খবরে প্রকাশ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী বাহিনী বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) যে হত্যাযজ্ঞ চালায় তার জন্য পাকিস্তানী পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিনাকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনি। তার মানে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ইয়াহিয়া খান, ভূট্টো, টিক্কা খান, রাও ফরমান আলি , সিদ্দিক সালেক নিয়াজিসহ ৯০হাজার হানাদার বাহিনীকে ক্ষমা করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। যদি তাই হয় তাহলে মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বেলায় কি হবে ? মূল আসামী ক্ষমা পেয়ে গেলে সহযোগীদের কি সাজা দেওয়া যাবে ? দিলেও তা কি টিকবে ? জনগণ কি এই ম্যান্ডেট আওয়ামী লীগ ও দীপু মনিকে দিয়েছে ?
১৯৭১ সালে ভূট্টোর প্ররোচনা ও সহযোগিতায় ইয়াহিয়া খান বাংলাদেশে গণহত্যার নির্দেশ দেয়। তা যথাযথভাবে পালন করে টিক্কা খান, রাও ফরমান আলি, সিদ্দিক সালেক , আমির আবদুল্লাহ খান নিযাজি এবং তাদের কমান্ডের অধীন ৯০ হাজার সৈন্য। তারা সারা বাংলায় গণহত্যা , নারী ধর্ষন , গৃহে অগ্নি সংযোগ করে । গ্রামকে গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। জ্বালিয়ে দেয় মাঠের ও গোলার ফসল। ওরা বলেছিল বাংলার মানুষ নয় , বাংলার মাটি চাই। আমার নিজের পূর্ব পুরুষের ভিটাও ওরা জ্বালিয়ে ভস্মিভূত করে দেয়।
স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ দলীয় সরকার বন্দী হানাদার বাহিনীর ৯০ হাজার সৈন্যকে ভারতের হাতে তুলে দেয়। তারপর শিমলাতে তিনদেশের সরকার প্রধান অর্থাৎ শেখ মুজিব , ইন্দিরা গান্ধি ও জুলফিকার আলি ভূট্টো মিলিত হন। তাদের মধ্যে চুক্তি হয় । শর্ত মোতাবেক পাকিস্তানী বাহিনী বাংলাদেশে যে গণহত্যাসহ অপরাধ করেছে তার বিচার পাকিস্তানই করবে। কিন্তু ৪০ বছরেও তারা তা করে নাই। বাংলার জনগণ চায় ঐ গণহত্যার নায়কদের বিচার হোক। পাকিস্তান যদি করে তাহলে তা বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে করতে হবে। তারা না করলে ঐসব সৈনিক ও তাদের কমান্ডারদের বাংলাদেশের হাতে হস্তান্তর করতে হবে এবং বাংলার মাটিতে তাদের বিচার হবে। যারা ইতিমধ্যে মারা গেছে তাদের মরনোত্তার বিচার করতে হবে। রবার্দি ক্লাইভেরও এরূপ বিচার হয়েছিল। মনি ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান বাংলার জনগণের মনের কথা নয়। জনগণ চায় খুনী হানাদার বাহিনীর সৈনিক, তাদের কমান্ডার ও তৎকালীন সরকারের যারা এই ঘটনার জন্য দায়ী তাদের সকলের বিচার। পাকিস্তানীদের কাছে এই দাবীই জানাতে হবে। তা না জানিয়ে যা করা হয়েছে তার জন্যই দীপু মনির উচিত বাংলার জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া।
লেখকঃ সাবেক জেলা ও দায়রা জজ , [email protected]