somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শয়তানের শয়তানি

১৫ ই নভেম্বর, ২০১২ ভোর ৬:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শয়তানের শয়তানি ও স্বর্গ হইতে বিদায় ।।
আল্লাহ আদমকে [কোরান ও বাইবেল বর্ণিত মানুষের আদি পুরুষ] প্রথম কেন সৃষ্টি করেছিলেন ? তাঁর কি কোন ইচ্ছা অপূর্ণ ছিল যার প্রয়োজনে তিনি আদমকে বানিয়ে তার মাধ্যমে সেই সাধ আহলাদ মেটাতে চেয়েছিলেন ? তা হলে তো তাঁকে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলা যায় না। তাঁর নিশ্চয়ই অতৃপ্ত কোন খায়েশ ছিল । যে জন্য তিনি মানুষকে তৈরি করার মনস্থ করেন ।
এতে এটাও প্রমানিত হয় মানুষ আল্লাহরই কোন প্রয়োজনের ফসল - মানুষকে ছাড়া তিনি সম্পুর্ণ হতে পারছিলেন না। সে হিসেবে আবার মানুষ আল্লাহরই একটি পার্ট বা অংশ । রবীন্দ্রনাথের ভাষায়-
‘আমায় নইলে ত্রিভূবনেশ্বর তোমার প্রেম হত যে মিছে ,
তাই তোমার আনন্দ আমার পর তুমি তাই এসেছ নীচে ।

সেই প্রয়োজনটা কি ? বিভিন্ন নবী ও রসুল এবং লিখিত মাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন যে- ‘মানুষ হ’ল আমার প্রতিনিধি’ [২: ৩০] তার কাজ হবে আল্লাহকে প্রশংসা ও মহিমা কীর্তণ করা । কিন্তু মানুষকে বানিয়েই তিনি সন্তুষ্ট থাকলেন না, – তাকে নিয়ে গেলেন আগুনে তৈরি জ্বীন জাতির কাছে । তাদেরকে বললেন –এই মাটির তৈরি মানুষের সামনে তোমরা নত হও । তারা ক্ষুব্ধ কন্ঠে প্রতিবাদ করলো- ‘এতকাল তো আমররাই তোমার প্রশংসা করেছি,মহিমা কীর্তণ করেছি । আবার মানুষের কি প্রয়োজন ,ওরা তো সেখানে গিয়ে মারামারি করবে,রক্তপাত হবে,অশান্তি করবে ।’ আল্লাহ তৎক্ষনাৎ তার সঠিক কোন জবাব দিতে পারলেন না, কেবল বললেন -‘আমি যা জানি তোমরা তা জান না ।’

আপন মহিমা কীর্তণ ও প্রশংসা করার জন্য মানুষ তৈরির অর্থ তিনি তোষামদ ভালোবাসেন । আমাদের ক্ষুদ্র মস্তিস্ক বোঝে না যে চাটুকারিতা তার এত পছন্দ কেন । এখানে আরেকটি প্রশ্ন , জ্বীনরা কি করে আগে থেকেই জানলো যে মানুষ পৃথিবীতে গিয়ে মারামারি কাটাকাটি রক্তপাত করবে ? যারা, আল্লাহ যা শেখাতেন তার বাইরে কিছুই জানে না , তারা আগাম জেনে গেল কি করে যে মানুষ পৃথিবীতে গিয়ে সেখানে অশান্তি করবে ? জ্বীনরা কি তবে ভবিষ্যৎ দ্রষ্টাও ছিল ? এই গুন তো কেবল আল্লাহর হওয়ার কথা ।

আল্লাহ ভবিষ্যৎদ্রষ্টা হলেও মনে হয় জানতেন না যে ইডেন উদ্যানে আদম একাকীত্বের সমস্যায় পড়বে । ফলে কিছুদিন পর তার জন্য সঙ্গী হিসেবে এক নারী বানালেন, বিবি ‘হাওয়া’- পৃথিবীর প্রথম নারী । আল্লাহ নিজ হাতে বেহেশ্তি মাটি দিয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে যাকে বানালেন ,সে ছিল পুরুষমানুষ । কিন্তু বিবি হাওয়াকে বানানোর সময় আর মাটি নয়, বানালেন সেই পুরুষের পাঁজরের হাড় নিয়ে । এইটা হল পৃথিবীর প্রথম অসাম্য । পুরুষ আল্লাহর নিজের তৈরি , আর নারীকে বানালেন পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্য, তারই পাঁজরের হাড় থেকে । পরবর্তীতে আমরা নারীর প্রতি আল্লাহর বিমাতাসুলভ আচরণ আরও দেখবো।

যেমনটা মনে করা হয় ,মানুষকে পৃথিবীতে পাঠানোর জন্যই বানিয়েছেন ,তা কিন্তু না । আদম ও হাওয়া বানানোর পর তারা স্বর্গেই থাকতেন । মানুষকে পৃথিবীতে আনার কৃতিত্ব প্রধানত শয়তানের এবং কিছুটা সেই নারীর । প্রথমে আল্লাহ আদম ও হাওয়াকে ইডেন উদ্যানে নিয়ে ছেড়ে দিলেন,বললেন-‘তোমরা এখানে বসবাস কর ,যেখানে খুশী যাও,যা খুশী খাও ,কেবল এই বৃক্ষের [জ্ঞানবৃক্ষ] কাছে যেওনা,তার কোন ফল খেওনা ।’২:৩৫ কিন্তু শয়তান প্ররোচনা দিল এবং সেই প্ররোচনায় সাড়া দিয়ে নারী বিবি হাওয়া, বাইবেলে যার নাম ঈভ, সেই গাছের ফল খেল । এই নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ার কারণেই আমাদের এই পৃথিবীতে আসা। জ্ঞানের স্পৃহা পুরুষের চাইতে নারীর বেশী তা এই ঘটনায় প্রমানিত হল । [ হালফিল পাকিস্তানের কিশোরী মালালা’র ঘটনাও সেই সাক্ষ্য বহন করে যে, নারীরা জ্ঞানের রাজ্যে অপাঙতেয় নয় বরং পুরুষের চাইতেও তারা বেশি আগ্রহী, জীবন দিয়ে হলেও তারা তা চায় ।]

গন্ধম বৃক্ষের ঘটনায় এটাও প্রমানিত হল যে আদম ও হাওয়াকে পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি করে পাঠানো মোটেও পরিকল্পিত ছিল না । এটি ঘটনাচক্রে, শয়তানের কারসাজিতে হয়েছে , তাও কিছুদিনের জন্য। অর্থাৎ , আদম সৃষ্টি, তারপর তার জন্য হাওয়াকে তৈরি ,তাদের দুজনের স্বর্গবাস ,তারপর জ্ঞানবৃক্ষের ফল খেয়ে পাপের শাস্তি স্বরূপ পৃথিবীতে পাঠান –ইত্যাদি কোনকিছুই আল্লাহর পূর্বপরিকল্পিত ছিলনা । সবই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে , ঈশ্বরের দ্বিতীয় চিন্তা । তিনি ভাল পরিকল্পনাবিদও নন। মানুষের স্বর্গ হইতে বিদায় ও মর্তে আগমন সবই হল শয়তানের শয়তানি।

ভাগ্যিস শয়তান এই কাজটি করেছিল এবং নারী প্রলুব্ধ হয়েছিল । সে কারনেই কত বিচিত্র ঘটনা ঘটল,বৈচিত্রপূর্ণ হল মানব জীবন । কেবলই যদি আল্লাহর গুন কীর্তণ , উদরপূর্তি এবং অনিঃশেষ সঙ্গম করাই হত জীবন- তাহলে ওই বেহেস্তি সময় কী বোরিংই না হত । পৃথিবীর প্রথম নারী এবং তার সেই শর্ত ভঙ্গ করার মধ্য দিয়েই আমরা পেলাম- বৈচিত্রপূর্ণ কোলাহল ভরা, জ্ঞানময় ,জীবনরসে ভরপুর এক মানব জীবন । তার ওই কৌতূহল ভরা জীবনজিজ্ঞাসাই আমাদের বাঁচিয়েছে- নইলে কি আমরা এই সুন্দর পৃথিবীতে আসতে পারতাম !

ভাবলে অবাকই লাগে, যদি পাপের শাস্তির তরেই ‘স্বর্গ হইতে বিদায়’ ,তবে পৃথিবী এত এত সুন্দর করে কেন বানিয়েছিলেন ? এখানে মানুষের আসা তো তাঁর পূর্বপরিকল্পনায় ছিল না । পৃথিবীটা তবে কার জন্য বানিয়ছিলেন । স্বর্গ কি এর চাইতেও সুন্দর ?
ঠিক, -যে প্রথম থেকেই পৃথিবী মানুষের বাস যোগ্য অবস্থায় ছিল না । আল্লাহ সব প্রানীদের প্রাকৃতিক ভাবেই নিজেকে রক্ষা করার ব্যবস্থা করেছেন ,কেবল মানুষ ছাড়া । কেননা তার তো কোন প্ল্যানিং ছিল না মানুষকে পৃথিবীতে পাঠানোর। মানুষকে তার আপন বুদ্ধি খাটিয়ে এই পৃথিবীকে বাস যোগ্য করে নিতে হয়েছে । আজকের এই পৃথিবীর অনেকটাই মানুষের নিজের হাতের গড়া ।



সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১২ সকাল ৭:০৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×