somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রিপোস্ট... ‘বাংলাদেশী? বাংলাদেশী নট এলাউড, বাংলাদেশী নট এলাউড’ বলতে বলতে বিয়ে বাড়িতে গরুর গোশতের রেজালাভর্তি ডেকচির কাছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেদ করে কোন বেয়াদপ কুকুর এসে পড়লে বাড়িওয়ালা যেভাবে কুকুড়ের দিকে তেড়েআসে হোটেলওয়ালা ঠিক তেমনি মারমুখো ভঙ্গিতে আমাদের দিকে তেড়ে এলেন।

১৩ ই নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০০৭ সালের মাঝামাঝি সময় আমি এবং আমার এক সহকর্মী মুহিবুর রহমান জামাল ভারতের বিখ্যাত মুসলিম ঐতিহ্য আগ্রার তাজমহল দেখতে যাই। কলকাতা থেকে ট্রেনে আগ্রা পৌঁছতে আমাদের সন্ধ্যা পার হয়ে যায়। ট্রেনে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পেরেছিলাম, তাজমহলের কাছাকাছি হোটেলগুলোর ভাড়া খুব বেশি। তাই তাদের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা একটু দূরে (এলাকার নামটি ভুলে গেছি) হোটেল খোঁজার জন্য গেলাম। এমনিতেই সন্ধ্যাবেলা, তার উপর হঠাৎ শুরু হল ঝড়-বৃষ্টি। পড়ে গেলাম মহাঝামেলায়। এই অপরিচিত জায়গায় এখন কোথায় যাই! দুজনে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ভাবছি। এদিকের লোকেরা আবার হিন্দী ছাড়া কিছু বুঝে না। যা হোক, ঝড়-বৃষ্টি কিছুটা কমে এলে আশপাশের লোকজনের কাছে যতটা সম্ভব খোঁজখবর নিয়ে একটি আবাসিক হোটেলে গিয়ে ছিট খালি আছে কিনা জানতে চাইলাম। হোটেলের রিসেপশনে বসা এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক, মুখে লম্বা দাড়ি, সাদা ধবধবে পাঞ্জাবি পরিহিত। আমরা ভাবলাম, বিধাতা বুঝি আমাদের উপযুক্ত জায়গায়ই নিয়ে এসেছেন। আমরা মুসলিম, চেহারা-সুরতে মনে হচ্ছে হোটেলের লোকটিও মুসলিম। কোন সমস্যা নেই। ভদ্রলোক তো হিন্দী ছাড়া আর কিছু বুঝেইনা। অনেক কষ্টে তাকে বুঝিয়ে শেষ পর্যন্ত একটি রুম পাওয়া গেল। আমরা তো খুশি, যাক রাতের বেলা ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে আর বেশি ঘুরাঘুরি করতে হল না। কিন্তু কপালে যে এত বড় দুর্ভোগ অপেক্ষা করছে তা কখনো কল্পনাও করিনি। মুরব্বির সাথে কথা বলতে বলতে এবার হোটেলের রেজিস্ট্রারে নাম ঠিকানা লিখতে গিয়ে যেই বলেছি ‘বাংলাদেশী’। আর যায় কোথায়! আগুনে কেরোসিন ঢেলে দিলে যা যায়। বয়োবৃদ্ধ ইন্ডিয়ান যেন তার চেয়েও বেশি ক্ষেপে গেলেন। ‘বাংলাদেশী? বাংলাদেশী নট এলাউড, বাংলাদেশী নট এলাউড’ বলতে বলতে বিয়ে বাড়িতে গরুর গোশতের রেজালাভর্তি ডেকচির কাছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেদ করে কোন বেয়াদপ কুকুর এসে পড়লে বাড়িওয়ালা যেভাবে কুকুড়ের দিকে তেড়ে আসে হোটেলওয়ালা ঠিক তেমনি মারমুখো ভঙ্গিতে আমাদের দিকে তেড়ে এলেন। চিৎকার করে বলতে লাগলেন, ‘গেট আউট, গেট আউট’। ইংরেজি বেশি জানেন না, হিন্দীতে কি কি গালাগাল আমাদের দিয়েছেন তা আমরা তেমন বুঝিওনি, বুঝার চেষ্টাও করিনি। শুধু বুঝতে পেরেছিলাম যে আমরা কোন রকম কথা বলতে গেলেই এখানে বড় রকমের বিপদ হতে পারে। তাই ‘ভিক্ষা লাগবে না কুত্তা সামলাও’ নীতি অবলম্বন করে জান নিয়ে বলা যায় একরকম দৌঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলাম। বাংলাদেশী পরিচয় পেয়ে সেই বয়োবৃদ্ধ ইন্ডিয়ান কেন এতটা উত্তেজিত হয়ে উঠেছিলেন সে প্রশ্নের জবাব আজও আমি খুঁজে পাইনি। উল্লেখ্য, ঐটাই ছিল আমার প্রথম বিদেশ সফর। এর পরে আরো কয়েকটি দেশে যাওয়ার সুযোগ আমার হয়েছে। এইতো গত জুনে ঘুরে এলাম নেপাল থেকে। কই! কোথাও তো ‘বাংলাদেশী’ বা ‘মুসলিম’ পরিচয় পেয়ে কাউকে ক্ষেপে উঠতে দেখলাম না। আর অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা জানেন, গুটিকয় ব্যতিক্রম ব্যতীত বেশির ভাগ দেশের ভিসা প্রসেসও (আমি ট্যুরিস্ট ভিসার কথা বলছি)এতটা জটিল নয়। ইন্ডিয়ান ভিসার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ভারতীয় দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মনোভাব দেখলে মনে হয়, যেন ইন্ডিয়ার পথে-ঘাটে রাশি রাশি সোনা, রূপা, মনি-মুক্তা ছড়িয়ে আছে আর বাংলাদেশীরা সব লাইন ধরে ইন্ডিয়া যাচ্ছে সেসব অমূল্য সম্পদ চুরি করে নিয়ে আসার জন্য। অথচ বাস্তবতা হল, ইন্ডিয়ার অনেক হসপিটালের প্রধান আয়ের উৎস বাংলাদেশী রোগী। সেখানকার উচ্চ শিক্ষার অনেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশী ছাত্রদের দিয়ে ভর্তি। তাদের পর্যটন আয়ের একটা বড় অংশ আসে বাংলাদেশী পর্যটকদের পকেট থেকে।

ভাবি, ইন্ডিয়ান হোটেলওয়ালা সেদিন যেভাবে ক্ষেপেছিলো, তাতে ভাস্কর রশীদ আহমেদ ও তাঁর পুত্রবধূ নূরুন নাহারের ক্ষেত্রে যে ঘটনা ঘটেছে আমাদের ক্ষেত্রেও সেরকম কিছু ঘটতে পারত। বাংলাদেশী বা মুসলিমদের প্রতি ইন্ডিয়ানদের এই নেতিবাচক মনোভাবেব কারণ হয়ত বিশেষজ্ঞগণ বিশ্লেষণ করবেন। আমি কোন বিশেষজ্ঞ নই, তাই সেই ঝুঁকি নেয়ার সাহস আমার নেই। তবে এটা কোন মানুষের আচরণ নয়, দায়িত্বশীল প্রতিবেশীর আচরণ তো নয়ই-এটুকু নির্দ্বিধায় বলা যায়।

দৈনিক প্রথম আলোতে গত ৩০ অক্টোবর প্রকাশিত ‘‘বিনা বিচারে ৮ বছর কারাবাসের পর মুক্তি। ভাস্কর রশীদের জন্য দিল্লির সাংবাদিকের ‘ঈদ উপহার’’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরটি হয়ত অনেকেরই চোখে পড়েছে। প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে অবশ্য ঈদের দিনই (২৭.১০.২০১২) খবরটি আমার নজরে আসে। পত্রিকার খবরে উঠে এসেছে একজন প্রতিভাধর বয়োবৃদ্ধ বাংলাদেশী নাগরিকের সাথে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের নির্মম আচরণের করুণ চিত্র। জানা যায়, ভাস্কর রশীদ ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে আজমীর শরিফ যাওয়ার জন্য পুত্রবধূ নূরুন নাহারকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে যান। তারা দিল্লি রেলস্টেশনের কাছে পাহাড়গঞ্জ এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন। হোটেলের লবিতে বসে থাকা কয়েকজন লোক তার কাছে জানতে চায়, তারা কোথা থেকে গিয়েছে, মুসলিম কি না ইত্যাদি। তাঁদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে সাদা পোশাকের লোকজন এসে ওই সব লোকদের সঙ্গে তাদেরকেও আটক করে। পরদিন আদালতে তোলা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ থেকে জাল টাকা বহন করে ওই সব লোককে সরবরাহ করার অভিযোগ আনা হয়। পত্রিকা পড়ে আরো জানা গেল, ভারতীয় কয়েকজন সাংবাদিক এবং ব্যবসায়ীর সহায়তায় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরলেও রশীদ আহমেদের পরিবার এখন নিঃস্ব। সাংবাদিকদের কাছে তার করুণ আর্তি, ‘ঢাকার মাতুয়াইলে আমার যে বাড়িটি ছিল তা বিক্রি করতে হয়েছে। মাথার ওপর এখন ঋণের বোঝা। জীবনসায়াহ্নে এই ঋণ আমি কীভাবে মেটাব।’ আরো করুণ ঘটনা হল, তাদের বন্দী জীবনের পরের বছর ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট নূরুন নাহারের একমাত্র মেয়ে ১৩ বছরের চাঁদনি মারা যায়। রশীদ আহমেদ বলেন, ‘বউমা বন্দী হওয়ার পর তাঁর বড় ছেলে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। তিনি এখন কোথায় থাকেন তা-ও কেউ জানে না’।

৭৮ বছর বয়সী এ ভাস্করের দাবি, বাংলাদেশ সরকার যেন ভারত সরকারের কাছে তার জীবন থেকে মুছে যাওয়া আটটি বছরের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ আদায় করে। সরকার সে ব্যবস্থা নেবে কিনা তা জানার সাধ্য আমাদের নেই। কিন্তু প্রশ্ন হল, ভাস্কর রশীদ আহমেদ ও তাঁর পুত্রবধূর জীবন থেকে যে মূল্যবান ৮টি বছর খরচ হয়ে গেল তা কী আর কেউ তাদের ফিরিয়ে দিতে পারবে?
মু. হাবিবুর রহমান তারিক
উত্তর মুগদা, সবুজ বাগ, ঢাকা
[email protected]
Click This Link
৯টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×