somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রধানমন্ত্রী সমীপে আমার ছেলেকে চাই,ফ্লোরা ফেরদৌসী

১৫ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ৮:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
সালাম নেবেন। কোনো ভনিতা ছাড়াই আমি আমার আরজি পেশ কতে চাই। আমার ছেলেকে তার বাবা মানে আমার প্রাক্তন স্বামী মাসুদ সেজান [নাট্য পরিচালক] গত আড়াই বছর লুকিয়ে রেখেছে। আমার সাথে যোগাযোগ করা তো দূরের কথা আমাকে চোখের দেখা পর্যন্ত দেখতে দেয় না। মাসুদ সেজানের সাথে ডিভোর্সের পর উচ্চ শিক্ষার্থে লন্ডন যাই এবং বর্তমানে সেখানেই বসবাস করি। ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এবং তখনই আমার সাথে লন্ডন নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় ছেলেকে আমার বাবা-মার কাছে রেখে যাই। একদিন ছেলেকে ঘুরতে নিয়ে যাবার কথা বলে ছেলের বাবা মাসুদ সেজান ছেলেকে নিয়ে যায় এবং তার কাছেই রেখে দেয়। তখন আমার মা থানায় জিডি করে কিন্তু বাবার ছেলের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করার মতো মানসিকতা না থাকায় ছেলে তার বাবার কাছেই থাকা শুরু করে। আমি প্রতিবছর ২ থেকে ৩ মাস বাংলাদেশে থাকি। ২০০৮ এ আমি সর্বপ্রথম লন্ডন যাই। তখন আমার ছেলের বয়স ২ বছর ৩ মাস। ২০১০ এ আমি বাংলাদেশে আসলে আমার সাথে আমার ছেলের দেখা হয়। এরপরে আমি আবার লন্ডন চলে যাই। তখন ২/৩ মাস আমার সাথে আমার ছেলের নিয়মিত ফোনে কথা হতো। এরপর মাসুদ সেজান হঠা‍ৎ একদিন সিদ্ধান্ত নেয় আমাকে আর আমার ছেলের সাথে যোগাযোগ করতে দেবে না। এরপরে যোগাযোগের সকল উপায় বন্ধ হয়ে গেলে আমি ঢাকায় চলে আসি। ঢাকায় এসে আমি বিভিন্নভাবে আমার ছেলে খুঁজি কিন্তু সেজান তার বাড়ির ঠিকানা এবং আমার ছেলের স্কুল পরিবর্তন করায় আমি তাদের আর খুঁজে পাইনি।

শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে আমি আমার ছেলের অভিভাবকত্বের জন্য পারিবারিক আদালতে মামলা করি। মামলা এখনো চলমান [পারিবারিক আদালত,মামলা নং ৩৫১/২০১১]। মামলায় অনেকরকমের ফাঁকফোকর,তারিখ এবং সেজান এর চাতুরতায় এখনো মামলা নিষ্পত্তি হয়নি। কিন্তু এ বছর সেপ্টেম্বরে আমি লন্ডন থেকে বাংলাদেশে আসি। এখন পর্যন্ত আমি আমার ছেলের মুখ একবারের জন্যেও দেখতে পারিনি। মাননীয় আদালত গত ৮তারিখ আমার ছেলেকে ১ ঘণ্টার জন্য আদালতে আনার নির্দেশ দিলেও সেজান তার স্বভাবসুলভ চাতুরতায় আমার ছেলেকে কোর্টে আনেনি। এর কারণ হিসেবে আদালতে অসুস্থতার কথা উল্লেখ করা হয়। আগামী ২২ নভেম্বর পরবর্তী শুনানীর দিন ধার্য করা হয়েছে। কিন্তু আমার ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ার ফলে আমাকে ২২ তারিখের পুর্বেই লন্ডনে ফিরে যেতে হবে। এখন এই অবস্থায় আমি আমার ছেলেকে একবারের জন্য না দেখে ফিরে যাওয়ার কথা চিন্তাও করতে পারছি না।

অন্যদিকে ২২ তারিখে যে আমার ছেলেকে আমি দেখতে পাবো তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। সেজান আমার ছেলেকে তার মায়ের সাথে দেখা করতে না দিয়ে আমার ছেলের উপর যে মানসিক অত্যাচার চালাচ্ছে তার কি কোন প্রতিকার নেই? আমার ছেলে জানে তার মা আছে কিন্তু তাকে জানানো হচ্ছে না যে তার মা তাকে পাগলের মতো হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে। আমার গর্ভের সন্তানকে কি আমি দেখতে পাবো না? আমার কথা বাদ দিলাম,আমার ছেলেটিকে তো তার মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। মা-সন্তানের সম্পর্ক কি এতোটাই দুর্বল যে মা দেশের বাইরে থাকলে যে কেউ তাদের বন্ধন ছিন্ন করে দিতে পারে? আমার সাথে কি সুবিচার হবে না? আমি লন্ডন যাবার আগে কি আমার ছেলেকে দেখতে পারবো না? বাবা যদি সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দেশের বাইরে যেতে পারে তাহলে মা গেলে কেন দোষ হবে? মেয়ে হয়ে জন্মেছি বলে কি সন্তানকে নিয়ে আলাদা,ভালো থাকার অধিকার আমার নেই?

ছেলের বাবার হাজার রকমের যুক্তি আমাকে ছেলের থেকে দূরে রাখার কিন্তু সেই যুক্তি খণ্ডানোর জন্য সে একবারো আমার সামনে আসে না। কেবল জনসম্মুখে মিথ্যাচার আর তার উকিল দিয়ে ক্রমাগত প্রমাণের চেষ্টা আমি মা হিসেবে ভালো না। আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণী পাওয়া ছাত্রী। আমার পুরো পরিবার শিক্ষিত।

সেজানের এবং তার উকিলের আরেকটি ইস্যু আমি দ্বিতীয় বিয়ে করেছি তাই আমার কাছে আমার ছেলেকে দেয়া যাবে না। আমি আইনত ২য় বিয়েটি করেছি। সেইদিক দিয়ে আমার ছেলে একটি পরিবার পাবে সেটি ভালো নাকি তার বাবা, মাসুদ সেজান যে নিত্যনতুন নাট্যপরিচালনার ছুতোয় বান্ধবীদের সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলছে সেটা ভালো? আমার সাথে ডিভোর্সের পরে সে নতুন করে প্রায় ১ বছর সংসার করেছে আরেকটি মেয়ের সাথে যাকে আমার ছেলে আম্মু বলেই ডাকতো কিন্তু সেই মেয়েও এখন সেজানের ব্যবহারে বিরক্ত হয়ে আলাদা হয়ে গেছে। এখন সেজানের সাথে আইরীন তানি নামের একটি মেয়ের সম্পর্ক হয়েছে ‘লং মার্চ’ নামক একটি নাটক পরিচালনার সূত্রে। সেজান প্রতিবছর তার বান্ধবী বদলাবে আর আমার ছেলের সাথে তাদের পরিচয় হবে নতুন নতুন আম্মু হিসেবে,এতে কি আমার ছেলের মানসিক বিকাশ রুদ্ধ হবে না? এর ফলে কি আমার ছেলে একটি অবক্ষয়ের মধ্যে বেড়ে উঠবে না? আমার বৈধ পরিবারের সাথে থাকলে ওর মানসিক বিকাশ রুদ্ধ হবার যে ইস্যু সেজান তুলে ধরছে তার যৌক্তিকতা কতোখানি?

মাসুদ সেজান তার ব্যক্তিগত জীবন যেভাবে খুশী পরিচালনা করুক কিন্তু আমার ছেলেকে প্রতি বছর নতুন স্কুলে ভর্তি করা, প্রতি বছর নতুন বাসায় লুকিয়ে রাখা, কোন আত্মীয় স্বজন থেকে বন্ধু বান্ধব কারোই বাসার ঠিকানা না জানা এসব মিলিয়ে আমার ছেলের বর্তমানে শারীরিক, মানসিক অবস্থা সম্পর্কে আমাকে সন্দিহান করে তুলেছে।



সেজান কেসটি লড়ছে ‘রংধনু’ নামে একটি শুটিং হাউজের ঠিকানা (বাড়ি নগ-৩০,রোড-১২,সেক্টর-৪,উত্তরা) ব্যবহার করে। এর মানে কি সেজান আমার ছেলেকে নিয়ে একটি শুটিং হাউজে বসবাস করে? সেজান তা করে না। কিন্তু একজন মা হিসেবে আমার কি জানার অধিকার নেই যে আমার ছেলে কোথায় থাকে?

আমার চাকরি রক্ষার্থে আমি খুব শিগগিরই আবার লন্ডনে ফিরে যাবো। আমার ছেলে আমার সাথে লন্ডনে বড় হলে এর চেয়ে অনেক ভালো অবস্থায় থাকবে এ বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। আমি গত সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকায় এসেছি এবং আজ অবধি ঢাকার উত্তরায় আমার ছেলেকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে আমার বিনীত অনুরোধ আমি আমার ছেলেকে একবার না দেখে লন্ডনে যেতে চাই না। আমার ছেলেকে আমি দেখি না আড়াই বছর। আমার ছেলে জানে না তার মা তাকে হন্যে হয়ে খুজে বেরাচ্ছে। আমার সাথে সাথে আমার ছেলেও নির্যাতনের শিকার। কিন্তু এই ব্যাপারে সমাজ এবং সেজানের পরিচিতরা নিশ্চুপ। ৭ বছরের ছেলেকে তার মা এর আদর থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে কারণ হিসেবে সেজান উল্লেখ করে যে আমি আমার ছেলেকে রেখে লন্ডন চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি আমার সন্তানকে আমার মায়ের কাছে রেখে স্টুডেন্ট ভিসায় লন্ডন যাই এবং আমার পরিকল্পনা ছিলো, আমি যাওয়ার তিনমাস পরে আমার ছেলের ভিসার জন্য আবেদন করবো। তার আগেই, মাসুদ সেজান আমার ছেলেকে মিথ্যা কথা বলে চুরি করে নিয়ে যায়। আমি আমার ছেলের অভিভাবকত্ব পেয়েছিলাম আদালত থেকে। আমি তার সাথে একটিবারের জন্য হলেও এখন দেখা করতে চাই এবং পুরোপুরীভাবে তার দায়িত্ব নিতে চাই এবং সেই ভার গ্রহণে আমি সক্ষম। আমি এ অন্যায়ের সুবিচার চাই। আমি আপনার কাছে এর সুষ্ঠ প্রতিকার চাই। আপনার মতই আমিও একজন মা। আশা করবো আপনি আমার কষ্ট বুঝতে পারবেন। ভালো থাকবেন।

ফ্লোরা ফেরদৌসী
লেখিকা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ২৬তম ব্যাচের ১ম শ্রেণিতে পাশ করা একজন ছাত্রী এবং দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার একজন সাব-এডিটর হিসেবে ইংল্যান্ডে যাওয়ার আগে পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।

সুত্রঃ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ডট কম

মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই লেখাটি শেয়ার দিলাম। সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য। মানুষরুপী কিছু পিশাচের চরিত্র আমাদের দেখে নেয়া উচিত। চিনে নেয়া উচিত এদের।
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×