somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জনসংখ্যা বিষ্ফোরনে কবিতার দায় ;) অথবা মাইলস্টোন ২০২৫

১২ ই নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ষাটের দশক থেকে বাংলা পদ্য রচনায় পশ্চিমা রীতি মোটামুটি একটা জায়গা করে নিলেও তার আগে অন্ত্যমিলই ছিল বাংলা কবিতার প্রধান নিয়ামক। দুই বা চার ছত্রে চমতকার অন্ত্যমিলই ছিল কবিতার নান্দনিক সৌন্দর্য। অন্ত্যমিল ছাড়া কবিতাকে তো কবিতাই বলে গণ্য করা হতোনা বরং একপ্রকার পাপের শামিলও বলেও ধরা হতো। অন্ত্যমিল সর্বস্ব এই কবিতার প্রভাব বাঙালীর আর্থ-সামাজিক অন্য কোন বলয়কে প্রভাবিত করেছিল কিনা জানিনা তবে বাঙালীর বংশবৃদ্ধিতে কবিতার প্রভাবকে একেবাড়ে উড়িয়ে দেয়া যায়না।B-)

কারো প্রথম পুত্র সন্তানের নাম যদি রাখা হয় কামাল তবে অবধারিতভাবেই পিতাকে আরেকটি পুত্র সন্তানের জন্য অপেক্ষা করতে হতো। কেননা কামালের পর জামাল নামে আর একটি পুত্র সন্তান যদি না থাকে তাহলে কেমন যেন খাপছাড়া লাগে। :( নামের অন্ত্যমিলের কারনেই যে বাঙালীর অধিক সন্তান গ্রহণে মহা উৎসাহী ছিলেন তা অনেকে ফু মেরে উড়িয়ে দিলেও আদতে কিন্তু বিস্তর প্রমান আছে - আলালের পর দুলাল, হেলালের সাথে বেলাল, রফিকের সাথে সফিক, আবুলের সাথে বাবুল, সেলিমের সাথে কলিম, সিধুর পর নিধু, অরুনের পর বরুণ - এরকম ঢের প্রমান দেয়া যাবে বৈকি। লাবলুর ছোট ভাই এর নাম যে ডাবলু হবে সেটাই নিয়ম, তার বদলে মনির হলেই আত্নীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে এরকম অমিল নিয়ে মৃদ্যু উত্তেজনার সৃষ্টি যে হতোই তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। অন্ত্যমিলই হলো আসল কথা পরের ইতিহাস পরে। এ কারণে লাবলু -ডাবলুর পরবর্তী সংখ্যার হাবলু নামকরণেও তাদের বিন্দুমাত্র বিচলিত হতে দেখা যেতনা অথবা বাবুর পর হাবু।

কিন্তু কামালের পর যদি কন্যাসন্তান হয় তাহলে? - সেক্ষেত্রেতো অন্ত্যমিলের খেলা আরেকটু লম্বা হয়ে বেশ জমে ওঠে - কামালের পর কন্যাসন্তান হলে ধরা যাক তার নাম রাখা হল রিনা, তারপর একটি পুত্র সন্তান হলে না হয় জামাল নাম রেখে কামালের সাথে অন্ত্যমিলের ঘাটতিটা পূরন হলো। কিন্তু ওদিকে যে রিনা একাকী পড়ে আছে, অতএব এখন একটি কন্যাসন্তান বড়ই আবশ্যক যার নাম রাখা যায় মিনা। অতপর এইখেলা চলতে থাকে নিরন্তর। রিনার পর মিনা, তারপর বিনা, তারপর হেনা এরপর যদি মিল খুজে না পেয়ে যদি শিমুল চলে আসে তাহলে তো অবধারিত ভাবে আবার পারুলের জন্য অপেক্ষা। :) পিতৃকুল নাম রাখার এই ছন্দে বছর বছর আন্দোলিত হলেও মাতৃকুল প্রত্যেক বছর সন্তান ধারণ করতে গিয়ে যে অসীম ভোগান্তির শিকার হন সে বিষয়ে আর নাই বললাম। কেননা খাদ্য প্রসেসিং আর সন্তান ধারনের মহান কাজটার জন্যই তো নারী জাতীর আগমন। যার কাজ তাকে তো তা করতেই হবে।

কিন্তু এই খেলা স্টার প্লাসের সিরিয়ালের চেয়েও ধারাবাহিক আকার ধারণ করলে জীবন যে কত দুর্বিসহ হয়ে উঠতে পারে তা আমাদের পাড়ার ওভারশিয়ার কাকুই ভাল বলতে পারবেন। ওভারশিয়ার কাকার প্রথম সন্তান পিন্টু। তারপর ধারাবাহিকভাবে নান্টু, মন্টু, সেন্টু, রিন্টু। প্রথম সন্তান পিন্টুর নামেই তাদের বাড়িটা পিন্টুদের বাড়ি বা কাকা পিন্টুর বাপ হিসেবে পরিচিত ছিলেন অনেকদিন। কিন্তু যত ঝামেলার কারণ হলো আর একটি পুত্র সন্তানের আগমনে। সন্তান যেহেতু তাই নাম একটা রাখতেই হবে আবার মিল না থাকলে কেমন যেন বেখাপ্পা লাগে। বিরাট সঙ্কটে ওভারশিয়ার কাকু যখন হাস ফাস করছেন তখন তার ৪ বছর বয়সী সর্বশেষ পুত্র আব্দার করল তার ছোটভাই এর নাম হবে ঘেন্টু- অতএব তাই সই। ছোট ছেলের আব্দারও রক্ষা হল আবার অন্ত্যমিলও পাওয়া গেল। |-)

এ যাবত ভালই ছিল কিন্তু গোল বাধল ঘেন্টুর স্কুলে প্রবেশ করার পর। সহপাঠী বা শিক্ষক যাকেই গর্ব ভরে তার ডাক নাম ঘেন্টু বলতে যায় তখন সকলেই ফিক করে একটু হাসি খেলে যায়। অচিরেই ঘেন্টু বুঝতে পারল নামের কারণেই সে স্কুলে হাসির খোরাক। তবে গাট্টাগোট্টা শরীরের কারণে প্রাইমারী স্কুলে হাসির প্রতিত্তোরে গদাম দিয়ে পার পেলেও যতই উপরের ক্লাসে উঠতে লাগল ততই স্কুলে আর পাড়ায় ঘেন্টু নামটা চরম বিনোদনের বস্তু হয়ে উঠল। কেউ যখন ঠোটে এক চিলতে হাসি সহযোগে ঘেন্টু বলে ডাকে তখন প্রথম দিকে ক্ষেপে গেলেও পরে নিজের ভেতরেই ঘোত ঘোত করে মেজাজটা সামাল দিতে হত।X(( তবে ঘেন্টুর সবচে রাগ তার জন্মদাতার পিতার ওপর। সরাসরি কিছু বলতে পারেনা তবে বাপ ভাল কথা বললেও ঘেন্টু সবকিছু ঘোত শব্দযোগে গ্রহণ করে।X(( বিধাতা অনেক বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বিধায় নামজনিত এই ছোট্ট কারণ নিয়ে মাথা ঘামাবার মোটেও সময় পাননা, তবে ঘেন্টুর এই অবমাননাকর বিষয়টি কি করে যেন তার নজরে আসায় ঘেন্টুর পিতার প্রতি তিনি বেজায় রুষ্ট হলেন।

তারই ফলশ্রুতিতে অচিরেই পিন্টুদের বাড়ি ঘেন্টুদের বাড়ি হিসেবে পাড়ায় ব্যপক পরিচিতি অর্জন করলো।শুধু সেটা হলেই রক্ষে ছিল। ইয়ার দোস্ত প্রতিবেশিগণও ওভারশিয়ার কাকাকে ঘেন্টুর বাপ বলে সম্বোধন শুরু করলো। কেউ যখন ’ ঘেন্টুর বাপ বাসায় আছেন নাকি’ বলে হাক পাড়ে- তখন ঘেন্টুর বাপ দরজার আড়ালে যথাযথভাবে দাতি খিচানি আর খিস্তি ঝেড়ে তারপর হাসিমুলে দরজা খুলে জানান দেন তিনি আছেন। যদিও এই খিস্তির কারণে মাঝে মাঝে নিজেই একটু লজ্জিত হন। শতহলেও তিনি ঘেন্টুর জন্মদাতা, তার কাছে পিন্টুও যা ঘেন্টুও তা। কিন্তু প্রতিবেশিরা এত সহজ পাত্র নয়, তাদেরই কিছু উঠতি বংশধরগণ কাচা হাতে রঙ দিয়ে পিন্টু ভিলাকে যখন ঘেন্টু ভিলা বানিয়ে দিল তখন ওভারশিয়ার কাকুর তেজের বহিঃপ্রকাশে পাড়ায় বেশ ভাল একটা উত্তেজনা বয়ে গেল। অবশ্য তাতে হীতে বিপরীতটাই বেশি হল। ছেলে ছোকড়ারা এখন দেয়ালের আড়ালে চিকন সুরে ঘেন্টুর বাপ বলেই কেটে পড়ার একটা মজাদার খেলা আবিষ্কার করে ফেলেছে :) । মাঝে মাঝে তাদের খেলাটা বেশ জমে ওঠে যখন কাকা খেপা ষাড়ের মতো ছেলেপুলেকে তাড়া করেন। X((

অন্ত্যমিলের এই নান্দনিক ছন্দে বাঙালীর উতসুক্য অনেক আগেই উবে গেছে, তবে সেটা কি কবিতায় অন্ত্যমিল বিলুপ্তির কারণে না আর্থসামাজিক পেক্ষাপটের কারণে- তা ব্যপক গবেষণা ছাড়া বোঝা সম্ভব নয়। তবে আশার কথা নতুন এক ধরনের পদ্যরীতি হয়তো অচিরেই আবিষ্কৃত হতে যাচ্ছে যা বাঙালীর প্রজনন ক্ষমতা সমুলে বিনাশ করে দিবে। নইলে অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিত (পরম শ্রদ্ধাসহকারে উচ্চারণ করতে হবে) ২০২৫ সালের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শুন্যের কোটায় নিয়ে আসতে বলেছেন- তা কিভাবে সম্ভব হবে। /:)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:০৬
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×