একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশে যে গণহত্যা চালিয়েছিল, এর জন্য বাংলাদেশের কাছে তাদের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছে পাকিস্তানের জনপ্রিয় দৈনিক ডন। গতকাল রবিবার প্রকাশিত পত্রিকাটির সম্পাদকীয়তে এ মন্তব্য করা হয়।
গত শুক্রবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার বাংলাদেশে পাঁচ ঘণ্টার সফরে এসে প্রথমেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে দীপু মনি একাত্তরে গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার দাবি তোলেন। এর জবাবে হিনা রাব্বানি অতীত ভুলে সামনে তাকানোর আহ্বান জানান।
এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করে আগামী ২২ নভেম্বর ইসলামাবাদে অনুষ্ঠেয় উন্নয়নশীল আট দেশের জোট ডি-৮ সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্র প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন হিনা। পরে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ওইদিন বিকেলেই ঢাকা ছাড়েন পাকিস্তানের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
হিনার বাংলাদেশ সফরের এক দিন পরই ডন পত্রিকা তার সম্পাদকীয়তে বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করল। সম্পাদকীয়তে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার দেওয়া ডি-৮ সম্মেলনের দাওয়াতপত্র গ্রহণ করেছেন, এটা বেশ ভালো লক্ষণ। অথচ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চালানো অত্যাচার-নির্যাতনের কথা অনেক বাংলাদেশি এখনো ভুলে যায়নি। একাত্তরের গণহত্যা ও অনাচারের জন্য পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা বহু দিন ধরেই প্রত্যাশা করে আসছে ঢাকা। ২০০২ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মোশাররফ 'দুঃখ' প্রকাশ করলেও তা যথেষ্ট ছিল না। হিনার সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গ তুলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে 'কিছু অমীমাংসিত বিষয়' এখনো রয়ে গেছে। জবাবে হিনা বলেছেন, পাকিস্তান বিভিন্নভাবে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছে এবং এখন সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময়।
এরপর সম্পাদকীয়তে বলা হয়, বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের শিক্ষাবিদ ও সমালোচকদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক চলছেই। পাকিস্তানিদের নির্যাতনে নিহত মানুষের প্রকৃত সংখ্যা নিয়েও বিতর্ক রয়ে গেছে। তবে এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, পাক সেনাবাহিনী অত্যন্ত নিষ্ঠুর নির্যাতনে সমগ্র পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলটির (আওয়ামী লীগ) সক্রিয় কর্মী, বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ সমর্থকদের হত্যা করেছিল। এরই ধারাবাহিকতায় যুদ্ধে অংশ নেয় ভারত এবং জন্ম হয় বাংলাদেশের।
সম্পাদকীয়টিতে আরো বলা হয়, পাকিস্তানের বর্তমান নেতাদের অবশ্যই বোঝা উচিত, তাদের তৎকালীন নেতারা ভুল করেছিলেন। এ জন্য শুধু দুঃখ প্রকাশ নয়, আনুষ্ঠানিক এমনভাবে ক্ষমা চাওয়া উচিত- যা ঢাকার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। এর ফলে পাকিস্তানও সেসব দেশ ও প্রতিষ্ঠানের উচ্চতায় পৌঁছে যাবে, যারা নিজেদের ঐতিহাসিক ভুল স্বীকার করার মতো সাহস দেখাতে পেরেছে।
উদাহরণ টেনে সম্পাদকীয়র শেষ দিকে বলা হয়, নন-ক্যাথলিকদের ওপর ক্যাথলিকদের নির্যাতন চালানোর জন্য ভ্যাটিকান ক্ষমা চেয়েছিল। ক্রুসেডের সময় কনস্টান্টিনোপলে আক্রমণের জন্যও দুঃখ প্রকাশ করেছিল ভ্যাটিকান। এ ছাড়া যুদ্ধকালীন আগ্রাসনের জন্য কোরিয়ার কাছে ক্ষমা চেয়েছিল জাপান। এখন পাকিস্তানের পালা। পাকিস্তানেরও অতীতের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করা উচিত
Click This Link