গভীর নিশীথে আঁধারের বিষণ্ণতায় যখন নিভে যায় নক্ষত্রের শেষ আলোক
নৈঃশব্দের মাঝেই মহাকাশ থেকে যখন অবিরাম নেমে আসে জ্যোৎস্না তরঙ্গ
দূর থেকে শোনা যায় অবিরল জলপ্রপাতের ম্রিয়মাণ শব্দ
মুহূর্তে উড়ে যায় কোন এক অপার্থিব উড়াল পক্ষী
আর শোনা যায় কেবলি বেদনার্ত ডাহুকের অবিশ্রান্ত ডাক!
আমি শুধু বিজন অরণ্যের কোন এক ব্যথাতুরা পাখির মতন
একা একা জেগে রই
আর ছায়াপথ ধরে হেঁটে চলা মৃৎবত নক্ষত্রের মতন
এই ক্লান্ত অবসন্ন মনে কেবলি সুধাই
হে প্রেম, তোমাতে হৃদয়ের নৈবদ্য সাজাবো বলে
আশৈশব পাঠ করে নিয়েছি বিবাগী জ্যোৎস্না কী করে
স্নিগ্ধ অন্ধকারে পৃথিবীর সাথে জুড়ে দেয় সংসারী আলাপন!
পাঠ করে নিয়েছি কী করে সুশীতল বায়ু এসে সোনালি ধানক্ষেতের
কানে কানে বলে যায়, “সখী, তোমাতেই সর্ব-সুখ, তোমাতেই আমার উদ্ধার”!!
পাঠ করে নিয়েছি অরণ্যের ঘুমহীন পাখিরা কী করে
সারা রাত আকাশের সাতটি তারার সনে বিষণ্ণ আলাপ সেরে
ঢলে পড়ে মৃত প্রভাতের কোলে!
কী করে মায়াবী নদীর অজস্র স্রোতধারা অবিরত ঘুরে ঘুরে বার বার
ফিরে আসে মিলন মোহনায় আর বলে উঠে,
“ বিরহ নয়, বিচ্ছেদ নয়, মিলনেই আমাদের একান্ত মুক্তি”!
হে প্রেম, তোমাতে হৃদয়ের নৈবদ্য সাজাবো বলে
আশৈশব পাঠ করে নিয়েছি নিসর্গের মরমী উচ্ছ্বাস;
নাক্ষত্রিক বিমুগ্ধতার গোপন সব ক্যালকুলাস,
কিংবা বিজন প্রান্তরের বিষণ্ণ অনুভবে জারিত রসায়ন!!
পাঠ করে নিয়েছি রক্ত কমল, বেহুলার গান, ধান সিঁড়ি নদী তীর,
মহুয়ার বনে উদাস দুপুরের সকরুণ আলাপন
আর সফেদ কাশফুলের উদাসী উন্মীলন!
তবু আজো সেই আমি এই হৃদয়হীন পৃথিবীর বিমুগ্ধ বেদনায়
নিজেকে জারিত করে ধরণীরে সুধাই
যদি ঠাঁই দিলে তবে কেন আজ হৃদয়ে দিলে না প্রেমের নৈবদ্য,
যদি ভাবাবেগ দিলে তবে কেন আজ অনুভবে ঢেলে দিলে না অমৃত গরল?
মহা পৃথিবী, যদি আজ দূরে ঠেলে দিলে তবে কেন আজ
দু’চোখে দিলে না অঝোর অশ্রুপাত,
দিলে না হৃদয়ে অবিরাম অরব রক্তক্ষরণ!