somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মোঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস-৫ ( আইন-ই-আকবরি)

১৫ ই নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভারতবর্ষের ইতিহাসে সর্ব সেরা মোগল সম্রাট ছিলেন জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর। আকবর বাদশাহ ৩৯ বছর রাজত্ত করেন। আজকে আপনাদের বাদশাহ আকবরের শাসন আমলের কিছু আইন কানুন সম্পর্কে বলবো।


আকবরের কোষাগারঃ
যখন বাদশাহ তার রাজস্ব ব্যবস্থার দিকে নজর দেয়া শুরু করলেন তখন আতমাদ খাঁ নামে একজন খোজা সব কাজের দেখাশোনা করতেন। যে যে মহলের রাজস্ব এক এক কোটি ডাম ছিল, সেসব মহলের উপর একজন করে তহশিলদার নিযুক্ত করা হয়েছিলো। তহশিলদারের একজন করে কোষাধ্যক্ষ ছিল।বাদশাহ আকবরের আদেশ ছিল, প্রজা এবং কৃষক যে উপায় এই হোক রাজস্ব দিবে। তা মুদ্রা দিয়েও হতে পারে অথবা শস্য দিয়েও হতে পারে।রাজস্ব দিয়ে তারা রসীদ লিখে নিত।
রত্নভান্দারঃ
রত্নভাণ্ডার এর একজন কোষাধ্যক্ষ ছিল। তার নাম ছিল টেপকচি।রত্নভাণ্ডার এ সবচাইতে বেশি ছিল চুনি। প্রায় বারো রকমের চুনি ছিল। যার মাঝে প্রথম শ্রেণীর চুনি ছিল প্রায় হাজার আশরাফই মুল্যের, দ্বিতীয় শ্রেণীরচুনি ছিল ২৫ আসরাফি মুল্য মানের এবং তৃতীয় শ্রেণীর চুনি ছিল তিনশ আসরাফি মুল্য মানের। এছারা সেখানে পান্না, হিরা, নীলা প্রভৃতিয় ছিল।


পান্না


রুবি
টাঁকশালঃ
টাঁকশালের প্রধান কে বলা হত দারোগা। দ্বিতীয় প্রধান কে বলা হত সরাফ। এরা ধাতুর গুণ এবং কিভাবে পরিষ্কার করতে হয় তা জানতো। পারস্যে ধাতু পরিষ্কারের বারোটি পর্যায় আছে যাদের কে ডিহি বলা হলেও ভারতবর্ষের বারোটি পর্যায় কে বলে বারবনিক।
সোনা পরিষ্কারের ব্যবস্থাঃ
একষট্টি আসরাফি কাটাই করা যায় এমন আকারের সোনার পাত উপরে উপরে সাজিয়ে রেখে তাতে চার সের সোরা ও চার সের ইটের গুঁড়া মিশিয়ে দিতে হয়। এই স্তুপের উপর চারদিক থেকে বিলঘুটিয়া দিয়ে সাজাতে হয়। ঘুটিয়াতে আগুন ধরিয়ে দিলে ধীরে ধীরে পাতগুলি তেতে ওঠে। চারদিকের ঘুটিয়া গুলো ছাই হয়ে গেলে সেই ছাই গুলি যত্ন করে সাবধানে সড়াতে হত। এই ছাইগুলোকে হিন্দি টে সলানিভস্ম বলে। এই ভস্মের মধ্যে সোনার খাদের যে রুপা বা চাঁদি, সেই চাঁদি বের হয়ে আসে। ওই পাতগুলি কে এক ই ভাবে আরও দুইবার পোড়াতে হয়। পড়ে পাতগুলিকে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হয়। এইভাবে ছয় বার ধুলে ও আঠারো বার পুড়লে তবেই স্বর্ণ বিশুদ্ধ হত।
চাঁদি পরিষ্কারের ব্যবস্থাঃ
প্রথমে মাটিতে একটা গর্ত করে গর্তের ভেতর প্রথমে বিলুঘটিয়ার ছাই ছরিয়ে দিতে হয়।পরে বাবলা কাঠের পরিষ্কার ছাই দিয়ে সেই গর্ত ভরাট করতে হয়।তারপর পানি ঢেলে ছাইগুলো কে পিণ্ড আকারে পরিনত করতে হয়। পিণ্ড একটু বড় হলে বড় আকারের মুচি তৈরি করতে হয়। এই মুচির ভেতর অপরিস্কার চাঁদির পিণ্ড দিতে হয় এবং এক ই ওজনের সীসা ওই চাঁদির উপর রাখতে হয়।পরে সেই গর্তের মুখ পর্যন্ত ভালো কয়লা, যাতে কাঠের অংশ নেই দিয়ে ভরাট করতে হয়। কয়লাতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে হাঁপর দিয়ে বাতাস দিতে হয়। পড়ে উভয় ধাতু গলে গিয়ে এক হলে তাতে হঠাত করে পানি দিলে যদি আগুনের সাদা জ্বালা ফুটে উঠত তখন বোঝা যেতো ভেতরের চাঁদি পরিষ্কার হয়েছে। তখন সেই মধ্যের চাঁদি টুকু বের করে আবার গলানো হত। দ্বিতীয়বার গলানর সময় আর সীসা দিতে হত না। মুচির গায়ে অপরিস্কার চাঁদির খাদ ও সীসা জমে থাকতো। শেষে ওই মুচিকে গলালে এক ধরনের সমকর ধাতু পাওয়া যেতো, যাকে ফরাসিতে কেনেই বলে।

মোহরের ছাপ ও প্রকারঃ
প্রথম হল স্বর্ণ মুদ্রা- সাহেনশাহ, গোলাকার দেখতে, অজন একশত এক তোলা নয় মাষা সাত রত্তি। লাল মোহরের একশত মহর ডাম। এর একদিকে লেখা ছিল, “ সাহেনশাহ বাদশাহ জালাল উদ্দিন আকবর, আল্লাহ তার রাজ্য চিরস্থায়ী করুন, তাকে চিরজীবী করুন।“ আর একদিকে লেখা ছিল,”আল্লাহ অসীম দয়াবান, তার দয়ায় জগত পরিচালিত হচ্ছে।“


দ্বিতীয় হল রৌপ্য মুদ্রা- রূপিয়া, অজন সোয়া এগারো মাসা।ইহা শের খাঁর আমলেই প্রচলিত হয়।
তৃতীয় ছিল তাম্র মুদ্রা,ওজন এক তোলা, আট মাষা সাত রত্তি।


চতুর্থ ছিল দিরহাম বা দিনার। বহু পুরাকাল থেকেই এশিয়া প্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় ইহা প্রচলিত আছে। এর আঁকার খেজুরের আঁটির মত ছিল। খলিফা অমর এর আঁকার গল করেন।
(চলবে)

সুত্রঃ The Ain-I-Akbari by Abul Fazl & Akbarnama by Abul Fazl

ছবিঃ গুগল থেকে।

ইতিহাসের কথা- নুরজাহান
মোঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস-১
মোঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস-২
মোঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস-৩
মোঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস-৪
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:১৬
২৯টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×