somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাম্প্রতিক কবিতাভাবনা ও কয়েকটি কবিতা

১০ ই নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লিখব তবে কার কথা?
টোকন ঠাকুর

মনে হয় কোনো ভাবনাই নেই, ভেবে কী আর কবিতা হয়? ভেবে যেমন প্রেম হয় না, ভেবে কবিতাও হয় না। ভেবে স্বপ্ন দেখা যায় না। স্বপ্ন আবছাআব, কবিতাও তাই, প্রেমও অজ্ঞাতে আসে। যখন আসে, ঠেকানো যায় না। হুড়মুড় করে আসে। মুড়মুড় করে আসে। ফুরফুর করে আসে। দূর দূর করে আসে। দূর দূর করে করে নিকটে চলে আসে। নিকটে কী, এক্কেবারে ঘাড়ের ওপরে, একদম মাথায় চলে আসে। মাথা থেকে খাতায় নেমে আসে। খাতা থেকে ছাপা হতে কাগজে চলে যায়, তখন সেই কবিতা পড়ে তোমার চোখ, কবিতা তোমাকেও পড়ে। কবিতা বুঝে নিতে চায়, তুমি কেমন আছ, তুমি কেমন নেই, তোমার কেমন থাকা উচিৎ, না থাকা উচিৎ...
এরই ফাঁকে তুমি টের পেয়ে যাও, কবিতাটা কেমন হয়েছে? কবিতাটা তোমার কোথায় জায়গা পেল! তোমার বুকে, না বিছানায়, তোমার বালিশের পাশে! তোমার মনে কবিতাটা থাকবে তো? কবিতা তোমার মনেই বা থাকবে কী করে? তোমার মনই তো তোমার সঙ্গে থাকে না। তোমার মন কোথায় থাকে? তুমিই বা কোথায় থাকে? তুমি আর তোমার মন কি দুই অধ্যায়? আমি আর আমার মনও কি তাই? মন্ময় এক সাধু বলেছিলেন, মন আবার কি?
মনের খবর জানিনে। তাই নিজের খবর জানিনে। তাই তোমার খবরও অজানা থেকে যায়। কে তুমি, কে তুমি? কে আমি কে আমি? মনে হয়, তুমি-আমি কেউ না। সময়, এই সময়টাই সব! তবে কি তোমার-আমার প্রকৃত ডাকনামই সময়। এই সময়কে ডাকলেই তুমি-আমি ডাক শুনতে পাব!
মনে হয়, কবিতাকে ডাকলেও ডাক শুনতে পাব। না হয় কবিতাকে ডেকেই দ্যাখো না!
০২.
শীতকাল। ভীষণ কুয়াশার রাত। যশোর রেলস্টেশন। যাব খুলনা। সে-সময় একজন বৃদ্ধ বললেন, ’বাবা, অন্তরনগর ট্রেন কহন আসপি?’ বৃদ্ধের লোকাল একসেন্ট আমাকে ভাবাল। বললাম, ’যাবেন কনে?’ বৃদ্ধ জানান, ’ঈশ্বরদী।’ নিরীশ্বর চেতনায় প্রজ্জ্বলিত আমি ভাবি, ’ঈশ্বর-দী কোন দিকে?’
কিছুদিন আগেও, নিউ এলিফ্যান্ট রোডের ফুটপাতে এক পাগলিকে দেখতাম। সঙ্গে একটা শিশু এবং পেটেও তার আরেকটি, হি অর শি ইজ কামিংসুন...। একদিন দেখলাম, ফুটপাতের ওপরেই, কয়েকজন মহিলা কাপড় দিয়ে ঘিরে ছোট্ট আড়াল তৈরি করেছে। মহিলারা পার্শ্ববর্তী কয়েকটি বাসার কাজের বুয়া। আমি এগিয়ে যেতইে, একজন মহিলা বললেন, ’ বিটা ছাওয়াল এদিক আসে ক্যা?’ আমি তবু কাছে যাই এবং দেখি যে, সেই পাগলির বাচ্চা হচ্ছে, ফুটপাতে, আকাশের নিচে। কাজের বুয়ারাই তার ডা. নার্স, ধাত্রী। ফুটপাতের ওপরেই একটা কাপড় বিছানো, সন্তান প্রসবা সেই পাগলিকে একটা কাপড়ের ওপরে শোয়ানো হয়েছে, আর তার সেই শিশু বাচ্চাটা পাশেই বসে প্যা প্যা করে কাঁদছে। আমি যাচ্ছিলাম ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজের কার্যালয়ে, ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির ভিডিও ফিল্ম নির্মাণ কর্মশালার একটি সেশন-ক্লাস করাতে। ফেরার পথে আবার সেই প্রসবা পাগলিকে দেখলাম। এতক্ষণে ধাত্রী, নার্স, ডা.বুয়ারা চলে গেছে। পাগলি বসে আছে তার দুটি বাচ্চা শিশু নিয়ে, যার একটি বাচ্চা জন্মেছে ঘণ্টাখানেক আগেই। আমি ফের কাছে গেলাম। পাগলির মুখে হাসি। পাগলিকে বললাম, ’কী? টাকাপয়সা লাগবে?’ বলেই আমি তাকে পাঁচশো টাকার একটা নোট দিতে চাইলাম? পাগলি বিশ টাকার একটি নোট দেখিয়ে বলল, ’এই যে আছে’।
আমি পাগলিকে পাঁচশো টাকার নোট টা দিয়ে চলে এলাম। কিছুদিন পর আবার নিউ এলিফ্যান্ট রোডেই দেখা পেলাম পাগলিকে। দেখি, তার কোলে নতুন বাচ্চাটি। বললাম, ’বড় বাচ্চাটি কই?’ পাগলির উত্তর, ’গ্রামে গেছিলাম, ওইটা পুকুরের পানিতে পইড়া ডুইব্বা মরছে।’ তারপর পাগলিকে বেশ কিছুদিন আর দেখি না। আবার দেখলাম একদিন তাকে, বাংলামোটর মোড়ে। দেখি, সেই কোলের বাচ্চাটিও নেই। বললাম, ’বাচ্চা কই?’ পাগলি বলল, ’মইরা গেছে।’
আমি এই পাগলি ও তার বাচ্চাদের নিয়ে ভেবেছি। কোনোদিন কিছু লিখতে পারিনি। কবিতা কী লেখা যায়, পাগলি ও তার বাচ্চাদের নিয়ে? কে তার বাচ্চার পিতা?
কবিতা ভাবনা নিয়ে কিছু লিখতে বসে, কেন তবে পাগলির কথা লেখা? তাহলে কার কথা লিখব? ক্লিওপেট্টার কথা? শকুন্তলার কথা? ওফেলিয়ার কথা? নোবেল প্রাইজ পাওয়া কোনো নেত্রীর কথা লিখব? ওবামার বউ মিশেলের কথা লিখব? নাকি প্রজাপতিনীর কথা লিখব, যাকে আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি বন-বনান্তরে, ভিড়ের মধ্যে, নির্জনা নদীর ধারে?
আচ্ছা, লিখব না হয়...
৭ নভেম্বর, ২০১২
....................................
....................................
প্রজাপতিনী
...................
স্রেফ একটা প্রজাপতি

গতরাতে

ঢুকে পড়ে ঘরে

তাতেই যে

ঘরখানা নড়ে
...................................
দেখি রাক্ষসের মুখ, পাই ডাইনির নিঃশ্বাস
...................................
আয়নার মধ্যে তাকিয়ে নিজেকে রাক্ষস মনে হলো!

সঙ্গে সঙ্গে রাক্ষসের মানে, সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধানে পাওয়া গেল—নরখাদক জাতি, নিশাচর, কর্বূর, প্রাচীন অনার্যজাতি ইত্যাদিৃযদিও, রাক্ষসের একটা অপ্রত্যাশিত ভয়ঙ্কর মুখচ্ছবি আঁকা আছে মনুষ্যকুলের মনে। এটা জানি, কারণ এদ্দিন আমিও মানুষের রোল প্লে করে এসেছি। এদ্দিন আমিও মানুষ ছিলাম।

কিন্তু আজ! আজই, নাকি কয়েকদিন ধরেই, যখনই আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে দাঁড়াই, বিলিভ ইট, আমার চোখেই ধরা পড়ে আমি একটা রাক্ষস! আমার সারামুখে ডাইনিদের মিহি-নিঃশ্বাসের আঁচে পৃথিবীগ্রহের মায়াময় ম্যাপ আঁকা হয়ে চলেছে, মুখ বিভাজিত হয়ে পড়েছেৃ

বিশেষ দ্রষ্টব্য ১. ডাইনিদের একেকটি নিঃশ্বাস কমপক্ষে বারোমাস মাথার মধ্যে কিংবা দেওয়ালে দেওয়ালে ঝুলে থাকে; তারপর আরেকটি নিঃশ্বাসে ছাপা হয় আবার একটি বাৎসরিক ক্যালেন্ডার

বিশেষ দ্রষ্টব্য ২. ডাইনিদের নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে অনেক তরুণ যোদ্ধা অকালেই মরে ভূত হয়ে যায়। যারা ভূতে বিশ্বাস করে না, আমার মতোন, একদিন আয়নার মধ্যে তাকিয়ে দ্যাখে—সে নরখাদক, সুযোগ পেয়ে নিজেকে খেয়েছে; সে নিশাচর, আঁখিতে আঁধি চারণ করেছে; সে প্রাচীন অনার্য, কারণ তার অনুচ্চবর্গের দেহ;

দেখি, আয়নার মধ্যে আনস্পেকটেড একটি অচেনা মুখ, রাক্ষসের

.....................................
নিঃসঙ্গের ছদ্মবেশে
.....................................
মানুষের ছদ্মবেশে থাকি, আদতে রাক্ষস!

একদিন রাক্ষসপুরীতে ছিলাম। কিন্তু রাক্ষসদের সঙ্গে আমার বনিবনা হতো না। সবসময় খিটিমিটি লেগে থাকত। ভালোবেসে যে রাক্ষুসী আমার পাশে ছায়াচ্ছন্ন দাঁড়িয়েছিল, এক সন্ধ্যার অজান্তে তাকে অন্য রাক্ষসেরা ভক্ষণ করে ফেলেছিল। মনের দুঃখে, স্বপক্ষত্যাগী আমি মানুষের ছদ্মবেশে মানবসমাজে চলে এসেছি। আমিও কবিতা লিখিৃ

এই হচ্ছে মানুষের মধ্যে থেকেও আমার নিঃসঙ্গতার সংগোপন ইতিহাস। এই হচ্ছে মানুষের সমাবেশে থেকেও আমার মানুষ হতে না পারার ইহলৌকিক যন্ত্রণা। কারণ, সৌন্দর্যলুব্ধক এক মোমের মানবীকে ভালোবাসতে গিয়ে সম্পূর্ণ ভুলে গিয়েছিলাম যে, আমি গোত্রান্তরিত রাক্ষস। স্বগোত্রে আমার জন্য এক রাক্ষুসী আত্মাহুতি দিয়েছিল। আর এদিকে আমি মোমের মানবীতে হাত ধরে আবেগে-আবেগে—যেই বলেছি, রাক্ষুসী, প্রিয়ে, তোমাকেই আজ ভালোবাসি, তুমি আমার পাশে দাঁড়াও; কিন্তু সে ভয় পেয়ে ছিটকে পালায়, আর

রাক্ষসের ভয়ে মানবীরা চিরকাল ভীত বলে আমি নিঃসঙ্গ হয়ে যাই, যথাক্রমশ নিঃসঙ্গ হয়ে উঠি। নিঃসঙ্গতা এমন একটি উদাহরণ, যে-কেউ গ্রহণে অনিচ্ছুকৃহায় রে এমন নিঃসঙ্গ থাকি

সকাল থেকেই একটা শালিক কার্নিশে ভিজছে—স্থিরচিত্রে, নিঃসঙ্গের ছদ্মবেশে আমি এখন ওই ভেজা শালিক পাখি

শালিকের ছদ্মবেশে কবিতা লিখি
....................................
....................................
ইত্তেফাক সাময়িকী, ৯ নভেম্বর, ২০১২
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:০৬
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×