছবি। কি বলেছি, ঠিক না ? হা হা হা। মহান বিজ্ঞানী ফাত আর রেন। আপনারা ভাবেন। ভেবে সিদ্ধান্ত নিন। আমি আপনাদের পাঁচ মিনিট সময় দিলাম। এই ফাঁকে আমি একটু হাটাহাটি করে আসি। ’
নুশ ওঠার পরপরই কয়েকটা রোবট সৈন্য বের হয়ে গেলো। তারা বেশ কিছু চেয়ার নিয়ে ফিরে এলো। বিজ্ঞানীদের পাশে গোল করে চেয়ার বসানো হলো। মাঝে নুশের চেয়ার। দুই বিজ্ঞানী আর ওরিয়ার সহকারিদের ধরে আনা হলো এই ক।ে তাদেরকে চেয়ারগুলিতে বসিয়ে দেয়া হলো।
কমিউনিকেটরে নুশ কথা বলছে। কোন ভালো খবর নেই। শৈবালদের ব্লুম নষ্ট করতে আকাশপথে আক্রমনের যে নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো তা পালিত হয়নি। বিশ্ব গোয়েন্দা সংস্থা ও সশস্রবাহিনীর একটি বিশাল অংশ বিদ্রোহ করেছে। তারা বিশ্ব ব্যবস্থার নির্দেশ মানছে না। অস্ত্র প্রয়োগের বদলে তারা বিজ্ঞানী ফাত আর রেনকে মুক্ত করে দিতে বলছে। তাদের মাধ্যমে শৈবালদের সাথে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের দাবী জানাচ্ছে। আকাশপথে হামলা চালাতে তারাই আকাশযানগুলিকে বাঁধা দিয়েছে। তাদের নির্দেশ উপো করে কয়েকটি আকাশযান উড়েছিলো। কিন্তু শৈবালদের দখল করা আকাশযান আর ভূমিতে তাদের দখল করা অস্ত্র যৌথভাবে আক্রমন চালিয়েছে। বিশ্বব্যবস্থার আকাশযানগুলিকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিচ্ছে নুশের বরখাস্তকৃত সহকারি। সেল।


নিজের ভেতরের হুলস্থুল গোপন রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছে নুশ। পারছে না। চেহারায় এসে যাচ্ছে তার ভাবনার ছাপ। সে এসে চেয়ারটিতে বসলো। তার চেয়ারটি এখন একটা অর্ধচন্দ্রের মাঝে। অর্ধচন্দ্রে তিন বিজ্ঞানী আর তাদের সহযোগিরা বসে আছেন।
‘তারপর কি সিদ্ধান্ত নিলেন মহান বিজ্ঞানী ফাত আর রেন ? ’
দুইজনেই নুশের দিকে তাকিয়ে রইলো। কোন উত্তর দিলো না। কিছুই বলার দরকার নেই। তাদের চেহারায় সব কথা বলা আছে।
কয়েক সেকেন্ড দুইজনের চেহারায় তাকিয়ে রইলো নুশ। তারপর বললো ‘বুঝেছি। আপনারা ভদ্রকথার মানুষ না। ঠিক আছে ভদ্র কথার মানুষ না হলে আমি কি করবো ? আমাকেও তো অভদ্র হতে হবে। উপায় আছে বলেন ? কোন উপায় নেই। ’
চেয়ার শুদ্ধ ওরিয়াকে তুলে আনতে নির্দেশ দিলো নুশ। একটি রোবট সৈন্য নির্দেশ পালন করলো। ওরিয়াকে এনে বসানো হলো নুশের পাশে। নুশ চেয়ার ঘুরিয়ে বসলো ওরিয়ার মুখোমুখি।
‘ওরিয়া মৃত্যুর আগে কিছু খেতে চাইলে তা দেয়ার নিয়ম আছে। আপনার কি খেতে ইচ্ছে করছে বলেন তো। দেখি খাওয়াতে পারি কিনা ? ’
‘জ্বী আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। এককাপ কফি খেতে পারলে ভালো হতো। জেনেটিক কফি না। প্রাকৃতিক কফি। ’ ওরিয়া স্বাভাবিকভাবে বললো। মৃত্যুর কথা ছাপিয়ে ওর এখন প্রবল ঘুমের কথাই মনে পড়ছে।
‘ভালো ভালো। কফি খাওয়ানো যাবে। এখানে কফি আছে।’
‘যাও দুই কাপ কফি নিয়ে এসো। আমারও এক কাপ খেতে ইচ্ছে করছে। জেনেটিক কফি না। প্রাকৃতিক কফি। ’
নুশের নির্দেশে এক কর্মী রোবট ওরিয়াকে দুই কাপ কফি নিয়ে এলো। দুইজনে দুই কাপ কফি খাচ্ছে। প্রাকৃতিক কফির বিষয়টাই আলাদা। অসাধারন লাগছে। কফিতে একটা ছোট চুমুক দিয়ে ওরিয়ার দিকে তাকালো নুশ। মানুষের চেহারায় মৃত্যুর একটা আলাদা ছায়া পড়ে। এটা অন্য সময় দেখা সম্ভব না। এটা জীবনে একবারই মানুষের চেহারায় আসে। মৃত্যুর সময়।
কাপে কি যেন পড়লো। নুশ খেয়াল করলো না। সে ওরিয়ার চেহারায় মৃত্যু দেখার চেষ্টা করছে। আবারো কি যেন পড়লো। কাপে তাকিয়ে চেহারার রক্ত সড়ে গেলো নুশের। ওর কাপে কতগুলি শৈবাল। কাপ থেকে আস্তে আস্তে চোখ তুলে নুশ উপরে তাকালো। মাথার উপর গবেষনাগারের বিশাল গম্বুজ। যাতে প্রচীন লিপিতে লতা-পাতার মতো করে নানা কিছু লেখা ছিলো।
সেসব কিছুই দেখা যাচ্ছেনা।
গম্বুজ ঢেকে আছে শৈবালে। নুশকে ঘিরে থাকা সবাই নুশের চেহারায় মৃত্যুর ছায়া দেখলো। এটি জীবনে একবারই মানুষের চেহারায় আসে। মৃত্যুর সময়।
শৈবালের এক বিশাল চাক ঝাপিয়ে পড়লো নুশের উপর। ওর প্রচন্ড চিৎকারের ভগ্নাংশ ঐ কে অবস্থানকারিরা শুনলেন। বাকিটা চাপা পড়ে গেলো শৈবালদের স্তুপে।
গবেষনাগারের ভেতরে থাকা রোবটগুলি আগেই অকেজো হয়ে গেছে।
গবেষনাগারের বাইরে থেকেও গম্বুজটি দেখা যাচ্ছে না। বাইরে দিয়েও গম্বুজটি শৈবালে ঢাকা। গবেষনাগার ঘিরে বেশ কিছু সামরিক যান। যেগুলির অনেকগুলি বিদ্রোহীদের। বাকিগুলি শৈবালদের। এর চারিদিকে বেশ কিছু আকাশযান রয়েছে। সেগুলিও সব শৈবাল নিয়ন্ত্রিত।

ঢ//

শীত পড়ছে অল্প অল্প করে।
দুই বিজ্ঞানীর গবেষনাগারের বাইরে বিশাল ফাঁকা জায়গা। সেখানে কৃষকরা নানা ধরনের ফসল বোনে। কাছের মাঠভর্তী বাঁধাকপি।
‘রেন বাঁধাকপি কোন জেনাসের ?’ ফাত জিজ্ঞেস করলো।
‘জানিনা।’
‘ তোমার তো জানার কথা।’
‘জানার কথা হলেই কি মানুষকে সব কিছু জানতে হবে। আমি জানিনা ব্যস। ’
‘তুমি রেগে যাচ্ছো কেন ?’
‘আমি অন্য চিন্তা করছি। তুমি বিরক্ত করছো। তুমি তোমার চিন্তা করো। কোন প্রশ্ন করবে না। ’
‘ ঠিক আছে। তুমিও কোন প্রশ্ন করবে না। করলে আমি এই গবেষনাগার ছেড়ে চলে যাবো। আলাদা গবেষনাগার করবো।’
দুই বিজ্ঞানী ফসলের মাঠে বসে কফি খেতে খেতে চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেলো। দু’জনের সাথে কলম ছিলো কাগজ ছিলো না। রেন কি যেন সমীকরন লিখলো চায়ের কাপে, প্লেটে। ফাত কিছু ছবি আঁকলো। দূরে দাড়ানো এক সহকারি তাদের একটুও বিরক্ত না করে দুই কাপ প্লেটের জায়গায় অন্য দু’টি কাপ প্লেট রেখে দিলো। তাদের লেখা কাপ প্লেটে নিয়ে দিলো গবেষনা সহকারিদের হাতে। দু’জনের ছবি আর সমীকরন থেকে বিকেলে জন্ম নিলো জীববিজ্ঞানের নতুন দুইটি শাখা।
ওরিয়া তার মানমন্দিরের সেই সহকারি মেয়েটিকে বিয়ে করেছে। যার গলায় পিনশকারের শক দেয়া হয়েছিলো। দুইজনে রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে আকাশে তাকিয়ে থাকে। গবেষনা করে। ওদের কাজ আর ভালোবাসা একাকার হয়ে গেছে।
সেদিন নুশের শরিরে মাংস হাড্ডিতে শৈবালরা প্রতিস্থাপিত হয়েছিলো। তাই নুশের মৃত্যুর পর তার লাশও পাওয়া যায়নি। তারা বিশ্ব পরিচালনা সংস্থার প্রধানসহ তিন পরিচালককে হত্যা করে। গ্রহের দখল নিয়ে নেয়।
পরে তারা গ্রহের পরিচালনার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয় বিশ্ব পরিচালনা সংস্থার পরিচালক হাদ ও বিদ্রোহী সেলের হাতে। যুদ্ধের পর বেঁচে থাকা বেশিরভাগ শৈবাল চলে গেছে তাদের নিজেদের আবাসভূমিতে। টারস গ্রহে।
অল্প কিছু রয়ে গেছে পৃথিবীতে। অজানা স্থানে। যদি কোনদিন আবার পৃথিবীর কোন সভ্যতা তাদের সভ্যাতাকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করে , তখন তারা বংশবৃদ্ধি করবে। আবার যুদ্ধ করবে পৃথিবীবাসির সাথে। #













০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শৈল্পিক চুরি

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭


হুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কোথায় বেনজির ????????

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:০৫




গত ৪ মে সপরিবারে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। সঙ্গে আছেন তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে। গত ২৬ মে তার পরিবারের সকল স্থাবর সম্পদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

‘নির্ঝর ও একটি হলুদ গোলাপ’ এর রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন নীল আকাশ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭



বেশ কিছুদিন ধরে একটানা থ্রিলার, হরর এবং নন ফিকশন জনরার বেশ কিছু বই পড়ার পরে হুট করেই এই বইটা পড়তে বসলাম। আব্দুস সাত্তার সজীব ভাইয়ের 'BOOKAHOLICS TIMES' থেকে এই বইটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিতর্ক করার চেয়ে আড্ডা দেয়া উত্তম

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

আসলে ব্লগে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিতর্কের চেয়ে স্রেফ আড্ডা দেয়া উত্তম। আড্ডার কারণে ব্লগারদের সাথে ব্লগারদের সৌহার্দ তৈরি হয়। সম্পর্ক সহজ না হলে আপনি আপনার মতবাদ কাউকে গেলাতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে প্রাণ ফিরে এসেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪



ভেবেছিলাম রাজিবের অনুপস্হিতিতে সামু রক্তহীনতায় ভুগবে; যাক, ব্লগে অনেকের লেখা আসছে, ভালো ও ইন্টারেষ্টিং বিষয়ের উপর লেখা আসছে; পড়ে আনন্দ পাচ্ছি!

সবার আগে ব্লগার নীল আকাশকে ধন্যবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×